X
সোমবার, ০৯ জুন ২০২৫
২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

‘অনেকবার চিঠি লিখেও সু চি’র জবাব পাইনি’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০১ মার্চ ২০১৮, ২০:৪৪আপডেট : ০১ মার্চ ২০১৮, ২২:০০

নোবেলজয়ী ইরানের শিরিন এবাদি ও যুক্তরাজ্যের মেরেইড ম্যাকগুয়ের রোহিঙ্গা ইস্যুতে সু চি’কে একাধিকবার চিঠি লিখে কোনও জবাব না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী ইরানের শিরিন এবাদি। বৃহস্পতিবার (১ মার্চ) নারী সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় তিনি হতাশা ও ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘সু চি যখন গৃহবন্দি ছিলেন, তখন আমরা অনেক ধরনের কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তার মুক্তির দাবি করেছি। কিন্তু তিনি মুক্ত হয়ে সেসব ভুলে গিয়ে অপশক্তিতে পরিণত হয়েছেন। রাজনৈতিক ক্ষমতা চর্চার জন্য তিনি গণহত্যার মতো জঘন্য ঘটনা দেখেও চোখ বন্ধ করে আছেন।’ নিজে গৃহবন্দি থাকার সময় তিনি যে পরিমাণ ভুগেছেন, এখন রোহিঙ্গারা তার চেয়ে দশগুন বেশি ভোগান্তিতে আছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বেসরকারি সংগঠন নারীপক্ষ ও নোবেল উইমেন ইনিশিয়েটিভ-এর যৌথ আমন্ত্রণে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ইরানের শিরিন  এবাদি, ইয়েমেনের তাওয়াক্কুল কারমান ও যুক্তরাজ্যের মেরেইড ম্যাকগুয়ের বাংলাদেশে সফরে এসেছেন। মূলত বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বর্তমান পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে এসেছেন তারা। ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি টেকনাফে অবস্থান করে রোহিঙ্গাদের বিশেষ করে নারীদের সঙ্গে কথা বলেছেন তারা।

বক্তব্য রাখছেন মেরেইড ম্যাকগুয়ের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নারীদের সঙ্গে কথা বলার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে নোবেল বিজয়ী যুক্তরাজ্যের মেরেইড ম্যাকগুয়ের বলেন, ‘মানুষ সেখানে ভয়াবহ দুর্দশার মধ্যে আছে। যে পরিমাণ ট্রমার মধ্যদিয়ে তাদের যেতে হয়েছে, তাতে তারা এখনও শঙ্কিত। যতক্ষণ না রাখাইনে যথাযথ পরিবর্তন হবে, ততক্ষণ তারা ফিরে যাওয়া মানে আবারও গণহত্যার মুখে তাদের ঠেলে দেওয়া।’

বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি দেখলেন, কিন্তু মিয়ানমারে যাবেন কিনা প্রশ্নে এই দুই নারী বলেন, ‘আমরা গত বছর ভিসা চেয়ে

(মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের)কোনও ইতিবাচক সাড়া পাইনি। ফিরে গিয়ে আমরা আবারও চেষ্টা করবো।’

তারা বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সংলাপ ও পররাষ্ট্র পর্যায়ে শক্তিশালী যোগাযোগ খুব জরুরি। কেউ শরণার্থী জীবন চায় না। ফিরতে চায় নিজ দেশে। আমরা বিভিন্ন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গেও কথা বলেছি। তারা প্রত্যেকে কিছু একটা করতে চান। কার্যকরী সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার বিকল্প নেই।’

শিরিন এবাদি নারী প্রশ্নে শিরিন এবাদি বলেন, ‘পৃথিবীর কোথাও নারী ও পুরুষের মধ্যে সমতা নেই। বাংলাদেশের নারী-পুরুষের মধ্যে যে বিভাজন, সে বিষয়েও আমি অবহিত।’ এর পরিবর্তন আনতে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, ‘জনমতকে নির্দেশনা দিতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অনস্বীকার্য।মানবাধিকার কর্মীদের জন্য সাংবাদিকরাই সবচেয়ে ভালো বন্ধু, যাদের সহায়তা সব সময় দরকার হয়।’

মেরেইড ম্যাকগুয়ের আরও বলেন, ‘গণমাধ্যম অবশ্যই গুরত্বপূর্ণ।সাংবাদিকদের হয়রানি, নির্যাতন ও গুমের মতো ঘটনাগুলোও ঘটে, কারণ তারা সত্য কথা বলেন। তারা সত্য বলার মতো উন্মুক্ত মানসিকতা নিয়ে থাকেন। অযথা আলোড়ন সৃষ্টি নয়, প্রকৃত খবরটাকেই তুলে ধরতে পারেন তারা। সত্য, বস্তুনিষ্ঠ ও জরুরি কাজ হলো— আমরা প্রকৃত বিষয়গুলো গণমাধ্যম থেকেই জানতে পাই।’

পুরুষতান্ত্রিক সমাজ যেখানে শক্তিশশালী, সেখানে গণতন্ত্র সম্ভব না— উল্লেখ করে এবাদি বলেন, ‘পুরুষতন্ত্র সমতায় বিশ্বাসী না। পুরুষতন্ত্র বলতে আমি কেবল পুরুষ বলছি না। এটা একটা সংস্কৃতি, যা নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যেই থাকতে পারে। বিশ্বজুড়ে পুরুষরা ধর্মের ব্যাখ্যা নিজেদের মতো করে হাজির করেছে। ধর্ম বিশ্লেষক ব্যাখ্যাদানকারী নারীর সংখ্যা ভীষণ কম। এখন সময় এসেছে নারী ব্যাখ্যাকারী তৈরি হওয়ার। পুরুষতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিষয়ে পাঠ্যপুস্তকে জানাতে হবে।’ মৌলবাদী পুরুষরা সবসময় শিক্ষিত নারীর বিপক্ষে, এর বড় উদাহরণ মালালা। নারীর শিক্ষিত হয়ে ওঠার এবং শিক্ষার কোনও বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।

রোহিঙ্গাদের বিষয়টি আয়ারল্যাণ্ড ও ইরানের গণমাধ্যমে কেমন এসেছে প্রশ্নে দুই নারীই নেতিবাচক সাড়া দেন। তারা বলেন, ‘সেসব দেশের গণমাধ্যমে এটি এজেণ্ডা নয়। মেরেইড বলেন, ‘আমরা আমাদের গণমাধ্যম থেকে বেশি কিছু জানতে পারি না। এটা তাদের এজেণ্ডা না।’ তিনি পশ্চিমের ওয়ার অন টেরোরিজমের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘ওয়ার অন টেরর মানে যেখানে মুসলিম দেখবে, শত্রু জ্ঞান করবে। আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া— সন্ত্রাসী, শত্রু? মনে রাখা জরুরি আমরা ভীষণ বিপজ্জনক বিশ্বে বসবাস করছি।’

এ বিষয়ে শিরিন এবাদি বলেন, ‘১৯৭৯ সালে ইরানে বিপ্লবের পর থেকে যদি দেখি, সেখানে অনেক সাংবাদিক এখন কারাগারে। গণমাধ্যম সেন্সর করা হয় এবং সেটি সরকারই করে। এসবের সমালোচনা করায় কোনও গণমাধ্যমে আমার নাম উচ্চারণ পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা আছে। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে কোনও অর্থনৈতিক আগ্রহের জায়গা নেই, ফলে ইরান এ বিষয়ে চুপ।’

 

ছবি: নাসিরুল ইসলাম

/ইউআই/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
খাবার স্যালাইন পানীয় নয়, ওষুধ
খাবার স্যালাইন পানীয় নয়, ওষুধ
গতবার যে চামড়া বিক্রি হয়েছিল ৬০০ টাকা, এবার সেটা ১০০ টাকা
গতবার যে চামড়া বিক্রি হয়েছিল ৬০০ টাকা, এবার সেটা ১০০ টাকা
গ্রেটা থুনবার্গকে বহনকারী ত্রাণবাহী জাহাজের দখল নিয়েছে ইসরায়েল
গ্রেটা থুনবার্গকে বহনকারী ত্রাণবাহী জাহাজের দখল নিয়েছে ইসরায়েল
চট্টগ্রাম বিভাগে মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে পৌনে ৮ লাখ চামড়া
চট্টগ্রাম বিভাগে মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে পৌনে ৮ লাখ চামড়া
সর্বাধিক পঠিত
এবার ৪৪ জন আমলাকে অপসারণের দাবিতে পোস্টার
এবার ৪৪ জন আমলাকে অপসারণের দাবিতে পোস্টার
লন্ডনে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করতে চান টিউলিপ সিদ্দিক
লন্ডনে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করতে চান টিউলিপ সিদ্দিক
দেশে ফিরেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ
দেশে ফিরেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ
মহিলা লীগ নেত্রীর কোরবানির মাংস ‘ভিক্ষা করার’ ভিডিও ভাইরাল
মহিলা লীগ নেত্রীর কোরবানির মাংস ‘ভিক্ষা করার’ ভিডিও ভাইরাল
সাবেক সংবাদ উপস্থাপক তরীর অস্বাভাবিক মৃত্যু
সাবেক সংবাদ উপস্থাপক তরীর অস্বাভাবিক মৃত্যু