X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আদালতকে আলো জ্বেলে যেতেই হবে

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
১৮ জানুয়ারি ২০১৭, ১৫:৫৮আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০১৭, ১৬:০৪

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের রায় নিয়ে যখন আলোচনা করছি, তখন ভাবছি এই বন্দর নগরে আরেকজন পিতা প্রিয় সন্তান ত্বকী খুনের বেদনা বয়ে বেড়াচ্ছেন, অপেক্ষায় আছেন কবে বিচার পাবেন। সারা দেশে যখন এ নিয়ে তুমুল আলোচনা করছে, অনেকেই সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন, তখন কুমিল্লায় তনুর মা কিংবা চট্টগ্রামে নিহত মিতুর বাবা বিচার পাওয়া না পাওয়ার হিসেব করছেন। আমরা আশা করবো নিশ্চয় একদিন মালিবাগের বুশরার মা’র মতো তাদের উচ্চারণ করতে হবে না ‘বুশরা বলে কি কেউ ছিল’?
প্রত্যাশিত রায় হয়েছে নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার। সাতজন নিরীহ মানুষের হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত খুনিদের মধ্যে ২৬ জনের ফাঁসির আদেশ হয়েছে, বাকি ৯ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। আমরা জানি নিম্ন আদালতের এই বিচারপ্রক্রিয়া সমাপন এবং দণ্ড কার্যকর করতে আরও দীর্ঘ পথ পার করতে হবে। আইনের শাসন বলবৎ হওয়ার প্রক্রিয়াটি শুরু হলো মাত্র, সমাপ্তি নয়।
খুনিরা যাদের হত্যা করে, তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করতে গেলে হত্যাকারীকে কঠোর দণ্ড বুঝিয়ে দিতে হয়। নূর হোসেন ও র‌্যাব কর্মকর্তাদের অপরাধ মার্জনার যোগ্য ছিল না। নিম্ন আদালত তা দ্ব্যর্থহীন ভাবে জানিয়েছে। এখন দেখার পালা বিষয়টি উচ্চ আদালত হয়ে কার্যকর করার যে দীর্ঘ প্রক্রিয়া সেখানে এই দ্ব্যর্থহীনতা কতটুকু থাকে। ঘৃণ্যতম অপরাধীকেও গণতন্ত্র আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হয়। এখানেও তার ব্যতিক্রম ছিল না।
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলা নিয়ে অপেক্ষার একটি পর্যায় শেষ হয়েছে। ঠাণ্ডা মাথায় নৃশংস কায়দায় সাতজনকে খুন করার ঘটনায় স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা ও একটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যদের সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠায় শুরু থেকেই এই মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে জনমনে সংশয় ও সন্দেহ দেখা দিয়েছিল। মামলার রায় সেই সংশয় দূর করেছে। খুন করে লাশ যে কায়দায় নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল, সে খবরে দেশবাসী যেমন শিউরে উঠেছিল, তেমনি এই নৃশংস ঘটনার সঙ্গে র‌্যাবের একটি ইউনিটের প্রায় সব সদস্যের জড়িত থাকার অভিযোগ পুরো দেশকে বিস্মিত করেছিল।

রায় হয়েছে। একদিন দীর্ঘ পথ পেরিয়ে চূড়ান্ত রায় কার্যকর হবে, এটাও প্রত্যাশা। কিন্তু অনেক প্রশ্নের উত্তর দরকার। প্রশাসন ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় কিভাবে ক্ষমতাসীন দলের একজন স্থানীয় নেতার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি ইউনিটের অশুভ আঁতাত গড়ে উঠেছিল? কে বা কারা তাদের মদদ দিয়েছে? এসব বিষয় তলিয়ে দেখা দরকার। সমস্যার গোড়ায় যেতে না পারলে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় এ ধরনের মাফিয়া চক্র গড়ে ওঠার সম্ভাবনা থেকেই যাবে।

অপরাধ কমছে না। সব ধরনের অপরাধই বাড়ছে। কখনও কমেও না। শুধু দেখতে হয় অপরাধীরা শাস্তি পাচ্ছে কিনা। লেখার শুরুতে আরও বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর খুনের কথা বলছিলাম। আমরা কোন খুনকে চাঞ্চল্যকর বলি, কোনটিকে বলি না। কিন্তু যারা স্বজন হারায় তাদের কাছে এসব বিশেষণের কোনও অর্থ নেই। তারা অপরাধীর শাস্তি চায়, বিচারের আশায় দিন গুনে।

এ দেশে সমাজবিরোধীরা সব সময়ই অপরাধ করে পার পেয়ে যায়, কারণ তাদের মাথায় হাত রাখার মতো ক্ষমতাসীনের অভাব হয় না। আর একারণেই অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য হয়ে দাঁড়ায় এক একটি জনপদ। সরকারে দল বদল হয়, তেমনি করে নতুন নতুন কায়দায় অপরাধি চক্র গড়ে ওঠে।

আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা দুস্কৃতিকারী ও অপরাধীদের এমন বন্ধু হলে মানুষের যাওয়ার পথ কোথায়? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এই রায় সবার জন্য একটি বার্তা। আশা করছি এই বার্তার গভীরতা অনুভব করবে সংশ্লিষ্টরা।

খুচরা অপরাধ ছাড়াও অপহরণ, মুক্তিপণ দাবি, সেই পণ আদায় না হলে খুন ইত্যাদি সংগঠিত অপরাধের অন্যতম প্রধান ডেরা নারায়ণগঞ্জ। আছে আরও বেশ কিছু জনপদও। কোনও কোনও পুলিশকে আপাতদৃষ্টে খুব তৎপর ও সপ্রতিভ বলে মনে হলেও কার্যক্ষেত্রে এই পুলিশ নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে কতটা সফল, তা নিয়ে গভীর সংশয় আছে। তাই সামগ্রিকভাবে অপরাধীদের মোকাবিলায় পুলিশের সক্ষমতার বিষয়টিও ভাবনার বিষয়।

সাত খুন মাফ বা জোর যার মুল্লুক তার যে সব সময় হয় না তার দৃষ্টান্ত এই রায়। কিন্তু পুরোপুরিভাবে এখনও বলতে পারছিনা যে, আমরা এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসেছি। এ দেশে যিনি বা যারা ক্ষমতাবান তারাই সব কিছুর ওপর অধিকার বুঝে পান, আর কেউ নয়। সাথে যদি প্রশাসন থাকে তাহলে সে সর্বময়তা ঠেকায় কে? সাত খুন একটি ভয়াবহতম ঘটনা। তার অভিঘাতে আমরা সকলেই নড়েচড়ে গিয়েছিলাম। নীরবতার কোনও কারণও ছিল না। ভয় ছিল, কারণ অনেকাংশেই প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থা খুব ধীরে চলে। এদেশে তদন্ত হতে বছর গড়ায়, অপরাধীদের আদৌ চার্জশিট দেওয়া হবে কিনা কেউ জানে না, শুনানি শেষ হতে বছর গুনতে হয়, আর অন্তিম ফললাভ হতে যুগাবসান হতে পারে। প্রশাসনের এই শ্লথগতি, এবং অনেক সময় প্রভাবশালী অপরাধীকে আড়াল করে ফেলে।

মানুষ অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশের কাছে গিয়ে বিচার পায় না, নাগরিক সমাজও বড় অসহায়। রাজনীতি আর প্রশাসনের নির্লজ্জ স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধতার জন্য আপাতত একটিই রাষ্ট্রীয় রক্ষাকবচ: বিচারবিভাগ।

প্রতিটি ক্ষেত্রে বিচার বিভাগ এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে এটা মানুষের অন্তরের চাওয়া। আদালত যত বার আলোটি জ্বালাবার চেষ্টা করবে, তাকে নিভিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও হবে। অন্ধকার রাজনীতির কব্জা দেশে চেপে বসেছে। কিন্তু আদালতকে আলো জ্বেলে যেতেই হবে।

লেখক: পরিচালক বার্তা, একাত্তর টিভি      

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ঢামেক হাসপাতালে কারাবন্দীর মৃত্যু
ঢামেক হাসপাতালে কারাবন্দীর মৃত্যু
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনও পরিবর্তন হবে না: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনও পরিবর্তন হবে না: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ