X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রতিযোগিতা উঠিয়ে দিলে আর কোনও চাপের প্রয়োজন হবে না

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১১ ডিসেম্বর ২০১৮, ২১:৩৬আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০১৮, ২১:৫৪

‘শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক’ শীর্ষক বৈঠকি

শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে প্রতিযোগিতা উঠিয়ে দিলে আর কোনও চাপের প্রয়োজন হবে না বলে মনে করেন বাংলা ট্রিবিউন বৈঠকিতে অংশ নেওয়া বক্তারা। এ সম্পর্কে ইউনিভারসিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) এর শিক্ষক অধ্যাপক সুমন রহমান বলেন, ‘শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে প্রতিযোগিতা উঠিয়ে দিলে কোচিং বাণিজ্যের দরকার নেই, প্রশ্ন ফাঁস থাকবে না। তখন ক্যাপাবিলিটি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা হবে। সেরা স্কুলের ব্র্যান্ডিং থেকে বের হতে হবে। সেরা ছাত্র, সেরা গ্রেডিং ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এটা থেকে না বেরিয়ে আসতে পারলে বাণিজ্য চলবে। শিক্ষাকে বাণিজ্য থেকে আলাদা করতে হবে। তখন আমরা শিশুদের এই অহেতুক প্রতিযোগিতার মধ্যে ছুড়ে দেবো না।’   

মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) বিকালে রাজধানীর পান্থপথে বাংলা ট্রিবিউন স্টুডিওতে মাহমুদুল হকের সঞ্চালনায় আয়োজিত ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক’ শীর্ষক বৈঠকিতে এসব কথা বলেছেন সুমন রহমান।

সুমন রহমান

এসময় তিনি আরও বলেন, ‘এই পুরো প্রতিযোগিতামূলক ব্যবস্থা যদি আপনি না তুলে দিতে পারেন, আমরা কখনোই উপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বের হতে পারবো না। এখনও আমাদের শিক্ষা উপনিবেশিক ভাবেই চলছে, আমরা এখনও এর থেকে বের হতে পারিনি। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কোন মডেলে চলে? প্রতিযোগিতার মডেল! ফার্স্ট, সেকেন্ড, থার্ড। আমার সন্তান যেই বিদ্যালয়ে পড়ে, সেখানে সে পড়ছে প্রায় পাঁচ বছর ধরে। আমরা এখনও জানি না, সে ক্লাসে ফার্স্ট না সেকেন্ড না থার্ড, কর্তৃপক্ষ কখনই বলে না। তারা যখন বলে না প্রথমদিকে অভিভাবক হিসেবে আমাদের খুব অস্বস্তি হতো। এখন আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এই মডেলেটার বড় পরিসরে বাস্তবায়নের দেশ সিঙ্গাপুর। সেখানে কিন্তু তারা প্রতিযোগিতার সিস্টেম পুরো বদলে দিয়েছে।’

অধ্যাপক সুমন রহমান বলেন, ‘বাইরে পরীক্ষা ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। অস্ট্রেলিয়াতে ক্লাস ওয়ানে একটা বই, টুতে দুইটা বই। এভাবে ক্লাস বাড়লে বই বাড়তে থাকে এবং কোনও পরীক্ষা নেই। পরীক্ষা যেটা আছে, এটা তারা নিজেরাও বোঝে না যে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। বই-খাতা বাসায় নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।’

শারমীন সুলতানা

বৈঠতে অংশ নিয়ে অভিভাবক শারমীন সুলতানা বলেন, ‘আমাদের অভিভাবকদের চিন্তার প্রসারটা বাড়াতে হবে। আমরা এখনও এই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে পারিনি যে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া ছাড়াও একটি শিশুর আরও কিছু ব্যাপার থাকে। ওই জায়গাটিতে যদি শিশুদের নিয়ে একটু কাজ করা হয়, তাহলে কিন্তু শিশুর মেধাটি অনেক দূর এগিয়ে যাবে। ফলাফল কিছু জায়গায় মুখ্য বিষয়। আমাদের শিশুরা যারা অন্য ধরনের স্কুলে পড়ছে তারা কী ভালো জায়গায় যেতে পারছে না? অবশ্যই পারছে। কিন্তু অভিভাবকদের যে একটা মন মানসিকতা যে- ৮০/৯০ নম্বর না হলে ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা মেডিক্যালে না যেতে পারলে, আমার সন্তান সমাজে কীভাবে দাঁড়াবে? মানুষ কী বলবে? এই জায়গা থেকে বের হলে সুবিধা, কারণ শিশুটার জন্য তাহলে সহজ হয় ব্যাপারটা।’

ফারহানা মান্নান

শিক্ষা বিষয়ক গবেষক ফারহানা মান্নান বলেন, ‘একজন শিক্ষক সবাইকে হাতের নাগালে নিয়ে আসতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে ছোট ছোট গ্রুপ করে তাদের সঙ্গে বসতে পারেন। আরেকটি বিষয় হল কোনও শিক্ষার্থী কতটুকু নিতে পারে? যে যতটুকু নিতে পারে তাকে ততটুকু চাপানো উচিত। আমার মতে স্কুলে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থাও রাখা উচিত। শিক্ষার্থীর মানসিক অবস্থা টাইম টু টাইম জানানো জরুরি, তাহলে একইসঙ্গে শিক্ষক এবং অভিভাবক জানতে পারবে।’  

পারভেজ হোসেন

সহজপাঠ ট্রাস্টি এবং কথাশিল্পী পারভেজ হোসেন বলেন, ‘আমি মনে করি শিক্ষক নিয়োগের বেলায় যেমন প্রতিষ্ঠানকে সচেতন হতে হবে তেমনি যেসব প্রতিষ্ঠানে সুশিক্ষা হয়, সেই প্রতিষ্ঠানগুলো সব ব্যবসা করতে আসে না, একটা দায়িত্ব পালন করে। আমার দেখতে হবে শিশু যে লেখাপড়া করবে, তার জন্য কোন প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ ঠিক আছে।’   

তানজীনা ইমাম

ভিকারুননিসা নুন স্কুলের শিক্ষক সৈয়দা তানজীনা ইমাম বলেন, ‘আমার স্কুলগুলোতে আমার শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী সম্পর্ক খুবই সুন্দর। কারণ আপনারা দেখবেন আমাদের শিক্ষার্থীরা বন্ধুর জন্য যেমন আন্দোলন করেছে, তেমনি শিক্ষকের মুক্তির দাবিতেও আন্দোলন করেছে। আমি মনে করি আমাদের শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষককে অসম্ভব ভালবাসে, শ্রদ্ধা করে। এখনও যে শ্রদ্ধার জায়গা আছে, আমরা জানি না কতদিন ধরে রাখতে পারবো।’    

উদিসা ইসলাম

এসময় বাংলা ট্রিবিউনের প্রধান প্রতিবেদক উদিসা ইসলাম বলেন, ‘অভিভাবকদের উদ্দেশে বলতে চাই ‘‘ অভিভাবকদের দৌড়’’ বন্ধ করেন। প্রত্যেকের আলাদা আলাদা পারদর্শিতা আছে। আপনার সন্তান চিকিৎসক হলে সেরা চিকিৎসক হবে তা তো না, হয়তো তিনি একটু বেশি আয় করবেন অথবা বাংলাদেশের চিকিৎসকের যেই মান দাঁড়িয়েছে সেই পর্যন্ত যাবেন। যদি সেই সেরা নাও হতে পারে, সেই সেরাটা যেখানে দিতে পারে, সেটি খুঁজে বের করা দরকার।’

রাজধানীর পান্থপথে বাংলা ট্রিবিউন স্টুডিও থেকে সরাসরি সম্প্রচার করেছে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজ। পাশাপাশি বাংলা ট্রিবিউনের ফেসবুক ও হোমপেজে লাইভ দেখা গিয়েছে এই আয়োজন।

এ সংক্রান্ত আরও খবর: 

শিক্ষক-শিক্ষার্থী বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা উচিত: ফারহানা মান্নান 

শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের অভাব আছে: তানজীনা ইমাম

শিশুর জন্য অভয়ের জায়গা তৈরি হবে বিদ্যালয়ে: পারভেজ হোসেন

শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক হবেন জ্ঞানের সহ-উৎপাদক: সুমন রহমান

অভিভাবক হিসেবে কিছু বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত: শারমীন সুলতানা
শিশুদের জন্য ‘হ্যাঁ বলুন কর্মসূচি’ দিয়েই প্রথম ধাক্কা: উদিসা ইসলাম

 


 

 

 

/এসও/এএইচ/
সম্পর্কিত
প্রতি শ্রেণিতে ৫৫ শিক্ষার্থী ভর্তির নির্দেশ প্রতিমন্ত্রীর
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় বেড়েছে
সর্বশেষ খবর
লিভারপুলের নতুন কোচ স্লট!
লিভারপুলের নতুন কোচ স্লট!
ক্ষমতায় যেতে বিএনপি বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করছে: ওবায়দুল কাদের
ক্ষমতায় যেতে বিএনপি বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করছে: ওবায়দুল কাদের
লেবাননের ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২
লেবাননের ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২
হামলার ঘটনায় মামলা করায় এবার বোমা হামলা, আহত ১৫
হামলার ঘটনায় মামলা করায় এবার বোমা হামলা, আহত ১৫
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!