X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আজ জিয়া হায়দারের জন্ম, বাংলাদেশের নাট্যমঞ্চেরও

দাউদ হায়দার
১৮ নভেম্বর ২০১৮, ১৪:২০আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০১৮, ১৪:২২

দাউদ হায়দার “বিভিন্ন সূতো দিয়ে সময়কে গেঁথে নিলাম/ অবিচ্ছিন্ন আকারে/ এত অভিন্ন, নিজেই বুঝে উঠতে পারিনে/ কতগুলো গিঁট/ অমসৃণ করে দিয়েছে দীর্ঘ প্রবাহকে-/ অথচ অবিচ্ছিন্ন,/ বহুবার হোঁচট পেয়েও ছেঁড়েনি
#
“বিচিত্র সূতোয় বানানো কালো-কালো হয়ে যাওয়া সময়টাকে/ হঠাৎ আজ সকালে আরেক, নতুন সময়ের নদীতে ফেলে দিলাম।/ সন্ধ্যায় টেনে তুলতে গিয়ে বড় ভারী ঠেকলো,/ আমার অগৌরবিত অতীতের চেয়েও ভারী। আমার ধূসর বর্তমানের চেয়েও ভারী-/ একটা নিরাকার জীবন।”
(জন্মদিনের কবিতা।। জিয়া হায়দার।)

এই কবিতা ৫২ বছর আগে লেখা, ১৯৬৬ সালে, আমেরিকায় প্রবাসকালে। পরে ‘দূর থেকে দেখা’ কাব্যগ্রন্থে প্রকাশিত। প্রবাসকাল ১৯৭৭। প্রকাশক চিত্তরঞ্জন সাহা। মুক্তধারা। ঢাকা।

নিজের জন্মদিনে লেখা, অথচ লিখছেন ‘একটা নিরাকার জীবন।’

এহেন বোধের সঙ্গে তাঁর জীবনের কোনো যোগসূত্র আছে কি? হয়তো আছে। কবিতায় আভাস দিয়েছেন মাত্র। বিষয়টি পরে খোলাসা করছি।

জিয়া হায়দারের জন্মদিন আজ। জন্ম ১৮ নভেম্বর ১৯৩৬। পাবনার দোহার পাড়ায়। মাতা রহিমা খাতুন, পিতা মোহাম্মাদ হাকিমউদ্দীন শেখ, দুজনেই প্রয়াত। মাতা-পিতার তৃতীয় সন্তান, প্রথম পুত্র। ‘হায়দার ভ্রাতৃকুলে’ তিনিই পয়লা।

জিয়া হায়দায় আত্মজীবনী লেখেননি, এই কারণেই বোধ হয়, ‘একটা নিরাকার জীবন।’ তো, বলতে অপারগ, কোন বয়সে কবিতা লিখতে শুরু করেন। আমাদেরই আত্মীয় আবু হেনা মোস্তফা কামাল (কবি/অধ্যাপক) বলছিলেন একবার, ‘ আমরা দুজন স্কুলে পড়াকালীন কবিতা লেখা মকসো করি।’- সালটা কবে, বলেননি অবশ্য।

গত শতকের ৪০-৫০ দশকের পাবনা শহর সাংস্কৃতিক উত্তাপে ঝলমলে ছিল, বহু খ্যাতিমান কবিসাহিত্যিক-গায়ক-গীতিকার-বাদক, নাট্যকার, অভিনেতা-অভিনেত্রীর (তালিকা দীর্ঘ। একজন সুচিত্রা সেন-ই যথেষ্ট।) উপস্থিতি, পদচারনায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পয়লা, গর্বিত।

জিয়া হায়দার/ আবু হেনা মোস্তফা কামালরা ওই সাংস্কৃতিক উত্তাপের শস্য, ফসল। - আক্ষেপ এইটুকুই, পাবনায় বড় মাপের কোনো রাজনৈতিক নেতা ভূমিষ্ঠ হননি।

-না হলেও,জিয়া হায়দার ১৯৫২ সালে পাবনায় অনুষ্ঠিত ভাষা আন্দোলনে প্রত্যক্ষ সংগ্রামী। পুলিশের ডান্ডা খেয়ে জেলও খেটেছেন কিছুকাল। অথচ বিপ্লবী নন পরবর্তী সময়ে। বিপ্লবে সমর্থন ছিল। কমিউনিজমে আস্থাশীল।

জিয়া হায়দারের প্রথম দিককার কবিতায় রোমান্টিকতার আকুতি লক্ষণীয়,পরে সমাজ-রাষ্ট্র-রাজনীতি, সমসাময়িক ঘটনাবলি মুখ্য। সমালোচক। এক অর্থে বিপ্লবেরই বার্তা,যদিও সাংকেতিক ভাষ্যে।

লক্ষ করছি, বাংলাদেশের ৫০-এর একঝাঁক কবিকুল,যারা বাংলাদেশের কবিতায় স্মরণীয়,বাংলাদেশের কবিতাকে নানাপথে গতিময় করেছেন,প্রত্যেকের জন্ম ১৯৩৬ সালে। আল মাহমুদ। আবু হেনা মোস্তফা কামাল। জিয়া হায়দার। মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। ফজল শাহাবুদ্দীন। মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ। এঁদের মধ্যে একমাত্র আল মাহমুদ বেঁচে আছেন।

কৌতূহলের বিষয় আল মাহমুদ,ফজল শাহাবুদ্দীন,মোহাম্মাদ মাহফুজউল্লাহ,সাংবাদিকতা করেছেন,জীবিকা হিসেবে। জিয়া হায়দারও কিছুকাল সাংবাদিকতা করেছেন,বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রাবস্থায়।

মোহাম্মাদ মনিরুজ্জামান,আবু হেনা মোস্তফা কামাল,জিয়া হায়দার কবি বটে,তবে গীতিকার হিসেবে (রেডিও-টিভি-সিনেমায়) খ্যাতি ছিল একদা। এবং এই তিনজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকও। মোহাম্মাদ মনিরুজ্জামান গান লেখার মোহ থেকে মুক্ত হননি। আবু হেনা মোস্তফা কামাল গবেষণায় ও অধ্যাপনায় মন দিয়েছেন। জিয়া হায়দার গান লেখা একেবারেই ছেড়ে দিয়ে কবিতা,নাটক,গবেষণা,অধ্যাপনায় আত্মস্থ। লক্ষণীয় এই কবিকুলের জিয়া হায়দার ছাড়া আর কেউ নাটক লেখেননি। ১৪/২ মালিবাগে। ‘নাগরিক’ আজ বাংলাদেশে বহুমানিত। জিয়া হায়দারই, আজকের ‘নাগরিকের’ পান্ডাদের ঠাঁই দিয়েছেন নাগরিকে। গড়েপিঠে ‘মানুষও’ (তথা অভিনেতা) করেছেন। অথচ,কয়েকজন পান্ডা নাট্য সম্প্রদায় থেকে তাঁকেই বিতাড়িত করেছেন,যখন তিনি বিদেশে। এই বিতাড়ন কতটা আঘাতপ্রাপ্ত,ঘুণাক্ষরেও বলেননি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্য বিভাগের প্রথম অধ্যাপক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সদ্য প্রতিষ্ঠিত (ইংরেজি বিভাগের উদ্যোগে) নাট্য বিভাগে কে হবেন প্রধান? সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী লিখেছেন,‘জিয়া হায়দারের কথা ভেবেই ইংরেজি বিভাগে নাট্যকলা বিভাগ খুলি। তিনি যোগ দেবেন।---- না আসেননি,অনুরোধ সত্ত্বেও। অভিমান ছিল। কখনোই তিনি অভিমানের কারন শোনান নি। তিনি আমাদের বাংলাদেশে নাট্যকলার পুরোধা।’

এই পুরোধা হায়দার ভাতৃকুলের গুরুজন। এবং গুরুজন বাংলাদেশের আধুনিক নাট্যকলা,নাট্যমঞ্চ আন্দোলনেও। এই নিয়ে কেউ বাচালতা করলে চ্যালেঞ্জ। জিয়া হায়দার ঐতিহাসিক। তাঁর জন্মদিনে অনুজের প্রণতি।

লেখক: কবি ও সাংবাদিক

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
রংপুর হাসপাতালে বাড়ছে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগী, ৫ দিনে ২২ জনের মৃত্যু
রংপুর হাসপাতালে বাড়ছে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগী, ৫ দিনে ২২ জনের মৃত্যু
দ্বিতীয় বিয়ে করায় ছেলের আঘাতে প্রাণ গেলো বাবার
দ্বিতীয় বিয়ে করায় ছেলের আঘাতে প্রাণ গেলো বাবার
নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, শিশুসহ নিহত ৮
নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, শিশুসহ নিহত ৮
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ