এক ব্যবসায়ীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক মো. মাসুদ রানার বাড়ি থেকে। ওই ব্যবসায়ীর নাম হাসান আলী। এসময় অভিযুক্ত মাসুদ রানাকে স্থানীয় জনতা গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। নিহতের স্বজনদের দাবি, এক মাসের বেশি সময় ধরে হাসান আলীকে নিজের বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে আটকে রেখে নির্যাতন করেন মাসুদ রানা। এমনকি তিনি মুক্তিপণও দাবি করেন।
শনিবার দুপুরে (১০ মার্চ) সদর উপজেলার বল্লমঝার ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামের (খানকাহশরীফ) এলাকার বাড়ি থেকে থেকে লাশটি উদ্ধার করে সদর পুলিশ। অভিযুক্ত মাসুদ রানা সদর উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের মোখলেছুর রহমানের ছেলে। তিনি গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক পদের দায়িত্বে আছেন। নিহত হাসান আলী (৫২) গাইবান্ধা জেলা শহরের থানাপাড়া এলাকার মৃত হযরত আলীর ছেলে। পেশায় জুতা ব্যবসায়ী হাসান আলী শহরের স্টেশন রোডে আফজাল সুজ- এর ডিলারশিপের ব্যবসা করতেন।
হাসান আলীর পরিবারের অভিযোগ, ব্যবসায়িক কারণে হাসান আলীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল মাসুদ রানার। কয়েক মাস ধরে আর্থিক লেনদেন নিয়ে তাদের দ্বন্দ্ব চলছিল। পরে বিষয়টি নিয়ে সদর থানায় এক বৈঠকে উভয়ের পক্ষের লোকজনের আলোচনাও হয়। কিন্তু ৫ মার্চ হাসান আলীকে লালমনিরহাট থেকে অপহরণ করে মাসুদ রানা। এরপর নিজ বাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় হাসানকে আটক রেখে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পসহ সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়। শুধু তাই নয়, মাসুদ রানা তাদের কাছে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণও দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকার করায় হাসানকে নির্যাতনও করতেন তিনি।
নির্যাতনের কারণে হাসানের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি তার স্বজনদের। তারা দাবি করছেন, লাশ ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ঘটনা ধামাচাপার চেষ্টা করে মাসুদ রানা আত্মহত্যার অপপ্রচার চালাচ্ছে। মৃত্যুর আগে হাসান আলী মুঠোফোনে তার স্ত্রীর মোবাইলে একটি এসএমএস পাঠিয়েছেন। যাতে তার মৃত্যুর জন্য মাসুদ রানাকে দায়ী করেছেন বলেও দাবি স্বজনদের।
এদিকে, মাসুদ রানার বাড়িতে হাসান আলীর ঝুলন্ত লাশের খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন ছাড়াও হাসান আলীর স্বজনরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এসময় বিক্ষুদ্ধ জনতা মাসুদ রানাকে গণপিটুনি দেয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরেই মাসুদ রানা সুদে কারবারি অর্থ লেনদেন করতেন বলে অভিযোগ করেন প্রতিবেশীরা। রাজনৈতিক দাপট দেখিয়ে তিনি আর্থিকসহ নানা কারণেই বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণির পেশার মানুষের ওপর নির্যাতন করতেন বলে অভিযোগ করেন তারা। তাদের দাবি, হাসান আলীকে নিজের বাড়িতে আটক রেখে মাসুদ নির্যাতন চালাতেন, এ কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহাফুজার রহমান মুঠফোনে জানান, খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত মাসুদ রানাকে আটক করে থানায় আনা হয়েছে। ব্যবসায়ীক লেনদেনের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগেও উভয় পক্ষ বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসেছিল। নিহত আলীর আলীর গলায় কালো পাতলা কাপড় দিয়ে ফাঁস লাগানো ছিল। তবে তার শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষে থানায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে। পুরো ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. ফরহাদ আব্দুল্লাহ হারুন বাবলু মুঠোফোনে জানান, রানার বাড়িতে লাশ পাওয়া গেছে এবং পুলিশ তাকে আটক করেছে। মূলত ঘটনাটি কী তা পুলিশেই তদন্ত করে দেখবে। তবে রানার বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ প্রমাণ হয় তাহলে দলীয়ভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।