শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের পর ওয়ানডে সিরিজও হতাশায় শেষ করেছে বাংলাদেশ। আজ বৃহস্পতিবার শুরু হচ্ছে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। আগের দুই ফরম্যাটে সিরিজ হারের শোধ কি কুড়ি ওভারের ফরম্যাটে নিতে পারবে লিটন দাসের দল? নাকি আগের মতো ক্রিকেটের সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটেও ভরাডুবি হবে। আজ পাল্লেকেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শুরু হবে প্রথম ম্যাচ। যা সরাসরি সম্প্রচার করবে টি-স্পোর্টস।
ফর্মহীনতায় শেষ দুই ওয়ানডেতে দলের বাইরে ছিলেন লিটন দাস। তার কাঁধে এবার টি-টোয়েন্টির নেতৃত্ব। লিটনকে ২০২৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত অধিনায়ক করে দায়িত্ব দিয়েছে বিসিবি।। তবে তার নেতৃত্ব ও ব্যাটিং—দুই দিকেই ভর করছে হতাশা। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে সিরিজ হার এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ—সব মিলিয়ে লিটনের অধিনায়কত্বের সূচনাটা হয়েছে ভীষণ বাজে। এমন পরিবেশ ও পরিস্থিতি নিয়েই আজ লঙ্কানদের বিপক্ষে আরও একটি মিশন শুরু করবেন তিনি।
লিটনের অফফর্মের পাশাপাশি টি-টোয়েন্টিতে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বাজে পারফরম্যান্সও চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত পাঁচ ম্যাচে একটিতেও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। গত মে মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হার এবং তার পরপরই পাকিস্তানের কাছে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ—এই দুই সিরিজের ব্যর্থতা দলের আত্মবিশ্বাসেও চির ধরিয়েছে। এবার নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ। যদিও গত বছরের শেষ দিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের সুখস্মৃতি রয়েছে লিটন দাসদের। লিটনও আশার কথাই শোনালেন, ‘টি-টোয়েন্টি সিরিজ টি-টোয়েন্টি সিরিজের জায়গায় আছে। ভিন্ন সংস্করণ, টেস্ট আলাদা, ওয়ানডে আলাদা একটা সংস্করণ। সবাই জানি আমরা এ সংস্করণে কীভাবে খেলতে হয়। আমরা সেভাবেই চেষ্টা করবো।’
সাম্প্রতিক অতীতে বাংলাদেশের হতাশ করা পারফরম্যান্স থাকলেও লঙ্কানদের বিপক্ষে বেশ কিছু স্মরণীয় জয় আছে। ১৭ বারের মুখোমুখিতে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৬টি জিতেছে। ২০১৮ সালে কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সর্বোচ্চ স্কোর গড়েছিল বাংলাদেশ। সংগ্রহ করেছিল ৫ উইকেটে ২১৫ রান। সবমিলিয়ে সাতবার ২০০’র বেশি রান করতে পারা বাংলাদেশ দুইবার লঙ্কানদের বিপক্ষে এই কীর্তি গড়েছিল। এই সুখস্মৃতি আজকের ম্যাচে কতটা কাজে দেয় সেটিই দেখার।
লিটন অবশ্য স্বাগতিক শ্রীলঙ্কাকেই এগিয়ে রেখেছেন, ‘নিজেদের মাঠে শ্রীলঙ্কা ভালো দল বলেই তারা রেজাল্ট করতে পারছে। তারা নির্দিষ্ট দিনে ভালো ক্রিকেট খেলেছে, আমরা পারিনি। টি-টোয়েন্টি সংস্করণটাই এমন, যদি নির্দিষ্ট দিনে ভালো ক্রিকেট খেলেন, আপনার দুই-তিনটা ক্রিকেটার ভালো ক্রিকেট খেলে ম্যাচ বের করে নিতে পারবে। কিন্তু এটাও সত্য তারা হোম কন্ডিশনে ভালো দল। তাদের এখানে খেলার অভিজ্ঞতা আছে এই মাঠে। তাদের বোলিং আক্রমণ একটু বেটার। তাদের কিছু রহস্য বোলার আছে। আমাদের ওই জিনিসটা নিয়ে একটু চেষ্টা করতে হবে।’
বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তার মূল কারণ ব্যাটিং। টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের ব্যাটিং ভুগিয়েছে। টি-টোয়েন্টি সিরিজে তেমনটা হলে বাংলাদেশের জন্য বেশ কঠিন হয়ে পড়বে। বিশেষ করে টপ অর্ডার ব্যাটারদের ভালোর বিকল্প নেই। কিন্তু এখানেই দিনের পর দিন ব্যর্থ হচ্ছেন ব্যাটাররা! তবে ব্যাটিং খারাপ করলেও বোলিং ভালো করছে বাংলাদেশ। আরব আমিরাত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে তাসকিন ও মোস্তাফিজ খেলতে পারেননি। তবে লঙ্কানদের বিপক্ষে পূর্ণ শক্তির পেস আক্রমণ নিয়েই সফরকারীরা মাঠে নামতে যাচ্ছে। এই দুই পেসারের কারণে পেস বোলিংয়ে শক্তি আরও বেড়েছে। পাশাপাশি স্কোয়াডে আছেন অনেকদিন পর সুযোগ পাওয়া মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। সবমিলিয়ে বোলিং বিভাগে বাংলাদেশের চিন্তার খুব বেশি কারণ নেই।
লিটনদের ওপর আরও চাপের বিষয়টি হচ্ছে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে পরপর হার ভীষণভাবে আহত করেছে দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের। ভক্তদের হতাশা আর ক্ষোভ এখন যেন চূড়ায়। এই অবস্থায় টি-টোয়েন্টি সিরিজ বাংলাদেশের জন্য শুধুই একটি প্রতিযোগিতা নয়, বরং ভক্তদের আস্থার ক্ষতে প্রলেপ দেওয়া। লিটনের নেতৃত্বে এই ফরম্যাটে ভালো করতে মূল দায়িত্ব ব্যাটারদের কাঁধে। তারা যদি দায়িত্বশীল ব্যাটিং করতে পারেন, দলীয় পারফরম্যান্স যদি হয় ধারাবাহিক—তাহলেই সেই সম্ভাবনার দ্বার খুলবে।