X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আমি ‘গাধা’ বলছি

নাদীম কাদির
২৫ জুলাই ২০১৬, ১২:৪৪আপডেট : ২৬ জুলাই ২০১৬, ১২:৫৫

নাদীম কাদির এক বছর আগে কাজের খাতিরে লন্ডনে থাকার সময় আমি বুঝতে পারি, বাংলা সংবাদ মাধ্যম ও মূলধারার ইংরেজি সংবাদ মাধ্যমের সামনে সরকারের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করা কতটা কষ্টকর।
ঢাকার সহকর্মীরা আমার পরিচয় জানেন। আর ইংরেজি সংবাদমাধ্যমে কাজ করা বন্ধুদের আমি বলেছি, আমি পেশাগতভাবে একজন সাংবাদিক। আমার জীবনের বেশিরভাগ সময় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে কাজ করেই কেটেছে। ইংরেজি সংবাদ মাধ্যমের বন্ধুরা এজন্য আমাকে শ্রদ্ধা করেন। আর এখানে একটি পারস্পরিক বোঝাপড়া রয়েছে।
তারা পেশাগত অবস্থান থেকে বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্পর্কে করা আমার মন্তব্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন, তবে সেটাও শ্রদ্ধার সঙ্গে। লন্ডনের বাংলাদেশ হাই কমিশনে এখন একজন উপযুক্ত ব্যক্তি রয়েছেন, যা আগে ছিল না। তারা এ বিষয়টির প্রশংসা করেন।
উত্তরাধিকারসূত্রে আমার একটি অফিস আছে, যা আমার পদবির তুলনায় নগণ্য। তাই ওই অফিসকে পরিবর্তন, সংস্কার ও সাজিয়ে নিতে হয়েছিল। উত্তরাধিকারসূত্রে আরও পেয়েছিলাম অকার্যকর প্রিন্টার, ভাঙা টেবিল ও আংশিক কার্যকর পুরনো কম্পিউটার। সেই সঙ্গে রয়েছেন একজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা, যিনি আমার প্রত্যেক পদক্ষেপে কেবল ঘাবড়ে যান আর নিয়মিত সংবাদ শিরোনাম পাঠান। কিন্তু তিনি এখন অনেক বেশি সাহসী ও কর্মক্ষম হয়ে উঠেছেন।
কিন্তু দেশে ভিন্ন মতাদর্শে বিশ্বাস করা আমার কিছু সহ-সাংবাদিক ও এখানকার কিছু বাংলা সংবাদমাধ্যমের মনোভাব ও আচরণ দুঃখজনক। এটি বেদনাদায়ক। সংবেদনশীল পদে নিজের সহকর্মীকে আক্রমণ করাটা ফ্যাশন হয়ে উঠেছে। কারণ তারা যা খুশি তা-ই বলতে পারেন।
লন্ডনে আসার সপ্তাহখানেকের মধ্যেই বিরোধী মতের কিছু বাংলা সংবাদপত্র তীর্যকভাবে দাবি করলো, প্রেস মিনিস্টার তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। তারা এটুকুও বোঝার চেষ্টা করেননি, একজন মানুষ, যাকে বছরের পর বছর কিছু নির্দেশনা মেনে চলতে হয়, দায়িত্বে আসা মাত্রই তার বিরুদ্ধে শুরু হলো আক্রমণ। আমি তাদের বললাম, তারা আমাকে ‘বিনামূল্যে প্রচারণা’ দিয়েছেন, আর এজন্য আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি কী করেছি, ভবিষ্যতে তারা তা বলতে পারবেন। তবে এই বিষয়টি আমাকে ব্যথিত করেছে। যদিও তাদের মধ্যে কেউ কেউ এজন্য ক্ষমাও চেয়েছেন।
এরপর লিখলেন লন্ডন থেকে ঢাকার প্রধান সংবাদমাধ্যমগুলোর জন্য কাজ করা এক তরুণ বাংলাদেশি-ব্রিটিশ সাংবাদিক। আবারও হাইকমিশনের প্রেস উইংয়ের কাছে একমুখী বক্তব্য হাজির করা হলো। এমন একটি ঘটনার উল্লেখ করা হয়, যার সঙ্গে হাইকমিশনের প্রেস উইংয়ের কোনও সম্পর্ক নেই। আর এর মাধ্যমে সাংবাদিকতার মূলনীতিকেই ছুড়ে ফেলা হয়।
সম্প্রতি প্রথম সারির একটি সংবাদমাধ্যমে কাজ করা এক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক জঙ্গি হামলার সময়ে প্রধান সংবাদমাধ্যমগুলোর সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে  হাইকমিশনে প্রেস মিনিস্টারের ভূমিকা সম্পর্কে ফেসবুকে স্ট্যাটাস প্রশ্ন তুলেছেন। হ্যাঁ, কোনও ব্যক্তি সবসময় সমালোচনা ও প্রশ্ন করতে পারেন। কিন্তু কিছু লেখার আগে তাকে ওই বিষয়ের ওপর গবেষণা করতে হবে। এটি মূলত হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে সংবেদনশীল সময়ে সহ-সাংবাদিককে সংবেদনশীল অবস্থায় আঘাত করে তার পতন নিশ্চিত করে আনন্দ অনুভব করারই নামান্তর।

পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম, যা আমাদের সংবাদমাধ্যম থেকে অনেকটাই ভিন্নভাবে কাজ করে, সে সম্পর্কে ওই জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকের কোনও ধারণাই নেই। ঢাকায় আমরা সাংবাদিকরা কূটনৈতিক মহলের নিমন্ত্রণ পেলে খুবই খুশি হই। কিন্তু লন্ডনে আপনার সবচেয়ে কাছের বন্ধুকেও যদি নিমন্ত্রণ করা হয়, সেখানে নিমন্ত্রণ গ্রহণের ক্ষেত্রে কিছু অতিরিক্ত সময় বরাদ্দ রাখতে হয়। অতিথি তাতে বুঝে নিতে পারেন, এই সাক্ষাতে তার কোনও ফায়দা আছে কিনা। এখানে সবাই পেশাগত কাজ নিয়ে ব্যস্ত, আর বাংলাদেশের মতো সংবাদমাধ্যমকে খুঁজে পাওয়াটা সহজ হয়। আমার ধারণা ওয়াশিংটন বা নয়াদিল্লির ক্ষেত্রেও একই কার্যক্রম বজায় থাকে।

আমার ওই সহকর্মীর ফেসবুক স্ট্যাটাসের পর সেখানে তার এক বন্ধু, যিনি মধ্যপ্রাচ্যে অ-বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে নিযুক্ত, তিনি লেখেন যে, ওই স্ট্যাটাসের সঙ্গে তিনি পূর্ণ সহমত পোষণ করেন। তিনি প্রেস মিনিস্টারদের ‘গাধা’ বলে উল্লেখ করেন। কেউ এর প্রতিবাদ করেনি। কিভাবে মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করা, সাংবাদিকতা বা সরকারে কাজের অভিজ্ঞতা ছাড়াই কেউ বলতে পারেন, কোনটা সম্ভব অথবা অসম্ভব।

‘গাধা’ হিসেবে আমি কেবল বলতে পারি, আমি নিজের ঢোল নিজেই পেটাতে চাই না, তবে আমার কাজই তাদের ভাষ্যকে ভুল প্রমাণিত করবে।

শুধু একটা প্রশ্ন, পাঠক, আপনারা কি জানেন ওয়াশিংটন, নয়াদিল্লি ও লন্ডনের তিন প্রেস মিনিস্টার কারা? তাহলে হয়তো বহু ভুলত্রুটি সহকারেই আমাদের ‘গাধা’ বলাটাকে আপনারা সমর্থন করবেন না। আমাদের অবশ্যই বড়দের শ্রদ্ধা করতে শিখতে হবে। আর এমন মন্তব্য থেকে বিরত থাকতে হবে, যা আমাদের পেশা অথবা কোনও নির্দোষ ব্যক্তির মর্যাদাকে খর্ব করে।

লন্ডনে আমার সাক্ষাৎকার ও  কাজের বিষয়ে অনেক গল্প রয়েছে। বন্ধুরা আমার ফিরে আসার অপেক্ষায় আছেন, যখন আমার ‘প্রিয় পাপা এবং আম্মু: লন্ডনে আমার কূটনৈতিক সীমাবদ্ধতা’ শীর্ষক বইটি প্রকাশিত হবে।
লেখক: সাংবাদিকতায় জাতিসংঘের ড্যাগ হ্যামারসোল্ড স্কলার এবং লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার।

আরও খবর: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ সন্দেহভাজন জঙ্গি এখন কোথায়?

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ধানক্ষেত পাহারা দিতে গিয়ে বুনো হাতির আক্রমণে কৃষক নিহত
ধানক্ষেত পাহারা দিতে গিয়ে বুনো হাতির আক্রমণে কৃষক নিহত
কোনও রান না দিয়ে ৭ উইকেট, টি-টোয়েন্টিতে ইন্দোনেশিয়ার বোলারের বিশ্ব রেকর্ড
কোনও রান না দিয়ে ৭ উইকেট, টি-টোয়েন্টিতে ইন্দোনেশিয়ার বোলারের বিশ্ব রেকর্ড
রাজধানীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুল শিক্ষার্থীসহ নিহত ২
রাজধানীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুল শিক্ষার্থীসহ নিহত ২
ঢামেক হাসপাতালে কারাবন্দীর মৃত্যু
ঢামেক হাসপাতালে কারাবন্দীর মৃত্যু
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ