X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে প্রতিযোগিতার ফল কী হবে?

বিদেশ ডেস্ক
১৮ জুলাই ২০২০, ২২:১১আপডেট : ১৯ জুলাই ২০২০, ০১:৫৫

শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ স্বাস্থ্য সংকট শুরু হওয়ার সাত মাস পর করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের প্রতিযোগিতা এখন চলমান। গত বছরের শেষ দিকে চীনের উহানে প্রথম শনাক্ত হওয়া এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত বিশ্বের ২১৩টি দেশে প্রায় ৬ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ৪০ লাখের বেশি মানুষ। এ কারণে সারা বিশ্বের মানুষকে বাঁচাতে দুই শতাধিক ভ্যাকসিন ক্যান্ডিট নিয়ে চলছে গবেষণা। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি তাদের এক প্রতিবেদনে বিশ্বজুড়ে ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের সর্বশেষ অবস্থা ও বিভিন্ন কোম্পানির উৎপাদনের প্রতিযোগিতার কথা তুলে ধরেছে। এতে মানবদেহে পরীক্ষার পর্যায়ে তাড়াহুড়োর কারণে ভ্যাকসিনের নিরাপত্তায় সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছে বিশেষজ্ঞরা।  

ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে প্রতিযোগিতার ফল কী হবে?

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ব অর্থনীতিতে চরম বিপর্যয় নিয়ে আসা এই মহামারি ঠেকাতে ভ্যাকসিন উদ্ভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে শতকোটি ডলার। বিজ্ঞানীরাও অবগত যে, তাদের যে কোনও পরামর্শ এখন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করা হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ মূল্যায়নে ২১টি ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট এগিয়ে রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকই চীনা কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান। এই ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেটগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে রয়েছে।

এর বেশিরভাগই রয়েছে একেবারে প্রথম পর্যায়ে। ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের এই প্রাথমিক পর্যায়ে নিরাপত্তা ও ডোজ নির্ধারণ করা হয়। কয়েকটি আবার দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় রয়েছে। যে পরীক্ষায় যাচাই করা হয় ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা।

মাত্র দুটি ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তৃতীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই পর্যায়ে উদ্ভাবকরা যাচাই করেন বৃহৎ পরিসরে ব্যবহার করা হলে ক্যান্ডিডেটের কারণে সম্ভাব্য বিষাক্ততার বিষয়টি। এই দুটি ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেটের উদ্ভাবক হলো ইউরোপের ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট আস্ট্রাজেনেকাকে সঙ্গে নিয়ে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং ব্রাজিলের গবেষণা প্রতিষ্ঠান বুটানতানের সঙ্গে সহযোগিতায় চীনের বায়োফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি সিনোভ্যাক।

সিনোভ্যাকের প্রকল্পই সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে। এই মাসে ব্রাজিলে স্বেচ্ছাসেবীদের দেহে তাদের উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট প্রয়োগ করা হবে।

এই মাসে কানাডায় ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনার জন্য ক্যানসিনো বায়োলজিকস অনুমোদন পেয়েছে। গত মাসে কোম্পানিটি জানিয়েছে, সেনা সদস্যের দেহে ভ্যাকসিন প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে চীনা সামরিকবাহিনী। এটি উদ্ভাবনে সহযোগিতা করছে চীনা সামরিক বাহিনী।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে পরীক্ষা চালানোর জন্য কাজ করছে সিনোফার্ম। ১ জুলাই চীনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১০ কোটি ডোজ উৎপাদনের জন্য তারা নতুন একটি উৎপাদন কেন্দ্রের নির্মাণ শেষ করেছে।

ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে প্রতিযোগিতার ফল কী হবে?

এগুলো বাদে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরও ১৩৯টি সম্ভাব্য ভ্যাকসিন গবেষণার কথা জানিয়েছে। এসব ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেটের বেশিরভাগই প্রাক-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে রয়েছে। যে পর্যায়ে পশুর দেহে ভ্যাকসিনটির পরীক্ষা চালানো হয়।

এখন পর্যন্ত সম্ভাব্য ভ্যাকসিনগুলোর মধ্যে কয়েকটির আংশিক তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। কোম্পানিগুলো নিজেদের ভ্যাকসিন নিয়ে আশাবাদের কথা জানালেও অনেকেই তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।

ফ্রান্সের বৈজ্ঞানিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান জিন-ফ্রান্সোঁস ডেলফ্রেইজি বলেছেন, ভ্যাকসিনের বাণিজ্যিক সম্ভাব্যতার প্রভাব খুব নিবিড়ভাবে খতিয়ে দেখা উচিত। যেসব আশাব্যঞ্জক দাবি করা হচ্ছে সেগুলো সুনির্দিষ্ট না। অগ্রগতি যদি হয় তা অনেক বড় বিষয়।

এক ইমিউনোলজিস্ট বলেন, ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের যে কোনও ঘোষণার উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে। যে কারও উচিত এই বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা।

ডেলফ্রেইজি বলেন, ৩০ জন মানুষের দেহে ভ্যাকসিন প্রবেশ করার পর ফলাফল জানানো হচ্ছে, আসলে এগুলো কোনও ফলাফল না।

ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে প্রতিযোগিতার ফল কী হবে?

মহামারি ঠেকানোর একমাত্র উপায় হিসেবে ভ্যাকসিনকে বিবেচনা করায় বিশ্বজুড়ে তা উদ্ভাবনে যে গতি পেয়েছে তা অতীতে কখনও দেখা যায়নি। বিভিন্ন দেশ ও বড় কোম্পানি তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ শুরু করেছে। আর্থিক সক্ষমতা থাকায় যুক্তরাষ্ট্র তাদের ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে আর কাউকে না ডাকলেও ইউরোপসহ বাকি বিশ্বের দেশগুলো এক্ষেত্রে সহযোগিতা নিচ্ছে।

ট্রাম্প প্রশাসন ‘অপারেশন ওয়ার্প স্পিড’ শুরু করেছে মার্কিন নাগরিকদের জন্য ২০২১ সালের জানুয়ারির মধ্যে ৩০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন নিশ্চিত করার জন্য।

ডেলফ্রেইজি বলেন, ‘কোম্পানিগুলো একই সঙ্গে ভ্যাকসিন উদ্ভাবন ও উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সাধারণ সময়ে ভ্যাকসিনের পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয় উৎপাদনে যাওয়ার জন্য। এজন্যই কোম্পানিগুলো রাষ্ট্রের কাছ থেকে তহবিল চাইছে। তারা বলছে, ‘যে ভ্যাকসিন কার্যকর নয় বলে প্রমাণিত হতে পারে তা উদ্ভাবনে আমরা শুরু থেকেই ঝুঁকি নিচ্ছি। এখন আমরা যদি উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করি তাহলে সেই ঝুঁকির কিছুটা আন্তর্জাতিক তহবিল দ্বারা সুরক্ষিত হওয়া উচিত’।”

ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি সংস্থা ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি (ইএমএ) সতর্ক করে বলেছে, ‘যে কোনও কোভিড ভ্যাকসিনকে অনুমোদন দেওয়ার আগে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে নিরাপত্তা, কার্যকারিতা ও মান যথেষ্ট শক্তিশালী হওয়ার প্রমাণ থাকতে হবে’।

ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে প্রতিযোগিতার ফল কী হবে?

ফ্রান্সের টেকনিক্যাল ভ্যাকসিনেশন কমিটির ভাইস-প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল ফ্লোরেট বলেন, ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের দ্রুতগতি ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সমস্যা তৈরি করতে পারে। অসুস্থতা বাড়াতে যে ভ্যাকসিনটি দায়ী নয়, তা প্রমাণের জন্য এই পরীক্ষাই গুরুত্বপূর্ণ’।

তিনি স্বীকার করেন, কোম্পানিগুলোর এসব ঘোষণা যেমন জনসাধারণের জন্য তেমনি বেশি শেয়ারবাজারকেও লক্ষ্য করে। তার মতে, এটি কখনও নিরপেক্ষ ছিল না। এটি গুরুত্বপূর্ণ যে তারা অগ্রগতির বিষয় আমাদের জানাচ্ছে। ফলাফলের ক্ষেত্রেও এমনটি হওয়া উচিত। কিন্তু এই মুহূর্তে তা ঘটছে না।

ফ্লোরেট জানান, মার্স-কোভ ও সার্স টাইপের করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের সময় বানরের দেহে পরীক্ষায় এমনটিই ঘটেছিল। ১৯৬০-এর দশকে মানবদেহে হামের ভ্যাকসিন পরীক্ষায় এমনটি ঘটার পর তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। ব্রঙ্কাইটিসের কয়েকটি ভ্যাকসিনও প্রত্যাহার করা হয়েছিল।

ইএমএ সতর্ক করে জানিয়েছে, ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের সময়সীমা নির্ধারণ করা কঠিন। অতীতের ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে যে সময় লেগেছে তা অনুসারে বিস্তৃত ব্যবহারের জন্য উপযোগী হতে করোনা ভ্যাকসিনের আগামী বছর পর্যন্ত লাগতে পারে। তবু অনেক কোম্পানি এই বছরের শেষের দিকে ভ্যাকসিন সম্পূর্ণ প্রস্তুত করার বিষয়ে আশাবাদী।

ফ্লোরেট বলেন, শরতে ভ্যাকসিন পাওয়ার কথা খুব বাস্তব সম্মত বলে আমার মনে হয় না। এমন উদ্যম আমাদের সংযত করা দরকার। নিরাপদ ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে কয়েক বছর লাগে। ফলে আগামী বছরের প্রথমার্ধে পেলেও তা খুব ভালো কাজ হবে।

ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ফিবি ড্যানজিগার নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, হামের বারবার সংক্রমণ হওয়ার ফলে ভ্যাকসিন নিয়ে জনগণের উদ্বেগ আমরা সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারিনি। ভ্যাকসিন নিয়ে আমাদের ব্যর্থতা থেকে যদি আমরা শিক্ষা না নেই তাহলে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন কর্মসূচিও শেষ হয়ে যাবে।

 

/এএ/
সম্পর্কিত
ইউক্রেনীয় পাইলটদের প্রশিক্ষণরোমানিয়াকে তিনটি এফ-১৬ দিচ্ছে নেদারল্যান্ডস
ইউক্রেনের চেরনিহিভে রুশ হামলায় নিহত ১৩
ইরানে পাল্টা হামলা না চালাতে ইসরায়েলকে ক্যামেরনের আহ্বান
সর্বশেষ খবর
পরীমনিকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি
পরীমনিকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি
আত্মসমর্পণের পর কারাগারে  বিএনপি নেতা হাবিব-দীপক
আত্মসমর্পণের পর কারাগারে  বিএনপি নেতা হাবিব-দীপক
ভোরে বজ্রপাতে ৩ গরুর মৃত্যু
ভোরে বজ্রপাতে ৩ গরুর মৃত্যু
অনুপ্রাণন-এর মোড়ক উন্মোচন, বই আলোচনা ও লেখক সম্মাননা
অনুপ্রাণন-এর মোড়ক উন্মোচন, বই আলোচনা ও লেখক সম্মাননা
সর্বাধিক পঠিত
এএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
রেস্তোরাঁয় ‘মদ না পেয়ে’ হামলার অভিযোগএএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫
রাজধানীকে ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন উদ্যোগ রাজউকের
রাজধানীকে ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন উদ্যোগ রাজউকের
তৃতীয় ধাপে যেসব উপজেলায় ভোট
তৃতীয় ধাপে যেসব উপজেলায় ভোট