X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

চাষির মুখে ‘হানিকুইনের’ হাসি

জসিম উদ্দিন মজুমদার, খাগড়াছড়ি
২৭ মার্চ ২০২১, ১৬:৪৭আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২১, ১৬:৪৭

কৃষিবিদদের উদ্ভাবিত নতুন নতুন প্রযুক্তি ও রাসায়নিক ফর্মুলা ব্যবহার করে বিভিন্ন ফসলের ফলন যেমন বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে,  তেমনি নির্ধারিত সময়ের আগেই আসছে ফলন। এমন একটি ফল হচ্ছে হানিকুইন জাতের আনারস। আগাম ফলন পাওয়ায় ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষকেরা। ভালো লাভ হওয়ায় খুশি খাগড়াছড়ির আনারস চাষিরা। হানিকুইন আনারস

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, গত এক দশকে জেলায় আনারসের ফলন বেড়েছে দ্বিগুণ। ২০১০ সালে খাগড়াছড়ি জেলায় প্রায় ১৮শ’ একর জমিতে চাষ হয়েছিল আনারসের। সেই বছর জেলায় ফলন হয়েছিল ১৫ হাজার ৩১৫ মেট্রিক টন। কিন্তু চলতি বছর জেলায় তিন হাজার ২৫ একর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে। এতে প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন ফলন পাওয়ার আশা করছে কৃষি বিভাগ। কৃষি বিভাগের পরিসংখ্যানের বাইরে প্রায় বাড়িতে স্বল্প পরিসরে হলেও চাষ হচ্ছে আনারস। হানিকুইন আনারস

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (উদ্যান) প্রণব বড়ুয়া বলেন, যেসব টিলার মাটিতে চাষিরা আগে জুম চাষ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন, সেসব জায়গায় এখন হানিকুইন আনারসের চাষ করে অধিক লাভের মুখ দেখছেন তারা। সাধারণত অক্টোবর-নভেম্বর মাসে হানিকুইন আনারসের চারা লাগানো হয়। পাহাড়ের ঢালে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৪০ সেন্টিমিটার ও চারা থেকে চারার দূরত্ব ২০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার দেওয়া হয়। এতে হেক্টরপ্রতি ৫০ হাজার বা কানিপ্রতি (৪০ শতাংশ) আট হাজার চারা প্রয়োজন। হানিকুইন আনারস

সাধারণত দেশীয় আনারসে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ফুল আসে এবং আগস্ট মাসে আনারস পাকে। কিন্তু হানিকুইন আনারস জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে বাজারে আসা শুরু হয়েছে।

হানিকুইন ‘ডলডুপি’ হিসেবেও পরিচিত। চোখ সূচালো ও উন্নত। গড় ওজন প্রায় এক কেজি। পাতা কাঁটাযুক্ত ও পাটল বর্ণের। হানিকুইন বেশ মিষ্টি আনারস। মধুর মতো মিষ্টি বলেই এই নাম। এই আনারসের সঙ্গে অনায়াসে আদা, সয়াবিন, সরিষা, কালাই, কচু ইত্যাদি সাথী ফসল হিসেবে চাষ করা যায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে খাগড়াছড়ির হানিকুইন আনারস

আনারস যেমন সুগন্ধ, সুন্দর রং ও স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য সমাদৃত, তেমনি আনারসের জুস, স্লাইস, এসিড, স্কোয়াশ, সিরাপ, জ্যাম, জেলি, আনারসসত্ত্ব, ভিনেগার, সাইট্রিক এসিড, ক্যালসিয়াম সাইট্রেট, অ্যালকোহল বিশ্বনন্দিত। খুশখুশে কাশি-জ্বরে আনারস মহৌষধ। এছাড়া আনারসের পাতা থেকে মোম ও সুতা তৈরি হয়।

টিনে সংরক্ষণ করার পরও আনারসে কিছু পরিমাণ ভিটামিন থাকে। পাকা আনারসে গড়ে শতকরা ১০ ভাগ চিনি ও এক ভাগ সাইট্রিক এসিড থাকে। টাটকা আনারসের মধ্যে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য পরিপাক ও হজমের সহায়ক ব্রোমিলিন নামক জারকরস থাকে। বাণিজ্যিক ফল হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে আনারস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে খাগড়াছড়ির হানিকুইন আনারস

খাগড়াছড়ির বাইরে থেকে আসা ব্যবসায়ীরা আনারস কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে। এতে করে লাভবান হচ্ছেন কৃষক এবং ব্যবসায়ী দুই পক্ষই। সুস্বাদু ও সুমিষ্ট রসালো আনারস পাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আনারসে পরিকল্পিতভাবে হরমোন প্রয়োগ করে সারা বছর ধরে কাঙ্ক্ষিত সময়ে আনারস পাকানো যায়।

এক একর জমিতে হানিকুইন আনারস চাষের জন্য প্রায় ৬০-৭০ হাজার  টাকার প্রয়োজন। কিন্তু সব খরচ বাদ দিয়ে একর প্রতি বিনিয়োগকৃত টাকার দ্বিগুণ বা তিনগুণ বেশি আয় হচ্ছে। সে হিসাবে, হেক্টরপ্রতি দেড় থেকে দুই লাখ টাকার মতো লাভ পাওয়া যায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে খাগড়াছড়ির হানিকুইন আনারস

মহালছড়ির মধ্য আদাম গ্রামের চাষি সুলক্ষণ চাকমা জানান, আগাম ১৬ হাজার আনারসের চারা লাগিয়েছি। এর মধ্যে প্রায় ১৪ হাজারের বেশি ফল পেয়েছি। বিক্রয় করে লাভবান হয়েছি। আনারসগুলো রসালো এবং সুস্বাদু হওয়ায় বাগান থেকেই ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে কষ্ট ও ভোগান্তি কম।

আনারস চাষি রিপন চাকমা বলেন, এই এলাকায় এখন অনেকেই আগাম আনারসের চাষ শুরু করেছে। আগাম ফল আসলে ভালো লাভে বিক্রি করা যায়। এই আনারসের প্রচুর চাহিদা রয়েছে সমতলে।

নোয়াখালী থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী তাজুল ইসলাম জানান, মহালছড়ি ও খাগড়াছড়ি এসে মৌসুমি ফল নিয়ে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করি। বাগান থেকে কিনে নেওয়ার কারণে একটু কম দামে কিনে নিতে পারি। মৌসুমে প্রতি পিছ আনারস ৪-৫ টাকায় কিনলেও এখন কিনতে হচ্ছে ১৪-২০ টাকায়। এতে করে লেবার খরচ এবং গাড়িভাড়া দিয়ে খুব বেশি লাভ করতে পারি না। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে খাগড়াছড়ির হানিকুইন আনারস

ব্যবসায়ী মো. সোহেল জানান, আগাম আনারস হওয়ায় মৌসুমের চেয়ে এখন দাম অনেক বেশি। কৃষকদের বাগান থেকে আনারস কিনে চট্টগ্রাম নিয়ে বিক্রি করে প্রতি হাজার আনারসে গড়ে ১০ হাজার টাকা লাভ করেন।

এদিকে নানিয়ারচরে বিভিন্ন এলাকা থেকে আনারস চাষিরা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে আনারস নিয়ে আসছেন মহালছড়ি ভাসমান পাইকার বাজারে। সেখান থেকে স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকাররা পাইকারি দরে আনারস কিনছেন।

শ্রমিক মো. রশিদ বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই কাজ করে থাকি। ১০০ পিছ আনারস গাড়িতে লোড করতে ৪০ টাকা পাই আমরা। পুরো দিনে ১০ থেকে ১২ গাড়ি আনারস লোড করতে পারি। প্রতি গাড়িতে আকারভেদে চার থেকে সাত হাজার পিছ পর্যন্ত আনারস ওঠানো যায়।

জেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মুর্তজ আলী  জানান, আগাম আনারস চাষ হওয়ায় কৃষকরা ভালো লাভবান হচ্ছেন। পাইকারদের কাছে তারা এখন ১৪-২০ টাকা দরে আনারস বিক্রি করছেন। পাইকাররা বাইরে নিয়ে সেই আনারস ৩০-৪০ টাকা দরে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে। এখানকার আনারস এখন স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে। এতে করে চাষিরা আনারস চাষে ঝুঁকছেন।

 

/এফএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভাগ্নিকে শায়েস্তা করতে নাতিকে হত্যা
ভাগ্নিকে শায়েস্তা করতে নাতিকে হত্যা
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৪)
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া