অকাল বন্দনা
নাবাল জমির নামে শুরু করিলাম
দেখো কত উঁচা উঁচা গাছ, কত উঁচা উঁচা টিলা
আর ঠিক তারই নিচে রুখা-লাল পাথরের মাটি
তবু ঠিক এখানেই বাওয়া খেত করবে বলে
যে-চাষির ক্ষুধার্ত চোখ পড়ে আছে লাঙলের ফালে
আমি আজ সেই চাষির নামে শুরু করিলাম
আমি সেই বটবৃক্ষের নামে শুরু করিলাম
অঝোর বর্ষণেও যার বুকে জাগে নাই ঢেউ
আমি তার নিচের মাটির নামে
তার ঝরো-শুষ্ক মূলের নামে শুরু করিলাম
যে-বিলের ফাঁদে পড়ে আল-শিকারের লোভে
সারা রাত নাওয়ে নাওয়ে ঘুরে মরে যুবা
আজ সেই নিলক্ষ্যা রাক্ষুসীর নামে শুরু করিলাম
এবং শেষমেষ ছাড়াবাড়িটির কোনো বাঁশভাগাড়ের নিচে
পুড়ে ছাই-হয়ে-যাওয়া কোনো করুলের নামে শুরু করিলাম
জানি না এই পদ্য শেষে কার বাণে হবে যে খতম!
দ্বিপদীগুচ্ছ
তুমি ধরে আছ দাঁড়—এই দেখে শুয়েছি নৌকায়
গলুইয়ে টুকরো চাঁদ—চুরমার, গুরা ও বাতায়
*
এই জলে শুয়ে আছি, বুঝি কেউ গাইবেই গান
যেহেতু আকাশ দোলে, আমি ছার! তৃণ-পদ্মপ্রাণ
*
তুমি বেঁচে আছ বলে—মরে যাই—ক্ষণ ভরসায়
গাছ যদি নাও থাকে, পাখি বসে, অন্য আগাছায়
*
দ্বিধাই গেল না আজো, পড়ে যাচ্ছি ত্রিধা ও চৌধায়
এখনো বেকুফ আমি, হরবোলা কত গান গায়
অচেনা
এই রূপ রুদ্ধচাপা, ধোঁয়াশানিবিড়
দেখি যে ভোরের আলো—মৃতপ্রায়, জরা
অজান্তে নিজের কাছে নিজে অপরাধী
তোমার পাতার মুখ, এতকাল ফুটেছে প্রত্যহ
নিয়ড়ে, দুহাত জুড়ে—করতলময়;
আজ দেখি দূরপ্রসারিত ক্ষীণসাগরের করুণাভা নিয়ে
ধাক্কা মেরে ফেলে যায় তিমিরে আবার
এখন তা অসামান্য—ধোঁয়াশাতিমির
স্তূপ স্তূপ কারুণ্য নিয়ে পৃথিবীর
শতদিকে বিস্তারিত হয়ে গেছে দেখি
নীলরঙে-আঁকা শীতের গাথার প্রতি
বালিচাপা আগুনের প্রতি
আমি আর সহৃদয় তাকাতে পারি না
সফর
একলা ঘুরিফিরি ঘরের সন্ধানে
উঠেছি শেষমেশ মাছের কানকায়
মেঘের গর্জনে যে-কৈ নির্জল—
চরছে উজানের ডাঙার নির্জনে
আমাকে নিয়ে যায় বদর-দরগায়
গলায় বেঁধে রাখি কবচকুণ্ডল
পরান অস্থির হৃদয় তড়পায়
একলা পথিকের বধূ তো লবেজান
ছেড়েছি ভিটেজমি মাথার তিরপল
মাছের কানে থেকে চলছি রাস্তায়
মাছের কানে চেপে যেন-বা বিষপান
বেফানা হয়ে ফিরি ঘরের পথটায়