X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাহিত্য পুরস্কারে সততা আর সতর্কতা

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১২:৫৭আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৩:০০

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা ‘ক্ষমতা একটা কেন্দ্র। যার চারদিকে নানাজন নানা ‘ইন্টারেস্ট’ নিয়ে ছড়িয়ে থাকে। একদা সভাকবিরা যে কাব্য নাট্যগীতটি রচনা করতেন, তাতে রাজশক্তির গুণগান থাকতো কখনও স্বচ্ছভাবে, কখনও অন্তঃশীলভাবে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট শিল্পসৃষ্টির মানের সঙ্গে আপস করা হতো না। করা হলে, সভাকে কেন্দ্র করে রচিত পরে সাহিত্য হিসেবে গণ্যই হতো না! রাজশক্তি বা ক্ষমতাকে বন্দনা করার নানা ধাঁচ বাংলার মঙ্গলকাব্যতেও দেখা গেছে। তবু সেসব সাহিত্যই থেকেছে। পরবর্তী প্রজন্মের মানুষও সেই রাজনৈতিক সম্পর্কের মধ্যে নিজে অন্বিত না হয়েও এর রস আস্বাদন করতে ব্যর্থ হননি। সৃষ্টি থেকে যায়, পদক নয়। তাই আমরা যারা লিখি তাদের একটা মন্ত্র হওয়া উচিত, ‘পদক নয়, পঙতির জয় হোক’। - অমিত গোস্বামী, কবি ও সম্পাদক
প্রতি বছর বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেয়। আর প্রতি বছরই কিছু বিতর্ক তৈরি হয়। লেখক-প্রকাশকরা ক্ষোভ জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লেখালেখি চলে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গুণী ও সৃজনশীল লেখকদের পুরস্কার পাবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু একদমই অপরিচিত এবং লেখক হিসেবে স্বীকৃত নন এমন নাম আসছে কয়েক বছর ধরে। লেখকরা পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের পছন্দের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার অভিযোগ আনছেন। এবারের বাংলা একাডেমি পুরস্কারের জুরি বোর্ডে ছিলেন মোট ১২জন। তাদের মধ্যে তিন জন পুরস্কারপ্রাপ্তদের তালিকায় স্বাক্ষর করেননি। তারা হলেন অধ্যাপক ড. অনুপম সেন, অধ্যাপক ড. বেগম আকতার কামাল ও শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ। অবশিষ্ট নয়জন স্বাক্ষর করেছেন।

সাহিত্য পুরস্কারে সততা আর সতর্কতা
ব্যবস্থাপনার ত্রুটির দিকে যদি তাকাই তাহলে দেখি পাঁচজন স্বাক্ষর করেছেন তারিখবিহীন। যে পাঁচজন তারিখ ছাড়াই স্বাক্ষর করেছেন, তারা হলেন সেলিনা হোসেন, অধ্যাপক জীনাত ইমতিয়াজ আলী, অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, সুব্রত বড়ুয়া ও এটিএম জাকারিয়া স্বপন। এই তারিখ না দেওয়ার অনেক ব্যাখ্যা করা যায়। একটিতো করাই যায় যে, তাদের কাছ থেকে আগেই স্বাক্ষর নিয়ে রেখে পরে পুরস্কার যাদের দেওয়া হয়েছে তাদের নাম বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা ভাবতে চাই না যে, বাংলা একাডেমির মতো একটি প্রতিষ্ঠানে এমনটা হয়েছে। কিন্তু সন্দেহ থেকেই যায় যে, এখানে জুরি বোর্ডের চেয়ে কোনও ব্যক্তি বিশেষের ক্ষমতা প্রয়োগ বেশি ছিল কিনা।
নাটকে কাউকেই নাকি পাওয়া যায়নি পুরস্কার দেওয়ার জন্য। অথচ কারও কারও নাটক দেশে বিদেশে সাফল্যে সাথে মঞ্চস্থ হচ্ছে। জুরি বোর্ডের সামনে হয়তো ধারণা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে যে, এসব নাটক লেখকের বই সংখ্যায় বেশি নেই। তাহলে প্রশ্ন জাগে, এ বছর আত্মকথা/স্মৃতিকথায় বাংলা একাডেমি পুরস্কার যিনি পেলেন সেই মার্কিন প্রবাসী লেখক নূরজাহান বোসের ক’টি বই আছে? প্রকাশক, নাম প্রস্তাবক আর জুরি বোর্ড মিলেমিশে যদি একাকার হয়ে যায় তাহলে পুরস্কারের হাল কেমন হয়, বোঝা যায়।
২০১৬ সালের ৩১ মে, শনিবার, বিকেল ৫টায় শাহবাগ পাঠক সমাবেশ কেন্দ্র অনুষ্ঠিত হয়েছিল নূরজাহান বোসের ভ্রমণ কথা বই 'যেতে যেতে পথে'-এর প্রকাশনা উৎসব। সেই অনুষ্ঠানে সভাপতি ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক জনাব শামসুজ্জামান খান। আর বই নিয়ে আলোচনা করেছিলেন প্রকাশক মফিদুল হক ও লেখক নূরজাহান বোস। পুরস্কারের ব্যাপারটা তাই কেমন যেন লাগে। প্রতিবছরই কিছু কিছু পুরস্কার কাউকে কাউকে ডেকে এনে দেওয়া হচ্ছে। গাদা গাদা পাঠক নন্দিত ভ্রমণ কাহিনী লিখেও নজরে আসা যায় না একাডেমির, কিন্তু একটি মাত্র বই লিখে পুরস্কার বাগিয়ে নেওয়া যায়। দূরবীন আর মাইক্রোস্কোপ দিয়ে খোঁজাখুঁজি করে পাওয়া যায় না কে এই খ্যাতিমান লেখক মাহফুজুর রহমান যাকে আগের বছর ভ্রমণ কাহিনীতে পুরস্কার দেওয়া হলো? বিদেশে থাকা লেখকদের পুরস্কার দেওয়ার একটা অতি আগ্রহ বেশ কয়েক বছর ধরে লক্ষণীয়। এখানে কি বিদেশে খাতির যত্ন পাওয়ার কোনও ব্যবস্থাপনা আছে? উত্তর কারও জানা নেই।
সাহিত্য পুরস্কারে সততা আর সতর্কতা প্রশ্ন উঠেছে পুরস্কারের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েও। এ বছর (২০১৬ সালের জন্য) অনুবাদ বিভাগে নিয়াজ জামানকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেওয়া হলো। অনুবাদে বিশেষ অবদান রেখে এ বছরের বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। সাপ্তাহিক হলিডে পত্রিকায় ১৯৯৪ সালের ২ ডিসেম্বর প্রকাশিত সে লেখায় নিয়াজ জামান লিখেছিলেন-‘When the Sheikh came to power, he emerged as a natural dictator who could not accept a free discussion on any of his bedroom decisions’. অর্থাৎ ‘ক্ষমতায় আসার পর 'শেখ' একজন স্বভাবসুলভ স্বৈরাচারীর রূপ নিলেন। তিনি তার শয়নকক্ষে নেওয়া কোনও সিদ্ধান্ত সম্পর্কেই কোনও খোলামেলা আলোচনা গ্রহণ করতে পারতেন না’। বঙ্গবন্ধুর সমালোচনা করা যাবে না এমনটা নয়। কিন্তু যে মানুষটা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এমন একটা ঢালাও মন্তব্য করতে পারেন, তাকে যখন পুরস্কার দেওয়া হয়, তখন প্রশ্ন ওঠে, বাংলা একাডেমির কর্তাদের এখনকার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা কেথায়?
ছবি দুটির দিকে দেখলে বোঝা যায়, ক্যাটাগরি ৩ ও ৪ আলাদা দুটি আলাদা বিভাগ। দেখা গেলো গবেষণায় যোগ্য কাউকে পাওয়া যায়নি। কিন্তু কাউন্সিলারদের সাক্ষরে চূড়ান্ত হওয়ার পরও দেখা যায় ৩ ও ৪, ক্যাটাগরি, অর্থাৎ প্রবন্ধকে গবেষণায় এক করে পুরস্কার ঘোষিত হয়েছে। এটিও কি প্রশ্নের জন্ম দেয় না?
উত্তরের আর অপেক্ষা করি না, শুধু প্রত্যাশা করি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে সততা আর সতর্কতার।

লেখক: পরিচালক বার্তা, একাত্তর টিভি

 

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
গাজার ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কারে ১৪ বছর লাগতে পারে: জাতিসংঘ
গাজার ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কারে ১৪ বছর লাগতে পারে: জাতিসংঘ
তীব্র তাপে গলছে শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কের কার্পেটিং
তীব্র তাপে গলছে শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কের কার্পেটিং
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের নির্বিঘ্ন প্রবেশাধিকার দাবি ডিআরইউর
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের নির্বিঘ্ন প্রবেশাধিকার দাবি ডিআরইউর
বাগেরহাটে কৃষককে পিটিকে হত্যা
বাগেরহাটে কৃষককে পিটিকে হত্যা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ