X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আমাদের হীনমন্যতা

তুষার আবদুল্লাহ
০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৪:৩৩আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৪:৩৪

তুষার আবদুল্লাহ আমাদের ভনিতা শুরু হয়ে গেছে। ভাষার মাস শুরু হওয়া মাত্র বদল এসেছে কথা বলার ঢঙে। খুব সচেতনভাবে ইংরেজি শব্দ এড়িয়ে কথা বলার চেষ্টা করছি। মস্তিষ্কে বাংলা শব্দের মজুদে ঘাটতি থমকে যাচ্ছি মাঝ পথে। শেষ করতে পারছি না পুরো বাক্য। নিজের যেমন বাংলা প্রীতি বাড়লো তেমনি সন্তানদেরও টুকটাক বাংলায় কথা বলার অভ্যাস করানো শুরু হয়ে গেছে। কারণ সন্তান ইংরেজি মাধ্যমে পড়লেও, তার স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হবে। সেখানে তাকে ‘রাইম’ পাঠে অংশ নিতে হতে পারে। সুতরাং ঘরে বাংলা একটু আধটু বলা শুরু করা দরকার। ২১শে’র জন্য পোশাক কেনা শুরু হয়ে গেছে। সাদা-কালো জমিনে বর্ণমালা। দিনটা ভালোই উৎসব মুখর হবে। শহীদ দিবসকে আড়াল করে দিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনে আমাদের মেতে ওঠা। আমরা ভুলে যাচ্ছি– বাংলা আমাদের মাতৃভাষা ছিলই। সেই ভাষা কেউ কেড়ে নিতে চায়নি। ভাষা আন্দোলন এই দাবিতে ছিল না। দাবি ছিল বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার। সেই লড়াইয়ে আমরা জিতেছি। কিন্তু জিততে পারিনি নিজের সঙ্গে। মুক্ত হতে পারিনি  নিজের ঔপনিবেশিক চিন্তার জনপদ থেকে। ফলে রাষ্ট্র থেকে ব্যক্তি অবধি আমরা ১৯৫২ থেকে ২০১৯ ভিনদেশের বাসিন্দা হয়েই রইলাম।

রাষ্ট্রের বিভিন্ন দফতরের নামফলক ভিনদেশি ভাষায়। পত্র আদান-প্রদান, বৈঠক সব কিছুতেই ভিনদেশি ভাষার প্রভাব দেখা যায়। সকল স্বদেশী, স্বভাষী দর্শক, শ্রোতার মধ্যেও আমরা বাংলায় বলতে লজ্জিত হই। রাজধানী থেকে গ্রামের মেঠোপথ, দুই দিকে চোখ রেখে কয়টি দফতর, বিপনী বিতানের নামফলক বাংলায় পাবেন? বাংলা বলতে বাংলা ভাষায়। অনেক নাম ফলক বাংলা বানানে ইংরেজি শব্দ। ব্যক্তিগত বাড়ির নাম ফলকেও তাই। শুধু নামফলক কেন? আমরা আমাদের সন্তানদের নাম রাখছি। সেখানেও ভিনদেশ প্রীতি অনেক সময় লক্ষ্য করা যায়। ভিন্নভাষার প্রতি প্রেম। বিশ্ব নাগরিক হওয়ার ছুঁতোয় বাংলাকে ব্যবহারে-বচনে ক্রমশ দুই-তিনে নামিয়ে আনছি। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা এখন উঁচুতলার অহংবোধ শুধু নয়। নিচুতলাও ইংরেজি মাধ্যমকে আঁকড়ে ধরেছে। যে অভাগার কোনও গতি নেই, সেই তার সন্তানকে বাংলা মাধ্যমে পড়াচ্ছে বলা যায়। ব্যতিক্রম যারা আছেন, তারা নিত্য টিকা টিপ্পনি সহ্য করে যাচ্ছেন। বাংলা মাধ্যমে পড়িয়ে সর্বনাশ ঘটানো হচ্ছে সন্তানের। বিদেশে উচ্চশিক্ষা বা নাগরিকত্ব পাওয়ার সূবর্ণ সুযোগ থেকে সন্তানকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

আমাদের শিক্ষার মানের ক্রমশ অবনমন ঘটা। সংস্কৃতির বিপন্নতা। এসব কিছুর জন্য আমাদের ভিনদেশি ভাষা প্রেমই দায়ী। বিস্তর দেশ এবং জাতির উদাহরণ দেওয়া যাবে, যারা মাতৃভাষাকে আঁকড়ে ধরে আছে তারাই বিশ্ব জয় করতে পেরেছে। দৃশ্যমান নয় পেরোতে পেরেছে প্রকৃত উন্নয়নের চৌকাঠ।

আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত না, প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত বাংলাকে গুরুত্ব না দেবো, ততক্ষণ জাতি হিসেবে পরোকীয়ার টানাপোড়নে রয়ে যাবো। বাংলা ভাষায় চিন্তা ও স্বপ্ন না দেখে ভিনদেশি ভাষার অনুবাদের আশ্রয় যিনি নেন, তিনি মেধার উৎকর্ষে পৌঁছেছেন বলে জানা নেই। আমাদের যারা জ্ঞান তাপস ছিলেন, জগৎ জয় করেছেন যারা, তারা বাংলা লেখা ও বলাতে কখনও ভিনদেশি শব্দের ওপর ভর করেননি। ভিনদেশি ভাষা কর্ম ও জ্ঞানের পরিধি বাড়ায়। কিন্তু সেজন্য মাতৃভাষাকে অবজ্ঞা বা সেই ভাষাকে নিয়ে হীনমতায় ভোগা কেন? শিক্ষা ও সংস্কৃতি অবনমনে বাঁধ দিতে হলে, মাতৃভাষায় শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চার ওপর ভরসা রাখতে হবে। আমাদের প্রাত্যহিকে মনে রাখতে আমাদের প্রথম অহংকার আমার ভাষা। তবেই শিক্ষা ও সংস্কৃতির চৌদ্দ আনা সংকট কেটে যাবে।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
সরকারি না হয়েও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হয়েও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনও পরিবর্তন হবে না: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনও পরিবর্তন হবে না: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
ঘোড়াঘাটে মালবোঝাই দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত
ঘোড়াঘাটে মালবোঝাই দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ