X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নারায়ণগঞ্জে সেলিম ওসমানরা কি অপ্রতিরোধ্য?

বিভুরঞ্জন সরকার
২৮ মে ২০১৬, ১২:২৪আপডেট : ২৮ মে ২০১৬, ১২:২৯

বিভুরঞ্জন সরকার আমার ছোটবেলার একটি ঘটনার কথা খুব মনে পড়ছে। সেটা ১৯৬৫-৬৬ সালের কথা। আমি সম্ভবত ষষ্ঠ বা সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি। রাজেন্দ্র লাল ভদ্র ছিলেন আমাদের স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষক। শিক্ষক হিসেবে যেমন তার সুনাম ছিল, তেমনি মানুষ হিসেবেও ছিলেন চমৎকার। তার আদি নিবাস ছিল পাবনা জেলায়। কিন্তু তৎকালীন দিনাজপুর জেলার (বর্তমান পঞ্চগড়) বোদা হাইস্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়ে সেখানেই প্রায় স্থায়ী হয়ে গিয়েছিলেন। চার ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে বোদাতেই সংসার পেতেছিলেন। তার ছেলেমেয়েরাও সবাই ভালো ছাত্রছাত্রী ছিল। এক মেয়ে লক্ষ্মী ছিল আমার সহপাঠী। আরেক মেয়ে ঝুমুরি, আমাদের ছোট। ভালো আবৃত্তি করতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দেবতার গ্রাস’ কবিতা আবৃত্তি করে স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মাত করে দিত সে। ‘চল তোরে দিয়ে আসি সাগরের জলে’ এখনও আমার কানে বাজে।
রাজেন স্যার নিজেও ছিলেন সংস্কৃতিকমনা মানুষ। ভালো কৌতুক বলতেন। পশুপাখির ডাক থেকে শুরু করে মানুষের বাচনভঙ্গি নকল করে হাস্যরসের জোগান দিতে তার জুড়ি ছিল না। তিনি ভালো পড়াতেন। তার আচার-ব্যবহারও ছিল মুগ্ধ করার মতো। তার টাইটেল ছিল ‘ভদ্র’। মানুষও বলতো, রাজেন বাবু সত্যিকার অর্থেই একজন ভদ্র মানুষ। সব মিলিয়ে স্যারকে উপেক্ষা করা বা অগ্রাহ্য করার শক্তি কারো ছিল না।
বেশ কিছুদিন আমরা ছিলাম স্যারের প্রতিবেশী অর্থাৎ স্যার যে বাসায় থাকতেন, আমরা ছিলাম পাশের বাসায়। একদিন সকালে স্যারের বাসা থেকে শোরগোল শুনে ছুটে যাই। ভাবলাম, রাতে বুঝি চুরি-ডাকাতি কিছু হয়েছে। কিন্তু গিয়ে দেখি ঘটনা অন্য। স্যারের বাসার ভেতর রাতের অন্ধকারে কেউ জবাই করা গরুর আস্ত মাথা ফেলে রেখে গেছে। কে এটা করলো, কেন করলো? একজন হিন্দু শিক্ষকের বাসায় গরুর মাথা ফেলার রহস্য কী? স্যারকে সেদিন খুবই বিচলিত ও বিহ্বল দেখেছিলাম। পরে জেনেছিলাম স্কুল থেকে স্যারকে সরানোর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তার বাসায় গরুর কাটা মাথা ফেলা হয়েছিল। তিনি চলে গেলে স্থানীয় কারো চাকরি হবে সম্ভবত সেজন্যই তাকে সরানোর মতলব আঁটা হয়েছিল। তিনি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হওয়ায় সহজভাবে তাকে স্কুল থেকে সরানো সম্ভব হবে না মনে করেই পরিকল্পনাকারীরা বাঁকা পথ বেছে নিয়েছিল। বাসায় গরুর মাথা ফেলে তাকে ভয় দেখানো হয়েছিল। যারা এটা করেছিল তারা ভেবেছিল বাসায় গরুর মাংস ফেলার পর নিষ্ঠাবান হিন্দু শিক্ষক চাকরির মোহে আর পড়ে থাকবেন না। অন্য কোথাও চলে যাবেন। তাকে সরানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সহজ হবে। কিন্তু এলাকাবাসী স্যারের পক্ষে দাঁড়ানোয় সেটা সম্ভব হয়নি।

আরও পড়তে পারেন: ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে সখ্য বাড়াতে চায় আ. লীগ
নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছিত করার তোলপাড় করা ঘটনাটি আমাকে এতদিন পর আমাদের এলাকায় প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিল। রাজেন্দ্র লাল ভদ্রকে স্কুল থেকে সরানোর জন্য তার বাসায় গরুর কাটা মাথা ফেলা হয়েছিল, আর শ্যামল কান্তি ভক্তকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে সরানোর জন্য তার বিরুদ্ধে ধর্ম-অবমাননার মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। রাজেন স্যার শিক্ষার আলো ছড়ানোর জন্যই নিজের এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় গিয়ে শিক্ষকতার পেশা বেছে নিয়েছিলেন। শ্যামল স্যারও নিজের জেলা গোপালগঞ্জ ছেড়ে নারায়ণগঞ্জ এসেছেন একই উদ্দেশ্যে। তিনি প্রায় ১৭ বছর ধরে যে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন, তিল তিল চেষ্টায় যে স্কুলটিকে তিনি গড়ে তুলেছেন, সেখান থেকে তাকে বিদায় করার জন্য যে উপায় বেছে নেওয়া হয়েছে, তা অত্যন্ত ঘৃণ্য। মিথ্যা অভিযোগ তুলে উত্তেজনা তৈরি করে, মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোক জড়ো করে তাকে মারধর করা হয়েছে এবং প্রকাশ্য সভায় স্থানীয় সংসদ সদস্য তাকে কান ধরে উঠবোস করিয়েছেন। সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান নারায়ণগঞ্জের অত্যন্ত প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য। তার বাবা-দাদা আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাদের বাসায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গিয়েছেন। এখন এই পরিবারের সদস্যরা কেউ আওয়ামী লীগ করেন, কেউ জাতীয় পার্টি করেন। কিন্তু যে যে রাজনীতিই করুন না কেন, তাদের প্রভাবপ্রতিপত্তি আকাশছোঁয়া। তারা দুই ভাই এখন দুই রাজনৈতিক দল থেকে সংসদ সদস্য হয়েছেন। রাজনৈতিক দল ভিন্ন হলেও ভয়ের রাজত্ব তৈরিতে তারা অভিন্ন। তারা আইনপ্রণেতা কিন্তু আইনকে অগ্রাহ্য করাই হলো তাদের বৈশিষ্ট্য। আইন যে আইনপ্রণেতাকেও আইনের ঊর্ধ্বে স্থান দেয় না- এই সাধারণ জ্ঞানটুকু পর্যন্ত তাদের নেই। তাদের বেপরোয়া দাপটের কাছে সবাই অসহায়, সবকিছু তাদের মর্জিমাফিক চলাই যেন রীতি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সেজন্য নারায়ণগঞ্জ এখন এক আতঙ্কের নগরী হয়ে উঠছে।

সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বলেছেন, ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করার জন্য শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। ধর্ম নিয়ে যে শ্যামল কান্তি ভক্ত কটূক্তি করেছেন তার কোনও প্রমাণ কিন্তু নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গঠিত তদন্ত কমিটিও এই অভিযোগের কোনও সত্যতা খুঁজে পায়নি। স্কুলের কোনও শিক্ষক কিংবা শিক্ষার্থী বলছেন না যে- এই শিক্ষক কোনওদিন ধর্ম নিয়ে কোনও ধরনের খারাপ মন্তব্য করেছেন। তাছাড়া দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে একজন হিন্দু হয়ে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কোনও কটূক্তি করা কী ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে সেটা বোঝার মতো কাণ্ডজ্ঞান না থাকলে শ্যামল কান্তি এতো বছর ধরে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছিলেন কিভাবে? প্রধান শিক্ষক যদি কোনও গুরুতর অন্যায় করেই থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে সংসদ সদস্য নিজের হাতে আইন তুলে নিলেন কোন যুক্তিতে? সেলিম ওসমান বলেছেন, উত্তেজিত জনতার হাত থেকে প্রধান শিক্ষককে বাঁচানোর জন্যই তিনি এটা করেছেন। এখানে প্রশ্ন হলো, জনতাকে কে বা কারা ‘উত্তেজিত’ করেছে? ধর্ম নিয়ে কোনও কথা না বলা সত্ত্বেও কারা তার বিরুদ্ধে এই প্রচার চালিয়েছে, তাদের খোঁজার কোনও চেষ্টা কি সংসদ সদস্য করেছিলেন? চিলে কান নিয়েছে শুনে তিনি চিলের পেছনে ছুটবেন, না আগে কানে হাত দিয়ে দেখবেন তার কান যথাস্থানে আছে কিনা?

আরও পড়তে পারেন: পাঠ্যসূচি বাতিল না করলে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ: চরমোনাই পীর

শ্যামল কান্তি স্বেচ্ছায় কান ধরে উঠবোস করেছেন বলে সেলিম ওসমান যে দাবি করেছেন, তা যে ডাহা মিথ্যা সেটাও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে। শ্যামল কান্তি ভক্ত নিজেই সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘সেদিন সেলিম ওসমান আমার দুই গালে দুটি করে চারটি চড় মারেন। এরপর বলেন, ‘শালা কান ধর। ১০ বার কান ধরে ওঠবোস কর।’ সেলিম ওসমান যে এ ধরনের কথা বলতে পারেন এবং এমন কাজ করতে পারেন, সেটা যারা বিশ্বাস করেন না, তারা সেলিম ওসমান সম্পর্কে প্রাথমিক কোনও ধারণাই রাখেন না।

নারায়ণগঞ্জে শিক্ষক লাঞ্ছনার খবর প্রচার হওয়ার পর সারাদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। একজন প্রধান শিক্ষককে কানধরে ওঠবোস করানোর ঘটনার প্রতিবাদে দেশব্যাপী নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ সমাবেশ হচ্ছে, মানববন্ধন হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, সাধারণ বোধবুদ্ধি আছে এমন সব মানুষই সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে ধিক্কার জানাচ্ছেন। তার বিচার দাবি করছেন। প্রভাবশালী মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারাও বলেছেন, যত ক্ষমতাধরই হোক, শিক্ষক লাঞ্ছনাকারীদের শাস্তি পেতেই হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্কুলের পরিচালনা কমিটি ভেঙে দিয়ে শ্যামল কান্তিকে স্বপদে বহাল করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। পরিচালনা কমিটির সভাপতির বোনকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদে বহাল করার উদ্দেশ্যেই শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র’ সাজানো হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর ছাপা হয়েছে। তাকে লাঞ্ছিত করার পর পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে সাময়িকভাবে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে বরখাস্তের চিঠিও তার হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্বপদে বহাল করলেই কি শ্যামল কান্তি ভক্ত ওই স্কুলে ফিরে গিয়ে আগের মতো দায়িত্ব পালন করতে পারবেন? নারায়ণগঞ্জ এখন তার কাছে কতটুকু নিরাপদ? স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া না হয়, তাহলে শ্যামল কান্তি নিজেও যেমন নিরাপদ বোধ করবেন না, তেমনি অঘটনের নায়করাও আস্কারা পেয়ে যাবেন। দেশজুড়ে যখন তার নিন্দা-সমালোচনার ঝড় বইছে তখন সেলিম ওসমান সদম্ভে ঘোষণা করেছেন, ফাঁসি হলেও তিনি ক্ষমা চাইবেন না। কারণ তিনি ঈমানদার মুসলমান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাছাড়া ‘সর্বস্তরের মুসলিম জনতা’র ব্যানারে কিছু মুখচেনা মানুষ নামিয়ে দেওয়া হয়েছে, যারা ‘ধর্ম অবমাননার’ অভিযোগে শ্যামল কান্তির কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিও সেলিম ওসমানের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে। অথচ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা এবং প্রভাবশালী মন্ত্রীরা শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সেলিম ওসমান জাতীয় পার্টির এমপি। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বিভিন্ন বিষয়েই মতামত ব্যক্ত করলেও তার দলের একজন এমপি যে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছেন তা নিয়ে মুখ খুলছেন না। তবে পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, সেলিম ওসমানের আচরণে জাতীয় পার্টি বিব্রত। তিনি যা করেছেন তাকে কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না। তার অপকর্মের দায় জাতীয় পার্টি নেবে না।

সেলিম ওসমান যদি ভুল স্বীকার করে ক্ষমা না চান তাহলে কী হবে? এ নিয়ে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, শেষ পর্যন্ত সেলিম ওসমানের কিছুই হবে না। উল্টো তিনি নারায়ণগঞ্জে যেভাবে নিজের সমর্থনে জনমত তৈরির চেষ্টা করছেন তাতে হয়তো তার হাতে নিগৃহীত শিক্ষককেই আবার দণ্ডিত হতে হবে। আবার কেউ কেউ এমনও বলছেন যে, এবার সেলিম ওসমান সহজে রেহাই পাবেন না। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে তার ব্যাপারে কঠোর মনোভাবের কথাই শোনা যাচ্ছে। সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই যদি গৃহীত না হয় তাহলে দেশের সংখ্যালঘুদের মধ্যেও খুব খারাপ প্রতিক্রিয়া হবে। সরকার যদি এক্ষেত্রে ‘শ্যামও রাখি, কূলও রাখি’ নীতি গ্রহণ করা হয় তাহলে অশুভ শক্তিকেই আস্কারা দেওয়া হবে। মানুষ সরকারের সক্রিয়তা দেখতে চায়।  

আরও পড়তে পারেন: সাবিরারাই কি সমাজের তারুণ্য?

জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে সরকারকে কাজ করতে হবে। ধর্ম অবমাননার কাল্পনিক অভিযোগ তুলে উন্মাদনা তৈরি করার বিপদজনক খেলা বন্ধ করতে সরকারকে অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ধর্ম-ব্যবসায়ীরা যেন কোনও সুযোগ তৈরি করতে না পারে সে দিকে সতর্ক নজর রাখতে হবে। এটা এক ভয়ানক খেলা। এর আগে রামুতে আমরা এই খেলার পরিণতি দেখেছি। রামুতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর নারকীয় তাণ্ডব শুরু হয়েছিল ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে। চাঁদে জামায়াত নেতা সাঈদীর মুখ দেখার গুজব মসজিদের মাইক থেকে প্রচার করে বগুড়ায় কী পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছিল তাও নিশ্চয়ই এত অল্প সময়ে আমার ভুলে যাইনি। নারায়ণগঞ্জে সেই একই খেলা যেন খেলতে দেওয়া না হয়। যারা বলছেন, শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ‘ধর্ম অবমাননা’ করেছেন তাদের প্রমাণ করতে হবে তিনি কিভাবে ধর্মের অবমাননা করেছেন। কেবল ধর্ম অবমাননা করেছেন- এই কথা বলে মানুষকে খেপিয়ে তোলার অপচেষ্টা যদি বন্ধ করা না হয়, তাহলে তার পরিণতি ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ হবে। কাউকে ঘায়েল করতে হলে যদি তার বিরুদ্ধে ধর্ম নিয়ে কটূক্তির প্রমাণহীন অভিযোগ তোলাই যথেষ্ট হয় তাহলে সুযোগসন্ধানীরা এর সুযোগ নিতেই থাকবে। শুধু সরকার বা নাগরিক সমাজ নয়, প্রকৃত আলেম-ওলামাদেরও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। যারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলতে চায় তাদের রুখতে হবে। যারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায় তাদের বদ মতলব সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হবে। 

পাকিস্তান ছিল দ্বিজাতি তত্ত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত একটি সাম্প্রদায়কি রাষ্ট্র। সে রাষ্ট্রেও সংখ্যালঘুদের ওপর যত না জুলুম নির্যাতন হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনাভিত্তিক বাংলাদেশ রাষ্ট্রে যেন কোনোভাবেই সংখ্যালঘু নির্যাতনের ক্ষেত্রে সে মাত্রা ছাড়িয়ে না যায়। আমার ছেলেবেলায় দেখেছি রাজেন স্যারের বাসায় গরুর মাথা ফেলার ঘটনার নিন্দায় সবাইকে একমত হতে। কিন্তু শ্যামল কান্তি ভক্তের ঘটনায় আমরা সবাই একভাবে রিঅ্যাক্ট করতে পারছি না বলেই কি সেলিম ওসমান ক্ষমা না চাওয়ার ধৃষ্টতা দেখানোর শক্তি ও সাহস পাচ্ছে? আমাদের মধ্যে বিভক্তির যে দেয়াল তৈরি হচ্ছে তা যেন কোনোভাবেই আর বড় হয়ে না ওঠে। আমরা শান্তির বাংলাদেশ চাই, সম্প্রীতির বাংলাদেশ চাই। একাত্তরে অকাতরে বুকের রক্ত ঢেলে স্বাধীন দেশ অর্জন করেছি ভূতের মতো পেছনে হাঁটার জন্য নয়।   

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
সবজির বাজার ঊর্ধ্বমুখী, তীব্র গরমকে দুষছেন বিক্রেতারা
সবজির বাজার ঊর্ধ্বমুখী, তীব্র গরমকে দুষছেন বিক্রেতারা
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কথা না বলতে আদালতের নির্দেশ
ইমরান খান ও বুশরা বিবিরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কথা না বলতে আদালতের নির্দেশ
বিতর্কিত আউটের ছবি পোস্ট করে মুশফিক লিখলেন...
বিতর্কিত আউটের ছবি পোস্ট করে মুশফিক লিখলেন...
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ