X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘পুলিশের কাজ পুলিশ করেছে’

তুষার আবদুল্লাহ
২৮ জানুয়ারি ২০১৭, ১২:৫০আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০১৭, ১২:৫৬

তুষার আবদুল্লাহ দেশের বাইরে থেকে এসে ইমিগ্রেশন, কাস্টমস কর্মকর্তাদের উষ্ণ ব্যবহার উপভোগ করে গাড়ির জন্য টার্মিনালে এসে দাঁড়ালাম। গাড়িতে উঠতে যাবো, এমন সময় একজন পুলিশ কর্মকর্তা এসে গাড়ি থেকে মালামাল নামাতে বললেন। কেন নামাতে হবে কোনও যৌক্তিক কারণ বলতে পারছেন না। কাস্টমস পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করে বেরিয়ে এসেছি। পুলিশের কোনও তল্লাশির দরকার হলে আগেও দেখতে পারতেন। কিন্তু না, তিনি মালামাল দেখবেন। দেখতে বলা হলো। তিনি বললেন, মালামাল ভেতরে নিতে হবে। কেন? ভেতরের পরীক্ষার পর আবার কেন নিতে হবে কোনও উত্তর নেই। একাধিক যাত্রীদের সঙ্গে এই কর্মকর্তা কাজটি করে যাচ্ছেন। কারণ জানতে চাইলে যাত্রীদের সঙ্গে শুরু করলেন অশোভন ব্যবহার। একজন যাত্রী বাদে সবাই প্রতিবাদ করলেন। তিনি প্রতিবাদ কেন করছেন না, জানতে চাইলে বললেন- ‘পুলিশের কাজ পুলিশ করছে। আমি তো মানুষ।’
একটি দম্পতি বিকেল বেলা কোথাও যাওয়ার উদ্দেশে বেরিয়েছিল। তারা রিকশাতে ছিলেন। চেকপোস্টের কাছে রিকশা থামতে বলা হলো। রিকশা থামলো। মহিলার ভ্যানেটি ব্যাগ তল্লাশি করা হলো। পুরুষের পকেট- মানিব্যাগ। তারপর তাদের কাছে জানতে চাওয়া হলো তারা কতদিন আগে বিয়ে করেছেন। দুইজনই বললেন- এটি তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। চেকপোস্টে বলবার মতো কথা নয়। ব্যস তাদেরকে বলা হলো থানায় যেতে হবে। দুজনই অবাক! থানার যাওয়ার মতো কী ঘটনা ঘটলো? দুজনই প্রতিবাদ করছেন। চেকপোস্টের পুলিশরা তাদের থানাতে নেবেই। মোবাইল কেড়ে নিতে চাচ্ছে। এই অবস্থা দেখে মানুষজন জড়ো হতে থাকে। এসময় দম্পতির রাজনৈতিক প্রভাবশালী বন্ধু সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি পরিস্থিতি দেখে উঁকি দেন। এবং পুলিশকে ধমক দিয়ে দম্পতিকে মুক্ত করেন। রিকশা চলতে শুরু করলে, রিকশা চালক বললেন- ‘মাইন্ড কইরেন না। পুলিশের কাজ পুলিশ করছে।’
পুলিশ সপ্তাহ ২০১৬ চলাকালীন সময়ে সাবেক সহকর্মী, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বীর ওপর পুলিশি নির্যাতন, তারপর গত একবছরে কম সাংবাদিক, পেশাজীবী সাধারণ মানুষতো পুলিশের নির্যাতনের শিকার হলো না। প্রতিদিন যারাই সেবা নিতে, বন্ধু ভেবে পুলিশের গণ্ডির মধ্যে যাচ্ছেন, তাদের অনেকেইতো হয়রানি, নির্যাতনের শিকার হচ্ছেনই। বিষয়টি গা সওয়া হয়ে গেছে অনেকটা। তাই ‘পুলিশের কাজ পুলিশ করছে’ ভেবে উষ্মা প্রকাশ করে না অনেকেই। এই যে এবার পুলিশ সপ্তাহ চলাকালীন ২৬ জানুয়ারি সুন্দরবন বাঁচানোর আহবানে, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের দাবিতে হরতাল হলো। সেখানে দুই সাংবাদিক সহকর্মীকে বেধড়ক পেটানো হলো, হরতাল সমর্থকদের ওপর যে ভাবে নিপীড়ন চালানো হলো, তার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে দেখে সবাই আতঙ্কিত। আমি নিজেও কিছুটা বিচলিত ছিলাম। কিন্তু আমার সঙ্গে আড্ডা দিতে আসা একজন লোক গানের শিল্পী বললেন- ‘মনরে কষ্ট না দেন। পুলিশের কাম পুলিশ করছে। আপনি আমি সাঁইজির কৃপায় আছি, ওরা নাই।’

বক্তব্যটি ভাবার বিষয়। তাহলে পুলিশ কার কৃপায় আছে? ধুর, এটা আর এমন কী গভীর ভাবার বিষয়। পুলিশ বরাবরই রাষ্ট্রীয় কাঠামোর কৃপায় থাকে। রাজনৈতিক দলের কৃপা বলা ঠিক হবে না। কারণ এমন কোনও রাজনৈতিক দল নেই, যারা পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়নি। পুলিশের লাঠির আঘাতে রক্ত ঝরেনি এমন বড় নেতা পাওয়াও মুশকিল। তাহলে পুলিশের লাঠি চলে কার কৃপায়? সরল উত্তর-ক্ষমতা কাঠামোর কৃপায়। তাই দেখা যায় এক সময় যিনি ওই লাঠি ব্যবহার করেছেন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে, দিনবদলে তিনি আবার প্রতিপক্ষ হয়ে লাঠির শিকার। অতএব ব্যবহৃত পুলিশ করছে, পুলিশের কাজ। এ নিয়ে গোস্যার করার কি আছে?

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ