১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডা গণহত্যায় ফ্রান্সের দায় রয়েছে বলে স্বীকার করে নিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো। ওই ঘটনায় নিজ দেশের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাইলেও আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি। বৃহস্পতিবার রুয়ান্ডা সফরের সময় কিগালি জেনোসাইড মেমোরিয়ালে এক বক্তৃতায় এসব কথা বলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
১৯৯৪ সালে মাত্র একশ’ দিনের গৃহযুদ্ধে রুয়ান্ডার নৃতাত্ত্বিক তাতসি জনগোষ্ঠীর প্রায় আট লাখ মানুষ হত্যাকাণ্ডের স্বীকার হয়। দেশটির প্রায় ৮৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী হুতু হলেও দীর্ঘদিন ধরে দেশটি শাসন করেছে তাতসিরা। ১৯৫৯ সালে হুতুরা তাতসি রাজতন্ত্র উৎখাতের পর লাখ লাখ তাতসি প্রতিবেশি বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যায়। নির্বাসিত এসব তাতসিরা রুয়ান্ডার প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্ট (আরপিএফ) নামে বিদ্রোহী গ্রুপ গঠন করে ১৯৯০ সালে রুয়ান্ডায় আগ্রাসন শুরু করে। ১৯৯৩ সালে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের আগ পর্যন্ত চলে এই আগ্রাসন।
১৯৯৪ সালের ৬ এপ্রিল রাতে রুয়ান্ডার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জুভেনাল হাবিয়ারিমানা এবং বুরুন্দির প্রেসিডেন্ট সিপ্রিয়ান নাতিয়ামিরাকে বহনকারী একটি বিমান ভূপাতিত করা হলে এর সব আরোহী নিহত হন। এই দুই প্রেসিডেন্টই ছিলেন হুতু জনগোষ্ঠীর। হুতু উগ্রবাদীরা এই ঘটনার জন্য আরপিএফকে দায়ী করে আর শুরু করে সংঘবদ্ধ হত্যাকাণ্ড। তবে আরপিএফ’র দাবি গণহত্যার অজুহাত দাঁড় করাতেই হুতুরাই বিমানটি ভূপাতিত করে।
ওই সময়ে রুয়ান্ডার হুতু সরকারের মিত্র ছিলো ফ্রান্স। গণহত্যা শুরুর পর নিজ দেশের নাগরিকদের নিরাপদে ফিরিয়ে নিতে বিশেষ বাহিনী পাঠায় প্যারিস। তবে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে এই গণহত্যা ঠেকাতে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেয়নি তারা।
১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডা গণহত্যার শিকার প্রায় আড়াই লাখ মানুষের সমাধিস্থল কিগালি জেনোসাইড মেমোরিয়ালে দাঁড়িয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো বলেন, ‘আজ এখানে মানবতা এবং শ্রদ্ধার সঙ্গে আপনাদের পাশে দাঁড়িয়ে আমি আমাদের দায়িত্ব স্বীকার করে নিতে এসেছি।’ তিনি বলেন, গণহত্যার হুঁশিয়ারিতে কান দেয়নি প্যারিস। তবে গণহত্যায় কোনও ধরনের সহায়তাও করেনি বলে জানান তিনি।
ওই গণহত্যায় বেঁচে যাওয়া সকলের কাছে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন, ‘তারা হয়তো আমাদের ক্ষমা উপহার দিতে পারেন।’