X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্নীতি সংস্কৃতি হয়ে গেছে ভারতে

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরী
২১ মে ২০১৬, ১৪:৪৫আপডেট : ২১ মে ২০১৬, ১৪:৫৩

বখতিয়ার উদ্দীন চৌধুরীপ্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ, বিধানচন্দ্র রায়, প্রফুল্লচন্দ্র সেন, অজয়কুমার মুখোপাধ্যায়, সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়, জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়- ভারত স্বাধীন হওয়ার পর গত ৬৯ বছর ধরে এ কয়জনই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। সিদ্ধার্থ, জ্যোতি আর বুদ্ধদেব ছাড়া সবাই ছিলেন চিরকুমার। মমতার চিরকুমারী হওয়াতে নাকি ভেজাল আছে। যুব কংগ্রেসের সভাপতি থাকার সময় তিনি নাকি যুব কংগ্রেসের এক নেতার সঙ্গে গোপনে বিয়ের মন্ত্র পড়েছিলেন- প্রকাশ হওয়ার আগেই নাকি বিয়ে ভেঙে যায়। তবু পশ্চিমবঙ্গের লোকেরা তার নাম চিরকুমারের খাতায় লিখেন।
এবারের নির্বাচনে মমতার দল ২১১ আসন পেয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস সরকার গঠন করবে। মমতা পুনরায় মুখ্যমন্ত্রী হবেন। মাথা গরম এ মহিলা জেতার বিষয়টা নিশ্চিৎ হয়ে তার স্বভাবসিদ্ধ মার-মার কাট-কাট কথা বলে উশৃঙ্খল কোনও আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটাননি। বরং কালিঘাটের তার টালিওয়ালা বাড়ি থেকে বের হয়ে হাজার হাজার কর্মীর সামনে ‘আমার মাথা নত করে দাও হে প্রভু, তোমার চরন ধূলার তলে, সকল অহঙ্কার হে আমার ডোবাও চোখের জলে’- রবি ঠাকুরের কবিতাখানি আবৃত্তি করে কর্মীদেরকে অভিনন্দন জানালেন।
ক্ষমতা মানুষকে আচরণ বদলাতে বাধ্য করে- এবার তার আচরণ বদলালো কিনা কে জানে। কংগ্রেস বামদের সঙ্গে জোট গঠন করেছিল। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। পূর্বের বিধানসভায় ৪২ আসন ছিল, এবার ৪৪ আসন পেয়েছে। রাজ্য বিধানসভায় এখন কংগ্রেসই বিরোধী দল। বামেরা পেয়েছে ৩২ আসন মাত্র। বিজেপি’র ৩ আসন। নরেন্দ্র মোদি মমতাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আর মমতা বলেছেন- লোকসভায় ও রাজ্যসভায় তৃণমূল বিজেপি সরকারকে ইস্যু ভিত্তিক সমর্থন দেবে।
বিধানসভার নির্বাচনে পূর্বেই মনে হয়েছিল বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের কোনও স্তরে একটি আঁতাত হয়েছে। লোকসভায় কোনও বিল পাস হলেও রাজ্যসভায় বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় বিল পাস করানো সম্ভব হচ্ছে না। মমতার এই সমর্থন বিজেপির জন্য খুবই প্রয়োজন ছিল। মোদি তা আদায় করতে পেরেছেন। মমতা কথা নড়চড় করার অবস্থানে নেই। কারণ নারদ কেলেঙ্কারি প্রকাশ হওয়ার পর লোকসভার স্পিকার ট্রুথ কমিশন গঠন করে দিয়েছেন। এল কে আদভানি কমিশনের প্রধান। কমিশন নারদ কেলেঙ্কারি নির্ণয় করে রিপোর্ট দিলে ৬ জন তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়কের সদস্যপদ খারিজ হয়ে যাবে। আমার মনে হয়- এ ভয়ে মমতা প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করবেন না।
আসাম বিধানসভার নির্বাচনে বিজেপি জোট গঠন করেছিলেন আসামগণ পরিষদের সঙ্গে। স্থানীয় বোদো সম্প্রদায়ও বিজেপির সঙ্গে ছিল। তারা ৮৬ আসন পেয়েছে। কংগ্রেস গত ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিল। সুতরাং প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার ঝাঁকুনি তো আসবেই। আসামে মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন কেন্দ্রের ক্রীড়ামন্ত্রী সর্বানন্দ। নির্বাচনে জিতেই সর্বানন্দ আসামের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বিজেপির নির্বাচনি এজেন্ডা ছিল আসাম থেকে বাঙালি মুসলমান বের করে দেওয়া।
তামিলনাড়ুতে ৩২ বছর পর জয়ললিতা রীতিভঙ্গ করে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন। করুনানিধির ডিএমকে এবং রামচন্দ্রনের আন্না-ডিএমকে পাঁচ বছর পর পর পালাক্রমে ক্ষমতায় আসে। আন্না দুরাই ডিএমকে দলের প্রতিষ্ঠাতা। কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী কামরাজের পতনের পর ডিএমকে দল ক্ষমতায় আসে এবং ১৯৫৭ সালের নির্বাচনের পর থেকে ডিএমকে তামিলনাড়ুতে ক্ষমতায় ছিল। আন্না দুরাই-এর মৃত্যুর পর তার দুই প্রধান সহকর্মীর মাঝে দল বিভক্ত হয়ে যায়। করুনানিধির ডিএমকে এবং রামচন্দ্রনের আন্না-ডিএমকে।

রামচন্দ্রনের মৃত্যুর পূর্বে তিনি তামিল সিনেমা জগতের নাম করা অভিনেত্রী ও তার প্রেয়সী জয়ললিতাকে আন্না-ডিএমকের নেতৃত্ব বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। সে থেকে আজ পর্যন্ত রামচন্দ্রনের প্রেয়সী জয়ললিতাই আন্না-ডিএমকের নেতৃত্বে আছেন এবং পালাক্রমে মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন। এবারের নির্বাচনে ডিএমকের ক্ষমতায় আসার পালা হলেও জয়ললিতার আন্না-ডিএমকে পুনরায় ক্ষমতা এসেছে।

পন্ডিচেরী বিধানসভার নির্বাচনে ক্ষমতায় এসেছে কংগ্রেস। কেরেলেও ১৯৫৭ সালের নির্বাচন থেকে পাঁচ বছর পর পর পালাক্রমে কংগ্রেস আর বামেরা ক্ষমতায় আসে। এতদিন কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল, এবার বামেরা জিতেছে এবং তারাই সরকার গঠন করবে।

ভারতের দুর্নীতির ইতিহাস বেশ প্রাচীন। চানক্য তার অর্থ শাস্ত্রে লিখেছেন- জলের মধ্যে মাছ জল খাচ্ছে কিনা যেমন বুঝা মুশকিল, ক্ষমতায় থাকা রাজ প্রতিনিধিরা ঘুষ নিচ্ছে কিনা তাও বুঝা কঠিন। ভারতে দুর্নীতির আলাপ-পুরানো বিষয়। তবে গত দুই দশকে এখন ভারতে দুর্নীতি আর দুর্নীতি বলে গণ্য হচ্ছে না। ভারতে দুর্নীতি এখন সংস্কৃতির মতো হয়ে গেছে। ভারতের রাজনীতিবিদরা এখন দুর্নীতিকে ভয় পায় না। দুর্নীতির জন্য এখন আর ভোটারদের কাছে জবাবদিহি করতে হয় না।

গতবার বিহার বিধানসভার নির্বাচনে লালু প্রসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দল নীতিশের দলের সঙ্গে জোট করে ৭২ আসন পেয়েছে। লালুর দুর্নীতির অভিযোগে ১০ বছর জেল হয়ে এখন জামিনে রয়েছে। নির্বাচনের যোগ্য। ১২শ’ কোটি পশু খাদ্যের টাকা মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় আত্মসাৎ করেছেন। এ বিষয়টা নিয়ে বিহারের মানুষ কোনও ভ্রক্ষেপই করেননি।

উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী তাজ করিডোরের আড়াই হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। মামলাও আছে অথচ বুক উঁচু করে চলেন। মুলায়েম সিং যাদবেরই একই অবস্থা। জয়ললিতার লুট, সুখ রামের লুট, ফার্নান্দেজের লুট- সবইতো ইতিহাসের বড় সড় লুটতরাজ।

হবিয়ানার তিন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন দেবীলাল, বংশীলাল, আর ভজনলাল- এরা তিনজনই ইতিহাস খ্যাত চোর। চোরের খাতায় শেষ নাম সংযুক্তি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। নারদ কেলেঙ্কারির তো ভিডিওচিত্রই রয়েছে। সারদা কেলেঙ্কারি তো হাজার কোটি টাকার। এরপরও বিধানসভার নির্বাচনে তামিলনাড়ুতে জয়ললিতা আর পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে এসেছেন। আগামী ২৬ মে সরকার গঠন করবেন। ভারতের রাজ ক্ষমতা কি চোরদের হাতে চলে গেল! চোর নির্বাচিত করার নির্বাচনের কি আর কখনও অবসান হবে না ভারতে! ভারত তো তাহলে চোরময় হয়ে যাচ্ছে।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক

[email protected]

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
হলিউডের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ক্যাটরিনা!
হলিউডের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ক্যাটরিনা!
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
মারা গেলো গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটি
মারা গেলো গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটি
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ