X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘আমাদের ঠিকানায় চিঠিও আসবে’

পাভেল হায়দার চৌধুরী, খুলনা থেকে
১১ জুন ২০২১, ১৩:০০আপডেট : ১১ জুন ২০২১, ১৩:০০

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় গৃহহীনদের মাঝে ঘর উপহার দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এ কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম দফায় সারাদেশে প্রায় ৭০ হাজার পরিবারকে দুই শতক জায়গাসহ মাথা গোঁজার জন্য একটি করে পাকা ঘর উপহার দেন প্রধানমন্ত্রী। তাতে যেন খুশীর অন্ত নেই ঠিকানা পাওয়া মানুষগুলোর।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় খুলনার ডুমুরিয়া কাঁঠালতলায় ঘর পান ৬০টি সহায়-সম্বলহীন পরিবার। নতুন ঠিকানা পাওয়া পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গল্প হয় বাংলা ট্রিবিউনের। এই গল্পে উঠে আসে তাদের বদলে যাওয়া জীবনের কথা। পাকা ঘরে থাকতে পারার আনন্দে আত্মহারা তারা। এ ছাড়া কতটা আত্মতৃপ্তিতে রয়েছেন তারা সেটার বহিঃপ্রকাশ তাদের চেহারাতেই স্পষ্ট।

গত বৃহস্পতিবার (১০ জুন) কাঁঠালতলার ওই প্রকল্প ঘুরে দেখতে গেলে কথা হয়ে নতুন ঠিকানা পাওয়া সাদিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অনেক ভালো আছি। একটি ঠিকানা পাল্টে দিয়েছে আমাদের পুরো পরিবারের ভবিষ্যত জীবন।’

স্বামীকে সংসারে সহযোগিতা করতে সেলাই কাজ করেন সাদিয়া ইসলাম।

উচ্ছ্বাস নিয়ে সাদিয়া বলেন, ‘আমার এক বছর বয়সী একটি মেয়ে আছে। তার নাম হাবীবা। আগে ভাড়া ঘরে থাকতাম। স্বপ্ন দেখতাম নিজেদের কোনওরকমে থাকার মত একটি ঘর হবে। সেই স্বপ্ন যে পাকা ঘরে পরিণত হবে, তা কখনও ভাবিনি। বঙ্গবন্ধু কন্যার জন্য অনেক দোয়া করি। হাবীবার জন্য তিনি একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছেন।’

সাদিয়ার স্বামী ফজর আলী শেখ কাঁঠালতলা এলাকায় ভ্যানগাড়ি চালায়। আর সংসার চালাতে স্বামীকে সহযোগিতা করতে সাদিয়া নিজে একটা সেলাই মেশিন কিনেছেন। এই ঘর নিয়ে অজস্র স্বপ্ন সাদিয়ার।

হযরত আলীর মেয়ে ইভা সুলতানা। চুপনগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া পাকা ঘর পেয়ে চোখেমুখে আনন্দের ঝিলিক খেলা করছে তার। কথা বলার সময় হাসি লেগেই আছে মুখে। ইভা জানায়, আগে চুপনগরের মাঠের পাশে টিনের একটি ঘরে মা বাবা ও আমার ছোট বোন ঈশিতাকে নিয়ে খুবই কষ্টে থাকতাম। বৃষ্টির দিনে নিশ্চিন্তে ঘুমানো ছিলো ভীষণ কষ্টের। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া পাকা ঘরে থাকি। সেই ভয় এখন আর নেই।

ইভা সুলতানা বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দাবি করেন, আগে আমাদের কোনও ঠিকানা ছিল না। আজ এখানে তো কাল আরেক জায়গায়। ভ্যানচালক বাবার পক্ষে আমাদের খাওয়া-দাওয়া দেওয়ার পরে একটি ভালো ঘর ভাড়া করে রাখার মত টাকা থাকতো না। পাকা ঘর পেয়ে আমরা এখন অনেক ভালো আছি, অনেক খুশী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদেরকে এই ঘর দিয়েছে জানিয়ে উল্লসিত ইভা সুলতানা বলেন, ‘এখন আমাদের ঠিকানায় চিঠিও আসবে।’

ডুমুরিয়া উপজেলার ভ্যানচালক শহিদুল ইসলাম। আগে চুপনগর এলাকায় ভ্যান চালাতেন। এখন এক্সিডেন্ট করে পঙ্গু হয়ে ঘরে বসে আছেন। জানুয়ারিতে প্রথম দফায় দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ঘর পেয়েছেন। এর আগে তিনি স্ত্রী অন্না বেগমকে নিয়ে সরকারি জায়গায় অস্থায়ীভাবে বসবাস করতেন। ঘর পেয়ে সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে পঞ্চাশোর্ধ্ব শহীদুল।

ভ্যানচালক শহিদুল ইসলাম ঘর পেয়ে সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ।

তিনি বলেন, ‘আগে বসতভিটাও ছিলো না, ঘর করবো কীভাবে? সরকারি জায়গার ওপরে গোলপাতার ঘর বেঁধে থাকতাম। রোদ বৃষ্টি ঝড়ে কষ্ট করতাম। শেখ হাসিনা আমাদের ঘর দিয়েছেন, আমরা খুব খুশি।’

শহীদুলের স্ত্রী আন্না বেগম বলেন, ‘একটি ঘর পেয়েছি। এখন নিশ্চিন্তে ঘরে বসতে পারি, রান্না করে ঘরে বসে খেতে পারি। এ ভীষণ আনন্দের। আগে যে ঘরে থাকতাম, বর্ষা হলেই রাতে চৌকির ওপর বসে থাকতাম। সাধ্যের ভেতরে নেই বলে এমন ঘরের স্বপ্নও দেখিনি কখনও। প্রধানমন্ত্রী উপহার দেওয়ায় আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।’

৭৫ ঊর্ধ্ব বয়সী হাসেম বিশ্বাসও জমিসহ থাকার জায়গা পেয়েছেন জানুয়ারিতেই। বয়সের ভারে তিনি এখন কিছুই করতে পারেন না। তাই সংসারের হাল ধরেছেন তার স্ত্রী ঝর্না বেগম। তিনি জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের ঘর দিয়েছেন এজন্য আমরা খুবই ভালো আছি। আগে অন্যের জায়গায় থাকতে হতো। যারা থাকার ঘর দিতো তাদের ফুটফরমাশ খাটা লাগতো। অল্প একটু ভুলেও কটুকথা শোনা লাগতো আশ্রয় দেওয়া সেই গেরস্তের। এখন নিজের ঘরে নিজের মত করে থাকি। এই আনন্দ কাউকে বোঝাতে পারবো না।’

মো. আলামিন লন্ড্রি দোকানের কর্মচারী। তিনিও আগে থাকতেন চুকনগরের রোস্তমপুরে ভাড়া করা বাসায়। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়ে তিনি জানান, ‘আগে পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে দিন কেটেছে। মাস পার হলেই চিন্তায় থাকতাম বাসা ভাড়া জোগাড় করা নিয়ে। বাসা ভাড়া দিয়ে সংসার চালাতে টানাটানিতে পড়তে হত। এখন জমিসহ ঘর পেয়েছি। খুব ভালো আছি।’

আনার গাজী স্থানীয় কাঁঠালতলা বাজারের ঝাড়ুদার। তিনিও পেয়েছেন জমিসহ ঘর। নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘আগে ছিলাম নদীর পারে এখন প্রধানমন্ত্রী থাকার জায়গা দিয়েছেন। কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই।’

তিনি বলেন, ‘নিজের মত থাকতে পারছি বেড়াতে পারছি। এর চেয়ে আনন্দ আর কী হতে পারে।

অন্যদিকে ঘর পাওয়ার অনুভূতি ব্যক্ত করে মিতালী দাস বলেন, ‘আমাদের মত ভিটাবাড়িহীন মানুষের দিকে কেউ কখনও তাকায়নি। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘর পেয়ে এখন আমরা অনেক ভালো আছি। মাথা গোঁজার জায়গা যেহেতু হয়েছে এখন জীবন আরও বদলে যাবে।’

‘আমাদের ঠিকানায় চিঠিও আসবে’

বিউটি বেগমের স্বামী আব্দুস সালাম পেশায় টাইলস মিস্ত্রি। করোনার কারণে কাজ না থাকায় বর্তমানে তিনি খুলনা শহরে রিকশা চালান। ঘর পাওয়ার অনুভূতি ব্যক্ত করে সালামের স্ত্রী বিউটি বলেন, ‘আগে অনেক কষ্টে দিন চালাতে হতো। জানুয়ারিতে নিজেদের ঘরে উঠেছি। আমাদের কষ্ট কমেছে। আমরা ভালো আছি। আরও ভালো থাকবো।’

 

/এনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
মারা গেলো গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটি
মারা গেলো গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটি
বিক্রির জন্য সবজি কিনে ফেরার পথে দুই ব্যবসায়ী নিহত
বিক্রির জন্য সবজি কিনে ফেরার পথে দুই ব্যবসায়ী নিহত
টিভি ধারাবাহিকে খলনায়িকা রিনা খান
টিভি ধারাবাহিকে খলনায়িকা রিনা খান
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি