X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

আমার হৃদয়ে তার সোনালি স্বাক্ষর

জুলফিকার রাসেল
২০ জানুয়ারি ২০২১, ০০:১০আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২১, ০০:১০
নব্বই দশকের অগ্রগণ্য কবি মুস্তাফিজ শফির আজ ৫০ তম জন্মদিন। তিনি ১৯৭১ সালের ২০ জানুয়ারি সিলেটের বিয়ানীবাজারে জন্মগ্রহণ করেন। পেশায় সাংবাদিক। বর্তমানে দৈনিক সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে—পড় তোমার প্রেমিকার নামে; দহনের রাত; মধ্যবিত্ত কবিতাগুচ্ছ; কবির বিষণ্ণ বান্ধবীরা; মায়া মেঘ নির্জনতা; ব্যক্তিগত রোদ এবং অন্যান্য।

 

নব্বই দশকে এসে বাংলা কবিতার যে নতুন পথ নির্মিত হলো—যে পথ সরল নয়, ঋজু; স্লোগানমুখর নয়, বাঙ্ময়—তার বহু পথিকের একজন নন, অগ্রগণ্য মুস্তাফিজ শফি, কবি। শব্দ তার হাতে নিজেই ব্রহ্ম। যা একইসঙ্গে জ্ঞেয় ও অজ্ঞেয়। তিনি সৃষ্টির পরিণামহীন নির্ঝরে স্নাত করলেন বাংলা কবিতা। শুধু কবিতাই নয়, শিশুতোষ রচনা ও নতুন যুগের সাংবাদিকতাকেও তিনি দিয়েছেন অনন্য মাত্র।

তার সৃজনক্ষেত্র অন্তরে ব্যাপ্ত হলেও বাইরে নির্জনতাপ্রিয়। তিনি বিরলপ্রজ। নব্বই দশক থেকে তার লেখা নানান লিটলম্যাগ ও সাময়িকীতে প্রকাশিত হতে থাকলেও পাঠক ২০১০ সালে ‘পড় তোমার প্রেমিকার নামে’ কাব্যগ্রন্থের মধ্যদিয়ে তার অন্তর্জগতে প্রবেশ করেন এবং একইসঙ্গে তিনিও নিজেকে ধীরে ধীরে উন্মোচন করেন একেকটি কাব্যগ্রন্থের মধ্যদিয়ে—দহনের রাত (২০১৩), মধ্যবিত্ত কবিতাগুচ্ছ (২০১৩), কবির বিষণ্ণ বান্ধবীরা (২০১৫), মায়া মেঘ নির্জনতা (২০১৭), ব্যক্তিগত রোদ এবং অন্যান্য (২০১৯) এবং নির্বাচিত কাব্যগ্রন্থ বিরহসমগ্র (২০১৯)।

বলা যায়, তিনি নিজেকে বিলম্বিত করে প্রকাশ করেছেন নিজস্ব কাব্যজিজ্ঞাসার সঙ্গে বোঝাপড়া করেই। ফলে তার মানসভূমি ওয়েস্ট ল্যান্ড নয়, আবহমান বাংলার চিরায়ত জীবনধারা, নারী, প্রেম ও আত্মানুসন্ধানের উর্বর ভূমি। তার হৃদয় বিরহবিধুর কোকিলের মতো অলস মধ্যদুপুর।

কবি মুস্তাফিজ শফি তার বর্ণাঢ্য জীবনের ৫০ বছর পূর্ণ করছেন। এই জীবন নিছক পুষ্পশয্যা নয়, মন-মনন ও মজ্জায় তিনি ধারণ করেছেন বাংলাদেশকে। যে বাংলাদেশ একদিকে যেমন শস্য-শ্যামলা অপরদিকে যার সম্ভ্রম রক্ষা করতে প্রতি মুহূর্তে থাকতে হয় অতন্দ্র। তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তার শোণিতের মতোই সহজ, স্বাভাবিক।

এই বাংলাদেশকে তিনি জানছেন সন্তানের মাতৃপ্রেম দিয়ে, তেমনি চাক্ষুষ করছেন সাংবাদিকের দৃষ্টিতে। এই সৌভাগ্য সবার হয় না। তিনি আমার অগ্রজ, বন্ধু, তাকে জানাই জন্মদিনের শুভেচ্ছা। যাকে দেখে নির্দ্বিধায় বলতে পারি, ‘আপনি—আপনারাই আমাদের আশার ও আস্থার বাংলাদেশ।’

কবি মুস্তাফিজ শফি আমার জ্যেষ্ঠ হিসেবে আমাকে যেমন দিয়েছেন স্নেহের আশীষ, তেমনি বন্ধু হিসেবে দিয়েছেন অন্তরঙ্গ উষ্ণতা।

মজার ব্যাপার হলো, পেশাগত জীবনে আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি ‘খবরের কাগজ’ ও ‘আজকের কাগজ’-এ। যে প্রতিষ্ঠান দুটিকে আধুনিক সাংবাদিকতার সূতিকাগার হিসেবে সবাই জানেন—তাকে তখন নিছক সহকর্মী হিসেবেই পেয়েছি। বন্ধুত্ব গড়ে ওঠেনি। তবে ‘আজকের কাগজ’ থেকে তিনি চলে যাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আমাদের দেখা হতে শুরু হলো। বা, দুজনই গেলাম সংবাদ সংগ্রহে, দূর থেকে শফি ভাইয়ের মুচকি হেসে শুভেচ্ছা জানানো—যেই হাসি আস্তে আস্তে আমাদের নিয়ে এলো আলাপে, এরপর আলাপ থেকে আড্ডায় দুজনের হারিয়ে যাওয়া। এভাবেই শফি ভাই হয়ে উঠলেন আমার পরম বন্ধু। আত্মার আত্মীয়।

আমি শফি ভাইর কবিতা ও গদ্যের একনিষ্ঠ ভক্ত—এই কথা নির্দ্বিধায় বলতে পারি। তার কবিতা আমাকে আন্দোলিত করে, তার সংবাদ-বিশ্লেষণ আমাকে উদ্দীপ্ত করে।

তিনি সিলেট অঞ্চলের সুমহান ঐতিহ্যে জারিত। বিশেষ করে রাধারমণ, হাসন রাজা, শাহ আব্দুল করিমের মতো কবি ও শিল্পীদের সুর তার শোণিতে প্রবাহিত—আমিও সেই সুর ও বাণীর সাধক, গীতিকবিতা লিখে চলছি নব্বই দশক থেকে; ফলে আমাদের আত্মার টান বা মেলবন্ধন এখানেই সবচেয়ে বেশি গাঢ়। আমাদের আড্ডা আমাদের অজান্তেই চলে যায় সঙ্গীতে, কবিতায়।   

শফি ভাইয়ের ৫০তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানতে দুই কলম লিখতে বসে দেখছি আমাদের জীবনে কত মিল। আমরা দুজনই চিত্রকলার ভক্ত ও সংগ্রাহক। এখানেও রয়েছে আমাদের হৃদ্যতা ও বিনিময়। এমনও হয়েছে যে, আমার কাছে একই ধরনের একাধিক ছবি আছে কিন্তু শফি ভাইয়ের কাছে নেই। কথা প্রসঙ্গে তিনি বললেন, আমি সঙ্গে সঙ্গে তার কাছে সেটা পৌঁছে দেই। অপরদিক থেকেও শফি ভাইও তাই করেন। কখনো এমন হয়েছে কারো অসাধারণ পেইন্টিং আমার কাছে নেই কিন্তু শফি ভাইয়ের কাছে আছে—সেটা তার কাছ থেকে চেয়ে নিতে আমি বিন্দুমাত্র সংকোচবোধ করি না, তিনি দিতেও দ্বিধা করেন না। ফলে আমাদের পরস্পরের সংগ্রহ পরস্পরের জানা এবং দুজনের প্রয়াসেই গড়ে উঠেছে।

যারা মুস্তাফিজ শফি ভাইয়ের স্নেহ ও বন্ধুতা পেয়েছেন তারা জানেন, হৃদ্যতায় অতুলনীয় এই কবির হৃদয় কতটা অবারিত—তবে উন্মুক্ত নয়—ফলে তিনি সহজেই লিখতে পারেন :

‘আমি এখন ইচ্ছে করলেই সকালে মুড়িয়ার পথে থামিয়ে দিতে পারি লাতুর ট্রেন। আর ট্রেনের

ধোঁয়াগুলোকে অনায়াসে বানিয়ে ফেলতে পারি মেঘ। তুমি তো মেঘ ভালোবাসতে, মাঝে মাঝে ঝরাতে

বৃষ্টিও। মেঘ ধরব বলে আমরা কতবার ছুটেছি নীলগীরি-নীলাচল। আর প্রকৃতির ছলনায় কতবার

ভেসেছি আক্ষেপের জলে। অথচ দেখো আমার হাতে এখন একসাথে ব্ল্যান্ড হতে থাকে মেঘ, বৃষ্টি এবং

নীল আকাশ।’ [হাতের মুঠোয় একগুচ্ছ অন্ধকার]

শফি ভাই দিন দিন আমার খুব আপন হয়ে উঠেছেন। মিষ্টি হাসি আর নম্র বাচনভঙ্গির এই মানুষটি এখন আমার পারিবারিক বন্ধু। যে কারণে সাহস করে বলিও, এই কংক্রিটে গড়া শহরে তিনি আমার একজন অভিভাবকও। ভুল হলে শুধরে দেবেন, সুখে-দুঃখে পাশে থাকবেন—এমন মানুষ কি এই শহরে সহজে মেলে? এমন পরশ পাথর? বলতে হয়, আমি তা পেয়েছি। আমার হৃদয়ে রয়েছে তার সোনালি স্বাক্ষর।

আমার বড় ভাই, বন্ধু, কবি মুস্তাফিজ শফি। শুভ জন্মদিন।  

/জেডএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা