X
শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪
৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে না পারাতেই বারবার লকডাউন

জাকিয়া আহমেদ
২৮ জুন ২০২১, ০৯:০০আপডেট : ২৮ জুন ২০২১, ০৯:০০

বেড়েই চলেছে করোনার প্রকোপ। গত এক সপ্তাহের প্রবণতা হচ্ছে— প্রতিদিনই আগের দিনের চেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার নতুন করে কঠোর লকডাউনের কথা বলছে। অথচ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনগণকে যদি যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মানানো যেত তাহলে কঠোর বা নমনীয় কোনও লকডাউনই দেওয়ার প্রয়োজন হতো না।

গত তিন সপ্তাহ ধরে রোগী সংক্রমণ এবং মৃত্যুর ঊর্ধ্বগতিতে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি গত ২৪ জুন সারাদেশে প্রথমবারের মতো ১৪ দিনের সম্পূর্ণ শাটডাউনের সুপারিশ করে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণে সারাদেশেই উচ্চ সংক্রমণ এবং ৫০টিরও বেশি জেলায় অতি উচ্চ সংক্রমণ লক্ষ্য করা যায় জানিয়ে কমিটি জানায়,কিন্তু করোনাভাইরাস প্রতিরোধের জন্য খণ্ড খণ্ডভাবে নেওয়া কর্মসূচির উপযোগিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘শাটডাউন মানে হচ্ছে সবকিছু বন্ধ থাকবে, শুধু জরুরি সেবা ছাড়া। অফিস-আদালত, বাজারঘাট, গণপরিবহনসহ সব বন্ধ থাকবে। সবাই বাসায় থাকবে।’

সুপারিশের পরদিন সরকার ঘোষণা করে সাতদিনের কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দেয়। যদিও পরবর্তীতে সে সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আসে। জানানো হয়, সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হবে ১ জুলাই থেকে।  সেখানে বলা হয়,কঠোর লকডাউনের এ সময়ে জরুরি সেবা ব্যতীত সকল সরকারি বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। এছাড়া জরুরি পণ্যবাহী ব্যতীত সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে শুধু যানবাহন চলাচল করতে পারবে।

অথচ বিশেষজ্ঞদের মতে, এত ভোগান্তি থেকে সহজেই বাঁচা যেতো, যদি শুরু থেকেই জনগণ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতো। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানাতে শুরু থেকেই বলে আসছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। করোনা মহামারি থেকে নিরাপদে থাকতে মাস্কের বিকল্প নেই বলে বারবার সতর্ক করছে প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে,কোনও নির্দিষ্ট সংখ্যক জনগোষ্ঠী যতদিন ভ্যাকসিন না পাবে,ততদিন মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক। কিন্তু আমাদের দেশে সবসময়ই মানুষ মাস্কের বিষয়ে উদাসীন ছিল। মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে গত আগস্ট মাসে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাতেও শতভাগ মানুষ মাস্ক পরছে না। চলতি বছরের ৬ মে সরকার ঘরের বাইরে মাস্ক পরাতে আট নির্দেশনা দেয়। কিন্তু সে কার্যক্রমও এখন আর নেই। বরং করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে মাস্ক পরায় আগ্রহ বাড়লেও এখন মাস্ক ছাড়া মানুষের সংখ্যাই বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন,যদি দেশের মানুষ মাস্ক পরায় সচেতন হতো, আগ্রহী হতো তাহলে বারবার লকডাউন দেওয়ার প্রয়োজন হতো না। কিন্তু আমরা সেখানে ব্যর্থ হয়েছি। আর দেশে তিন ভ্যারিয়েন্টসহ অসচেতনতার সুযোগে করোনার এই ঊর্ধ্বগতি। সারা পৃথিবী জুড়ে প্রতিটি দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বলছে,করোনার এই সংক্রমণ কমানোর অন্যতম উপায় মাস্ক পরা।

আধাআধি লকডাউন বা শাটডাউনের চেয়ে জরুরি টিকা। পাশাপাশি ‘ছায়া টিকাকরণ’ অর্থাৎ মাস্ক পরতে কঠোর হওয়া অনেক বেশি উপকার দেবে বলে মন্তব্য করেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা। তিনি বলেন, ‘দরকার হলে এই কাজে সেনাবাহিনীকে নামানো হোক। ৮০ শতাংশ মানুষও যদি মাস্ক পরে তাহলে করোনার প্রকোপ কমবে’।

মাস্ক পরানোসহ যদি দেশের মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সফল  হতাম তাহলে আজকের এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না বলে মন্তব্য করেছেন কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরার্মশক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান। তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতি তৈরি না হলে লকডাউনেরও প্রয়োজন হতো না’।

স্বাস্থ্যবিধি মানাতে ব্যর্থ হওয়া মানে আমরা সাধারণ মানুষকে এর গুরুত্ব বোঝাতে পারিনি- উল্লেখ করে অধ্যাপক ইকবাল আর্সলান বলেন,‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের তাণ্ডবের পর এখন ভারতে দেখতে পাচ্ছি,সেখানে কিভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানানো হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশে দুর্বলতা কোথায় এবং কাদের দুর্বলতা-আমি জানি না’।

আমরা পারি না কেন প্রশ্ন করে তিনি বলেন, ‘সিদ্ধান্তের দুর্বলতা কোথায় আমার জানা নেই। অথচ যদি মানুষকে মাস্ক পরানোসহ স্বাস্থ্যবিধি মানানো যেত তাহলে দেশের এই অবস্থা হতো না’।

একই মত প্রকাশ করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের গঠিত পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য অধ্যাপক আবু জামিল ফয়সাল। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘যদি শতভাগ মানুষ মাস্ক পরে যাতায়াত করতো তাহলে ট্রান্সমিশন চেইন ব্রেক হতো। মাস্ক পরা যদি অভ্যাসে পরিণত করা যেত তাহলে মহামারি শুরুর ১৬ মাস পর এই অবস্থা হতো না। ভিড়ের মধ্যে গেলেও মাস্ক থাকলে তাতে সংক্রমিত হবার চান্সেস খুবই,খুবই কম হতো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে,সবাই যদি মাস্ক পরে তাহলে সংক্রমণের হার এক দশমিক পাঁচ অর্থাৎ দেড় শতাংশে নেমে আসে’।

তিনি আরও বলেন, ‘লকডাউন দেওয়ার মানে মানুষকে ঘরের ভেতরে রাখা,যেন ট্রান্সমিশন চেইন ব্রেক হয়। কিন্তু সেটা মাস্ক পরা গেলেই করা যেত’। তাহলে মানুষকে মাস্ক না পরাতে পারার ব্যর্থতা কার—জানতে চাইলে আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ‘সরকার, জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যম কেউ মানুষের সঙ্গে ঠিকমতো কমিউনিকেশন করতে পারেনি। সমাজের সব মানুষকে যদি একাজে সম্পৃক্ত করা যেত, তাহলে আজকের এ অবস্থা হতো না’।

/এমকে/এমআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বাজারে অপরিপক্ব লিচু, খেলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি
বাজারে অপরিপক্ব লিচু, খেলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি
টিভিতে আজকের খেলা (১৭ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (১৭ মে, ২০২৪)
ইউপি চেয়ারম্যানকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ
ইউপি চেয়ারম্যানকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ
ব্রিটেনে আশ্রয় আবেদন বাতিল, বাংলাদেশিদের দ্রুত ফেরত পাঠাতে চুক্তি
ব্রিটেনে আশ্রয় আবেদন বাতিল, বাংলাদেশিদের দ্রুত ফেরত পাঠাতে চুক্তি
সর্বাধিক পঠিত
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
জাহাজে ওঠার পর কোরআনের সুরা শুনিয়ে দস্যুদের নিবৃত্ত করা হয়
জাহাজে ওঠার পর কোরআনের সুরা শুনিয়ে দস্যুদের নিবৃত্ত করা হয়
এমপিও আবেদন সরাসরি অধিদফতরে পাঠানো যাবে না
এমপিও আবেদন সরাসরি অধিদফতরে পাঠানো যাবে না
ফুল দিয়ে বরণ, রিট দিয়ে শুরু কোন্দল!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিফুল দিয়ে বরণ, রিট দিয়ে শুরু কোন্দল!
এডিপি: সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে যে ১০ প্রকল্প
এডিপি: সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে যে ১০ প্রকল্প