কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দফায় দফায় সংঘর্ষের ধারাবাহিকতায় আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কার্জন হল এলাকায়। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা থেমে থেমে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করছে। কার্জন হলের ভেতর থেকে আন্দোলকারীরাও বিক্ষিপ্তভাবে ইট-পাটকেল ছুঁড়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করছে। সোমবার (৯ এপ্রিল) ভোর ৪টার দিক থেকেই এই এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এক পর্যায়ে পুলিশের টিয়ারশেলের মুখে আন্দোলনকারীরা শহীদুল্লাহ হলের ভেতরে ও সামনের দিকে অবস্থান নেন। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (ভোর সোয়া ৫টার দিকে) শহীদুল্লাহ হল ও কার্জন হল এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেমে থেমে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে যাচ্ছে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে।
ঘটনাস্থল থেকে আমাদের প্রতিবেদকরা জানিয়েছেন, কার্জন হলের সামনে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা আছে। কার্জন হলের ভেতরে আন্দোলনকারীদের অনেকে অবস্থান করছে, এমন তথ্যের ভিত্তিতেই তারা মূলত সেখানে অবস্থান করছেন।
শহীদুল্লাহ হলের ভেতর থেকে একজন শিক্ষার্থী জানান, ভেতরে হলের পুকুর পাড়ে আন্দোলনকারীদের অনেকে বিশ্রাম নিচ্ছেন। সকাল হলেই তারা আবারও সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করবেন, এমন তথ্যও দিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই শিক্ষার্থী।
এদিকে, কার্জন হল লাগোয়া দোয়েল চত্বর মোড় এলাকায় কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন লাগিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা। পরে পুলিশ দফায় দফায় টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে তারা দোয়েল চত্বর ও কার্জন হল এলাকা ছেড়ে শহীদুল্লাহ হল এলাকায় অবস্থান নেন।
এ বিষয়ে একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তারা কথা বলতে রাজি হননি।
সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত (ভোর সোয়া ৫টা) কার্জন হলের ভেতরে থেমে থেমে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করছিলে পুলিশ।
উল্লেখ্য, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, রবিবার দুপুর ২টায় ঢাবি কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের পদযাত্রা শুরু হয়। পরে রাজু ভাস্কর্য হয়ে নীলক্ষেত ও কাঁটাবন ঘুরে পদযাত্রাটি শাহবাগ মোড়ে আসে। বিকাল ৩টা থেকে সেখানেই অবস্থান নেন। এ সময় শাহবাগের আশপাশের সড়ক দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অবস্থান ধরে রাখলে রাত পৌনে ৮টার দিকে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এ সময় কয়েকজনকে আটকও করে পুলিশ। এরপরই পুলিশ আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেয়। এ সময় পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
পুলিশের অ্যাকশনের মুখে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ও টিএসসি এলাকায়। সবশেষে তারা ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আক্তারুজ্জামানের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে তারা উপাচার্যের বাসভবনের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন এবং ভেতরে থাকা একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। আশপাশের কয়েকটি মোটরসাইকেলেও তারা আগুন দেন।
পরে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এসে সরকারের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বৈঠকের আহ্বান জানান। সোমবার সকাল ১১টায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বলে জানান তিনি।
এদিকে, রবিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে ঢাবি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ঢাবি ছাত্রলীগ ছাড়াও আশপাশের কয়েকটি কলেজের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও জড়ো হন ঢাবি ক্যাম্পাসে। এ সময় আন্দোলনকারীরা টিএসসি ও কার্জন হল এলাকায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। প্রক্টর এসে টিএসটি থেকে আন্দোলনকারীদের বের করে নেওয়ার চেষ্টা করলেও তা সফল হয়নি। আমাদের ঢাবি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বিভিন্ন হলের অনেক ছাত্রীও এখনও টিএসসিতে রয়েছেন।
ছবি: নাসিরুল ইসলাম
আরও পড়ুন-
অশুভ শক্তি গুজব রটিয়ে বেড়াচ্ছে: নানক
ঢাবি উপার্যের বাসভবনে ভাঙচুর, গাড়িতে আগুন
শাহবাগ মোড়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে অবস্থান
ঢাবি উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আন্দোলনকারীরা
কোটা সংস্কার আন্দোলন: গোলাপ না নিয়ে পিছু হটলো পুলিশ
ঢাবি ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের দখলে, আন্দোলনকারীরা টিএসসিতে
মুখোশধারীরা আমার বাসভবনে হামলা চালিয়েছে: ঢাবি উপাচার্য
কোটা সংস্কার আন্দোলন: সকাল ১১টায় বৈঠকের প্রস্তাব সরকারের
কোটা সংস্কার আন্দোলন: পুলিশের লাঠিচার্জ-টিয়ারশেলে আহত ৩১
ছাত্রীদের নিরাপদে হলে পৌঁছে দেওয়াটাই এখন বড় বিষয়: ঢাবি প্রক্টর
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর টিয়ার শেল ও লাঠিচার্জ ( ভিডিও)