X
শনিবার, ১১ মে ২০২৪
২৮ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা সেতু উপাখ্যান-ষড়যন্ত্র চলমান

আবদুল মান্নান
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৩:২৯আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৯:১৬

আবদুল মান্নান বাংলাদেশে পত্র-পত্রিকা পড়েন আর ডেভিড বার্গম্যানকে চেনেন না তেমন মানুষ খুব একটা খুঁজে পাওয়া যাবে না। বার্গম্যান নাগরিকত্বে ব্রিটিশ আর বিবাহ সূত্রে বাংলাদেশের খ্যাতিমান আইনবিদ ড. কামাল হোসেনের জামাতা। পেশায় সাংবাদিক। নিজেকে মানবাধিকার কর্মী বলেও পরিচয় দেন। একাত্তরের ঘাতকদের বিচারের জন্য সরকার বিশেষ  ট্রাইব্যুনাল গঠন করলে বার্গম্যান তার সমালোচনা শুরু করেন। বলেন এই ট্রাইব্যুনাল দিয়ে সুষ্ঠু বিচার সম্ভব হবে না। মুক্তিযুদ্ধে যে ত্রিশ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন তা তার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। তিনি এই ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের স্বচ্ছতা আর দক্ষতা নিয়েও দেশে ও দেশের বাইরে মন্তব্য প্রতিবেদন লিখে আদালতের দ্বারা সমালোচিত হয়েছেন। গ্রামীণ ব্যাংক আর ড. ইউনূসকে নিয়ে দেশে নানা ধরনের বিতর্ক শুরু হলে বার্গম্যান ড. ইউনূসের পক্ষে কলম ধরেন। বার্গম্যানের সর্বশেষ কলম যুদ্ধ ছিল পদ্মা সেতু দুর্নীতি বিতর্কে দেশের অন্যান্য সুশীল আর কিছু মিডিয়ার সঙ্গে একজোট হয়ে সরকার ও তৎকালীন সেতুমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা।
পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন, তাকে ঘিরে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির গন্ধ, তারপর বিশ্বব্যাংকের সেতু নির্মাণে অর্থায়ন বন্ধ, তাদের দেখাদেখি এডিবি, জাইকা ও আইডিবি এই প্রকল্প হতে হাত গুটিয়ে নেওয়ার কাহিনী এখন দেশের সব মানুষের জানা। মানুষ এও জেনেছে কীভাবে একজন শেখ হাসিনা দীপ্ত কণ্ঠে উচ্চারণ করেছিলেন বাংলাদেশ তার নিজস্ব অর্থায়নেই বানাবে তার বহু প্রত্যাশিত সেতু। বাংলাদেশের যে সব সুশীল আর মিডিয়া সব সময় শেখ হাসিনার বাঁকা চলন আবিষ্কারে ব্যস্ত তারা একই সুরে বললেন, শেখ হাসিনা প্রমত্ত পদ্মা নদীর ওপর সেতু আর বাঁশের সাঁকোর মধ্যে পার্থক্যটা বুঝলেন না। বাস্তবে শেখ হাসিনাই বুঝেছিলেন, বাকিরা বোঝেননি। না বোঝার দলে বার্গম্যানও ছিলেন। যে কানাডীয় পরামর্শক কোম্পানি এসএনসি-লাভালিনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের যোগসাজশে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল বিশ্বব্যাংক, সে কোম্পানির বিরুদ্ধে দেশটির মাউন্টেড পুলিশ (সরকার) সেই দেশেরই আদালতে দুর্নীতির মামলা করেছিল। এর পেছনে কারণ ছিল বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের মতো বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়ানো। তাই, বিচারিক ব্যবস্থার মাধ্যমে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সুরাহা করতে চেয়েছিল দেশটির সরকার।

লাভালিনের কাছে মামলাটি করা হয় ২০১৪ সালে আর দীর্ঘ শুনানির পর কয়েক সপ্তাহ আগে কানাডার আদালত রায় দেয় স্রেফ গল্পগুজব আর অনুমান ভিত্তিতে এই মামলা সাজানো হয়েছিল বলে-যা বিশ্বব্যাংকের নথি হতে রয়েল মাউন্টেড পুলিশ আদালতে প্রমাণ করতে পারেনি। অর্থাৎ পদ্মাসেতু প্রকল্পে কোনও দুর্নীতি হয়েছে বা হওয়ার সম্ভাবনা ছিল তা প্রমাণিত হয়নি। অনেকে হয়তো জানেন না যে বিশ্বব্যাংক কোনও সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা বা অভিযোগ করলে তা প্রমাণের জন্য কোনও নথি, দলিল বা তথ্য দিতে বাধ্য নয় অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে তাদের দায় মুক্তি দেওয়া হয়েছে। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তার দায়িত্ব হচ্ছে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করা। এমন  অদ্ভুত ব্যবস্থা বিশ্বের কোনও দেশে নেই।

পদ্মা সেতু দুর্নীতি বিষয়ক মামলা কানাডার আদালতে খারিজ হয়ে গেলে বাংলাদেশের ২০১২ সালের সেইসব সরব সুশীল ব্যক্তি আর মিডিয়া খামোশ হয়ে গেলেও একজন এখনও সরব আছেন। তিনি হচ্ছেন সাংবাদিক বার্গম্যান। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ভারত হতে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্য অয়্যার (The Wire)-এ বার্গম্যান Did Canada Court Really Clear Bangladesh Officials of Corruption (কানাডার আদালত সত্যিই কি বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের দুর্নীতি থেকে মুক্তি দিয়েছে?) শীর্ষক এক বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ লিখেছেন। এতে তিনি বলার চেষ্টা করেছেন, কানাডার মাউন্টেড পুলিশের (কানাডা সরকারের) দায়ের করা পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলা খারিজ করে দেওয়ার অর্থ এই নয় যে বাংলাদেশ অভিযোগ হতে মুক্ত হয়েছে। বার্গম্যান বলেন, এই মামলার বিচার্য বিষয় ছিল কানাডার কোনও নাগরিক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিল কিনা। আদালত বাংলাদেশের  কোনও আমলা বা মন্ত্রীর দুর্নীতির সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে বিচার করেনি। বার্গম্যান মনে করেন বাংলাদেশের মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় আর সরকারের সমর্থকরা মামলার রায় নিয়ে এত যে হইচই করছে আর বিশ্বব্যাংকের তুমুল সমালোচনা করছে তা ঠিক নয়। পুরো ঘটনার সঙ্গে নোবেল বিজয়ী গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক মহাপরিচালক ড. ইউনূসের সম্পৃক্ততা আবিষ্কার করা ঠিক হচ্ছে না বলেও তিনি মনে করেন।

বার্গম্যান তার লেখায় এই মামলার রায় নিয়ে যারা সরকারের পক্ষাবলম্বন করছেন তাদের উদ্দেশে দশটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন। প্রথমটি হচ্ছে কানাডার আদালত তাদের নিজ দেশের তিনজন নাগরিকের দুর্নীতির অভিযোগের বিচার করেছে এবং তাদের অভিযোগ হতে অব্যাহতি দিয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে পদ্মা সেতুতে কোনও দুর্নীতি হয়নি অথবা এই তিনজনের বিরুদ্ধে কোনও তথ্য প্রমাণ ছিল না। বার্গম্যান বলেন, অভিযোগের প্রমাণ হয়তো ছিল কিন্তু বাদী (কানাডার সরকার) তা যথাযথভাবে প্রমাণ করতে পারেনি।

বার্গম্যানের দুই নম্বর মন্তব্য ছিল দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তি শুধুমাত্র গল্পগুজব বা অনুমানের ভিত্তিতে হয়েছে বলে আদালতে টেকেনি তাও সত্য নয়। বিচারক বলেছেন, ছয় বছর আগে করা মামলাটি গল্পগুজব আর অনুমানের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছিল কিন্তু রায়ে এই তিন ব্যক্তিকে অব্যাহতি দেওয়ার সময় এই বিষয়গুলোকে ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়নি।

তিন নম্বর মন্তব্য হচ্ছে, ঘুষ লেনদেনের প্রচেষ্টা প্রমাণ করা সব সময় কঠিন। বার্গম্যানের মতে আদালতের কাছে বিচার্য বিষয় ছিল ঘুষ লেনদেনের প্রচেষ্টা বা অভিপ্রায় হয়েছিল কী না, বাস্তবে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার বিষয়টি নয়। বার্গম্যানের এতটুকু বোঝার ক্ষমতা নিশ্চয় আছে বাংলাদেশ সরকার সব সময় বলে আসছে যেখানে কোনও অর্থই লেনদেন হয়নি সেখানে দুর্নীতির অভিযোগ আনাটা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও অগ্রহণযোগ্য। এখন কেউ যদি বলেন বার্গম্যান বাংলাদেশে থেকে যে সবসময় বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং তা করার জন্য পাকিস্তানের আইএসআই-এর কাছ থেকে মাসোহারা পাওয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে বলে মানুষের ধারণা-- তা তিনি নিশ্চয় গ্রহণ করবেন না।

তার চতুর্থ মন্তব্য, বার্গম্যানের মতে দুর্নীতি হওয়ার ষড়যন্ত্র বাংলাদেশ সরকারের অস্বীকার করার বিষয়টি মামলার রায় দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি ভূমিকা রেখেছে। তার মতে কানাডার তদন্তকারী দল কখনও এই বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে কোনও সহায়তা পায়নি। প্রকাশিত নিবন্ধে বার্গম্যান আরও লিখেছেন, বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন, যা সরকারের একটি আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান, তারা প্রথম দিকে একটি তদন্ত করলেও পরে সেই তদন্ত বন্ধ করে দেয়। এর উত্তরে বলা যায়, বাস্তবে কমিশন তদন্ত করে বলেছিল তারা অভিযোগের কোনও সত্যতা পায়নি। সুতরাং এই ব্যাপারে তাদের আর কিছু করণীয় নেই। এর উত্তরে বলতে হয়, বার্গম্যানের মনে রাখা উচিত, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ, কারও বাপের তালুক নয়। বিশ্বব্যাংক যদি তাদের অভিযোগের সমর্থনে কোনও দলিলপত্র উপস্থাপন না করে তা হলে বাংলাদেশ কেন আগ বাড়িয়ে এই কাজ করতে যাবে।

তার পঞ্চম মন্তব্য, বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগের বাস্তব ভিত্তি ছিল কানাডার এসএনসি লাভালিনের কর্মকর্তাদের ডায়েরিতে এমন কিছু সংখ্যা লিখিত ছিল যাকে ঘুষির পরিমাণের হিসাব হিসেবে দাবি করেছিল বিশ্বব্যাংক। তবে আদালত তা গ্রহণ করেনি। এবিষয়ে বার্গম্যানের মন্তব্য, বাংলাদেশের সেতু কর্তৃপক্ষ যে এসএনসিকে-লাভালিনকে পরামর্শকের কাজ দেওয়ার জন্য বাছাই করেছিল তা করার সময় তাদের প্রয়োজনীয় দলিল পত্র ছিল না। তা হতেই পারে এবং এইসব ক্ষেত্রে আবেদনকারীর কাছে ঘাটতি পূরণ করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাওয়ার রীতি একটি স্বীকৃত বিষয়। বার্গম্যান একবারও উল্লেখ করেনি বিশ্বব্যাংক চীনের একটি ভুয়া পরামর্শক কোম্পানির জন্য ওকালতি করেছিল।

২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে বিশ্বব্যাংক এসএনসি-লাভালিনের সঙ্গে একমত হয়েছিল যে প্রতিষ্ঠানটি আগামী দশ বছর বিশ্বব্যাংকের কোনও প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হবে না। সপ্তম মন্তব্য হিসেবে বার্গম্যান এর ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে যে লাভালিন তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েই এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে। কোনও কিছু প্রমাণের আগেই বিশ্বব্যাংকের এমন একটি সিদ্ধান্ত লাভালিনের ওপর চাপিয়ে দেওয়া শুধু অনৈতিকই নয়, অগ্রহণযোগ্যও বটে। লাভালিনের তা মেনে নেওয়ার পেছনে নিশ্চয় তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থ আছে। যদি বলা হয় তাদের এমন সিদ্ধান্তে রাজি করানো হয়েছে এই বলে আগামীতে তারা আরও বড় বড় প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারবে তা কি অমূলক হবে? লাভালিন শুধু কানাডারই নয়, বিশ্বের একটি প্রথম কাতারের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। বার্গম্যানের অষ্টম মন্তব্য, লাভালিনকে দশ বছরের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করার পেছনে হয়তো তিনটি কারণ কাজ করেছে।  প্রথমত কানাডার আদালত লাভালিন কোম্পানির তিনজনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের বিচার করছিল। বিশ্বব্যাংক ব্যক্তিকে নয় কোম্পানিকে অপরাধী প্রমাণ করতে চেয়েছিল। কানাডার আদালত সার্বভৌম, তারা বিশ্বব্যাংকের নির্দেশে কেন চলবে? দ্বিতীয়ত আদালতের জুরি বোর্ড কোনও অভিযোগ সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলে তখনই অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে। যে কোনও সভ্য দেশে তাই হওয়াটাই স্বাভাবিক। বার্গম্যানের মতে বিশ্বব্যাংকের প্রচলিত ব্যবস্থায় আছে কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে শুধুমাত্র অভিযোগের গুরুত্ব বা ওজন (preponderance of the evidence) বা সম্ভাব্যতার ভারসাম্যের (balance of probabilities) ওপর ভিত্তি করেই সাজা দেওয়া হতে পারে। বিশ্বব্যাংকের এমন সব আবদারি ব্যবস্থা বিশ্বের অনেক দেশেই ইতোমধ্যে সমালোচিত ও নিন্দিত হয়েছে। তৃতীয়ত ফৌজদারি আদালত কোন কোন বিষয়গুলো সাক্ষ্য প্রমাণ হিসেবে আদালতে হাজির করা যাবে তা নির্ধারণ করে দেশের আইনের আলোকে আর বিশ্বব্যাংক কোন অভিযোগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং তাদের বিচারে যা যৌক্তিক তার আলোকে। এর অর্থ হচ্ছে বিশ্বব্যাংক যে কোনও দেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর তাদের নিজস্ব বিচার ব্যবস্থা চাপিয়ে দিতে অযৌক্তিক ভাবে চেষ্টা করে । বার্গম্যানের দশটি মন্তব্যের নবমটিতে বলা হয় বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১.২ বিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন বন্ধ করেনি। তারা চেষ্টা করেছে বিকল্প পদ্ধতিতে এই অর্থায়ন চালু রাখতে। তার জন্য বিশ্বব্যাংক চারটি শর্ত দিয়েছিল যার মধ্যে একটি হচ্ছে এই অভিযোগের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন যে তদন্ত করবে তাতে বিশ্বব্যাংকের একজন প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এটি একটি মামা বাড়ির আবদার বৈ অন্য কিছু নয়। বাংলাদেশ অন্য কোনও দেশ বা সংস্থার তাবেদার রাষ্ট্র নয়। দেশটি স্বাধীন করার জন্য ত্রিশ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন। সব বিষয়ে বাইরের রাষ্ট্র বা সংস্থা নাক গলাবে তা কোনও সরকারই মেনে নিতে পারে না। তারপরও বাংলাদেশ দুর্নীতি তদন্তে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দেয়। বিশ্বব্যাংক তদন্তের নামে শুধু সময়ক্ষেপণ করেছে। সেতু নির্মাণকে বিলম্বিত করেছে এবং নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধির কারণ হয়েছে। দশম মন্তব্য ড. ইউনূস সম্পর্কিত। বার্গম্যান মনে করেন যেহেতু ড. ইউনূসের সঙ্গে মার্কিন সরকারের সখ্যতা রয়েছে তাই সেতুর অর্থায়ন বন্ধে মার্কিন সরকারের ভূমিকা থাকতে পারে। তবে তা প্রমাণ করে না যে তাতে ড. ইউনূসের কোনও ভূমিকা ছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাক্কালে যখন হিলারি ক্লিনটনের ব্যক্তিগত ই-মেইল অবমুক্ত করা হয় তাতে দেখা যায়, এর একটি হচ্ছে ড. ইউনূসের। হিলারিকে গ্রামীণ ব্যাংকে নিজের পদ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে চাপ সৃষ্টির অনুরোধ করেছেন ড. ইউনূস। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে বলেছেন হিলারি তাকে ফোন করে ড. ইউনূসকে তার পদে পুনর্বহাল করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেছেন এবং একই কারণে সজীব ওয়াজেদ জয়কে তিনবার যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেতুর অর্থায়ন বন্ধে হিলারির ভূমিকা থাকা অস্বাভাবিক নয় কারণ বিশ্বব্যাংক সব সময় যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি নীতি ও অবস্থান দ্বারা প্রভাবিত।

বার্গম্যানের বিশ্লেষণ পড়লে বোঝা যায় এই লোকটি সব সময় বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে কুণ্ঠাবোধ করেন না। যেহেতু তার শ্বশুর ও স্ত্রী বাংলাদেশের উঁচু মাপের আইনজীবী সেহেতু তিনি নিজেকে সব আইনের ঊর্ধ্বে বলে মনে করেন। সরকারের উচিৎ বার্গম্যান ও তার এদেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া। এটি মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে বাংলাদেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে যারা নিত্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তাদের মধ্যে বার্গম্যান গং অন্যতম। এটি অনস্বীকার্য বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের একটি গুরুত্ব উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা। উচ্চ শিক্ষা হতে অবকাঠামোগত সুবিধার উন্নয়নে তারা এই দেশে ওতোপ্রোত ভাবে জড়িত। কিন্তু পদ্মা সেতুর অর্থায়নের ব্যাপারে তাদের যে ভূমিকা ছিল তা ছিল দেশের চরম স্বার্থ বিরোধী ও ষড়যন্ত্রমূলক। বিশ্বব্যাংকের ইতিহাসে এটি একটি কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। আর বার্গম্যাদের সব সময়ের জন্য বাংলাদেশের ইতিহাসে খলনায়ক হিসেবে দেখা হবে।

লেখক: বিশ্লেষক ও গবেষক

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই বছরই শেষ অ্যান্ডারসনের
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই বছরই শেষ অ্যান্ডারসনের
ফলন বেশি, চরাঞ্চলের কৃষকরা ঝুঁকছেন ‘জাপানি মিষ্টি আলু’ চাষে
ফলন বেশি, চরাঞ্চলের কৃষকরা ঝুঁকছেন ‘জাপানি মিষ্টি আলু’ চাষে
তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট না দিলে কেন্দ্রে যেতে নিষেধ কাদের মির্জার
উপজেলা নির্বাচনতার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট না দিলে কেন্দ্রে যেতে নিষেধ কাদের মির্জার
টিভিতে আজকের খেলা (১১ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (১১ মে, ২০২৪)
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ