X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বেছে নিতে চাই বাংলা ট্রিবিউন

মুহম্মদ জাফর ইকবাল
১২ মে ২০১৭, ২৩:২৯আপডেট : ১২ মে ২০১৭, ২৩:৪৩

মুহম্মদ জাফর ইকবাল আমরা এখন পৃথিবীর একটা ক্রান্তিকালে বাস করছি।  আমাদের চারপাশে অনেক কিছু ঘটছে, যেটা পৃথিবীর ইতিহাসে আগে কখনও ঘটনি।  তার অনেক কিছু চমকপ্রদ।  চমকপ্রদ বিষয় নিয়ে আমাদের এক ধরনের মোহ থাকে।  তাই আমরা অনেক কিছু নিয়ে মোহগ্রস্ত হয়ে থাকি কিন্তু পরিষ্কার করে জানি না, বিষয়টা সামগ্রিকভাবে ভালো না খারাপ।
সংবাদপত্রের বিষয়টাই বলি।  একটা সময় ছিল, যখন সংবাদ পাওয়ার একমাত্র পথ ছিল ছাপানো সংবাদপত্র।  যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো ছিল না বলে মফস্বলে কাগজ পৌঁছাতে দেরি হতো।  শৈশবে বড় অংশ একদিন পর খবরের কাগজ পেয়ে তাতেই সন্তুষ্ট ছিলাম।  এখন খবরের কাগজ বিষয়টা উঠে যাচ্ছে।  ভোরবেলায় চায়ের কাপের সঙ্গে ভাঁজ না ভাঙা কাগজটির ভাঁজ খুলে প্রথমবার তাতে চোখ বোলানোর অভিজ্ঞতাটি নিয়ে আমরা যতই আবেগ আপ্লুত হই না কেন, বিষয়টি দেখতে দেখতে উঠে যাবে।  আমরা আমাদের স্মার্টফোনে কাজের ফাঁকে ফাঁকে সর্বশেষ খবরটি জেনে যাব। সত্যি কথা বলতে কী, বিষয়টা এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে।  সর্বশেষ খবরের জন্য কেউ আর পুরো দিন অপেক্ষা করে না।  আমরা ঘণ্টায় ঘণ্টায় সর্বশেষ খবর জানতে পারি।  প্রয়োজনে মিনিটে মিনিটে খবরের অগ্রগতি দেখি।
এতক্ষণ পর্যন্ত ভালো কিন্তু এরপরের বিষয়টা দুর্ভাবনার।  আমরা খবর জানতে চাই, কিন্তু সেই খবরটি আমাকে কে দেবে? আমরা ধরেই নিয়েছিলাম, সেই খবরটি দেবে সংবাদপত্র।  আমরা ধরেই নিয়েছিলাম, সেই সংবাদমাধ্যমে সাংবাদিক থাকবেন, ক্যামেরাম্যান থাকবেন, সম্পাদক থাকবেন, খাটাখাটুনি করার মানুষ থাকবেন।  তারা গুছিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করে প্রকাশ করবে।  কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম ব্যাপারটি সবসময় সে রকম হচ্ছে না।  অনলাইনে একটি সংবাদপত্র চালানোর জন্য দরকার একটা ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট সংযোগ।  দেখতে দেখতে শত শত অনলাইন পত্রিকা দাঁড়িয়ে গেলো।  সংবাদ যত রগরগে তার প্রচার তত বেশি।  যে অনলাইনের সংবাদে যত গালাগাল, যত কুৎসা, যত অশালীন ছবি থাকে, তার গ্রাহক তত বেশি বিভিন্ন পত্রপত্রিকা থেকে শুধু উত্তেজক খবর সংগ্রহ ও পরিবেশন করে বিশাল বিশাল পোর্টাল লাখ লাখ মানুষের স্থূল প্রবৃত্তিকে সুড়সুড়ি দিয়ে কোটি কোটি টাকা কামাই করছে।  আমাদের উদাহরণ দিতে হবে না, যারা অনলাইনে ঘোরাঘুরি করেন, তারা আমার চেয়ে ভালোভাবে সেগুলো জানেন।

এরপর আমরা আরও বিপজ্জনক বিষয় দেখতে পেলাম।  সামাজিক নেটওয়ার্ক এ রকম একটা গালভরা নাম দিয়ে আসলে আত্মপ্রচার করে আত্মপ্রসাদ পাওয়ার জন্যে ফেসবুক জাতীয় যে সার্ভিসগুলো তৈরি হতে শুরু করলো, সেগুলো ব্যবহার করে সংবাদ প্রচার হতে শুরু করলো।  এই সংবাদগুলো সাধারণ সংবাদ নয়, এগুলো বিশেষায়িত সংবাদ।  আমরা একটুখানি বিস্ময় ও অনেকখানি আতঙ্ক নিয়ে দেখতে পেলাম, সত্যিকারের সংবাদপত্র যেটি কখনও পারেনি, এই মাধ্যমগুলো সেটি করে ফেলেছে।  একটি ভুয়া কিংবা বানোয়াট খবর প্রচার করে ইতিহাসের ধারাকে পথচ্যুত করে দিচ্ছে।  দেশের নির্বাচনের ফলাফল প্রভাবিত করছে।  কোমলমতি কিশোরদের জঙ্গি হওয়ার রাস্তা দেখিয়ে দিচ্ছে।  দেখে-শুনে মনে হয়, আমরা যেন একটি শিশুর হাতে একটি মেশিনগান ধরিয়ে দিচ্ছি।  খেলনা মনে করে সে এদিক-সেদিক তাক করে ট্রিগার টানছে আর আমরা প্রাণ বাঁচানোর জন্য দিক-বিদিক ছোটাছুটি করছি।

সেজন্য শুরুতে বলেছিলাম, আমরা পৃথিবীর ইতিহাসের একটা ক্রান্তিকালে বাস করছি।  সারাপৃথিবীর মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করার একটা বিস্ময়কর প্রযুক্তি এখন আমাদের হাতে, ঠিকভাবে এটা ব্যবহার করা উচিত, আমরা সেটা এখনও বুঝে উঠতে পারিনি।  যারা এটি নিয়ে ব্যবসা করেন, তারা চেষ্টা করছেন, যত  বেশি সময়, যত বেশি মানুষকে এই চক্রটির মাঝে আবদ্ধ রাখা যায়।  আর আমাদের মতো অল্পকিছু মানুষ যারা বিশ্বাস করি, আমাদের মস্তিষ্ক এই ছোট্ট চক্রের ভেতরের সরলীকৃত বিনোদনের বাইরেও বিশাল একটা জগতের জটিলতা সৌন্দর্য এবং বিমূর্ত রূপ বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা রাখি, তারা চেষ্টা করছি, এর থেকে নিজেদের মুক্ত করে আনতে।  আমরা প্রযুক্তিকে ব্যবহার করব, কিন্তু কোনও মূল্যে প্রযুক্তিকে আমাদের ব্যবহার করতে দেব না।

বাংলা ট্রিবিউনকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে এই লেখাটি শুরু করেছিলাম।  বাংলা ট্রিবিউন একটি অনলাইন পত্রিকা, এখনও আমরা বলতে শুরু করিনি কিন্তু কিছুদিনের ভেতর বলতে শুরু করব, যে অনলাইন পত্রিকাই হচ্ছে মূল ধারার পত্রিকা।  মূল ধারার পত্রিকার দায়িত্ব অনেক বেশি। আমরা আশা করব, তারা তাদের দায়িত্বটুকু ঠিকভাবে পালন করবেন।  দেশ সমাজ ও পৃথিবীর কাছে দায়বদ্ধ থেকে সংবাদ পরিবেশন করবেন।  আজকাল যে নতুন ফ্যাশন শুরু হয়েছে নিরপেক্ষতার দোহাই দিয়ে ন্যায়-অন্যায় কিংবা সত্য-মিথ্যাকে এক কাতারে ফেলে দেওয়া,  সেখান থেকে দূরে থাকবে। আমরা যখন কাজের ফাঁকে ফাঁকে চট করে দিনের খবরটির ওপর চোখ বোলাতে চাই, তখন  যেন বাংলা ট্রিবিউনকে বেছে নিতে পারি।  কারণ আমরা জানব, এটি সত্যি।  জানব এটি বিশ্বাসযোগ্য।

লেখক: কথাসাহিত্যিক, শিক্ষক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ