X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

কারখানার চাপে রোগীর অক্সিজেন নেই!

সাদ্দিফ অভি
১৬ এপ্রিল ২০২১, ১৩:০০আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২১, ১৩:৪৮
দেশের করোনা পরিস্থিতি যতই খারাপের দিকে যাচ্ছে ততই সংকট বাড়ছে মেডিক্যাল অক্সিজেনের। সরবরাহে হিমশিম খাচ্ছে উৎপাদক ও খুচরা বিক্রেতারা। করতে হচ্ছে আমদানিও। শিল্প-কারখানায় অক্সিজেন সরবরাহ অনেকে বন্ধ করার কথা জানালেও সেখানকার চাহিদাও ভূমিকা রাখছে চলমান সংকটে।
 
সক্ষমতা ও ঘাটতি
 

দেশে এখন চাহিদার তুলনায় দিনে প্রায় ৬০ টন অক্সিজেনের ঘাটতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন উৎপাদনকারীরা। হাসপাতাল এবং বিভিন্ন শিল্পকারখানায় দৈনিক অক্সিজেন চাহিদা আছে ১৮০ টনের।

দেশের বহুজাতিক অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লিন্ডে জানিয়েছে, চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এরইমধ্যে তারা উৎপাদন বাড়িয়েছে। রূপগঞ্জ এবং চট্টগ্রামের প্লান্টে দিনে ৯৫ টন উৎপাদন করছে এবং পুরোটাই সরবরাহ করছে।

পাশপাশি চাহিদা মেটাতে পশ্চিমবঙ্গ থেকে লিকুইড অক্সিজেনও আমদানি করা শুরু করেছে লিন্ডে। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২টি প্লান্টের এখন সর্বাধিক উৎপাদন ক্ষমতা ৯৫ টন।

আরেকটি মেডিক্যাল গ্যাস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রার উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ২৫ টন। অন্যদিকে দেশের শিল্পকারখানায় প্রতিদিন চাহিদা আছে ১০-১৫ টনের।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিফিল হচ্ছে বেশি

মিরপুরের বাসিন্দা হারুন-উর-রশিদ অক্সিজেনের সিলিন্ডার নিয়ে শুধু ঘুরছেন রিফিল করানোর জন্য। মিরপুর থেকে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেই তেজগাঁওয়ের কলোনি বাজারে এসেছেন একটু অক্সিজেনের আশায়। শেষে পেলেনও। বিক্রেতা জানালেন সংকটের কথা। কিছুক্ষণের জন্য হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেও দুশ্চিন্তায় আছেন হারুন-উর-রশিদ। এই অক্সিজেন শেষ হলে আবার কোথায় পাবেন।

তেজগাঁয়ের তাহের এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকার আবু তাহেরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘অক্সিজেন সরবরাহ কমে গেছে। আমরা বেশ হিমশিম খাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ফিলিং স্টেশনে মেডিক্যাল রিফিল কম হয়। তারা ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিফিল করছে বেশি। অথচ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিফিল এখন বন্ধ থাকার কথা। আমাদের কাছে বাড়তি চাপ আসে। আমরা ফেরত পাঠাই। এখন নতুন কোনও হাসপাতাল এলেও আমরা দিই না। আগে থেকে যাদের দিয়ে আসছি তাদেরকেই প্রাধান্য দিচ্ছি।

মগবাজারের আহমেদ এন্টারপ্রাইজের মালিক লতিফ রেজা বলেন, ‘এখন প্লান্টে গাড়ি পাঠালে ৩-৪ দিন অপেক্ষা করতে হয়। আগে গাড়ি পাঠালে দিনে দিনে গ্যাস পেতাম।’

গাড়ি প্লান্টে যাওয়ার পর ফেরত আসছে বলে অভিযোগ প্রায় সব অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রেতারই। তবে কেউ কেউ চাহিদার তুলনায় কম উৎপাদনকেই বেশি দুষছেন। 

মগবাজারের ওই বিক্রেতা আরও জানালেন, ‘নতুন সিলিন্ডার এখন বিক্রি কমিয়ে দিয়েছি। বিশেষ ক্ষেত্রে যাচাই বাছাই করে দিচ্ছি। কারণ অনেকেই রোগী না থাকলেও শুধু দুশ্চিন্তার কারণে সিলিন্ডার ঘরে নিয়ে রাখছে। এ জন্য আমরা রিফিলই করছি বেশি। যারা খালি সিলিন্ডার কষ্ট করে নিয়ে আসে, বোঝা যায় তাদের ঘরেই রোগী আছে।’

পাশেই আরেক বিক্রেতা জানান, ‘নতুন সিলিন্ডার বিক্রি চালু আছে তবে কম। বেশিরভাগই রিফিল নিচ্ছে।’

উৎপাদকরা যা বলছেন

লিন্ডের মানবসম্পদ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) সায়কা মাজেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যতটুকু সম্ভব পুরোটাই মেডিক্যাল অক্সিজেন দিচ্ছি। ঘাটতি মেটাতে ভারত থেকে আমদানিও করছি। ভারতেও লিন্ডের নিজস্ব প্লান্ট আছে। সরকারও আমাদের সহায়তা দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত বড় কোনও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়িনি। বড় হাসপাতালগুলোতে লিকুইড অক্সিজেন দিই আমরা। এখনও চাহিদা অনুযায়ী দিতে পারছি। তবে চাহিদা হঠাৎ বেড়ে যাওয়াতে আমাদের ক্লোজ মনিটরিংয়ে থাকতে হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে মানসম্মত বিদ্যুতের সমস্যা আছে। সেকারণে যদি কোনও প্লান্ট বন্ধ হয়ে যায়, সেটি চালু করতে ৩ ঘণ্টা লেগে যায়। আমাদের প্লান্ট বিদ্যুৎ ও গ্যাস জেনারেটরে চলে।’

বিক্রেতাদের অভিযোগ সম্পর্কে জানালে তিনি বলেন, ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্যাসের জন্য মেডিক্যাল গ্যাসের সরবরাহ দিতে দেরি হচ্ছে- ব্যাপারটা এমন নয়। শিল্পকারাখানা কিন্তু চালু আছে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও। তারপরও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেডিক্যালকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। কারখানা খোলা থাকলে আমাদের জন্য একটু চ্যালেঞ্জ হয়ে যায়। সবকিছু মিলিয়ে একটা সাপ্লাই চেইন ম্যানেজ করতে হয়। সিলিন্ডার দিলেও আমাদের গাড়ির সীমাবদ্ধতা আছে। চাহিদা দ্বিগুণ হলেও লজিস্টিক তো বেড়ে যায়নি।’

অপর এক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা জানান, মেডিক্যাল অক্সিজেনের জন্য সিরিয়াল লেগে আছে। একটি বড় সিলিন্ডার রিফিলে ঘণ্টাখানেক লাগে। আমরা দিনে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার কিউবিক মিটার অক্সিজেন রিফিল করতে পারি। কিন্তু চাহিদা এর প্রায় ৩ গুণ।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সারাদেশে অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে ১৭ হাজার ৭২৪টি। হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা আছে ১ হাজার ৩৪৮টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর আছে ১ হাজার ১৩২টি। 

/এফএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী