চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ১৩ নম্বর মায়ানী ও ১৬ নম্বর শাহেরখালী ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে শাহেরখালী খাল। দুই ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষের পারাপারে খালের ওপর একটি বাঁশের সাঁকো রয়েছে। এই সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয় তাদের। দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসলেও খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণ করা হয়নি।
দক্ষিণ মঘাদিয়া, মধ্যম মঘাদিয়া, খোনার পাড়া, মোল্লা পাড়া ও পশ্চিম শাহেরখালী গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, আনন্দ বাজার, গজারিয়া বাজার ও আমতলা বাজার থেকে লোকজন সাইকেল নিয়ে ও হেঁটে সাঁকো পার হন। একটু এদিক-সেদিক হলেই যেকোনও সময় খালে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই ভয়ে ভয়ে সাঁকো পার হতে হয়।
তাদের অভিযোগ, নির্বাচন এলে প্রার্থীরা খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু নির্বাচন শেষে তাদের আর কোনও খবর থাকে না।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল খায়ের ও নুরুল গনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে এমপি-চেয়ারম্যানরা এখানে সেতু তৈরির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। কিন্তু আজও একটা সেতু হয়নি। ছেলেমেয়েদের স্কুলে যেতে সমস্যা হয়। হাট-বাজারে যাতায়াতে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বর্ষায় সাঁকো ভেঙে গেলে গ্রামবাসী নিজেদের অর্থায়নে তা আবার মেরামত করে।
জেলে জয়রাম জলদাস বলেন, সাগর থেকে মাছ ধরার পর অনেক কষ্টে সাঁকো পার হয়ে বাজারে মাছ বিক্রি করতে যেতে হয়। যানবাহন না থাকায় অনেক সময় বজারে নেওয়ার আগেই মাছ নষ্ট হয়ে যায়।
শাহেরখালী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মোশাররফ হোসেন বলেন, কোনও এক অদৃশ্য কারণে মাটি পরীক্ষা করার পর আর অগ্রগতি নেই। বয়স্ক মানুষ ও রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাতায়াত করতে খুব সমস্যা হয়।
পশ্চিম মায়ানী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু ছালেক বলেন, আমাদের স্কুলের প্রচুর শিক্ষার্থী ওই সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করে। দীর্ঘদিন ধরে খালের ওপর একটা সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে এলাকাবাসী। কিন্তু সেতু নির্মাণে কোনও উদ্যোগ নেই।
শফিউল আলম আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মো. শাহজাহান বলেন, একটি সেতুর জন্য পাঁচটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। স্কুলের শিক্ষার্থীরাও ঝঁকি নিয়ে যাতায়াত করে। সেতুটি হলে দুই পাশের গ্রামে শিক্ষার হার বাড়বে।
মিরসরাইয়ের মায়ানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির আহম্মদ নিজামী বলেন, দুই বছর আগে এখানে সেতু নির্মাণের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন হয়ে তা টেন্ডার প্রক্রিয়ায় গিয়েছিলো। পরে আর্থিক সংকট দেখিয়ে তা বাতিল করা হয়।
মিরসরাই উপজেলা প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান বলেন, এতদিন খালের একদিকে রাস্তা না থাকায় সেতু নির্মাণ করা যায়নি। বর্তমানে সেখানে রাস্তা করা হয়েছে। ৩৭ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু অনুমোদনের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।