X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

হাতিরঝিল রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে বিপাকে রাজউক

শাহেদ শফিক
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১১:০০আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১১:০০

রক্ষণাবেক্ষণে বছরে ঘাটতি ৮ কোটি টাকা

রাজউককে টাকা দেবে না মন্ত্রণালয়

রাজধানীর হাতিরঝিল প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও হস্তান্তর ও রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ শেষ হলেও এখনও তা বুঝে নেয়নি রাজউক। রাজউক বলছে, রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ডিপিপিতে কোনও নির্দেশনা ছিল না। এ জন্য বছরে প্রায় ১৮ কোটি টাকা দরকার। প্রকল্প এলাকায় দোকানপাট বরাদ্দসহ অন্যান্য খাত থেকে ১০ কোটি টাকা আসে। ঘাটতি মেটাতে সরকারের কাছে বাকিটা বরাদ্দ চাওয়া হলে অপারগতা প্রকাশ করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাজউককেই এই খরচ দিতে হবে।

জানা গেছে, গত বছরের ২ জুন রাজউক চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে বেগুনবাড়ী খালসহ হাতিরঝিল এলাকার সমন্বিত উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম প্রস্তাবনা পর্যালোচনার জন্য গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রকল্প এলাকা রক্ষণাবেক্ষণে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়।

তাতে বলা হয়- দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা ও পয়ঃবর্জ্য পরিপূর্ণ হাতিরঝিল ও বেগুনবাড়ী খাল পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে একটি স্ট্রম ওয়াটার বেসিন তৈরি করা হয়েছে। সেইসঙ্গে দৃষ্টিনন্দন জলাধার ও সবুজের সমারোহে প্রকল্পটি দেশি-বিদেশি পর্যটক ও সাধারণ জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য বিনোদন কেন্দ্র হিসেবেও পরিণত হয়েছে। তাই এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ কর্মসূচি গ্রহণ করে দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে প্রকল্প রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পরিচালনার জন্য একটি প্রস্তাব প্রস্তুত করা হয়।

এ লক্ষ্যে, আলোচ্য প্রকল্পের বাৎসরিক রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালন প্রস্তাবের বাৎসরিক খরচ প্রায় ১৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয় সংগ্রহ করার লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের স্টিয়ারিং কমিটির সভায় ব্যয় পুনর্বিবেচনা করে আবার প্রকল্পের প্রস্তাব প্রেরণের মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়।

সে অনুযায়ী একটি পরিচালন স্কিম প্রস্তাব করা হয়। বাৎসরিক সম্ভাব্য আয় প্রায় ১০ কোটি টাকা ধরা হয়। ব্যবস্থাপনার বাৎসরিক ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১৮ কোটি টাকা। চাহিদা দাঁড়ায় ৮ কোটি ১৮ লাখ টাকার। এই টাকা সরকারি কর্মসূচি ব্যয় হিসেবে সংগ্রহ করার লক্ষ্যে স্কিম প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে এ বিষয়ে রাজউকের বোর্ডসভায় অনুমোদন বা মতামতসহ পুনঃপ্রস্তাব প্রেরণের জন্য নির্দেশনা দেয় মন্ত্রণালয়।

স্কিম প্রস্তাবের চাহিদামতো টাকার পরিমাণ গত বছরের ৩ মার্চ রাজউক কর্তৃপক্ষের দ্বিতীয় বোর্ডসভায় অনুমোদন করা হয়। পরে ২ জুন অনলাইনে প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম প্রস্তাবনা পর্যালোচনার জন্য রাজউক চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় হাতিরঝিল বিষয়ে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সভায় প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার বাৎসরিক ব্যয় প্রায় ১৮ কোটি টাকা ধরা হয়। সম্ভাব্য বাৎসরিক আয় ৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা এবং বাৎসরিক চাহিদা ৮ কোটি ১৮ লাখ ৬৯ হাজার ৪২৪ টাকার প্রয়োজন হবে বলে কমিটি সুপারিশ করে।

হাতিরঝিল গত বছরের ১৯ নভেম্বর মন্ত্রণালয় থেকে রাজউককে অর্থ বরাদ্দ না দেওয়ার বিষয়ে জানিয়ে দেয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব মো. মাহবুবুর রহমানের স্বাক্ষর করা চিঠিতে বলা হয়, হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পটির বাৎসরিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাজউক চাহিদানুযায়ী অর্থের সংস্থান সম্ভব নয়। রাজউকের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় রক্ষণাবেক্ষণ বা বিকল্প প্রস্তাব পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হয় চিঠিতে।

রাজউকের হাতিরঝিল প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক রায়হানুল ফেরদৌস কমিটির বৈঠকে জানান, প্রকল্প রক্ষণাবেক্ষণে আয়-ব্যয়ের হিসাবটি যৌক্তিক। তবে হাতিরঝিল প্রকল্প হতে যেসব আয়ের উৎস রয়েছে তা করোনা মহামারির জন্য ব্যাহত হয়েছে। হাতিরঝিলের সকল দোকান, রেস্তোরাঁ, বাস সার্ভিস, ওয়াটার ট্যাক্সি বন্ধ রাখা হয়েছিল। এতে বরাদ্দপ্রাপ্তরা ব্যাপক আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে। তাই হাতিরঝিল থেকে নির্ধারিত আয়ের পরিমাণ বছরে একই রকম না-ও থাকতে পারে। যে অর্থের চাহিদা করা হয়েছে তা না এলে প্রকল্পটি কার্যকারিতা হারাবে বলেও জানান রায়হানুল ফেরদৌস।

রাজউক জানিয়েছে, ঢাকার একটি বৃহৎ এলাকার ‘ক্যাচমেন্ট বেসিন’ হিসেবে হাতিরঝিল প্রকল্পের লেকটি ব্যবহৃত হচ্ছে। এর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যাহত হলে ঢাকার একটি বড় অংশ জলাবদ্ধতার শিকার হবে। তাই প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ১১টি স্পেশাল ‍সুয়ারেজ ডাইভারসন স্ট্রাকচার (এসএসডিএস), ৪টি মেকানিক্যাল স্ক্রিন, মেইন ডাইভারশন সুয়ারেজ পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও এগুলোর নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন দক্ষ জনবল, যন্ত্রপাতি ও রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম।

রাজউক আরও বলছে, হাতিরঝিল প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ৮ দশমিক ৮ কিলোমিটার এক্সপ্রেস রোড, ৯ দশমিক ৮ কিলোমিটার সার্ভিস রোড, ৪টি সেতু, ৪টি ওভারপাস, ৩টি ভায়াডাক্ট ও ২টি ইউলুপসহ বিভিন্ন স্থাপনার ব্যবহার বন্ধ হলে ঢাকার ট্রাফিক চলাচলও বিঘ্নিত হবে।

প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে, হাতিরঝিল এলাকায় প্রায় দেড় লাখ গাছপালা রয়েছে। ঝিলে যেসব ফুল ও ওষুধি গাছ রয়েছে, সেগুলোর নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিয়োজিত ২৮ জন কর্মীর জন্য যৌক্তিক প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের আয় থেকে ব্যয় নির্বাহের জন্য ফুড কোর্ট, কার ওয়াশ, চিলড্রেন পার্ক, অ্যামফিথিয়েটার, পার্কিং বিল্ডিং, সার্কুলার বাস সার্ভিস ও বোট সার্ভিস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মান নিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তাসহ আনুষাঙ্গিক নানা কাজে প্রস্তাবিত জনবল অবকাঠামো ও প্রাক্কলন ব্যয় যৌক্তিক বলেও কমিটির সভায় জানানো হয়েছে।

হাতিরঝিল প্রকল্প সমন্বয়ক লে. কর্নেল কাজী শাকিল হোসেন জানান, হাতিরঝিলের সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি বাস্তবসম্মত উপদেষ্টা কমিটি ও একটি মনিটরিং কমিটি থাকা উচিত। যাদের দিক নির্দেশনায় প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ কাজ করা হবে। এতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ের স্বচ্ছতা থাকবে।

জানতে চাইলে রাজউকের হাতিরঝিল প্রকল্পের প্রকল্প-পরিচালক রায়হানুল ফেরদৌস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হাতিরঝিল রক্ষণাবেক্ষণে বছরে প্রায় ১৮ কোটি টাকার দরকার। কিন্তু ১০ কোটি টাকার মতো আসে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে বাকি টাকা রাজউককেই দিতে হবে বা বিকল্প প্রস্তাব করতে হবে। পরে সেই টাকা রাজউক থেকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর হস্তান্তরের বিষয়টি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকেই হবে।’

 

 

/এফএ/
সম্পর্কিত
টিপু-প্রীতি হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ আজ
মাড় ফেলে ভাত রান্না হলে ‘১৫ ভাগ অপচয় হয়’
গুলিস্তানে দুই জনের মৃত্যু, সন্দেহ ‘হিট স্ট্রোক’  
সর্বশেষ খবর
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলে টর্নেডোর আঘাতে নিহত ৫
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলে টর্নেডোর আঘাতে নিহত ৫
মাহিন্দ্র উল্টে চালকসহ ২ জন নিহত
মাহিন্দ্র উল্টে চালকসহ ২ জন নিহত
শিক্ষাবিদ প্রণব কুমার বড়ুয়ার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক
শিক্ষাবিদ প্রণব কুমার বড়ুয়ার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক
প্রধানমন্ত্রী দেশের পথে
প্রধানমন্ত্রী দেশের পথে
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ