X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে সিলেটের পাহাড়ে ১০ হাজার মানুষের বসবাস

তুহিনুল হক তুহিন, সিলেট
১৪ জুন ২০২১, ০০:০১আপডেট : ১৪ জুন ২০২১, ০০:০১

সিলেটে দীর্ঘদিন ধরেই ঝুঁকি নিয়ে টিলা ও পাহাড়ের পাদদেশে ঘর বানিয়ে বসবাস করছে প্রায় আড়াই শতাধিক পরিবার। এদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। সম্প্রতি সিলেটে একাধিকবার ভূমিকম্প হলেও বসবাসকারীরা বসতি ছেড়ে যাননি। জেলা প্রশাসন থেকে কোনও ধরনের সতর্কতা কিংবা উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়নি। তবে দুর্ঘটনা ঘটলেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।

এবার ভূমিকম্প আর বৃষ্টির মৌসুম শুরু হলেও প্রশাসনের কোনও তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। এমনকি ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড়ে বসবাসকারীদের পুনর্বাসন কিংবা নিরাপদে সরিয়ে নিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

টিলায় বসবাসকারীরা জানিয়েছেন, কম টাকায় জায়গা কিনে তারা ঘরবাড়ি করেছেন। টিলার নিচে বসবাস ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও সেখানে আছেন তারা। কারণ তাদের যাওয়ার জায়গা নেই। তবে সরকার যদি স্থায়ীভাবে অন্যত্র বসবাসের ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে তারা সেখানে চলে যাবেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেট সদর উপজেলার আখালিয়া, ব্রক্ষাণশাসন, দুসকি, টিলারগাঁও, খাদিমনগর, খাদিমপাড়া, বালুচর, টুকেরবাজার, পাঠানটুলা গুয়াবাড়ি জাহাঙ্গীরনগর, আখালিয়া বড়গুল এলাকার মুক্তিযোদ্ধা টিলাসহ পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে ঘর বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছে কয়েকশ পরিবার। এর মধ্যে কেউ ঘর ভাড়া নিয়েছে, আবার কেউ নামমাত্র টাকা দিয়ে দখলদারদের কাছ থেকে জায়গা কিনেছে। বসবাসকারীদের মধ্যে নিম্নআয়ের লোকজনই বেশি।

যাওয়ার জায়গা নেই, তাই ঝুঁকি নিয়েই বসবাস আখালিয়া বড়গুল এলাকার মুক্তিযোদ্ধা টিলায় বসবাসকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. পাশা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই টিলায় আমরা অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা বসবাস করে আসছি। অনেক কষ্ট করে ঘরবাড়ি বানিয়ে পরিবার নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে থাকছি। আমাদের যাওয়ার কোনও জায়গা নেই।

সিলেট শহরতলীর মংলিরপাড় এলাকায় টিলার পাদদেশে বসবাসকারী শাহীন আহমদ বলেন, ভাড়া কম হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ সত্ত্বেও এখানে বসবাস করছি। বৃষ্টি হলে টিলা ধসের আতঙ্ক দেখা দেয়। ভূমিকম্পের কারণে পরিবার নিয়ে আতঙ্কে আছি।  আগামী মাসে বাসা বদলে অন্যত্র চলে যাবো।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেটের বিভাগীয় সমন্বয়ক শাহ শাহেদা আখতার বলেন, টিলা আর পাহাড় খেকোরা ধ্বংস করে ফেলেছে পরিবেশ। যার জন্য মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পরিবেশ ও প্রকৃতি। টিলা ও পাহাড়ের যথাযথ হিসাব কারও কাছে নেই। এগুলোর সঠিক পরিসংখ্যানও নেই। এসবের খবর রাখা যাদের দায়িত্ব, তারাই দায় এড়িয়ে যান। মানুষকে নিরাপদে রাখার জন্য বেলা এর আগে আদালতে একটি রিট করেছিলো। সিলেটের ছয় উপজেলাসহ সিটি করপোরেশন এলাকায় ২০১১ সালের একটি রিটে এক হাজার ২৫টি টিলা ছিলো বলে উল্লেখ করা হয়।

তিনি আরও বলেন, আদালতে রিটের পর দেখা যায়; সিলেটের অধিকাংশ জায়গায় টিলা নেই। বর্তমানে সিলেটে কতটি টিলা আছে, তা ডাটা করে রাখার দাবি জানাই। অন্যথায় কয়েকদিন পর সিলেটে কয়টি টিলা ছিলো আর কয়টি নেই- সে হিসাব মিলবে না। টিলাকে সাধারণত বলা হয় মাটির পেরেক। ভূমিকম্পের ক্ষতির প্রভাব ফেলার আগেই মাটির অবস্থান বোঝার জন্য ধ্বংস হওয়া টিলাগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা খুবই জরুরি।

সিলেট পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক ইমরান হোসেন বলেন, টিলা কিংবা পাহাড় কাটার অপরাধে পরিবেশ অধিদফতর সবসময় অভিযান অব্যাহত রাখার পাশাপাশি জরিমানা ও মামলা করে যাচ্ছে। এমনকি তথ্য অফিসের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ টিলা কিংবা পাহাড়ের নিচে যাতে কেউ বসবাস না করে, সে কাজও চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। পরিবেশ অধিদফতরের যতটুকু সক্ষমতা রয়েছে; সে অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে।

এদিকে, ঝুঁকি জেনেও বাধ্য হয়ে টিলার পাদদেশে ঘর বানিয়ে বসবাস করেন বলে জানালেন দরিদ্র শ্রেণির মানুষেরা। তাদের ভাষ্য, আমরা গরিব মানুষ। কোথায় যাবো? জানি বেশি বৃষ্টি কিংবা ভূমিকম্পে টিলা ধসার আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু আমাদের তো যাওয়ার জায়গা নেই। এজন্য মৃত্যুঝুঁকি নিয়েই বসবাস করছি।

. সেভ দ্য হেরিটেজ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের প্রধান সমন্বয়ক আবদুল হাই আল হাদী জানান, তারা জরিপ করে দেখেছেন সিলেট বিভাগে টিলার পাদদেশে প্রায় ১০ হাজার লোক ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন। পরিবেশ অধিদফতর ও প্রশাসনকে আরও বেশি কঠোর হতে হবে। সেই সঙ্গে যারা ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন, তাদেরও সচেতন হতে হবে। না হলে প্রাণহানির শঙ্কা থাকবে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৪ সালে ক্রিকেট স্টেডিয়ামের টিলার পাশের একটি দেয়াল ধসে এক পরিবারের তিনজন, জৈন্তাপুরে পাহাড় ধসে দুই শিশু, ২০০২ সালে শাহী ঈদগাহ এলাকায় চারজন, গোলাপগঞ্জে ২০০৫ সালে টিলা ধসে এক পরিবারের তিনজন, ২০০৯ সালে জেরিন চা বাগানে পাহাড় ধসে তিনজন, একই বছরের ১০ অক্টোবর গোলাপগঞ্জের কানিশাইলে মাটি চাপায় এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এছাড়া ২০১৭ সালের ১০ জুন নগরীর হাওলাদার পাড়ায় টিলা ধসে তিনজন আহত হন। এরপরও কার্যকর কোনও পদক্ষেপ নেয়নি সংশ্লিষ্টরা। 

গত ৩০ মে সকাল ১০টা ৩৬ মিনিট ৫০ সেকেন্ডে রিখটার স্কেলে ৩ মাত্রার, ১০টা ৫০ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডে ৪ দশমিক ১ মাত্রার, ১১টা ৩০ মিনিটে ২ দশমিক ৮ মাত্রার এবং ১টা ৫৮ মিনিট ৪০ সেকেন্ডে ৪ মাত্রার ভূকম্পন রেকর্ড করা হয়েছিল। ওই দিন একটি ভবন হেলেও পড়েছিলা। কয়েক দফায় ঝাঁকুনিতে সিলেট শহরের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। অনেকে উঁচু ভবন থেকে রাস্তায় নেমে আসেন। সেদিন কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।



/এএম/
সম্পর্কিত
আত্মসমর্পণ করলে কুকি-চিনকে পুনর্বাসন করা হবে: র‌্যাব মহাপরিচালক
‘সাংগ্রাই জলোৎসব’ যেন পাহাড়ে এক মিলন মেলা
‘মাটিকাটার ডাম্পার জব্দ করায় বিট কর্মকর্তাকে হত্যা করে পাহাড়খেকোরা’
সর্বশেষ খবর
এই জন্মদিনে আরেক সিনেমার ঘোষণা
এই জন্মদিনে আরেক সিনেমার ঘোষণা
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ৩০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ৩০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব
স্থায়ী সংঘাতে পরিণত হচ্ছে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা: তুরস্ক
স্থায়ী সংঘাতে পরিণত হচ্ছে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা: তুরস্ক
ট্রাকের ধাক্কায় দুই মোটরসাইকেলের ৩ আরোহী নিহত
ট্রাকের ধাক্কায় দুই মোটরসাইকেলের ৩ আরোহী নিহত
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!