X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভাষার মাসে নেই অমর একুশে বইমেলা

সাদ্দিফ অভি
০১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০৬আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০০:০৬

এবার আর ফেব্রুয়ারিতে থাকছে না নতুন মলাটের গন্ধ। করোনার গুমোট আবহেই কাটাতে হবে ভাষার মাস। বাংলা একাডেমি জানিয়েছে, মেলা শুরু হবে ১৮ মার্চ। শেষ হবে পয়লা বৈশাখ তথা ১৪ এপ্রিল। মহামারির কারণে এ প্রথম যেতে হলো প্রথার বাইরে। তবে কেউ বলছেন, এতে নতুন আরেক আনন্দও আছে। কারণ বইমেলা হবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণেও।

লেখক প্রকাশকরা জানালেন আশঙ্কার কথাও। মার্চ-এপ্রিলে প্রতিকূল আবহাওয়ার কবলে পড়তে পারে বইমেলা। যে কারণে নিতে হবে বাড়তি সতর্কতা। কারণ আচমকা ঝড়ো-বাতাসে ক্ষতি হতে পারে স্টলের।

রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে ভোট থাকায় গত বছর গ্রন্থমেলা একদিন পিছিয়ে ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়। ততদিনে চীন ছাড়িয়ে করোনাভাইরাস অন্যান্য দেশে পৌঁছাতে শুরু করেছে মাত্র। তখনও বাংলাদেশে প্রকোপ দেখা যায়নি। ফলে ফেব্রুয়ারির শেষে নির্বিঘ্নেই মেলার সমাপ্তি ঘটে।

মহামারি বিবেচনায় বইমেলার আয়োজন স্থগিত রাখতে গতবছরের ডিসেম্বরে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। পরে ভার্চুয়ালি বইমেলা করার প্রস্তাব এলেও বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি তাতে আপত্তি জানায়। সমিতি বলে, খোলা আকাশের নিচে, বিশাল জায়গাজুড়ে যেভাবে প্রতিবছর হয়ে আসছে, এবারও সেভাবেই বইমেলা করতে চান তারা।

দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ গত ১৭ জানুয়ারি জানান, দেরিতে হলেও বইমেলা হবে আগের মতোই। এর জন্য ২০ ফেব্রুয়ারি, ৭ মার্চ অথবা ১৭ মার্চ থেকে বইমেলা শুরু করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে এ বিষয়ে একটি চিঠি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর বাংলা একাডেমি ও বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি ১৮ মার্চ মেলা শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়।

এ সমিতি ও সময় প্রকাশনের সত্ত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মার্চ বইমেলার সময় নয়। এই সময় বইমেলার আয়োজনে আমরা অভ্যস্তও নই। তারপরও ফেব্রুয়ারি একটু ফাঁকাই ছিল। কারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল বন্ধ। তাই সবদিক বিবেচনায় মার্চে বইমেলা ভালো হতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে করা সম্ভব হয়নি বলেই মার্চে নেওয়া হয়েছে। মার্চ আমাদের স্বাধীনতার মাস। এই বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীও উদযাপন করবো আমরা। তাই বইমেলা সফল করতে হলে জনগণের মাঝে নতুন এক জাগরণ তৈরি করতে হবে।’

বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির রাজধানীর সভাপতি ও অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘অমর একুশে বইমেলা আমরা কখনও ফেব্রুয়ারির বাইরে করিনি। এই অভিজ্ঞতা নতুন। তবে বড় কথা হচ্ছে মার্চ-এপ্রিলের প্রতিকূল আবহাওয়া। এসময় কালবৈশাখী ঝড়সহ আবহাওয়াজনিত সমস্যা থাকে। বেশ গরমও থাকে। এর মধ্যে মানুষ কী পরিমাণ আসবে সেটিও ভাবার বিষয়। এ জন্য আমরা বাংলা একাডেমিকে বলেছি যাতে স্টলগুলো একটু শক্ত করে বানানো হয়। দর্শনার্থীদের জন্য যাতে ছাউনির ব্যবস্থাও রাখা হয়।’

কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বইমেলার মাসটি ফেব্রুয়ারি হলে নিশ্চয়ই ভালো হতো। কারণ, একুশে ফেব্রুয়ারির স্মৃতি বিজড়িত হওয়ায় এর নাম অমর একুশে গ্রন্থমেলা। এখন অমর একুশে বইমেলা বলা হয়। সেক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারি ভালো ছিল। আরেকটি প্র্যাকটিক্যাল ব্যাপার হচ্ছে আমাদের ঐতিহ্যগতভাবে ফসলকেন্দ্রিক উৎসবগুলো শীতকালে হয়। অগ্রহায়ণ মাসে ধান পাকে, পৌষে সেটি যখন তোলা হয়, তখন মানুষের হাতে অবসর থাকে, প্রাচুর্য থাকে। এ কারণে উৎসব হয় মাঘ মাসে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের যাত্রা-পালাগান সবই শীতে হয়। এটা আমাদের অনেক বছরের ঐতিহ্য। মার্চে স্বাভাবিকভাবেই গরম থাকবে। কালবৈশাখীর আশঙ্কাও থাকবে। তবে একেবারে না হওয়ার চাইতে পরে হওয়াও ভালো।’

লেখক, নাট্যকার, আলোকচিত্রী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা শাকুর মজিদ বলেন, ‘এই সময়টি পৃথিবীর অন্য যেকোনও সময়ের চেয়ে আলাদা। যে পৃথিবী আমরা এখন দেখছি এরকম আগের বছরগুলোতে ছিল না, হয়তো আগামী বছরও থাকবে না। এই সময় পৃথিবীর অনেক কিছুই ওলটপালট হয়েছে। সুতরাং এখানে বইমেলার মতো উৎসবের সময় যে বদলাবে হবে এটাও অনাকাঙ্ক্ষিত নয়। আমরা মনে করি, লেখকরা অধীর আগ্রহে আছেন মেলায় অংশ নেবেন, পাঠকরা যাবেন।’

প্রসঙ্গত, ১৯৭২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির গেইটে বই বিক্রি শুরু করেন মুক্তধারা প্রকাশনীর মালিক চিত্তরঞ্জন সাহা। ১৯৭৭ সালে তার সঙ্গে আরও অনেকে যোগ দেন। ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী বাংলা একাডেমিকে এ বইমেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত করেন। পরের বছর মেলার সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি। ১৯৮৩ সালে মনজুরে মওলা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্বে থাকার সময় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ নামে এ মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হলেও তা করা যায়নি। পরের বছর ১৯৮৪ সালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অমর একুশে বইমেলার সূচনা হয়।

/এফএ/
সম্পর্কিত
বইমেলা শেষ, কবে স্বরূপে ফিরবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান?
ব্রহ্মপুত্রপাড়ে পণ্ডিত বইমেলা, থাকবেন ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীর সাহিত্যিক ও শিল্পী
সাঙ্গ হলো প্রাণের মেলা
সর্বশেষ খবর
চাঁদপুরে লঞ্চে আগুন, হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে আহত ১০
চাঁদপুরে লঞ্চে আগুন, হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে আহত ১০
ঈদযাত্রার সময় দুর্ঘটনায় ৪৩৮ জন নিহত: জরিপ
ঈদযাত্রার সময় দুর্ঘটনায় ৪৩৮ জন নিহত: জরিপ
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দেওয়া ব্যক্তির মৃত্যু
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দেওয়া ব্যক্তির মৃত্যু
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার বিকল্প নেই
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার বিকল্প নেই
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া