বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১৮ মার্চের ঘটনা।)
১৯৭৩ সালের এইদিনে শপথ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত জনসভায় দ্ব্যার্থহীন কণ্ঠে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন, ‘অসাধু ব্যবসায়ী, মুনাফাখোর, দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের বিরুদ্ধে এবার শেষবারের মতো সতর্কবাণী উচ্চারিত হচ্ছে।’ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশ বিপুল করতালির মধ্যে তিনি বলেন, এটি তার শেষ সতর্কবাণী।
বঙ্গবন্ধু বলেন, সবসময় আইন দিয়ে দুর্নীতি উচ্ছেদ করা যায় না। এর জন্য চাই জনসমর্থন, গণআন্দোলন। গণআন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে সকল সমাজবিরোধী কাজ নির্মূল হবে বলে তিনি ঘোষণা করেন।
কঠোর ভাষায় বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আইন-আদালতের মারপ্যাঁচে নয়, দুর্নীতিবাজ মুনাফাখোর মজুতদার চোরাকারবারি ছিনতাইকারীদের ধরা হবে এবং সংক্ষিপ্ত আদালতে বিচার করে জেলে পাঠানো হবে। ১৪ বছর করে সাজা দেওয়া হবে।’ জনসভায় বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বেআইনি অস্ত্র জমা দেবার জন্য ২০ মার্চ পর্যন্ত সময় দিয়েছি। এরপর লাল ঘোড়া দাবড়ানো হবে।’
তিনি দুঃখ করে বলেন, ‘এদেশের দুখি মানুষের জন্য বিদেশ থেকে আমি সাহায্য ভিক্ষা করে আনছি। কিছু কিছু কর্মচারী-ব্যবসায়ী তা লুটে নিচ্ছে। আমি পাগল হয়ে যাই, যখন দেখি আমার মানুষ না খেয়ে রয়েছে। যখন দেখি আমার মানুষের গায়ে কাপড় নেই। ছোট ছোট বাচ্চা কাঁদছে অন্ন বস্ত্রের অভাবে। আমি চাই সবাই যেন পেট ভরে খেতে পারে।’
বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য, শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার সংকল্পের কথা ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধুর বলেন, সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছি, বাংলার স্বাধীনতা এনেছি, এবার সোনার বাংলা গড়তে চাই।
মাথা হেঁট হয়ে যায়
পরীক্ষায় নকল বন্ধ করতেই হবে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, এর জন্য পুলিশ দেওয়া হবে। পুলিশ ব্যর্থ হলে রক্ষীবাহিনী। রক্ষীবাহিনী ব্যর্থ হলে বিডিআর। বিডিআর ব্যর্থ হলে মিলিটারি নিয়োগ করা হবে। কিন্তু নকল বন্ধ করতেই হবে। এদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু এ ঘোষণা দেন। ছাত্রদের পড়াশোনা করার উপদেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের লজ্জা না হলেও লোকের কথা শুনে মাঝে মাঝে লজ্জায় আমার মাথা হেঁট হয়ে যায়। তিনি বলেন ডিগ্রি নিয়ে কোনও লাভ হবে না। নকল করে ধোঁকা দেওয়া যায়, কিন্তু মানুষ হওয়া যায় না। মানুষ হতে হলে লেখাপড়া শিখতে হবে।
বঙ্গবন্ধু ব্যথিত চিত্তে বলেন, জাতি আজ কত নিচে নেমে গেছে। পাকিস্তান আমাদের সমাজ দেহে যে দুর্নীতি প্রবেশ করিয়ে দিয়েছে তাতে আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে। সম্পদ গেলে সম্পদ পাওয়া যায়, কিন্তু চরিত্র গেলে আর পাওয়া যায় না।
ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করিনি
সেদিনের জনসমুদ্র উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেন, ক্ষমতা বা প্রধানমন্ত্রিত্বের জন্য আমি রাজনীতি করি না। তা আপনারা জানেন। আপনারা আমাকে যা দিয়েছেন এরচেয়ে বড় কিছু আর হতে পারে না। বাংলার মানুষ আমাকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে। যেদিন দেখব জনগণ আমাকে ভালবাসে না, এক মুহূর্তের জন্য ক্ষমতায় থাকবো না। এ ব্যাপারে সবাই নিশ্চিত থাকতে পারেন। ক্ষমতার জন্য বারবার আমি জীবন দিতে যাইনি।
বিরোধীদলগুলোর প্রতি
জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে তিনি বলেন, এখনও অনেক সময় আছে। কাজ করুন, সংগঠন করুন। আদর্শ প্রচার করুন। প্রয়োজনে পাঁচ বছরের আগে নির্বাচন দেওয়া হবে। আপনারা জনগণের ভোট নিয়ে ক্ষমতায় আসুন, আমাদের আপত্তি নেই। আমরা চলে যাব। কিন্তু বাজে কথা বলবেন না। বাজে কথা বহু শুনেছি। আর শুনতে চাই না। জাতি আমার ওপর দায়িত্ব দিয়েছে। জাতির জন্য আমার কর্তব্য রয়েছে।