X
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪
২৫ বৈশাখ ১৪৩১

সর্ব আশার ও সর্বনাশার ভাইরাল

জুবায়ের বাবু
১৬ জানুয়ারি ২০১৯, ২০:২৪আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০১৯, ২০:২৬

জুবায়ের বাবু শাহনাজের খবরটি শোনার পর মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গিয়েছিল। একজন নারী, প্রতিকূল অবস্থার সঙ্গে যুদ্ধ করে সংসার নামক এক দায়িত্বের পাহাড় ডিঙিয়ে চলছে শুধু একটা স্কুটির ওপর ভর করে। কী অদম্য সাহস আর স্বপ্ন! এই শাহনাজরাই তো পারবে দেশ বদলে দিতে। স্কুটিটা যখন ছিনতাই হয়, তার চোখের জলের সঙ্গে আমার চোখের জলের কথা হয়। চিনি না, জানি না অথচ কোথায় যেন এক জন্মান্তরের বাঁধন, কোথায় যেন চাপা কষ্টের ঐকতান। অনেক আগে একবার তার সম্পর্কে একটা লিখা পড়েছিলাম, সঠিক মনে নেই। কিন্তু মনের গহিনে যে স্থান করে নিয়েছিল তা বুঝতে পারলাম তার এই স্কুটি হারাবার সংবাদে। তার একটা ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হলো, আর আমি ছবিটার দিকে তাকিয়ে দেখছিলাম দূরে, আঁকাবাঁকা ছোট্ট নদীটির পাশ ঘেঁষে, প্রান্তরে গাঢ় সবুজের একটা গ্রাম, আমার বাংলাদেশ।
অসহায় অথচ শান্ত,স্নিগ্ধ। একবার ভাবলাম যোগাযোগ করি, বলি আমিই আপনার স্কুটি কিনে দেবো। থাক না, যা হওয়ার তা হয়েছে। তবুও আপনি এই যুদ্ধ থামাবেন না। কারণ, আপনি হেরে গেলে তো আমার মা হেরে যাবে, আমার বোন হেরে যাবে, আমরা হেরে যাবো, হেরে যাবে আমার বাংলাদেশ। তারপর ভাবলাম, একটা স্কুটি কিনে দেওয়াই কি সব? একটি স্কুটি না হয় একজন শাহনাজের সমস্যার সমাধান হবে, কিন্তু দেশের হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ শাহনাজের কী হবে?

স্কুটি কিনে দিলেই তো আর সমস্যার সমাধান নয়, এর সমাধান আসতে হয়ে রাষ্ট্রের দায়িত্ব থেকে। যেভাবে শাহনাজের বিষয়টি ভাইরাল হলো, আমার বিশ্বাস ছিল শাহনাজ তার স্কুটি ফিরে পাবে। কারণ, ভাইরাল না হলে আমাদের দেশে প্রশাসন নড়ে না, পুলিশ দৌড়ায় না, সরকারের চোখ খোলে না। ঘটনাটি ভাইরাল হলো, আসামি ধরা পড়লো। নোয়াখালীর সুবর্ণচরের সেই মায়ের চিৎকার হয়তো কখনোই আমাদের কানে পৌঁছাতো না, যদি তা ভাইরাল না হতো। ঘটনাটি ভাইরাল হলো, আসামি ধরা পড়লো। এক ছিন্নমূল নারী ফুটপাতে অসুস্থ হয়ে শুয়ে থাকার দৃশ্যটি ভাইরাল হলো, জেলা প্রশাসক পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিলেন। কিন্তু দেশের শত সহস্র শাহনাজদের ঘটনা তো আর ভাইরাল হয় না। সেগুলো নিয়ে আলোচনাও হয় না তেমন।  অনেক ঘটনা আবার ফেসবুকে ভাইরাল হলেও লাভ হয় না, যেমন- তনু হত্যাকাণ্ডের ঘটনা কিংবা সাগর-রুনির মামলা, কিছুই হয় না মেঘের, আশায় বুক বেঁধে থাকে।

উল্টো চিত্রও আছে, ঘটনা ভাইরাল হওয়ার পর অনেক সময় ভিকটিমের ওপর নেমে আসে নিপীড়ন, যা আমরা দেখেছি কোটা সংস্কার আন্দোলন কিংবা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর। তবুও ভাইরাল হলে অন্তত কিছু ঘটনা আমরা জানতে পারি। নিজের মতো করে হলেও প্রকৃত সত্যটা বুঝতে চেষ্টা করতে পারি। যখন দায়িত্বশীলরা ব্যর্থ হয়, তখনই সুযোগসন্ধানীরা দায়িত্ব ছিনিয়ে নেয়। পৃথিবীতে মনে হয় বাংলাদেশ হলো একমাত্র দেশ, যেখানে সংবাদের সত্যতা মাঝে মাঝে যাচাই করা হয় ফেসবুকের মাধ্যমে। আর এই বিশ্বাসকে পুঁজি করে অনেক সুবিধাবাদী ছড়িয়ে দেয় বিভাজনের আগুন, অবিশ্বাসের দ্বন্দ্ব। যেমনটি ঘটেছিল ২০১২ সালে কক্সবাজারে রামুর বৌদ্ধপল্লিতে কিংবা ২০১৬ সালে নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা। এর সূত্রপাত ফেসবুক।  রংপুরের গঙ্গাচড়ার কথা নিশ্চয়ই মনে আছে।  

আমরা যেন এক চক্রের মাঝে পড়ে আছি,ফেসবুক-ভাইরাল-ফেসবুক। এই চক্র থেকে বের হতে হবে সবাইকে। দায়িত্বশীলরা যদি নিজের দায়িত্বটি যথাযথভাবে পালন করে বা দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে ওঠে, গণমাধ্যম যদি তার সঠিক সংবাদটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়, তবে আমি নিশ্চিত সামাজিক মাধ্যমে অসামাজিক কাজ থেকে বিরত হবে সাধারণ মানুষ। ফেসবুক হয়ে উঠবে আমার আপনার ভালোলাগা আর ভালোবাসার বুক।

লেখক : চলচ্চিত্র নির্মাতা

 

/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ঢাকাই সিনেমায় রবীন্দ্রনাথ...
কবিগুরুর ১৬২তম জন্মজয়ন্তীঢাকাই সিনেমায় রবীন্দ্রনাথ...
বরিশালে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন
বরিশালে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
হামাসের সংশোধিত প্রস্তাব গাজায় যুদ্ধবিরতি অচলাবস্থা ভাঙতে পারে: যুক্তরাষ্ট্র
হামাসের সংশোধিত প্রস্তাব গাজায় যুদ্ধবিরতি অচলাবস্থা ভাঙতে পারে: যুক্তরাষ্ট্র
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ