X
বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪
২৫ বৈশাখ ১৪৩১

‘মমতাহীনা’ মমতা

প্রভাষ আমিন
১০ এপ্রিল ২০১৭, ১৩:১৪আপডেট : ১০ এপ্রিল ২০১৭, ১৩:১৬

প্রভাষ আমিন শেখ হাসিনার এবারের ভারত সফরে তিস্তা নিয়ে কোনও অগ্রগতি যে হবে না, তা জানা ছিল আগেই। প্রধানমন্ত্রীর সফরের দুদিন আগে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী তিস্তা চুক্তি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে দুই দেশের সম্পর্ককে সামগ্রিকভাবে দেখার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক এখন যে অবস্থানে আছে, সেখানে আমরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি। সেখানে একটি বিষয় হলো কী হলো না, সেটি তেমন বড় কিছু নয়’। কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তেমন বড় কিছু না হলেও বাংলাদেশের মানুষের কাছে তিস্তাই মূল ইস্যু। কারণ পানির সাথে আমাদের জীবন-জীবিকার সম্পর্ক। তাই তো ৭ বছর পর শেখ হাসিনার বহুল প্রতীক্ষিত সফরে ৬টি চুক্তি, ১৬টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হলেও সব ছাপিয়ে আলোচনা সেই তিস্তাতেই আটকে আছে।
তিস্তার জট লাগিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই জট খুলতে তাকে উড়িয়ে আনা হয় নয়াদিল্লিতে। ৭ এপ্রিল হায়দরাবাদ ভবনে দুই প্রধানমন্ত্রীর যৌথ ব্রিফিঙের সময় উপস্থিত ছিলেন মমতাও। শেখ হাসিনা আর নরেন্দ্র মোদির চেহারা যখন হাস্যোজ্জ্বল, দুজনই যখন দক্ষিণ এশিয়ার সামগ্রিক উন্নয়ন নিয়ে দৃঢ় প্রত্যয়ে কথা বলছিলেন; তখন মমতা বসেছিলেন বিষণ্ন বদনে। এমনকি বাংলাদেশ-ভারত রেল যোগাযোগ উদ্বোধনের জন্য যখন তাকে ডেকে নেওয়া হয়, তখনও তাকে খুব অনিচ্ছুক দেখাচ্ছিল। দুপুরে যৌথ ব্রিফিঙে মোদি শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, আমার ও আপনার সরকারই তিস্তার পানি বণ্টন সমস্যার সমাধানে পৌঁছতে পারবে’। কিন্তু রাতেই আশার বেলুনে সুই ফোটান মমতা। দুপুরে লাঞ্চে নরেন্দ্র মোদি মমতাকে ডেকে নেন তাদের টেবিলে, যেখানে ছিলেন শেখ হাসিনাও। সেখানে মোদি তিস্তার প্রসঙ্গ তোলেন। কিন্তু সেখানেও গোঁয়ারের মতো বসেছিলেন মমতা। লাঞ্চ শেষে শেখ হাসিনা মমতাকে সন্ধ্যায় আমন্ত্রণ জানান একান্ত আলোচনায়। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। আর মমতা ভারতের একটি রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী মাত্র। তবুও দুজনের মধ্যে ব্যক্তিগত সুসম্পর্কের সুবাদে সবাই নতুন করে আশায় বুক বাধছিলেন। কিন্তু মমতা পানির আশ্বাস তো দিলেনই না, বরং সকল আশায় জল ঢেলে দিলেন। তিস্তার জট খুললো তো নাই, বরং মমতা তাতে ‘আন্ধা গিট্টু’ লাগিয়ে দিলেন। সেই ‘গিট্টুর’ খবর মমতাই সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক শেষে মমতা তৃণমূল নেতা মুকুল রায়ের বাসার লনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিস্তার সমস্যা আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বুঝিয়ে বলেছি। তিস্তায় কোনও পানি নেই। পানির অভাবে এনটিপিসির বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। সেচের জন্য পানি পেতে সমস্যা হচ্ছে। মমতা আরও বলেন, ‘তোর্সা, মানসাই, ধানসাই ও ধলোরার মতো কয়েকটি ছোট নদী আছে, যেগুলো বাংলাদেশে গিয়ে মিশেছে। সেখানে পানি আছে। ফলে তিস্তার বিকল্প হিসেবে এই চারটি নদীর পানি ব্যবহার করা যেতে পারে’। মমতা বলেছেন, বাংলাদেশকে তিনি ভালোবাসেন। তিনিও চান বাংলাদেশ পানি পাক। কিন্তু তিস্তা থেকে দেওয়ার উপায় নেই। সাংবাদিকদের মমতা বলেন, ‘আমরা যদি একটু ভেবে দেখি, তিস্তায় যখন আমার প্রবলেম হচ্ছে, আর তিস্তাতে যেহেতু আমার গাজলডোবা ব্যারেজ আছে, আমার জলের প্রবলেম আছে, ড্রিংকিং ওয়াটার, ফারমার্স, নানান প্রবলেম আছে। এই হিসেবে আমি তিন-চারটি নদীর নামও বলেছি। যৌথ সমীক্ষা করে যদি সেসব নদী থেকে বাংলাদেশকে পানি দেওয়ার সুযোগ থাকে, তাহলে আমি রাজি’।

তিস্তা নিয়ে ভারতীয়দের এই টালবাহানা আমার কাছে কখনও কখনও পাতানো খেলা মনে হয়। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা না থাকলেও কেন্দ্রীয় সরকার এমন ভাব করছে যে মমতার অনুমোদন ছাড়া তিস্তা চুক্তি করলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে। এটা নাকি তাদের গণতান্ত্রিক শিষ্টাচার। আরে ভাই তোমাদের শিষ্টাচার ধুয়ে কি আমরা পানি খাবো? আমাদের পানি চাই। মমতা বলছেন, তিস্তায় পানি নেই। এটা পুরোপুরি সত্যি নয়। সবাই যখন নয়াদিল্লিতে ব্যস্ত চুক্তি নিয়ে, তখন এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী সম্পাদক মুন্নী সাহা শিলিগুড়ির গাজলডোবায় গিয়ে দেখিয়েছেন তিস্তায় পানি আছে এবং বাংলাদেশকে পানি দিলে স্থানীয় কৃষকদের আপত্তিও নেই। তারপরও যদি মমতার দাবিকে সত্যি বলে ধরে নেই যে তিস্তায় পানি নেই, সে দায় তো বাংলাদেশের নয়। পর্যাপ্ত পানি নেই কেন, মমতার তো সে প্রশ্ন নরেন্দ্র মোদিকে করা উচিত, কেন তিস্তার পানি আরও উজানে প্রত্যাহার করা হচ্ছে?

বাংলাদেশে যেমন তিস্তা একটি বড় রাজনৈতিক ইস্যু, ভারতেও। তিস্তা চুক্তির দায় কে নেবেন, এ নিয়ে মোদি-মমতার মধ্যে রশি টানাটানি চলছে। দুই পক্ষই রাজনৈতিক অস্ত্রে শান দিচ্ছেন, তিস্তা চুক্তি হলেই ঝাঁপিয়ে পড়বেন প্রতিপক্ষের ওপর। নরেন্দ্র মোদির পশ্চিমবঙ্গ দখলের স্বপ্ন ডুবে যেতে পারে তিস্তার ঘোলা জলে। আর সেই জল ঘোলা করছেন মমতা। আপনারা রশি টানাটানি করুন, কিন্তু মাঝখানে বাংলাদেশকে রাখতে হবে কেন?

তিস্তার পানি ঘোলা করতে ভারতীয়দের চেষ্টার কমতি নেই। বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বিনা সিক্রি বিবিসিকে বলেছেন, ‘তিস্তা চুক্তি করার মতো পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত কারো কাছেই নেই’। চুক্তি ঠেকানোর কী হাস্যকর যুক্তি! ২০১১ সালে ভারতের তখনকার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর বাংলাদেশ সফরের সময় তো তিস্তা চুক্তির সব চূড়ান্ত ছিল। মমতার বাগড়ায় তখন হয়নি। তখন থেকেই এমন একটা ধারণা তৈরি করা হয়েছে, মমতার কারণেই তিস্তা চুক্তি হচ্ছে না। সেই থেকে মমতাই বাংলাদেশে ভিলেন। ‘মা-মাটি-মানুষ’ স্লোগান দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের হৃদয় জয় করেছেন মমতা। ৩৪ বছর পর পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টের দূর্গ শুধু ভাঙেননি, পরপর দুইবার ক্ষমতায় এসে পোক্ত করেছেন নিজের অবস্থান। মমতার খ্যাতি তার গোয়ার্তুমির জন্য, তার আটপৌড়ে জীবনযাপনের জন্য। ক্ষমতায় আসার আগে যে আটপৌড়ে শাড়ি পড়তেন, যে চপ্পল পড়তেন, টালির যে বাড়িতে থাকতেন; এখনও তেমনই আছেন, সেখানেই আছেন। মমতা ছবি আঁকেন, গান শোনেন, বই পড়েন। একদম সাধারণ বাঙালি নারীর প্রতিচ্ছবি। তার ব্যক্তিত্ব এমনই, তাকে অপছন্দ করা যায়, উপেক্ষা করা যায় না। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক আন্তরিক ও উষ্ণ। এতদিন শুনে এসেছি, বাংলাদেশের প্রতিও তার রয়েছে আলাদা টান ও প্রবল অনুরাগ। বিভিন্ন সময়ে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। মমতা হতে পারতেন বাংলাদেশের পরম বন্ধু। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জন্য যতটা মমতাময়ী, বাংলাদেশের মানুষের জন্য ততটাই ‘মমতাহীনা’।

২০১১ সালের পর থেকেই মমতার মন গলানোর নানা চেষ্টা হয়েছে। এত যে ভিলেন তবু ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে এসে উষ্ণ ও আন্তরিক অভ্যর্থনা পান মমতা। একাধিক অনুষ্ঠানে তিনি খুব আন্তরিক ভঙ্গিতে বাংলাদেশের মানুষকে তার ওপর ভরসা রাখতে বলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আপনাদেরও প্রবলেম আছে, আমাদেরও প্রবলেম আছে। তবে এটা আমাদের ওপর ছেড়ে দিন। এটি নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করবেন না’। তখন পর্যন্ত আমরা ভেবেছি, পরের বছর পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের পরই নিশ্চয়ই তিস্তার জট খুলিবে। কারণ অপ্রিয় যা কিছু করতে হয়, তা নির্বাচনের পরপরই করতে হয়। কিন্তু দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসেও যখন তিস্তা নিয়ে মমতার অবস্থান আগের মতই, তখন বুঝে যাই এই মহিলার মনে সত্যিই কোনও রহম নেই। আর শনিবার বিকল্প প্রস্তাব দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, তার মন গলবে না।

অভিন্ন নদীর পানি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের একটি বড় ফ্যাক্টর। নদীমাতৃক বাংলাদেশের অধিকাংশ নদীর উৎপত্তি ভারতে। পানির স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করাই প্রাকৃতিক নিয়ম। কিন্তু ভারত ফারাক্কা বাধ নির্মাণ করে প্রথম সে প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। তারপর থেকেই অবিশ্বাসের যাত্রা। ভারত তাদের স্বার্থে উজানে নদীর পানি আটকে দেয়, যা সমস্যায় ফেলে বাংলাদেশকে। কিন্তু ভারতের গাজলডোবায় ব্যারেজ নির্মাণ করে তিস্তার পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের ফলে বাংলাদেশের উক্তরাঞ্চলে দারুণ সমস্যা হয়। লালমনিরহাটে নির্মিত তিস্তা ব্যারেজ কৃষকদের জন্য যতটা আশা নিয়ে নির্মাণ হয়েছিল, তা হতাশায় বদলে যায়। ভারত ব্যারেজ ও সেচ খালের মাধ্যমে পানি নিয়ে নেওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে ব্যারেজটি অকার্যকর হয়ে যায়। আবার বর্ষায় পানি ছেড়ে দেওয়ায় বাংলাদেশে বন্যা এবং নদীভাঙনের সৃষ্টি হয়। ১৯৭২ সালে যৌথ নদী কমিশন প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে নানা আলোচনা হয়েছে। ১৯৮৩ সালে একটি অ্যাডহক সমঝোতাও হয়েছিল। সে অনুযায়ী ২৫ শতাংশ পানি তিস্তা ও প্রবাহের জেন্য রেখে, বাকি ৭৫ শতাংশ পানি ৩৯:৩৬ অনুপাতে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ভাগ করার কথা ছিল। তবে সে সমঝোতা কখনও বাস্তবায়িত হয়নি। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে পরের বছরই ভারত সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তা চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করেন। তবে সে সফরে কোনও চুক্তি হয়নি। পরের বছর ২০১১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংএর বাংলাদেশ সফরের সময় তিস্তা চুক্তি করার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়। কিন্তু মমতার বাগড়ায় তা হয়নি।

এটা ঠিক মমতা তার রাজ্যের স্বার্থটাই আগে দেখবেন। কিন্তু স্বার্থ দেখতে গিয়ে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করা কোনও কাজের কথা নয়। ন্যায়-অন্যায় বলেও তো একটা কথা আছে। নিজের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রাখতে চেয়ে তো আপনি আরেক দেশকে ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করতে পারেন না। বাংলাদেশকে পর্যাপ্ত পানি দিলে সমস্যায় পড়বে পশ্চিমবঙ্গ। তাই মমতা এতে বাগড়া দেন। মমতার দাবি, উৎপত্তিস্থল সিকিম পানি প্রত্যাহার করায়, পশ্চিমবঙ্গই পর্যাপ্ত পানি পায় না। তিস্তা চুক্তির জন্য আমাদের যতটা তাগিদ, ভারতের ততটা নয়। উজানের দেশ হওয়ায়, চুক্তি না হলে তাদের কোনও ক্ষতি নেই, বরং লাভ। তারা তাদের সুবিধামত পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে। কিন্তু আমরা তো ভারতের লাভ দেখবো না, আমরা দেখবো আমাদের স্বার্থ, আমাদের লাভ।

শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগে তাঁর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেছেন, ‘ভারত যেহেতু সবসময় অভিযোগ করে চীন ব্রহ্মপুত্রে ব্যারেজ তৈরি করায় নিম্ন অববাহিকায় জলের পরিমাণ কমেছে সেহেতু তিস্তা চুক্তি নিয়ে আলোচনায় চীনে সঙ্গেও কথা বলা প্রয়োজন’। এইচ টি ইমাম পরে বলেছেন, এটা তার ব্যক্তিগত মত। তবু ভারতকে চাপে রাখতেই এইচ টি ইমাম চীনের কার্ড খেলেছেন। তবে শুধু খেলা নয়, প্রয়োজনে চীনকে আলোচনার টেবিলে আনতে হবে। ভারত যদি আমাদের বন্ধুত্বের মর্যাদা না দেয়, তাহলে পানি আদায়ে সব কৌশল অবলম্বন করতে হবে।

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের একটা ঐতিহাসিক, কূটনৈতিক, ইমোশনাল ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। আরেকটু ছোট করে বললে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের টানটা নাড়ির। বাংলাদেশ আর ভারতের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ একসময় অভিন্ন বাংলা ছিল। ১৯০৫ সালে প্রথম বঙ্গভঙ্গ হয়। ১৯১১ সালে আবার বঙ্গভঙ্গ রদ হয়। তবে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় পুরোপুরি ভেঙে যায় বাংলা। পূর্ব বাংলা থেকে পূর্ব পাকিস্তান হয়ে বাংলাদেশ হলেও পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে আমাদের রক্তের সম্পর্কটা এখনও রয়ে গেছে। দেশভাগের সময় বা পরে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় ওপার বাংলা থেকে অনেকে পূর্ব পাকিস্তানে এসেছেন। আবার এপার বাংলা থেকে সংখ্যালঘুদের অনেকেই ভারতে চলে গিয়েছেন বা চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। যতই বাধ্য হন, তাদের শেকড় তো বাংলাদেশেই। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া মানুষেরা কলকাতায় পরিচিত ‘বাঙাল’

হিসেবে। এই বাঙালদের অনেকেই রাজনীতি, শিল্প-সাহিত্যে অনেক উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। কিন্তু তারা ভুলে যাননি বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের প্রতি তাদের টানটা রয়েই গিয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই বাঙালরা একটি বড় প্রভাবক। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা কৃতজ্ঞতার। এই কৃতজ্ঞতা জন্মের। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত আমাদের সরাসরি সহায়তা করেছে। বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার পরিচালিত হয়েছে কলকাতা থেকে। ভারত আমাদের শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে, খাইয়েছে। এই অপরিসীম সহায়তা আমরা কোনোদিন ভুলিনি, ভুলবো না। প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গিয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে জীবন দেওয়া ভারতের সৈনিকদের সম্মাননা জানিয়েছেন। কিন্তু একাত্তরে সহায়তা করেছেন বলেই, এখন পানি আটকে রেখে আমাদের মারবেন, তা হবে না।

মমতার বিকল্প প্রস্তাব শুনে আমার একটি ছড়ার কথা মনে পড়েছে, নাকের বদলে নরুন পেলাম, টাক ডুমা ডুম ডুম। মমতা যে চারটি নদীর কথা বলেছেন, সে পানিও আমাদের পাওনা, ন্যায্য অধিকার। তাছাড়া এই নদীগুলোর উজানে কোনও বাধ নেই। তাই পানি তো স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই আসবে। এর সাথে তিস্তার অদল-বদল করতে হবে কেন। তিস্তার কোনও বিকল্প নেই। তিস্তার পানির অভাবে বাংলাদেশের একটি বড় অংশ মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে, আর ‘মমতাহীনা’ মমতা বিকল্পের কথা বলবেন, এটা মেনে নেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। মমতা মুখে যতই বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসার কথা বলুন, মোদি যতই পাশে থাকার কথা বলুন; শুকনো কথায় আর চিড়ে ভিজবে না। আমাদের পানি চাই; আপনারাই ঠিক করুন মোদি দেবেন না মমতা।

লেখক: বার্তা প্রধান, এটিএন নিউজ

[email protected]

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
মঙ্গোলিয়ার দাবাড়ুকে হারিয়ে ফাহাদের মুখে হাসি
মঙ্গোলিয়ার দাবাড়ুকে হারিয়ে ফাহাদের মুখে হাসি
চেয়ারম্যান হলেন ৯ এমপির স্বজন, হেরেছেন দুজন
চেয়ারম্যান হলেন ৯ এমপির স্বজন, হেরেছেন দুজন
জোসেলুর জোড়া গোলে ফাইনালে রিয়াল
জোসেলুর জোড়া গোলে ফাইনালে রিয়াল
চেয়ারম্যান হলেন এমপির ছেলে ও ভাই
চেয়ারম্যান হলেন এমপির ছেলে ও ভাই
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ