ভারতের কারাবন্দি অ্যাক্টিভিস্ট স্টান সোয়ামী মুম্বাইয়ে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। তার বয়স হয়েছিলো ৮৪ বছর। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর এই খ্রিস্টান যাজককে গত মে মাসে একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে ভারতের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি সোয়ামীকে ২০২০ সালের অক্টোবরে গ্রেফতার করা হয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
২০২০ সালের অক্টোবরে ভারতের বহুল সমালোচিত সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেফতার করা হয় প্রায় ১৫ জন প্রখ্যাত অ্যাক্টিভিস্ক, অ্যাকাডেমিক এবং আইনজীবীকে। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন স্টান সোয়ামী। বরাবরই নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন তিনি। তার দাবি, ঝাড়খন্ড রাজ্যের উপজাতি জনগোষ্ঠীর ভূমির অধিকারের জন্য সংগ্রাম আর বর্ণ প্রথার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কারণেই তাকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে।
স্টান সোয়ামীর জামিন আবেদনের শুনানিতে তার চিকিৎসকেরা জানান রবিবার ভোরে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন তিনি। পরে আর তার জ্ঞান ফেরেনি। গ্রেফতারের সময় থেকেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। তবে মেডিক্যাল গ্রাউন্ডে তার জামিন আবেদন বাতিল করা করা হয়। প্রায় আট মাস তিনি মুম্বাইয়ের তাজোলা কারাগারে কাটিয়েছেন। সেখানে তিনি এতোটাই অসুস্থ হয়ে পড়েন যে নিজে নিজে গোসল বা খাওয়া কোনওটাই করতে পারছিলেন না তিনি।
এমন অবস্থাতেও ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) তার জামিন আবেদনের বিরোধিতা করতে থাকলে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। বেশ কয়েকজন অ্যাক্টিভিস্ট ও মানবাধিকার গ্রুপ অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচকদের লক্ষ্যবস্তু বানাতে এই তদন্ত ব্যবহৃত হচ্ছে।
কৃষক বাবা এবং গৃহবধূ মায়ের সন্তান স্টান সোয়ামী তামিল নাড়ুর বাসিন্দা। ব্যাঙ্গালোরে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নেতাদের প্রশিক্ষণ স্কুল পরিচালনা করেছেন। ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি ঝাড়খন্ড রাজ্যের আদিবাসীদের অধিকারের পক্ষে সংগ্রাম করেছেন।
মাওবাদী হিসেবে অভিযুক্ত হয়ে কারাবন্দি থাকা ৩ হাজার নারী-পুরুষের মুক্তির জন্য হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন স্টান সোয়ামী। অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে দুর্গম আদিবাসী এলাকা পরিদর্শন করেছেন তিনি। তাদের বলেছেন কিভাবে তাদের সম্মতি ছাড়াই খনি, বাঁধ আর শহর নির্মাণ করা হচ্ছে আর কিভাবে তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে।