X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইসলামাবাদ প্রশ্নে ঢাকার নতুন কূটনীতি

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৪:০৩আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৫:০৯

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধী মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর করার পর যথারীতি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পাকিস্তান ও তুরস্ক। একজন স্বদেশি ভাইয়ের জন্য পাকিস্তানের মনে কষ্ট আছে বুঝলাম, কিন্তু তুরস্ক কেন? মীর কাশেম আলীদের পাকিস্তানিরা সচেতনভাবেই স্বদেশি হিসেবে বিবেচনা করে। তুরস্কের এ কে পার্টি ব্রাদারহুড নেটওয়ার্কের দল। সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ব্রাদারহুড ফ্র্যাঞ্চাইজের উপমহাদেশীয় সংস্করণ জামায়াতে ইসলামী। তুরস্ক নিয়ে এ মুহূর্তে বিস্তারিত আলোচনায় না গিয়ে এটুকু বলা যায়, এরদোয়ানকে মনে রাখতে হবে পাকিস্তানের মতো তার দেশেরও গণহত্যা করা নজির।   
ভয়ংকর নিধন যজ্ঞ, লক্ষ লক্ষ হত্যা, নারীর সম্ভ্রম লুট কোনও কিছুকেই ১৯৭১-এ অপরাধ মনে করেনি মীর কাশেমরা। পাকিস্তানও করেনি। যে দেশটিকে তারা চায়নি, তারা সেদেশেই এতো অপরাধ করেও সব ধরনের আইনি সাহায্য ও রাষ্ট্রীয় সুবিধা ভোগ করে, বিচারিক প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপ পেরিয়ে এরা শাস্তি পেয়েছে। এই জঘন্য ঘাতকরা যা করেছে একাত্তরে আজ যে বিচার হচ্ছে, তা তাদের পাপের তুলনায় অতি সামান্য।
বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী। বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ আন্দোলন করে ক্ষমতায় যেতে। আর দেশে থাকা গণতান্ত্রিক পন্থার সুবিধাও তারা কাজে লাগাচ্ছে। আর দেশে দেশ হিসেবে পাকিস্তান নিজে যুদ্ধাপরাধী। আর এখানেই বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রে এক হয়ে যায় জামায়াত আর পাকিস্তান। বাংলাদেশকে নিয়ে পাকিস্তানি কূটচাল অব্যাহত থাকবে বলে মনে হচ্ছে। বাংলাদেশ বিরোধী চক্রান্তে পাকিস্তানের সক্রিয়তাকে খুব সতর্কভাবে মোকাবিলা করতে হবে। মনে রাখতে হবে জামায়াত ছাড়াও পাকিস্তানি আনুগত্যে বিশ্বাসী লোক, গোষ্ঠী ও দলের অভাব নেই বাংলাদেশে।
বাংলাদেশের একান্ত নিজস্ব, নিতান্ত অভ্যন্তরীণ কাজে কেন নাক গলায় পাকিস্তান? ছোট প্রশ্ন, উত্তর বড়। এ কারণে বড় যে পাকিস্তান আজ বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক রাষ্ট্রের একটি। ফলে বিশ্বের যেকোনও প্রান্তের যেকোনও সন্ত্রাসীকে এই দেশটি তার লোক মনে করে। মীর কাশেম, নিজামীরা ১৯৭১-এ মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তারা সেসময় পাকিস্তানের সঙ্গে ছিল, আর সে কারণেই পাকিস্তান এদের রায় হওয়ার পরপর বিবৃতি দেয়, বিষয়টি ঠিক এরকম নয়।

আজ বিশ্বব্যাপী যে জঙ্গিবাদ আর সন্ত্রাসের তাণ্ডব, তার জন্মদাতাদের একজন পাকিস্তান। বাংলাদেশ প্রতিবারই পাকিস্তানি প্রতিক্রয়ার কড়া প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে পাকিস্তান ঠিকই কথা বলে চলেছে। এর পেছনে রয়েছে অন্যরকম এক উদ্দেশ্য। বাংলাদেশের মানুষের কাছে পরাজিত পাকিস্তান মুক্তিযুদ্ধের পর থেকেই বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তার বড় উদ্দেশ্য এ দেশকে বিভাজিত করে রাখা আর সেই পরিকল্পনায় তার হয়ে এদেশে ষড়যন্ত্র করছে জামায়াতে ইসলামসহ একট বড় রাজনৈতিক গোষ্ঠী।  

কিন্তু একটুকুই শুধু নয়। পাকিস্তান চায় সন্ত্রাসের লালন। সন্ত্রাসের এক বৃহৎ আন্তর্জাতিক মঞ্চ পাকিস্তানের লক্ষ্য। তবেইনা তার পক্ষে দক্ষিণ এশিয়ায়, বিশেষ করে ভারত, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানে, তার প্রভাব বজায় রাখা সম্ভব হবে। সামাজিক, অর্থনেতিকভাবে ভারত থেকে বটেই, বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে অবস্থান করা পাকিস্তান চায় অন্যরাও তার মতো পিছিয়ে থাকুক, অন্ধকারের শক্তির অভয়ারণ্য হোক।

বাংলাদেশ বারবার কড়া প্রতিবাদ জানায়। পাকিস্তানকে মনে করিয়ে দেয় পাকিস্তান সীমা লংঘন করছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। কিন্তু পাকিস্তান দমে না। তাই ইসলামাবাদ প্রশ্নে এক নতুন কূটনীতির কথা ভাবতে হবে ঢাকাকে। আন্তর্জাতিকভাবে পাকিস্তানের ১৯৫ যুদ্ধাপরাধীর বিচারকে সামনে নিয়ে আসার সময় এসে গেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের মাত্রা কী হবে তা যেমন ঠিক করা দরকার তেমনি প্রয়োজন বাংলাদেশে আইএসআই তৎপরতা সম্পর্কে সচেতনতা। কঠোর নজরদারি দরকার পাকিস্তানি নাগরিক যারা এদেশে আসা যাওয়া করছে তাদের ব্যাপারে। তবে কূটনীতি প্রশ্নে বাংলাদেশকে এর চাইতেও এগিয়ে ভাবতে হবে যখন দেশটি পাকিস্তান।   

প্রতিটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশকে এখন বলতে হবে সন্ত্রাসবাদ আর জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অন্তরায় পাকিস্তান। তার আসকারাতেই বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ বাড়ছে, আর একাজে জঙ্গিদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা করছে জামায়াতে ইসলামী ও তার মিত্ররা। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারে পাকিস্তানের দুঃখ পাওয়া, প্রতিক্রিয়া দেওয়া সবই প্রকারান্তরে জঙ্গিবাদের পক্ষে অবস্থান নেওয়া।    

এটা প্রমাণিত হয়েছে একাধিকবার যে আমাদের প্রতিবেশি ভারতেও সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে পাকিস্তান থেকে আসা সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে। বাংলাদেশেও আজ যারা সন্ত্রাস করছে, তাদের অনেকের আন্তর্জাতিক যোগাযোগের কথা উচ্চারিত হচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় যে রাজনৈতিক শক্তি এদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে তারা সবই পাকিস্তানপন্থী ইসলামি রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠী। তাই আজ বিশ্ব পরিসরে জোর গলায় বাংলাদেশকে বলতে হবে, পাকিস্তান গোটা দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে নিরন্তর সন্ত্রাস লালন করে চলেছে।

বাংলাদেশের কূটনীতির একটি বড় দিক ভারসাম্য। কারো সাথে শত্রুতা নয়। কিন্তু যে শত্রুতা করে তার সাথে তাহলে আচরণ কী হবে? সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদের সঙ্গে আপোসে কি চলে? চলে না। বাংলাদেশের অস্তিত্ব আর প্রগতির স্বার্থেই প্রতিটি আন্তর্জাতিক মঞ্চে এখন সরব হওয়ার সময়। সব ফোরামে বলতে হবে পাকিস্তানের দূরভিসন্ধির কথা। আর সেটাই হবে বাংলাদেশের কূটনীতির এক নতুন যাত্রা।

লেখক: পরিচালক বার্তা, একাত্তর টিভি

আরও খবর: পাকিস্তানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল ‘নব্য জেএমবির’ দুই দম্পতি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
চারতলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে মাদ্রাসাছাত্রীর মৃত্যু
চারতলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে মাদ্রাসাছাত্রীর মৃত্যু
বাংলাদেশে চিকিৎসা খাতে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশে চিকিৎসা খাতে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী
এবার ঘুমটা ভালো হবে ডু প্লেসির
এবার ঘুমটা ভালো হবে ডু প্লেসির
সৎ মাকে বটি দিয়ে কোপালো কিশোর, ঢামেকে মৃত্যু
সৎ মাকে বটি দিয়ে কোপালো কিশোর, ঢামেকে মৃত্যু
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ