X
শনিবার, ১১ মে ২০২৪
২৮ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর চেতনা ও আজকের বাংলাদেশ

তোফায়েল আহমেদ
১৫ আগস্ট ২০১৭, ০০:০০আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০১৭, ০০:১৮

তোফায়েল আহমেদ আগস্ট আমাদের শোকের মাস। এই মাসের ১৫ আগস্ট ইতিহাসের মহামানব দুনিয়ার নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের শ্রেষ্ঠবন্ধু জাতির পিতাকে আমরা হারিয়েছি। যার জন্ম না হলে এই দেশ স্বাধীন হতো না, এবং আজও আমরা পাকিস্তানের দাসত্বের নিগড়ে আবদ্ধ থাকতাম। বছর ঘুরে যখন শোকাবহ আগস্ট মাস আমাদের জীবনে ফিরে আসে, তখন ভীষণভাবে মনে পড়ে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করি, সেদিনের সেই কালরাতে জাতির পিতার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের, যারা সেদিন ঘাতকের নির্মম বুলেটে প্রাণ হারিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর কাছে থাকার দুর্লভ সৌভাগ্যের অধিকারী আমি একজন মানুষ। বঙ্গবন্ধুর কাছেই শুনেছি, তিনি বলেছিলেন, ‘পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর উপলব্ধি করেছি, এই পাকিস্তান বাঙালিদের জন্য হয় নাই। একদিন এই বাংলার ভাগ্যনিয়ন্তা বাঙালিদেরই হতে হবে।’ সেই লক্ষ্য সামনে নিয়ে ১৯৪৮-এর ৪ জানুয়ারি প্রথমে ছাত্রলীগ, এরপর ’৪৯-এর ২৩ জুন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করে ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে মহান জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মধ্যদিয়ে সমগ্র জাতিকে তিনি জাতীয় মুক্তির মোহনায় দাঁড় করিয়েছিলেন। জেল-জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছেন। কিন্তু কোনোদিন মাথা নত করেন নাই। তাঁর রাজনীতির মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। আরও একটি লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করা। গর্ব করে বলতেন, ‘আমার বাংলা হবে রূপসী বাংলা। আমার বাংলাদেশ হবে সোনার বাংলা। আমার বাংলাদেশ হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড।’ আজ তিনি টুঙ্গিপাড়ার কবরে শায়িত। আর কোনোদিন তিনি আসবেন না। আর কোনোদিন তিনি সেই দরদী কণ্ঠে বাঙালি জাতিকে ডাকবেন না ‘ভায়েরা আমার’ বলে।

১৯৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস-সাইক্লোনের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলের নির্বাচন স্থগিত হলে আমি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নির্বাচনকালীন সময়ে সারা বাংলাদেশ সফর করেছি। কুড়িগ্রাম, নাগেশ্বরী, রৌমারী, চিলমারী, ভুরুঙ্গামারী, বুড়িমারীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়েছি। রাস্তা নাই, পুল নাই, গাড়ি নাই। গরুর গাড়িতে করে তাঁকে নেওয়া হয়েছে। আমরা পায়ে হেঁটে গিয়েছি। তিনি ছুটে গিয়েছিলেন সেই দুর্গত অঞ্চল ভোলায়। সেখান থেকে ফিরে এসে শাহবাগ হোটেলে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়) জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে লাখ লাখ লোক মারা যায়। আর এভাবে আমরা মরতে চাই না। আমরা আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের জন্য সংগ্রাম করে মৃত্যুবরণ করতে চাই।’

বঙ্গবন্ধু বিচক্ষণ নেতা ছিলেন। সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতেন। যখন সিদ্ধান্ত নিতেন ভেবে-চিন্তে নিতেন। একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ফাঁসির মঞ্চে যেতেন, কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত তিনি পরিবর্তন করতেন না। ’৫৪-এর নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিজয়ী হলো। বঙ্গবন্ধু মন্ত্রী হলেন। ৯২ (ক) ধারা জারি করে যুক্তফ্রন্ট সরকার বাতিল করা হলো এবং বঙ্গবন্ধুই একমাত্র রাজনীতিক যাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তিনি পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য ছিলেন। কোনোদিন পূর্ব পাকিস্তান নাম উচ্চারণ করেন নাই। সবসময় বলেছেন ‘পূর্ব বাংলা।’ পাকিস্তান গণপরিষদে ‘পূর্ব বাংলা’ নাম পরিবর্তন করে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ রাখার বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করেছেন।

আইয়ুব খান ১৯৫৮ সালের ৮ অক্টোবর সামরিক শাসন জারি করেন। ওই বছরের ১২ অক্টোবর ১৩টি মামলার আসামি করে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের মাধ্যমে তাঁর কণ্ঠ স্তব্ধ করতে চেয়েছিল। কারণ, একটি কণ্ঠ যখন উচ্চারিত হতো, তখন ওই কণ্ঠে কোটি কোটি বাঙালির কণ্ঠ উচ্চারিত হতো। পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী সবসময় চেয়েছে সেই কণ্ঠকে স্তব্ধ করতে। কিন্তু সেই কণ্ঠকে কেউ স্তব্ধ করতে পারে নাই। জেল-জুলুম-অত্যাচার-নির্যাতন জাতির জনকের চলার পথের পাথেয় ছিল।

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তোফায়েল আহমেদ

তিনি ’৬০, ’৬২, এবং ’৬৪তে গ্রেফতার হলেন। ছয় দফা দিলেন ’৬৬ সনে। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ইকবাল হল (বর্তমানে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ছাত্র সংসদের ভিপি। আমার মনে আছে, ’৬৬-এর ৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় রাজনৈতিক কনভেনশনে বিষয় নির্ধারণী কমিটিতে তিনি জাতির সামনে ছয় দফা দাবি পেশ করেন। কিন্তু সর্বদলীয় কনভেনশন বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাব আমলেই নেয় নাই। তিনি ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ফিরে বিস্তারিত ব্যাখ্যাসহ ছয় দফা পেশ করেন এবং ২০ ফেব্রুয়ারি আবদুল মালেক উকিলের সভাপতিত্বে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে অনুষ্ঠিত দলীয় সভায় ছয় দফা অনুমোদন করান।

বঙ্গবন্ধু যখন ছয় দফা দেন তখন তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ছিলেন সভাপতি। এরপর ’৬৬-এর ১৮, ১৯, ২০ মার্চ আওয়ামী লীগের তিন দিনব্যাপী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু সভাপতি, তাজউদ্দীন আহমেদ সাধারণ সম্পাদক এবং মিজানুর রহমান চৌধুরী সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। সম্মেলন শেষে সারাদেশ সফর করে ৩৫ দিনে মোট ৩৩টি জনসভায় তিনি বক্তৃতা করেন। খুলনা গিয়েছেন বক্তৃতা করেছেন। যশোরে বক্তৃতা করে গ্রেফতার হয়েছেন। সেখান থেকে মুক্তিলাভ করে সিলেটে গিয়েছেন গ্রেফতার হয়েছেন। ময়মনসিংহে গিয়েছেন গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু স্বৈরশাসক আইয়ুব খান তাঁকে স্তব্ধ করতে পারে নাই। চট্টগ্রামে গিয়ে অগ্নিযুগের বিপ্লবী সূর্যসেনকে স্মরণ করে বীর চট্টলাবাসীর উদ্দেশে বলেছেন, ‘এই চট্টগ্রামের জালালাবাদ পাহাড়েই বীর চট্টলের বীর সন্তানেরা স্বাধীনতার পতাকা উড্ডীন করেছিলেন। আমি চাই যে, পূর্ব পাকিস্তানের বঞ্চিত মানুষের জন্য দাবি আদায়ে সংগ্রামী পতাকাও চট্টগ্রামবাসীরা চট্টগ্রামেই প্রথম উড্ডীন করুন।’ বিচক্ষণ নেতা ছিলেন বলেই সরাসরি স্বাধীনতার কথা বলেন নাই। বলেছেন, বঞ্চিত মানুষের জন্য দাবি আদায়ে সংগ্রামের কথা। নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় ৮ মে ঐতিহাসিক ‘মে দিবস’ স্মরণে শ্রমিক সমাবেশে ভাষণদান শেষে রাত ১টায় যখন ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাসভবনে ফেরেন, তখন পাকিস্তান দেশরক্ষা আইনের ৩২ (১) ‘ক’ ধারা বলে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। সেদিন আমাদের সকল নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করে নেতৃত্বশূন্য করে ফেলা হলো দলকে।

ময়মনসিংহের রফিকউদ্দিন ভুঁইয়াকে সঙ্গে নিয়ে আমেনা বেগমকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করে আমরা তরুণ ছাত্রসমাজ দলকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। ’৬৮-এর ১৭ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে জেলগেটেই আবার গ্রেফতার করা হয়। আমার সৌভাগ্য ওইদিনই ডাকসু’র ভিপি হয়েছিলাম। কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বসে বঙ্গবন্ধু আমাকে চিঠি লিখেছিলেন যে, ‘স্নেহের তোফায়েল, ডাকসু’র ভিপি হয়েছিস, একথা শুনে খুউব ভালো লেগেছে। বিশ্বাস করি, এবারের এই ডাকসু বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করবে।’

জেলগেট থেকে গ্রেফতার করে প্রিজন ভ্যানে তোলার প্রাক্কালে এক টুকরা মাটি কপালে ছুঁইয়ে বলেছিলেন, ‘হে মাটি, আমি তোমাকে ভালোবাসি। ওরা যদি আমাকে ফাঁসি দেয়, আমি যেন মৃত্যুর পরে তোমার বুকে চিরনিদ্রায় শায়িত থাকতে পারি।’ প্রথমে আমরা জানতাম না, বঙ্গবন্ধুকে কোথায় রাখা হয়েছে। পরে জানতে পারি তাঁকে ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করে রাখা হয়েছে। এরপর জুনের ১৯ তারিখ যখন আগরতলা মামলার বিচার শুরু হয়-মামলার অন্যতম আসামি সাবেক ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী সাহেবের কাছে শোনা-‘প্রিজন ভ্যানে করে সবাইকে কোর্টে নিয়ে আসার পথে তিনি ডিএল রায়ের সেই বিখ্যাত গান ‘ধন ধান্য পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’ গাইতে থাকলেন।’ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু এই গানটিকে আমাদের ‘জাতীয় গীত’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। কী অপূর্ব দেশপ্রেম! তখন শওকত ভাই বঙ্গবন্ধুর উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেছিলেন, ‘মুজিব ভাই, আমাদের তো ফাঁসি দিতে নিচ্ছে। আর আপনি এভাবে গান গাইছেন!’ উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘না, ওরা আমাদের ফাঁসি দিতে পারবে না। ওরা আমাদের কিছুই করতে পারবে না। আমাদের ওরা নিয়ে যাবে, বিচার শুরু হবে। বাংলার মানুষ গর্জে উঠবে। একদিন আমি কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করবো এবং মুক্তিলাভ করার পরে তোরা দেখবি একটা নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে আমি বিজয়ী হবো। নির্বাচনে বিজয়ী হবার পর ওরা ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। তখন পাকিস্তানের কবর রচিত হবে।’ তিনি যা বলেছেন, ভেবেছেন সেটাই পরবর্তীতে ইতিহাসে রূপান্তরিত হয়েছে। সামরিক আদালতে দাঁড়িয়ে স্টুয়ার্ট মুজিব যখন তাঁর ওপরে যে অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে তার বর্ণনা দিচ্ছিলেন, তখন আসামির কাঠগড়া থেকে চিৎকার করে ডিফেন্স ল’ইয়ার মঞ্জুর কাদেরের (পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী) উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘ইউ মিস্টার মঞ্জুর কাদের, লিসেন, হোয়াট স্টুয়ার্ট মুজিব স্পিকস? লিসেন টু হিম। রিমেমবার, আই উইল টেক রিভেঞ্জ।’ একজন বন্দি, কত সাহস আর দৃঢ়তা! একথা আমরা শুনেছি প্রখ্যাত প্রয়াত সাংবাদিক ফয়েজ আহমেদের কাছে। বঙ্গবন্ধু যখন ফয়েজ আহমেদকে ডেকেছিলেন তিনি মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিলেন। তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘শোন ফয়েজ, বাংলাদেশে থাকতে হলে শেখ মুজিবের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’ একজন মানুষ যাকে ফাঁসি দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, তিনি সেদিন মাথা উঁচু করে দৃঢ়তার  সঙ্গে কথা বলেছেন।

গত ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৮৮-তম জন্মদিন ছিল। দেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী এই মহীয়সী নারীর প্রতি তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে। ’৬৯-এর সেই অগ্নিঝরা দিনে বেগম মুজিব বঙ্গবন্ধুর কাছে ছুটে গিয়ে সব জানিয়ে বলেছিলেন, ‘মানুষ তোমার জন্য ঐক্যবদ্ধ এবং এক কাতারে দাঁড়ানো। মানুষ চায়, তুমি মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে মুক্তিলাভ করো।’ ফেব্রুয়ারির ১৯ তারিখ মণি ভাইয়ের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু খবর পাঠিয়েছিলেন, ‘ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে আমার বিরুদ্ধে। কিন্তু কারাগার থেকে কিছুতেই এভাবে আমি যাবো না। আমি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করবো, তবু আমি কোনও আপোস করবো না।’ নীতির প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু ছিলেন আপোসহীন। মাথা নীচু করে কথা বলা তিনি জানতেন না।

৭০-এর নির্বাচনে মাওলানা ভাসানী সাহেবের দল যখন শ্লোগান দেয়- ‘ভোটের বাক্সে লাথি মারো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো।’ যখন বঙ্গবন্ধুকে বলা হয়েছিল, ‘এলএফও’’র (লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার) অধীনে নির্বাচন করে আপনার কোনও লাভ হবে না।’ তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এলএফও, ইমিডিয়েটলি আফটার দি ইলেকশন আই উইল টিয়ার দিস এলএফও ইন টু পিসেস।’ অর্থাৎ নির্বাচনের পর এই এলএফও আমি টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলবো। এলএফও’র ২৫ ও ২৭ অনুচ্ছেদে ছিল, সংবিধান প্রণীত হলেও এটি অথেনটিকেট করবেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট।

নির্বাচনে অংশগ্রহণ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, কে এই দেশের নেতা বিশ্ববাসীর কাছে সেটি তুলে ধরার জন্যই আমি নির্বাচন করছি।’ বাংলার মানুষের ম্যান্ডেট নিয়ে ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টিতে বিজয়ী হয়ে বঙ্গবন্ধু প্রমাণ করেছিলেন তিনিই এ দেশের একক নেতা। পরবর্তীতে তাঁর একচ্ছত্র নেতৃত্বেই ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষাধিক প্রাণ আর দুই লক্ষাধিক মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা অর্জন করি স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।

আজ ভাবতে কত ভালো লাগে গত সাড়ে ৮টি বছর রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্বভার পালন করে দেশকে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতির পিতার যোগ্য উত্তরসুরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসাধ্য সাধন করে চলেছেন। তাঁর নেতৃত্বে বিস্ময়কর অগ্রগতি আজ বাংলাদেশের। পার্বত্য চট্টগ্রাম যখন অশান্ত তখন শান্তি স্থাপন করেছেন। তিনি গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি করেছেন। সমুদ্রসীমা নির্ধারণে আন্তর্জাতিক সালিশী আদালতে লড়াই করে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের অধিক সমুদ্রসীমা, ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে অবস্থিত সব ধরনের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। ভারতের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি করেছেন। গড়ে সাড়ে ছয় শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন বহাল রেখে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশকে মর্যাদার আসনে আসীন করেছেন। একদা বাংলাদেশের গোলা ঘরে চাল ছিল না, ব্যাংকে টাকা ছিল না, বৈদেশিক মুদ্রা ছিল না, শূন্য হাতে যাত্রা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। সেই বাংলাদেশ আজ পাকিস্তান থেকে সামাজিক-অর্থনৈতিক সকল খাতে এগিয়ে। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় রূপান্তরিত হতে চলেছে। বাংলার দুখি মানুষের মুখে আজ হাসি। স্বাধীন বাংলাদেশ আজ জাতির জনকের চেতনায় প্রগতির পথে ধাবমান। কোনও  ষড়যন্ত্রই এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতিকে রোধ করতে পারবে না।

লেখক:  আওয়ামী লীগ নেতা, সংসদ সদস্য, বাণিজ্য মন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার           

[email protected]

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
পোস্টার লাগানোকে কেন্দ্র করে প্রার্থীর নির্বাচনি ক্যাম্পে ভাঙচুর ও গুলি বর্ষণ
পোস্টার লাগানোকে কেন্দ্র করে প্রার্থীর নির্বাচনি ক্যাম্পে ভাঙচুর ও গুলি বর্ষণ
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘনের অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘনের অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের
এক মোটরসাইকেলে ৩ ব্যবসায়ী, কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় প্রাণ গেলো দুজনের
এক মোটরসাইকেলে ৩ ব্যবসায়ী, কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় প্রাণ গেলো দুজনের
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই বছরই শেষ অ্যান্ডারসনের
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই বছরই শেষ অ্যান্ডারসনের
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ