প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের লাগাম টেনে ধরতে মানিকগঞ্জ জেলাজুড়ে চলছে সরকার নির্দেশিত লকডাউন। জেলার অভ্যন্তরীণ রুটসহ ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গণপরিবহন চলাচল বন্ধের ঘোষণা থাকলেও পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিংবা বিকল্প রাস্তায় ভাড়াচালিত কার ও মোটরসাইকেল পারাপার হচ্ছে। এতে অতিরিক্ত ভাড়ায় যাত্রীরাও রাজধানীর দিকে গমন করছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ফাঁকি দিতে এসব কারের সামনে সংবাদপত্র, রফতানিমুখী পোশাক কারখানা, স্বাস্থ্য বিভাগে জরুরি কাজে নিয়োজিত এরকম স্টিকারও লাগিয়ে যাত্রী বহন করা হচ্ছে। কেউ কেউ ব্যবহার করছেন বিকল্প রুট। মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে মোটরসাইকেলে রাজধানীর গাবতলী পর্যন্ত জনপ্রতি ভাড়া এক হাজার। কোনও কোনও মোটরসাইকেলে দুই জন যাত্রীও নেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে কারে জনপ্রতি নিচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকা।
এদিকে, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটে ১২টি ফেরি চলাচল অব্যাহত রয়েছে। এতে লকডাউনের আওতামুক্ত গাড়িসহ সাধারণ যাত্রীরাও পারাপার হচ্ছেন। সকাল থেকে দিনের বিভিন্ন সময়ে ঘাট এলাকায় ভাড়ায় চালিত কার দেখা গেছে। ফেরিঘাটের ৩ নম্বর ঘাট এলাকা থেকে এসব কার যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিচ্ছে।
পাটুরিয়া ৩ নম্বর ঘাট এলাকায় অপেক্ষমাণ ভাড়াচালিত (ঢাকা মেট্রো-খ-১১-৭৩০৬) কারচালক আব্দুল খালেক জানান, তিনি শুধু ঢাকার গাবতলী পর্যন্ত নেওয়ার জন্য জনপ্রতি ৪০০ টাকা করে যাত্রী তুলছেন। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ ও প্রশাসনের চেকপোস্ট রয়েছে। এ জন্য বিকল্প রুট সিংগাইরের ধল্লা ব্রিজ হয়ে যাবেন। সেখানেও ঝামেলা রয়েছে বলে জানান তিনি। পেটের দায়ে লকডাউন উপেক্ষা করে যাত্রী পারাপার করছেন বলেও উল্লেখ করেন এ চালক।
আরেক প্রাইভেটকার চালক সাব্বির হোসেন জানান, আগের মতো ঘাটে যাত্রী নেই। দুই ঘণ্টা অপেক্ষার পর তিন জন যাত্রী পেয়েছেন। ৫০০ টাকা করে তিনি নিয়েছেন।
লকডাউন উপেক্ষা করে বাড়ি থেকে রওনা দিয়ে ভেঙে ভেঙে পাটুরিয়া পর্যন্ত এসেছেন কুষ্টিয়ার যুবক শাহজাদা পারভেজ। ঢাকার মিরপুরের পল্লবী যাচ্ছেন এ গার্মেন্টকর্মী। আগামীকাল সকালে কর্মস্থলে হাজির হতে হবে। তাই উপায় না পেয়ে বের হয়ে পড়েছেন। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বেশ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তার মতো অনেককেই।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ও মানিকগঞ্জ-সিংগাইর সড়কের ধল্লা শহীদ রফিক সেতু এলাকায় রয়েছে পুলিশের তল্লাশি চৌকি। এসব চৌকি ফাঁকি দিয়ে তারা ঢাকায় ঢুকছে। এছাড়া ঢাকায় ঢোকার প্রবেশ পথ ধল্লা পুলিশ ফাঁড়িতে সকালের দিকে দেখা গেছে, যারা উপযুক্ত তথ্য দিয়ে নিজের প্রয়োজন বোঝাতে পারছেন একমাত্র তারাই যাতায়াত করছেন। অন্যদের ফেরত পাঠাচ্ছে পুলিশ।
মানিকগঞ্জের গোলড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, ঢাকা আরিচা মহাসড়ক হয়ে ঢাকায় সাধারণ যাত্রী যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। মহাসড়ক এলাকায় হাইওয়ে পুলিশের টহল অব্যাহত রয়েছ।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় এ জেলায় নতুন করে ১৪ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল আমিন আখন্দ।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে গত ২২ জুন সকাল ৬টা থেকে ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত মানিকগঞ্জসহ ঢাকার আশপাশের সাত জেলায় লকডাউন চলছে। এ সময়ে জনসাধারণের চলাচল ও গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।