X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

বিজয় দিবসের একদিন পর মুক্ত হয়েছিল খুলনা

খুলনা প্রতিনিধি
১৭ ডিসেম্বর ২০১৭, ১১:২৯আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭, ১১:৩৮

খুলনায় স্বাধীনতার স্মৃতিস্তম্ভ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করলেও খুলনা শত্রুমুক্ত হয়েছিল ১৭ ডিসেম্বর। মুক্তিবাহিনী হানাদার বাহিনীকে হটিয়ে খুলনা শহর দখলমুক্ত করে। এরপর খুলনা সার্কিট হাউস ময়দানে শত্রুপক্ষ আত্মসমর্পণ করে। ওই দিনই বিজয়ের পতাকা ওড়ে খুলনায়।

১৯৭১ সালের শেষ দিকে শ্যামনগর, দেবহাটা, সাতক্ষীরা হানাদার মুক্ত হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বেড়ে যায়। তখন তাদের একটাই লক্ষ্য ছিল খুলনাকে মুক্ত করা।

১০ ডিসেম্বর সকালে লঞ্চে বসে মেজর জয়নুল আবেদীন খান, গাজী রহমত উল্লাহ্ দাদু (সদ্য প্রয়াত), শেখ কামরুজ্জামান টুকু, মীর্জা খয়বার হোসেন,লে. আরেফিন, শেখ ইউনুস আলী ইনু, স ম বাবর আলী, সাহিদুর রহমান কুটু, শেখ আব্দুল কাইয়ুম প্রমুখ খুলনা শহর শত্রুমুক্ত ও দখল করার মূল পরিকল্পনা করেন। সে সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গল্লামারী রেডিও স্টেশন, খুলনা লায়ন্স স্কুল, পিএমজি কলোনি, শিপইয়ার্ড, ৭নম্বর ঘাটের জেটি, টুটপাড়া, বয়রা ফায়ার ব্রিগেড স্টেশন, ওয়াপদা ভবন, খালিশপুরের গোয়ালপাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্র, গোয়ালখালী ও দৌলতপুরের কয়েকটি স্থানে অবস্থান করছিল। তাই, সিদ্ধান্ত হয় মুক্তিযোদ্ধারা চারদিক থেকে খুলনা শহরে প্রবেশ করবে এবং বাধা এলে তা সশস্ত্রভাবে প্রতিহত করবে। লে. আরেফিন ও কমান্ডার খিজির আলী মোংলা থেকে লায়ন্স স্কুলসহ শত্রুদের অন্যান্য অবস্থানে আক্রমণ চালাবে এবং ধীর গতিতে খুলনা শহরে প্রবেশের পরিকল্পনা করা হয়। মুক্তিযোদ্ধারা বেতার মারফত জানতে পারেন যে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মিত্রবাহিনীর কাছে পাকিস্তানি সেনারা আত্মসমর্পণ করছে। কিন্তু খুলনাতে তারা আত্মসমর্পণে রাজি হচ্ছে না। এরপরই খুলনাকে শত্রুমুক্ত করতে খুলনা শহর ও এর আশপাশে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে বিচ্ছিন্নভাবে যুদ্ধ শুরু হয়। শিরোমনিতে মিত্র বাহিনীর সঙ্গে হানাদার বাহিনীর প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে উভয় পক্ষের ব্যাপক সংখ্যক লোক আহত হয়।১৬ ডিসেম্বর শেষ রাতে গল্লামারীতে যুদ্ধে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা মারাত্মকভাবে আহত হন। ১৭ ডিসেম্বর ভোরে শিপইয়ার্ড এলাকায় উভয় পক্ষের গুলিবিনিময়ে একজন মুক্তিযোদ্ধা নিহত এবং ১৬ জন আহত হন। পাকিস্তানি বাহিনীরও কয়েকজন নিহত ও আহত হয়। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা খুলনা শহরে প্রবেশ করতে শুরু করেন। খুলনা সার্কিট হাউস দখল করার পর মেজর জয়নুল আবেদীন ও রহমত উল্লাহ্ দাদু যৌথভাবে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন।

বিজয় দিবসের একদিন পর মুক্ত হয়েছিল খুলনা

মুক্তিযোদ্ধা স ম বাবর আলী, আবুল কালাম আজাদ, রেজাউল করিম, গাজী রফিকুল ইসলাম প্রমুখ হাদিস পার্কে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। মিত্র বাহিনী খুলনা শহরে প্রবেশ করার ৮ ঘণ্টা আগেই হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।

হানাদার বাহিনীর পরাজিত সেনারা যখন আত্মসমর্পণের জন্য সার্কিট হাউস ময়দানের দিকে যাচ্ছে ঠিক সেই সময় রাস্তায় মানুষের ঢল নামে। সবার মুখে ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি। সবাই ছুটছেন খুলনা সার্কিট হাউস ময়দানের দিকে। ১৭ ডিসেম্বর সার্কিট হাউস ময়দানে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে মুক্ত হয় খুলনা।

স ম বাবর আলীর লেখা স্বাধীনতার দুর্জয় অভিযান, গৌরাঙ্গ নন্দীর বৃহত্তর খুলনা জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গ্রন্থ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামরুজ্জামান টুকুও এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

 

 

/এনআই/এসটি/
সম্পর্কিত
নানা আয়োজনে রাজধানীবাসীর বিজয় উদযাপন
বিজয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা
জাবিতে আলোকচিত্র প্রদর্শনী
সর্বশেষ খবর
জিরোনার মাঠে বার্সেলোনার নাটকীয় হারে চ্যাম্পিয়ন রিয়াল
জিরোনার মাঠে বার্সেলোনার নাটকীয় হারে চ্যাম্পিয়ন রিয়াল
‘ফাইভ স্টার’ ম্যানসিটি, চার গোল হাল্যান্ডের
‘ফাইভ স্টার’ ম্যানসিটি, চার গোল হাল্যান্ডের
ঢাকায় পুনর্মিলন সেরে ক্যাঙ্গারুর দেশে...
ঢাকায় পুনর্মিলন সেরে ক্যাঙ্গারুর দেশে...
নিষ্পত্তির অপেক্ষায় হেফাজতের ২০৩ মামলা
নিষ্পত্তির অপেক্ষায় হেফাজতের ২০৩ মামলা
সর্বাধিক পঠিত
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ
এডিবি কর্মকর্তা গোবিন্দ বরের বিরুদ্ধে বিশিষ্টজনদের হয়রানির অভিযোগ
এডিবি কর্মকর্তা গোবিন্দ বরের বিরুদ্ধে বিশিষ্টজনদের হয়রানির অভিযোগ