X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন: মামলায় এগিয়ে ফেসবুক পোস্ট

উদিসা ইসলাম
৩০ জুন ২০২১, ০১:০৮আপডেট : ৩০ জুন ২০২১, ০২:৪৬

২০২০ সাল থেকে ২০২১ সালের মে পর্যন্ত ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ পড়েছে ফেসবুক পোস্টের কারণে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য বলছে, গতবছর এ সংখ্যা ছিল ৬৪টি। এবছর মে পর্যন্ত সেটি দাঁড়িয়েছে ৬০টিতে।
এদিকে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা কিছুটা কমেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের তথ্যমতে, ২০২০ সালে ৭০ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত মামলা হয় ১৬টি। এ ছাড়াও ২২ মে ২০২০ সালের মামলায় গ্রেফতার হন বিজনেস বাংলাদেশ মেহেরপুর প্রতিনিধি আল আমিন। ওইদিনই তিনি জামিন পান।
কোন অভিযোগে কত মামলা
২০২১ সালে ৮১টি মামলা হয়। সবচেয়ে বেশি ফেসবুক পোস্ট ঘিরে- ৬৪টি। এরপরে আছে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও উস্কানি নিয়ে ৮টি। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতি, জমির বিরোধ, মিথ্যা ইউটিউব কনটেন্ট, শিশু নির্যাতন, আইপিএল-এর মিথ্যা সংবাদের মামলাও আছে।
২০২০ সালে ১৩৩টি মামলার মধ্যেও সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ফেসবুক পোস্টের কারণেই-৬০টি। এরপর আছে প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতি- ১৯টি ও কটূক্তি ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের ঘটনায় ২০টি মামলা।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন: মামলায় এগিয়ে ফেসবুক পোস্ট
এ ছাড়া যেসব অভিযোগে মামলা হয় সেগুলো হলো, প্রতারণা, পর্নোগ্রাফি, মিথ্যা ভিডিও, গুজব, জালিয়াতি, অপপ্রচার ও মিথ্য তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রচার।
মামলার কারণ ও ধরন পর্যালোচনা করে মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গত দুই বছরে সংখ্যাটা বেড়েছে। মামলার ভুক্তভোগী বা, যাদেরকে অপরাধী বিবেচিত করা হচ্ছে তারা হয় সাংবাদিক, লেখক, শিক্ষক বা মানবাধিকারকর্মী। আমার বিবেচনায় মামলাগুলো নিষ্পত্তি করতে যত বিভাগেই আদালত বিস্তৃত করা হোক না কেন এর অপব্যবহার বাড়ছে। ভুক্তভোগীদের পেশা ও মামলার কারণ খেয়াল করলে যৌক্তিক কোনও কারণ পাওয়া যায় না।
তার মতে, এই চর্চা অব্যাহত থাকলে বাকস্বাধীনতা ব্যাহত হবে ও মানুষ ভয়ে কথা বলবে না। একসময় অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে কেউ বলতে চাইবে না, এবং পক্ষান্তরে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সাত ট্রাইব্যুনাল কাজ শুরু করায় স্বস্তি
গত ৬ এপ্রিল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে দায়ের করা মামলার বিচারের জন্য সারা দেশে ৮টি সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে সরকার। একইসঙ্গে এসব ট্রাইব্যুনালের অধিক্ষেত্রও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
করোনার কারণে দীর্ঘদিন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মূলত জুন থেকে কাজ শুরু হয়েছে। ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম শামীম বলেন, দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পত্তির জন্য এ ব্যবস্থা ওয়া হয়েছে। তবে সারাদেশে মামলা পাঠিয়ে দেওয়ার পরে ঢাকায় এখন কতগুলো মামলা আছে সেটা জানতে আরও এক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। তবে বিভিন্ন বিভাগে মামলা নিষ্পত্তির সুযোগ তৈরি হওয়ায় সব পক্ষের হয়রানি কমবে বলেও তিনি মনে করেন।
রাজশাহী বিভাগের সাইবার ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত ১৭৬টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকা থেকে ১৬৮টি মামলা এখানে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই কোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট ইসমত আরা বলেন, মে ২ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে। জুনের ২ তারিখে ঢাকার মামলাগুলো এখানে এসেছে। এখনই বিস্তারিত বলা সম্ভব না। তবে বিভাগওয়ারি মামলা নিয়ে পুরোদমে কাজ শুরু হলে দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব।
এদিকে রংপুর বিভাগে মোট ১৩৫টি মামলার ১৩০টি ঢাকা থেকে গেছে বলে জানান পেশকার প্রকাশ চন্দ্র। এই মাস থেকে কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি। ময়মনসিংহে গত ৪ এপ্রিল সাইবার ট্রাইব্যুনাল কোর্টের কার্যক্রম শুরু হয়। সাইবার ট্রাইব্যুনাল চালুর পর থেকে চারটি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে।
ময়মনসিংহ আদালতের পুলিশ পরিদর্শক প্রসূন কান্তি দাস ও সাইবার ট্রাইব্যুনাল-এর পেশকার আব্দুল মালেক কর্তৃক পাওয়া তথ্যানুযায়ী ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ১১৬টি মামলা বদলি হয়ে সাইবার ট্রাইব্যুনালে এসেছে।
খুলনা বিভাগীয় সাইবার ট্রাইবুনালে ১৬১টি মামলা এসেছে উল্লেখ করে ট্রাইবুনালের পেশকার দীপন মন্ডল জানান, গত ১ এপ্রিল থেকে খুলনায় এ ট্রাইবুনালের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
সিলেট সাইবার ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী চিন্ময় কান্তি বলেন, সিলেট সাইবার ট্রাইব্যুনাল যাত্রা শুরু হওয়ার পর থেকে ২১ জুন সকাল পর্যন্ত ২২টি মামলা দায়ের হয়। আদালত ভুক্তিভোগীদের অভিযোগ আমলে নিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে তদন্তের জন্য আদেশও দিচ্ছেন।
এদিকে বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের স্পেশাল পিপি ইশতিয়াক রুবেল বলেন, এখন পর্যন্ত সাইবার ট্রাইবুনালের কোনও ধরনের কর্মকাণ্ড বরিশালে শুরু হয়নি। বিচারক নিয়োগ থেকে শুরু করে কক্ষ বরাদ্দ কিছুই হয়নি। তবে পেশকার ও কয়েকজন স্টাফ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম শামীম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সাইবার ট্রাইব্যুনালে হয়রানির জন্য মামলা হচ্ছে না তা নয়। তবে যৌক্তিক মামলাই বেশি। উদাহরণ টেনে তিনি বলেই দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি অপরাধ করেছে। পত্রিকায় সে বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর অনেকসময় তারা মামলা করতে আগ্রহ দেখায়। সেসব মামলার যৌক্তিকতা বিবেচনায় নেওয়া হয় বা হয় না। এখন পর্যন্ত ৮৫ শতাংশ মামলাই ফেসবুক পোস্ট কেন্দ্রিক। এ ছাড়া হ্যাকিং, এটিএম কার্ড জালিয়াতিসহ প্রতারণার মামলাও আছে।
(বিভাগীয় পর্যায়ের ট্রাইব্যুনাল থেকে তথ্য সংগ্রহে সহায়তা করেছেন ঢাকার বাইরে সাত বিভাগের প্রতিনিধিরা)

/এফএ/
সম্পর্কিত
নুরের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা
মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন জবি শিক্ষার্থী খাদিজা
লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ৩ বছর: স্বাধীন তদন্তের দাবি
সর্বশেষ খবর
বিতর্কিত আউটের ছবি পোস্ট করে মুশফিক লিখলেন...
বিতর্কিত আউটের ছবি পোস্ট করে মুশফিক লিখলেন...
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!
নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি জয়া
নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি জয়া
বিএনপি গণতন্ত্রে অকার্যকর ডামি রাজনৈতিক দল: ওবায়দুল কাদের
বিএনপি গণতন্ত্রে অকার্যকর ডামি রাজনৈতিক দল: ওবায়দুল কাদের
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী