X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
২০ আষাঢ় ১৪৩২

‘২০১৯ সালের মধ্যে উখিয়া-টেকনাফে বনভূমি শূন্য হয়ে যাবে’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৪ জুন ২০১৮, ১৬:৩৪আপডেট : ০৪ জুন ২০১৮, ১৬:৩৬

কোস্ট ট্রাস্টের গবেষণা প্রতিবেদনের প্রকাশনা অনুষ্ঠান রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া একলাখ ৯৪ হাজার পরিবারের রান্নার জন্য প্রতিদিন ২২৫০ টন জ্বালানি কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। এই কাঠ সংগৃহীত হচ্ছে কাছের বনভূমি থেকে। বেসরকারি সংগঠন কোস্ট ট্রাস্টের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিবরণ অনুযায়ী, প্রতিদিন চারটি ফুটবল মাঠের সমান বনভূমি উজার হয়ে যাচ্ছে। এই হারে চলতে থাকলে ২০১৯ সালের মধ্যে উখিয়া ও টেকনাফে আর বনভূমি বলে কিছু অবশিষ্ট থাকবে না,  গবেষণায় এমন মন্তব্য করা হয়েছে।

সোমবার (৪ জুন) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে কোস্ট ট্রাস্টের এই গবেষণাপত্র তুলে ধরা হয়। এছাড়া, কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সম্পদ সুরক্ষার স্বার্থে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করে দ্রুত প্রত্যাবর্তন ও কক্সবাজারের পরিবেশ পুনরুদ্ধারের দাবি জানিয়েছে কোস্ট ট্রাস্ট ও কক্সবাজার সিএসও এনজিও ফোরাম।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, উখিয়া উপজেলার মোট আয়তনের প্রায় ৬০ শতাংশ হচ্ছে বনভূমি এবং টেকনাফে ৪১ শতাংশ। বাংলাদেশে সুন্দরবন,খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের কিছু অংশ ছাড়া এতটা নিবিড় বনভূমি আরও কোথাও নেই। এই বনভূমির একটা নিজস্ব প্রাকৃতিক বাস্তুসংস্থান ছিল, যা ইতোমধ্যেই ভেঙে পড়েছে। হাতির আবাসভূমি ও চলাচলের পথ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। বেশি মানুষের উপস্থিতি সাধারণত পাখি ও অন্যান্য বন্য প্রাণিকে স্থানান্তরে বাধ্য করে। 

বক্তারা আরও  বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ,অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন, অধিক পর্যটকদের আগমনের কারণে হোটেলে পানির অতিরিক্ত চাহিদা, লোনা পানির অনুপ্রবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে কক্সবাজারের সদর থেকে শুরু করে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত উপকূলীয় অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির ওপরে বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে বলে গবেষণায় দেখা গেছে । এতে অদূর ভবিষ্যতে এই অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বক্তারা আরও জানান, মিয়ানমার থেকে চলে আসা প্রায় ১০ লাখ মানুষ এই এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে তাড়াহুড়োভাবে তৈরি করা পলিথিনের তাঁবুর মধ্যে। যেসব পাহাড়ে শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, সেখানে ইতোমধ্যে প্রায় সব গাছ কাটা পড়েছে। ঘাস উঠে গেছে, ফলে আগামী বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধ্বসে ব্যাপক প্রাণহানির সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া, এই অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়েরও বেশি প্রবণতা র‌য়ে‌ছে। এখা‌নে সব মিলিয়ে মাত্র পাঁচ হাজার ৮০০ একর জমিতে (২৩ দশমিক চার বর্গকিলোমিটার) অবস্থান নিয়েছে প্রায় ১০ লাখ মানুষ। এত ঘনবসতি কোনোভাবে মানব জীবনের উপযোগী নয়। এটা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। উখিয়া ও টেকনাফে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর আশেপাশে অবস্থিত এবং সংযুক্ত মোট ২১টি খাল রয়েছে। এসব খালের পানি দূষিত হয়ে গেছে। এই খালগুলো থে‌কে বেশিরভাগ মানুষ কৃষি ও পারিবারিক দৈনন্দিন কাজের জন্য পানি ব্যবহার করতো। এখন তাদের জন্য বিকল্প কোনও পানির উৎস অবশিষ্ট নেই। 

এসময় কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়, এর মধ্যে রয়েছে—  টেকনাফের পরিবেশ রক্ষা করতে হলে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করে তাদেরকে নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করতে হবে। পরিবেশ পুনরুদ্ধারের জন্য বিশেষ তহবিল বরাদ্দ করতে হবে। রোহিঙ্গাদের রিলিফের  জন্য আন্তর্জাতিক বাজেটের একটা অংশ এই খাতে বরাদ্দ করতে হবে। সব খাল-বি‌লের পানির স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। কক্সবাজার জেলায় ব্যাপক বৃক্ষ রোপণ কার্যক্রম গ্রহণ করে আসন্ন বর্ষায় তা চালু করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন— পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. আতিউর রহমান, কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী প্রধান রেজাউল করিম চৌধুরী, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী প্রমুখ।

 

/এসও/ এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চকরিয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে, নিহত ২
চকরিয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে, নিহত ২
১৩ ছাত্রীকে যৌন হয়রানি: অভিযুক্ত শিক্ষককে বাঁচাতে মরিয়া সহকর্মীরা
১৩ ছাত্রীকে যৌন হয়রানি: অভিযুক্ত শিক্ষককে বাঁচাতে মরিয়া সহকর্মীরা
ফিরে দেখা: ৪ জুলাই ২০২৪
ফিরে দেখা: ৪ জুলাই ২০২৪
গ্রেনাডাতেও ওয়েবস্টার-ক্যারির ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ালো অস্ট্রেলিয়া
গ্রেনাডাতেও ওয়েবস্টার-ক্যারির ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ালো অস্ট্রেলিয়া
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি