X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

জাতির জনকের জন্মদিনের প্রণতি

মো. জাকির হোসেন
১৭ মার্চ ২০২৪, ০০:০৬আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২৪, ১৬:১৩

পৌরুষদীপ্ত চেহারায়, বাঙালির চিরায়ত অবয়বে, ব্যক্তিত্বে, উচ্চতায়, উঁচু তর্জনীতে, কণ্ঠে, সাহসে, লক্ষ্য অর্জনে দৃঢ়তায়, আপাদমস্তক অসাম্প্রদায়িক, বাংলা ও বাঙালির প্রতি চিরবিশ্বস্ত রাজনীতিক, বাঙালির চিরায়ত স্বপ্নের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সারথী তিনি। তার তর্জনী উঠলেই একটি জাতি জেগে উঠতো। আমি বঙ্গবন্ধুর কথা বলছি।

বঙ্গবন্ধু এক জাদুকরী নাম, বিস্ময়কর সম্মোহনী শক্তি। বাঙালির কয়েক হাজার বছরের ইতিহাসে এমন দরদী নেতা, জনক, স্থপতি, বন্ধু একবারই জন্মেছিল। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু জন্মদিনের আনুষ্ঠানিকতা পালন করতেন না। একাত্তরের ১৭ মার্চ জনতা তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে গেলে তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশের মানুষের জন্মদিনই কী আর মৃত্যু দিনই বা কী? নিজের জন্মদিন পালন বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমার জনগণের জন্য আমার জীবন ও মৃত্যু। আমি তো আমার জীবন জনগণের জন্য উৎসর্গ করেছি।’

গোপালগঞ্জের নিভৃতপল্লি টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেওয়া শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর কর্ম, ত্যাগ, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা, সাহসিকতা, সততা, সর্বোপরি বাংলাদেশ ও বাঙালির প্রতি তাঁর অতল ভালোবাসায় নেতা থেকে বাংলা ও বাঙালির পরম আত্মীয়ে পরিণত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর কল্যাণ কামনায় তাই বাঙালি রোজা রেখেছে, নফল নামাজ পড়েছে, পূজা-অর্চনা করেছে। কোনও নেতার জন্য মানুষের এমন দরদ কস্মিনকালেও শুনেনি কেউ। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বাঙালির আত্মার বন্ধন তৈরি হয়েছে বলেই মৃত্যুতেও সে বন্ধন ছিন্ন হয়নি, হওয়ার নয়। মৃত্যুর কয়েক দশক পরও মুজিবকে মুছে ফেলার সকল অপচেষ্টা পদদলিত করে বিশ্বব্যাপী বিবিসি’র জরিপে কালজয়ী রবীন্দ্রনাথ, নজরুলকে ছাপিয়ে বঙ্গবন্ধু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হয়েছেন।

বাঙালির হৃদয়ের আকাশে মুজিবের স্থায়ী অবস্থান মধ্য গগনে। বাঙালির কাছে মুজিবের তুলনা কেবলই মুজিব। কেউ তাঁর সমকক্ষ হতে পারে না।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ম্যাকব্রাইড যথার্থই বলেছেন, ‘ Sheikh Mujib was the soul of his nation.’ (বঙ্গবন্ধু ছিলেন তার জাতির প্রণভোমরা)। ২০১৪ সালের ১৪ মার্চ যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশন আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এককালে ব্রিটেনের লেবার সরকারের দাপুটে মন্ত্রী মাইকেল বার্নস বঙ্গবন্ধুকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম নেতাদের সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, ‘As the Father of the Nation of Bangladesh, Sheikh Mujib ranks among the world’s greatest leaders, such as Gandhi in India, Mandela in South Africa and George Washington in America.’

লর্ড পিটার শোর লন্ডনে বঙ্গবন্ধু স্মারক বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বলেছিলেন, শেখ মুজিব বাংলাদেশের একজন জাতীয় নেতা থেকে দক্ষিণ এশিয়ার একজন প্রভাবশালী নেতায় পরিণত হতে চলেছিলেন। তিনি সত্তরের দশকের আন্তর্জাতিক নেতাদের সমমানের ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ব্রিটিশ রাজনীতিতে ‘মানবতাবাদী লর্ড’ নামে পরিচিত লর্ড ফেনার ব্রকওয়ে বঙ্গবন্ধুর মূল্যায়ন করে বলেছিলেন, ‘একদিক থেকে তিনি বিশ্বের অনেক শ্রেষ্ঠ নেতার চেয়েও শ্রেষ্ঠ। তাঁরা নিজের দেশকে একবার স্বাধীন করেছেন, কিন্তু মুজিব তাঁর দেশকে দুবার স্বাধীন করেছেন। একবার পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে এবং আরেকবার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বাংলাদেশ ত্যাগ করার ব্যাপারে ইন্দিরা গান্ধীকে সম্মত করিয়ে। মুজিব স্বদেশে ফিরে না এলে ভারতীয় সেনাবাহিনী অত শিগগির বাংলাদেশ ছেড়ে আসতো না।’

বিখ্যাত ফরাসি দার্শনিক আঁদ্রে মার্লো বঙ্গবন্ধুর সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমি শেখ মুজিবের মধ্যে দ্য গলের চেয়েও বড়মাপের একজন মানুষকে দেখেছি।’

বাংলা ও বাঙালির প্রতি চিরায়ত মোহাচ্ছন্ন ভালোবাসায় বঙ্গবন্ধু সকলকে অতিক্রম করে পৌঁছে গিয়েছিলেন এক অনন্য উচ্চতায়। বাঙালির হৃদয়ে যেখানে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান সেখানে অন্য কারও ঠাঁই নেই। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা বিধৌত বাংলার বঙ্গবন্ধু বাঙালির প্রতি অতল ভালোবাসায় ও বাঙালির সবটুকু কল্যাণের নিমিত্তে একবারের জন্য পাওয়া জীবনের সব ব্যক্তিগত সাধ-আহ্লাদকে দুপায়ে দলে কারাগারকে ঠিকানা করেছেন, পরিবারের সুখ-স্বপ্নকে বিসর্জন দিয়েছেন। জেল-জুলুম, অত্যাচার, নিপীড়ন সবই হাসিমুখে মেনে নিয়েছেন বিশ্ব মানচিত্রে বাঙালির একটি স্থায়ী নিবাস গড়তে। ফাঁসির রজ্জু মাথার ওপর ঝুলেছে, বুলেট তাড়া করেছে। কিন্তু কোনও কিছুই বাংলা ও বাঙালির প্রতি বঙ্গবন্ধুর অদম্য ভালোবাসার পথে বাধা হতে পারেনি। বাঙালি ও বাংলাদেশের প্রতি বঙ্গবন্ধুর নিখাদ ভালোবাসার মূল্যায়ন করতে গিয়ে প্রয়াত সাহিত্যিক, সাংবাদিক আহমদ ছফা লিখেছেন, “বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং শেখ মুজিবুর রহমান একটি যমজ শব্দ। একটাকে বাদ দিয়ে অন্যটার অস্তিত্ব কল্পনাও করা যায় না। শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি। যারা এই সত্যকে অস্বীকার করবে, তাদের সঙ্গে কোন রকমের বিতর্ক, বাদ-প্রতিবাদ করতেও আমি রাজি হব না।…

আজ থেকে অনেক দিন পরে হয়ত কোন কোন পিতা তার শিশুপুত্রকে বলবেন, জান খোকা! আমাদের দেশে একজন মানুষ জন্ম নিয়েছিল, যাঁর দৃঢ়তা ছিল, তেজ ছিল…। কিন্তু মানুষটির হৃদয় ছিল, ভালোবাসতে জানতেন। দিবসের উজ্জ্বল সূর্যালোকে যে বস্তু চিকচিক করে জ্বলে তা হলো মানুষটির সাহস। আর জ্যোৎস্নারাতে রুপালি কিরণ ধারায় মায়ের স্নেহের মতো যে বস্তু আমাদের অন্তরে শান্তি এবং নিশ্চয়তার বোধ জাগিয়ে তোলে তা হলো তাঁর ভালোবাসা। জান খোকা তাঁর নাম। শেখ মুজিবুর রহমান”।

একটি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ে জন্ম নিয়েছিল সেই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলেই। স্বাধীন বাংলাদেশের বিষয়ে অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের সময় জনসভায় তিনি উত্থাপন করতেন লাহোর প্রস্তাবের ধারণায়, দুটি মুসলমান প্রধান সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে: “পাকিস্তান দুইটা হবে, লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে। একটা বাংলা ও আসাম নিয়ে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র; আর একটা পশ্চিম পাকিস্তান স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হবে- পাঞ্জাব, বেলুচিস্তান, সীমান্ত ও সিন্দু প্রদেশ নিয়ে”। বাঙালির সবটুকু ভালো করার দায়ভার একাই নিজের কাঁধে তুলে নেন বঙ্গবন্ধু। তাই রাষ্ট্রের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে নিজের আবেগ-অনুভূতির বিরুদ্ধে গিয়েছেন বারবার। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য অধ্যাপক আনিসুর রহমান তাঁর আকরগ্রন্থ Through Moments in History: Memoris of Two Decades of Intellectual and Social Life (1970-1990)- এ লিখেছেন ১৯৭৩ সালের এপ্রিল মাসে জাসদের সাধারণ সম্পাদক তাঁকে জাসদের এক জনসভায় বক্তব্য দেওয়ার অনুরোধ করে। অধ্যাপক আনিসুর রহমান বলেন, তিনি পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হওয়ায় সমাবেশে যোগদানের জন্য কমিশনের চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন প্রয়োজন। অধ্যাপক আনিসুর রহমান লিখেছেন, জাসদের সমাবেশে যোগদানের জন্য বঙ্গবন্ধুর অনুমতি চাইলে বঙ্গবন্ধু কিছুক্ষণ ভাবলেন। সামনের কাগজগুলোতে কিছু একটা আঁকাজোকা করলেন। তারপর বললেন, “You … may...go. There are some good boys and girls in their party, no harm if they hear some good words from you on nation building”.

অধ্যাপক রহমান জাসদের সভায় যোগদান করেছিলেন। বাংলা ও বাঙালির কল্যাণে মোহাচ্ছন্ন বঙ্গবন্ধু রাস্তায় যারা তাঁর রক্ত চাচ্ছে তাদের সমাবেশে যোগদানের জন্য তাঁরই পরিকল্পনা কমিশনের একজন দায়িত্বশীল সদস্যকে অনুমতি দিয়েছেন।

তাঁর রাজনৈতিক চিন্তাধারা শুধু রাজনৈতিক ক্ষমতাকেন্দ্রিক ছিল না, সাধারণ মানুষের সমস্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে তিনি তাঁর রাজনৈতিক চিন্তা গড়ে তুলেছিলেন। তিনি স্বাধীনতার আন্দোলনকে কেবল ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীন হওয়ার সংগ্রাম হিসেবে দেখেননি, বরং তিনি এটাকে দেখেছেন নির্যাতিত দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম হিসেবে। তিনি প্রায়ই বলতেন তাঁর লক্ষ্য হচ্ছে ‘সোনার বাংলা গড়ে তোলা’ ও ‘দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো’।

এ প্রসঙ্গে এক বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু অতি সরলভাবে বলেছেন, ‘আমি কী চাই? আমি চাই বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত খাক। আমি কী চাই? আমার বাংলার মানুষ সুখী হোক। আমি কী চাই? আমার বাংলার মানুষ হেসেখেলে বেড়াক। আমি কী চাই? আমার সোনার বাংলার মানুষ আবার প্রাণভরে হাসুক।’ সমুদ্র বা মহাসমুদ্রের গভীরতা পরিমাপ করা সম্ভব; কিন্তু বাংলা ও বাঙালির জন্য বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ের যে দরদ, যে ভালোবাসা তার গভীরতা অপরিমেয়। সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্টের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আই ফিল ফর মাই কান্ট্রি অ্যান্ড মাই পিপল, অ্যান্ড দ্যান মাই ফ্যামিলি।’ সবকিছুর ঊর্ধ্বে জাতির পিতার কাছে ছিল বাঙালি ও বাংলাদেশ।

এমন একজন মহান নেতাকে কেন সপরিবারে হত্যা করলাম আমরা? কী পেয়েছি হত্যা করে? প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী প্রয়াত সরদার ফজলুল করিম যথার্থই বলেছেন, ‘শেখ মুজিবকে আমরা ঈর্ষা করেছি আমাদের অতিক্রম করে বড় হওয়াতে। সবদিকে বড়, তেজে, সাহসে, স্নেহে, ভালোবাসায় এবং দুর্বলতায়। সবদিকে এবং সেই ঈর্ষা থেকেই আমরা তাঁকে হত্যা করেছি। কেবল এই কথাটি বুঝিনি যে ঈর্ষায় পীড়িত হয়ে ঈশিতের স্থান দখল করা যায় না।’ 

পশ্চিমবঙ্গের খ্যাতনামা সাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায় বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের ওপর একটি কবিতা লিখেছিলেন। তাতে বলেছিলেন, পিতৃহত্যা মহাপাপ। এই পাপের প্রায়শ্চিত্ত বাংলার মানুষকে বহুকাল করতে হবে। আসলে আমরা তো বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করিনি, আমরা হত্যা করেছি আদর্শকে, আমাদের ভবিষ্যৎকে। স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টি করে, জীবন দিয়ে বাঙালির ভালোবাসার ঋণ বঙ্গবন্ধু শোধ করে গেলেন।

তবু বঙ্গবন্ধুকে আজও হৃদয়ে ধারণ করতে পারেনি এ ভূখণ্ডের কিছু মানুষ। এরা বঙ্গবন্ধু উচ্চারণ করে না। স্থপতি, জনক হিসাবে স্বীকার তো দূরের কথা, স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধুর কোনও অবদানকেই স্বীকার করে না এ দলভুক্তরা। এরা বঙ্গবন্ধুর অবদানকে অস্বীকার করেই ক্ষান্ত হয় না, বঙ্গবন্ধুর অবদানের সরাসরি বিরোধিতা করে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নানা ঘটনার বিকৃত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যাখ্যা করে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করে। এদের দৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের আর দশজন সাধারণ নাগরিকের চেয়ে বেশি কিছু নন। এদের মূল্যায়নে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের শেখ মুজিব মাত্র। এরা অবয়বে বাঙালি হলেও চিন্তা-চেতনা, মেধা-মননে, রাজনীতিতে বাংলাদেশবিরোধী। মুখে মুক্তিযুদ্ধের কথা বললেও এরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করে না। এরা কৃতঘ্ন, বিশ্বাসঘাতক। রাজনীতিতে মত, পথ ও দলের ভিন্নতা থাকতেই পারে। তাই বলে রাষ্ট্রের জনককে অস্বীকার করা? জনকের কোনও ভুল-ভ্রান্তির জন্যও কি জনককে অস্বীকার করা যায়?

যদি ধরেও নিই সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিয়ন্ত্রিত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অংশ হিসাবে শাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন রক্ষীবাহিনী, রাষ্ট্রপতির শাসন, সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণ, চতুর্থ সংশোধনী সবই ভুল ছিল, তবু সেই ভুল দর্শন তো ছয় মাসের কিছু বেশি সময়ের জন্য বাংলাদেশে বলবৎ ছিল। এখন তো তার কিছুই অবশিষ্ট নেই। তাহলে কীসের বিদ্বেষ বঙ্গবন্ধুর প্রতি? রাষ্ট্রের জনককে স্বীকার করা রাজনৈতিক পরাজয় নয়। বরং বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করা বাংলাদেশকেই অস্বীকার করা। রাজনীতি যার যার, বঙ্গবন্ধু সবার।

বঙ্গবন্ধু দুর্নীতি, মাদক, জুয়া ও গণিকাবৃত্তির বিরুদ্ধে সংবিধানে বিধান সংযোজন করেছিলেন। এমনকি দুর্নীতির দায়ে মন্ত্রিসভার সদস্যসহ বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যকে বহিষ্কার করেছিলেন। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও মজুতদারির বিরুদ্ধে কঠোর আইন তৈরি করেছিলেন। বিদেশে সম্পদ পাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর জীবন, সংগ্রাম, আদর্শ, নীতি, শিক্ষা, চিন্তা, কর্ম ও রাজনৈতিক দর্শন নানা আঙ্গিকে আবিষ্কার ও পুনঃআবিষ্কার করে আমাদের নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালনের মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে তার বাস্তবায়ন ঘটাতে পারলেই জাতির জনকের জন্মদিনে প্রকৃত শুভেচ্ছা জানানো হবে।

ঘাতকের বুলেটে বিদীর্ণ বক্ষে বড় অভিমানে পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেও বাঙালির হৃদয়জুড়ে আপনি আছেন আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রবলভাবে, হে জাতির জনক! মহান সৃষ্টিকর্তা আপনাকে ও আপনার পরিবারের সব সদস্যকে জান্নাতবাসী করুন।

লেখক:  অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

ই-মেইল: [email protected]

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ