X
শনিবার, ১১ মে ২০২৪
২৭ বৈশাখ ১৪৩১

হিন্দুদের অনুষ্ঠানে গেলেই কি মানুষ হিন্দু হয়ে যায়, প্রশ্ন বৃষ্টির বাবার

কুদরতে খোদা সবুজ, কুষ্টিয়া
১১ মার্চ ২০২৪, ২৩:০৩আপডেট : ১১ মার্চ ২০২৪, ২৩:০৩

রাজধানীর বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মারা যান বৃষ্টি খাতুন নামে এক নারী সাংবাদিক। বৃষ্টি তার বন্ধু ও সহকর্মীদের কাছে অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি মূলত মুসলিম পরিবারের সন্তান। কিন্তু অভিশ্রুতি নামে নিজেকে পরিচয় দেওয়ার কারণে তার লাশ হস্তান্তর নিয়ে তৈরি হয় জটিলতা।

মৃত্যুর পর রমনা মন্দিরের পুরোহিত বৃষ্টিকে সনাতন ধর্মাবলম্বী বলে জানান। পাশাপাশি সবুজ শেখ ও বিউটি বেগম দম্পতি তাকে নিজের সন্তান বলে দাবি করেন। এরপর মরদেহ শনাক্ত করতে নেওয়া হয় ডিএনএ নমুনা। নমুনা নেওয়ার ১১ দিন পর রবিবার (১০ মার্চ) বৃষ্টির ডিএনএ’র সঙ্গে তার বাবা-মায়ের ডিএনএ মিলে যায়। তবে পরিবার এমনকি এলাকাবাসীর কাছে বৃষ্টি খাতুন নামে পরিচিত ওই সাংবাদিককে অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামেই চিনতেন তার সহকর্মীরা।

বৃষ্টির মা বিউটি বেগম মেয়ের পরিচয় গোপন করা সম্পর্কে বলেন, ‘তার (বৃষ্টি) পরিচয় পরিবর্তন সম্পর্কে আমরা কিছু জানতাম না। আমাদের কাছে একটাই পরিচয় সে বৃষ্টি খাতুন। তার সার্টিফিকেটে এ নাম দেওয়া। স্কুল-কলেজ সব জায়গায় তাকে একই নামে চেনে।’

জানা গেছে, নিহত সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর আসল নাম বৃষ্টি খাতুন। তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বেতবাড়ীয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বনগ্রাম গ্রামের প‌শ্চিমপাড়ায়। তার বাবার নাম শাবরুল আলম সবুজ ওরফে সবুজ শেখ।

স্থানীয় বেতবাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তাকে বৃষ্টি খাতুন নামেই চিনি। বৃষ্টি খাতুন আমার স্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। তার ক্লাস রোল ছিল ২। সে পড়ালেখায় ভালো ছিল।’

বেতবাড়ীয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল মজিদ বলেন, ‘অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর আসল নাম বৃষ্টি খাতুন। তিনি মুসলিম। বৃষ্টি ইডেন কলেজে পড়াশোনা করতেন।’

২০২১ সালের ৬ জুলাই ইস্যু করা জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম বৃষ্টি খাতুন রয়েছে। সেখানে বাবার নাম সবুজ শেখ এবং মায়ের নাম বিউটি বেগম। কলেজের প্রবেশপত্র এবং রেজিস্ট্রেশন কার্ডেও একই রকম তথ্য পাওয়া যায়।

২০২২ সালের ১২ মার্চ ইস্যু করা জন্মনিবন্ধন সনদে তার নাম বৃষ্টি খাতুন। বাবার নাম লেখা হয়েছে সবুজ শেখ এবং মায়ের নাম বিউটি বেগম। তবে ওই সাংবাদিককে অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামে চিনতেন তার সহকর্মীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও তাকে অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামে পাওয়া গেছে।

বৃষ্টির খালা শাবানা খাতুন বলেন, ‘বৃষ্টি সনাতন ধর্ম গ্রহণ করেছে কিনা জানা নেই। সে আমার বোনের গর্ভের সন্তান। আমার বোন তাকে পেটে ধরেছে। সে আমাদের মুসলিম পরিবারের সদস্য। তার সার্টিফিকেট, জন্মনিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম বৃষ্টি খাতুন।’

বৃষ্টি খাতুন (ফাইল ছবি)

বৃষ্টি খাতুন রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ নামের একটি নিউজ পোর্টালে কাজ করতেন। গেলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহ করেছেন। নির্বাচন কমিশন বিটের মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক ছিলেন। তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভে মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক হিসেবে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।

অবশেষে মরদেহ নিয়ে উদ্ভূত জটিলতার অবসান ঘটেছে। ঘটনার ১১ দিন পর সোমবার (১১ মার্চ) বিকালে বৃষ্টির বাবা সবুজ শেখ মেয়ের মরদেহ বুঝে নেন। ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের মাধ্যমে হিন্দু-মুসলিম পরিচয়ের বিতর্ক নিরসনের পর অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বৃষ্টির মরদেহ হস্তান্তর করে।

মরদেহ গ্রহণ করে বৃষ্টির বাবা সবুজ শেখ আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমিই তার বাবা। আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া।’

তিনি আরও বলেন, ‘মেয়ের মরদেহ পেয়েছি। তাকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাবো। সেখানেই ইসলাম ধর্মমতে জানাজা দিয়ে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বনগ্রাম পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।’

হিন্দু মুসলিম নিয়ে যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছিল, সে বিষয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে নিহতের বাবা আরও বলেন, ‘হিন্দুদের অনুষ্ঠানে গেলেই কি মানুষ হিন্দু হয়ে যায়? অনেকেই হিন্দুদের অনুষ্ঠানে যান। তাই বলে কেউ হিন্দু হয়ে গেছেন?’

ঢাকা মেট্রো সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ডিএনএ প্রোফাইলের মাধ্যমে তার পরিচয় শনাক্ত হয় রবিবার। সোমবার আড়াইটার দিকে মরদেহটি তার বাবার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামে বিভিন্ন স্থানে চাকরি করেছেন মেয়েটি। তাই তারা দাবি করতেই পারেন। পরে তারা বুঝতে পেরেছেন এবং মরদেহটি তারা বাবা-মায়ের কাছেই হস্তান্তর করার জন্য থানায় লিখিত দিয়েছেন। সে সময় রমনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।’

বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে বিকাল ৩টার দিকে বৃষ্টির বাবা অ্যাম্বুলেন্সে মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে মরদেহ গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছায়। এরপর জানাজা শেষে রাত ৯টা ৫০মিনিটের দিকে কুষ্টিয়ার খোকসার বনগ্রাম প‌শ্চিমপাড়ায় পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

প্রসঙ্গত, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের একটি রেস্তোরাঁয় আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ১১টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ওই আগুনের ঘটনায় শিশুসহ ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে অন্যদের সঙ্গে মারা যান বৃষ্টি খাতুন।

/কেএইচটি/
টাইমলাইন: বেইলি রোডে আগুন
১১ মার্চ ২০২৪, ২৩:০৩
হিন্দুদের অনুষ্ঠানে গেলেই কি মানুষ হিন্দু হয়ে যায়, প্রশ্ন বৃষ্টির বাবার
০২ মার্চ ২০২৪, ২১:৫১
সম্পর্কিত
রিমান্ড শেষে কারাগারে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের মালিক
ঘটনার তদন্তে যাওয়ার পথে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হলেন পুলিশ কর্মকর্তা
বানিয়াচংয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষে ২ জন নিহত
সর্বশেষ খবর
বালবির্নির হাফ সেঞ্চুরিতে পাকিস্তানকে হারালো আয়ারল্যান্ড
বালবির্নির হাফ সেঞ্চুরিতে পাকিস্তানকে হারালো আয়ারল্যান্ড
জমজমাট দ্বিতীয় দিন, পর্দা নামছে আজ
জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসবজমজমাট দ্বিতীয় দিন, পর্দা নামছে আজ
মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের ফলে কী ক্ষতি হতে পারে বাংলাদেশের?
মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের ফলে কী ক্ষতি হতে পারে বাংলাদেশের?
তানজিদের কারণেই ঝুঁকি নেননি সৌম্য
তানজিদের কারণেই ঝুঁকি নেননি সৌম্য
সর্বাধিক পঠিত
২০ মিনিটে লালখানবাজার থেকে বিমানবন্দর, চলবে না অটোরিকশা-বাইক
২০ মিনিটে লালখানবাজার থেকে বিমানবন্দর, চলবে না অটোরিকশা-বাইক
ফোন ছিনতাইয়ের ঘটনায় জিডি নয়, মামলা নেওয়ার নির্দেশ
ফোন ছিনতাইয়ের ঘটনায় জিডি নয়, মামলা নেওয়ার নির্দেশ
চীন বিষয়ে বিশেষজ্ঞকে ঢাকায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
চীন বিষয়ে বিশেষজ্ঞকে ঢাকায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
একই গ্রাম থেকে নির্বাচিত হলেন তিন চেয়ারম্যান
একই গ্রাম থেকে নির্বাচিত হলেন তিন চেয়ারম্যান
প্রশ্নফাঁস: বিমানের ডিজিএমসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র
প্রশ্নফাঁস: বিমানের ডিজিএমসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র