X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবদার

তুষার আবদুল্লাহ
০৯ জুলাই ২০১৬, ১৩:১৯আপডেট : ০৯ জুলাই ২০১৬, ১৩:২৪

তুষার আবদুল্লাহ ঈদের তৃতীয় দিন আজ। ঈদ আমেজ এখনও ফুরিয়ে যায়নি। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছে ঈদ উপহারের বায়না তো করাই যায়। দেশের তরুণদের পক্ষ থেকে এবং আম মানুষের পক্ষে দাবি করছি- আপনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি করার সুযোগ করে দিন। হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলার পর প্রকাশিত হয়- সমাজের উচ্চ তলার এবং উচ্চশিক্ষা নেওয়া তরুণরা জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। ঈদের দিন শোলাকিয়া ঈদ জামাত এলাকায় জঙ্গি হামলার পরও একই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনিও নিশ্চয়ই অবগত হয়েছেন, জঙ্গি বলে চিহ্নিত ও অভিযুক্তরা ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া। ব্যক্তিগতভাবে আমি কোনও বিশেষ মাধ্যম বা সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করতে রাজী নই। পরম্পরায় আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা যে পরীক্ষা ব্যবস্থায় রূপ নিয়েছে, তার কিছুটা দায় তো আছেই। শিক্ষার্থীরা জ্ঞান আহরণের চেয়ে ফলাফল লাভের প্রতি মনোযোগী। প্রতিযোগিতা ‘স্বর্ণালী পাঁচ’ এর জন্য। এই ‘স্বর্ণালী পাঁচ’ যে তাদের জ্ঞাননির্ভর শিক্ষাপদ্ধতি নয় তা এরইমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। ‘স্বর্ণালী পাঁচ’ নিয়ে যারা উচ্চশিক্ষা নিয়েছে, চাকরির বাজারে গিয়েছে, তাদের বড় একটি অংশই ফলাফল অনুযায়ী কুশলতা দেখাতে পারেনি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের শিক্ষার্থীরা এখন কেবলই ফলাফল এবং চাকরির বাজারমুখী। তারা করপোরেট প্রতিষ্ঠানের নেতা হতে চায়। কিন্তু দেশের, জনমানুষের নেতা হতে চায় না। সমাজ ও রাষ্ট্র তাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছে- করপোরেট নেতা হতে পারলেই রাজনীতির ভিসা মিলবে। অথচ আড়াই দশক আগেও তো কলেজে পা রাখা শিক্ষার্থীর আইকন ছিলেন সেই কলেজছাত্র সংসদের ভিপি বা কলেজছাত্র সংগঠনের কোনও নেতা। আরও বড় পরিসরে জাতীয় রাজনীতির কোনও নেতা। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে একজন শিক্ষার্থী প্রবেশ করতো কোনও রাজনৈতিক মতাদর্শের খোঁজে বা সঙ্গে নিয়েই। তার চোখেও থাকতো নেতা হওয়ার স্বপ্ন। সেই স্বপ্নের এখন কুঁড়ি মেলে না আমাদের শিক্ষার্থীদের চোখে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, একজন শিক্ষার্থী কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া মাত্র তার কাছে নানা ছাত্র সংগঠন নিজেদের আদর্শ নিয়ে যেত। দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করতো। শিক্ষার্থীরা বিচার-বিবেচনা করে সংগঠন বেছে নিত। হল পর্যায়েও ছাত্র সংসদ ছিল। ছাত্র সংসদগুলো তাদের বাৎসরিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করতো। প্রকাশ করতো বার্ষিকী সংকলন। অর্থাৎ শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রছাত্রীরা তাদের সৃজনশীলতা প্রকাশের সুযোগ পেত। ছাত্র সংগঠনগুলোও ভোটের স্বার্থে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতো সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। ছাত্র সংসদ সক্রিয় থাকা মানে ছাত্রদের সঙ্গে শিক্ষকদের ভাব বিনিময়ও সচল থাকতো। ছাত্র সংসদের অনুপস্থিতিতে সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে। ছাত্র সংগঠনগুলোর রাজনীতি এখন আর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক নেই। এই বিচ্ছিন্নতার সুযোগ নিয়েছে মৌলবাদী সংগঠনগুলো। একেকজন শিক্ষার্থী যখন বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা, সেখানে তাকে একতরফা আদর্শের বয়ান দিয়ে কাবু করা সহজ। আর আপনি তো জানেনই, তারুণ্য তার শ্রেষ্ঠত্বের প্রকাশ করতে চায়। তার মধ্যে সহজাত তারকা হওয়ার বাসনা লুকায়িত থাকে। নিজেকে প্রকাশের সুযোগ খুঁজতে থাকে সে। যখন সে নেতৃত্ব দেওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারছে না, তার সামনে কোনও আদর্শিক নেতার উপস্থিতি থাকে না, সৃজনশীলভাবে আদর্শ বাস্তবায়িত করার সুযোগ থাকে না। তখন তার কাছে বিকল্প হিসেবে তুলে ধরা হয় ধর্মকে বিকৃত করে সৃষ্ট আদর্শ। আমাদের তরুণদের একটি অংশ সেই আদর্শের টোপে ধরা দিচ্ছে, দিয়েছে। এখন হয়তো কেবল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নাম প্রকাশিত হচ্ছে। কিন্তু এর সঙ্গে বাংলা মাধ্যম বা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও যুক্ত।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ডিজিটাল বাংলাদেশ সবার কাছে তথ্যপ্রযুক্তি সহজলভ্য করবে। দিন কে দিন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা অপেক্ষাকৃত ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে বেশি। তাই ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাদেরকে পাকড়াও করা যাচ্ছে বেশি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এই টোপের মুখে আছে। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র সংসদকে অবলম্বন করে যদি শুদ্ধ রাজনীতির অনুশীলন শুরু হয়, তবে এই আড়াই দশক পড়ে এসে সেই অনুশীলনের মূলমঞ্চ হয়ে উঠবে ইন্টারনেট। যে মঞ্চের কুশীলব হবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রে অতিশয় ক্ষুদ্র নাগরিক হিসেবে আমি উচ্চকণ্ঠে বলতে পারি- আমাদের তরুণদের চোখে যদি আবার নেতৃত্বের স্বপ্ন জাগিয়ে দিতে পারি। তাহলে জঙ্গি বা যেকোনও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা আমাদের জন্য সহজ হবে। কারণ যে তারুণ্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের স্বপ্ন দেখবে, সে কখনোই ধর্মকে বিকৃতভাবে ব্যবহার করে বিপ্লবের দুঃস্বপ্ন দেখতে পারে না। সৃজনশীল ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির অভিভাবক হিসেবে, আপনি আবদারটি সদয় বিবেচনা করবেন।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ