করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে বার বার স্বাস্থ্যবিধি মানা ও জনসচেতনতার কথা বলা হলেও কোনোভাবেই ঘরে রাখা যাচ্ছে না মানুষকে। জনস্বাস্থ্যবিদ ও কারিগরি কমিটির চিকিৎসকরা বলছেন, মহামারিকালে যেখানে নিজে থেকেই অপ্রয়োজনে বের না হওয়ার কথা, সেখানে সরকারের বিধিনিষেধ অমান্য করে উৎসব আয়োজনও হতে দেখা যাচ্ছে দেদারসে। নাগরিকের নিজের যেন কোনও দায়িত্ব নেই। জুলাই যেমন তেমনভাবে গেলো, এসবের মূল্য আগস্টে দিতে হবে।
ঈদুল আজহা উদযাপন, জনসাধারণের যাতায়াত, ঈদ পূর্ববর্তী ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে গত ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত সব বিধিনিষেধ শিথিল করে সরকার। মানুষ ঢাকা ছেড়ে গেল, আবার ফিরে এলো। ইচ্ছেমত ঘুরলো, মিশলো।
কিন্তু বিধিনিষেধের এ সময়ে সর্বাবস্থায় জনসাধারণকে সতর্কতায় থাকা এবং মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করতে দেওয়া নির্দেশনা ঠিক ভুলে গেলেন।
সারাদেশে কোভিড-১৯’র সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। চলমান অবস্থায় লকডাউন শিথিল করার সরকারি সিদ্ধান্তে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। কোভিড-১৯ মহামারির গত দেড় বছরে এখনই সবচেয়ে বিপর্যয়কর অবস্থা চলছে দেশে। ভাইরাসটির ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণে গত এপ্রিল থেকে রোগীর সংখ্যা বাড়ছিল। মে মাসে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও জুলাই মাসে এসে আগের সব রেকর্ড ভাঙছে।
এরপরেও যাদের জন্য বিধিনিষেধ তারাই নিয়ম ভাঙছেন উল্লেখ করে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ইকবাল আর্সলান বলেন, নানা সময়ে সরকারের জারি করা নানা সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা হয়েছে কিন্তু আমাদের নাগরিকেরা কি তাদের করণীয় যা কিছু সেটুকু করেছে? তিনি বলেন, সরকার নিষেধ করলে বেঁধে রাখলে ঘরে থাকবে, নাহলে সবাই বের হয়ে আসবে এটা কোন যুক্তি হলো?
বার বার জীবন-জীবিকার মধ্যে কোনটা জরুরি সেই প্রশ্ন সামনে আনার বিষয়টি উল্লেখ করে জনস্বাস্থ্যবিদ লেনিন চৌধুরী বলেন, যারা ঈদে নাড়ির টানে বাড়ি গেলেন, যে মধ্যবিত্ত শ্রেণী বিধিনিষেধ শিথিল হলেই রেস্টুরেন্টে খেতে বের হন; তাদেরতো জীবিকার প্রশ্ন না। তাদের বুঝতে না পারার কোনও কারণ নেই যে, নানা পরিস্থিতিতে বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে কিন্তু আসলে করোনা সংক্রমণ কমেনি।