X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রুদ্র রূপে তিস্তা, উদ্বাস্তু হচ্ছে বহু পরিবার

আরিফুল ইসলাম
০১ জুলাই ২০২১, ২১:০০আপডেট : ০১ জুলাই ২০২১, ২১:০০

উজানের ঢলে কুড়িগ্রামের তিস্তা, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে অববাহিকায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহের শেষের দিকে কিংবা দ্বিতীয় সপ্তাহে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় স্বল্পমেয়াদি বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এরই মধ্যে তিস্তার পানি হ্রাস-বৃদ্ধির চক্রে ভাঙনে রুদ্র রূপ নিয়েছে স্বল্প নাব্যের এই নদী। তীব্র ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিস্তা পাড়ের বাসিন্দারা। ভিটে হারিয়ে উদ্বাস্তু হচ্ছে একের পর এক পরিবার।

‘বারে বারে ভাঙে, বছরে বছরে ভাঙে, মাইনষের জায়গাত যায়া থাকা নাগে, মাইনষের জায়গাত নিন্দ্ (ঘুম) পাড়া নাগে, খুব কষ্ট। চাউল ডাউল চাই না, হামাক নদীটা বান্দি দেউক, হামরা জায়গাত (নিজ বাড়িতে) নিন্দ্ পাড়মো।’ এভাবেই নিজেদের কষ্ট আর অসহায়ত্বের কথা বলছিলেন জেলার উলিপুর উপজেলার বজরা ইউনিয়নের তিস্তা পাড়ের গ্রাম পশ্চিম বজরার বাসিন্দা রাশেদা বেওয়া (৬৩)। ভাঙনে দিশেহারা এই নারীর দাবি, সরকার যেন নদীশাসনের মাধ্যমে তাদের বসতির নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন অসহায় মানুষরা ঋণের টাকায় ২২ শতক জমি কিনেছিলেন। কেনার পর একবার চাষাবাদও করতে পারেননি। কিন্তু তিস্তার গ্রাসে অর্ধেকেরও বেশি জমি বিলীন হয়েছে। বাকিটুকু যেকোনও সময় বিলীনের অপেক্ষায়। সর্বগ্রাসী তিস্তার তীরে দাঁড়িয়ে চোখ মুছতে মুছতে এমনটাই জানালেন রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের রামহরিগ্রামের সালেহা খাতুন।

শুধু উলিপুরের রাশেদা বেওয়া কিংবা রাজারহাটের সালেহা খাতুন নন, তিস্তাপাড়ে এমন আহাজারি করা মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। সেখানকার বাতাস এখন দুর্গত মানুষের হাহাকারে ভারী হচ্ছে। এরই মধ্যে বন্যার হাতছানি তাদের কপালে দুশ্চিন্তার রেখা আরও স্পষ্ট করে তুলছে। সন্তান ও পরিবার নিয়ে তারা উদ্বিগ্নভাবে দিনাতিপাত করছেন।

তবে তিস্তার ভাঙনে শুধু বসতিই হারাচ্ছেন না এর অববাহিকার বাসিন্দারা। আবাদি জমি, গ্রামীণ সড়ক, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা বিলীন হচ্ছে তিস্তার গর্ভে। ভাঙন চলছে ব্রহ্মপুত্র ঘেরা উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নেও। ভাঙন প্রতিরোধে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নিলেও তা বাস্তবে খুব একটা কাজে আসছে না। স্থানীয়দের অভিযোগ, নামমাত্র জিও ব্যাগ ফেলছে পাউবো। নদী তীরে জিও ব্যাগ ফেললেও সেগুলোর ভেতরে পর্যাপ্ত বালু দেওয়া হচ্ছে না। ফলে নিমিষেই নদীরগর্ভে চলে যাচ্ছে সেসব জিও ব্যাগ। এতে সরকারের বরাদ্দ অর্থের অপচয় হচ্ছে, কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

রুদ্র রূপে তিস্তা, উদ্বাস্তু হচ্ছে বহু পরিবার এদিকে ধরলা অববাহিকায় ভাঙনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পানি। বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলার পানি ১৮৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় তা কিছুটা কমলেও স্বস্তিতে নেই এর অববাহিকার বাসিন্দারা। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে শিগগিরই এ নদী বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়বে কয়েক হাজার মানুষ।

পাউবো’র নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ে ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার কমলেও বাড়ছে ব্রহ্মপুত্রের পানি। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার এবং চিলমারী পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।

পাউবো, কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহের শেষের দিকে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। ফলে এই দুই নদ-নদী অববাহিকায় একটি স্বল্পমেয়াদি বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে।

নদীভাঙনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জেলায় ২৫টি পয়েন্টে নদী ভাঙন চলছে। এর মধ্যে দুই-একটি পয়েন্ট বাদে বাকি অংশে ভাঙন প্রতিরোধমূলক কাজ চলছে।’

এদিকে, বন্যার আগাম পূর্বাভাসে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। সম্ভাব্য বন্যা মোকাবিলার বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানিয়েছেন, স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যেন বন্যা মোকাবিলায় বিভিন্ন বিভাগগুলো প্রস্তুত থাকে। বন্যা পরিস্থিতিতে প্রয়োজনে বন্যা কবলিত মানুষদের উদ্ধার করে যেন আশ্রয়কেন্দ্রসহ নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া যায় সে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের পর্যাপ্ত চাল এবং টাকা বরাদ্দ দেওয়া আছে। আশা করি আগামী ১০-১৫ দিন কোনও সমস্যা হবে না।’

/এমএএ/
সম্পর্কিত
তলিয়ে গেছে দুবাই বিমানবন্দর, বিপাকে প্রবাসীরা
৭৫ বছরের মধ্যে রেকর্ড বৃষ্টি দেখলো আমিরাত, মরু শহর দুবাইয়ে বন্যা
কাজাখস্তানে ভয়াবহ বন্যা, প্রায় এক লাখ মানুষ স্থানান্তর
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা