X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
পীর সিন্ডিকেটের অর্ধশত মামলায় হয়রানি

‘বিনা অপরাধে জেল খেটেছি, স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই’

বাহাউদ্দিন ইমরান
১১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৫:০০আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৫:০০

ঢাকার শান্তিবাগ এলাকার বাসিন্দা একরামুল আহসান কাঞ্চন (৬২)। নিজের পৈত্রিক সম্পত্তি হস্তান্তর ও মুরিদত্ব গ্রহণ না করায় দেশের বিভিন্ন  জেলায় তার বিরুদ্ধে ৪৯টি মামলা করেছে রাজারবাগ দরবার শরীফের পীর সিন্ডিকেট। মূলত হয়রানির উদ্দেশ্যে এবং সম্পত্তি হস্তান্তরে বাধ্য করতে এসব মামলা করা হয়েছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডি। ওই প্রতিবেদনের পর অনেকটা স্বস্তি ফিরে পেলেও জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছেন ভুক্তভোগী কাঞ্চন। সম্প্রতি বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি তুলে ধরেছেন নিজের দুরাবস্থার কথা-

বাংলা ট্রিবিউন: হয়রানির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন জেলায় নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, মানবপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৪৯টি মামলা আপনাকে কী কী প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়েছে?

আহসান কাঞ্চন: সামাজিকভাবে তো অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। মানুষ জেনেছে আমি চুরির মামলা খেয়েছি, চুয়াডাঙ্গায় ডাকাতির মামলা খেয়েছি, কাফরুল থানায় চাঁদাবাজির ঘটনায় অস্ত্র মামলায় হয়েছে। এসব শুনে সবাই অবাক হয়েছেন। তখন অনেক আত্মীয়-স্বজন দূরে সরে গিয়েছেন। তবে যখন বিভিন্ন মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে শুরু করি তখন আমার সম্পর্কে অনেকের ধারণার পরিবর্তন হতে শুরু করে। এ ছাড়া আর্থিকভাবেও বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।

বাংলা ট্রিবিউন: আর্থিকভাবে কতটা ক্ষতি হয়েছে?

আহসান কাঞ্চন: আমার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় মামলা হয়েছে। এসব মামলায় সেসব জেলায় যাওয়া, আইনজীবী নিয়োগসহ যাবতীয় খরচ হিসেবে বিগত পাঁচ বছরে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কখনও একটি মামলায় কিছুদিন জেলে থেকে জামিন পেয়েছি অমনি অন্য জেলায় আরেকটি মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে জেলে যেতে হয়েছে।

বাংলা ট্রিবিউন: হাইকোর্টে রিট দায়েরের পূর্বে কতটি মামলায় আপনাকে মুখোমুখি হতে হয়েছে?

আহসান কাঞ্চন: আমাকে ততদিনে প্রায় ৪৭টি মামলার মুখোমুখি হতে হয়েছে।

বাংলা ট্রিবিউন: এমন দুর্দিনে সবচেয়ে কার সহযোগিতা আপনি বেশি পেয়েছেন?

বাংলা ট্রিবিউন: আমার সহধর্মীনি তামান্না আকরাম আমাকে সাহস জুগিয়েছে। তবে তাকেও শেষ রক্ষা করেনি। ২০১৯ সালে তাকেও একটি মামলায় আসামি করা হয়েছে। আমার স্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে সাক্ষাৎকার দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে ১ হাজার কোটি টাকার মানহানির মামলায় করা হয়।

বাংলা ট্রিবিউন: হাইকোর্টে আসা সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদন বলছে- আপনার বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো ছিল ‘হয়রানিমূলক’। এ প্রতিবেদন পাওয়ার পর আপনার অভিব্যক্তি কী?

আহসান কাঞ্চন: ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর আমার মনে হয়েছে হাইকোর্টের নির্দেশনায় আমি আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবো। তবে এখনও আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তারা প্রতিনিয়ত আমি ও আমার সন্তানদের জীবননাশের হুমকি দিয়ে চলেছে। পরিচিতজন বা চিঠির মাধ্যমে তারা হুমকি দিয়ে আসছে। চাঁদপুরের একটি মামলা থেকে যখন বের হই তখনই তাদের লোকজন আমাকে আমার শান্তিবাগের বাসা ও ফতুল্লার আনোয়ার ডাইং প্রিন্টিং তাদের দরবারের নামে লিখে দিতে চাপ দেয়। এছাড়াও শেওড়াপাড়ার বাড়িটিও লিখে দিতে চাপ দেয়। কিন্তু তাতেও আমি রাজি হইনি। ২০১৬ সালেও তারা আমাদের ফতুল্লার ২০ শতাংশ একটি জমি হাতিয়ে নিয়েছে। যা আমার পৈত্রিক সম্পত্তি ছিল।

ফাইলপত্র নিয়ে আদালতে চক্কর কাটতে হয় একরামুল আহসান কাঞ্চনকে

বাংলা ট্রিবিউন: আপনি এত সম্পদের মালিক হলেন কীভাবে?

ভু্ক্তভোগী: অধিকাংশ সম্পত্তি আমি পৈত্রিক সূত্রে মালিকানা পেয়েছি। আর শেওড়াপাড়ায় একটি জমি নিজে কিনেছিলাম। সেখানে কোনোরকমে একটি বাড়ি করেছি আর বাকি সম্পদ সব তারা দখল করেছে। আমি বেশ কিছুদিন জাপানে ছিলাম, ১৯৯৫ সালে দেশে ফিরে আসি। আমার একটি ফ্যাক্টরি আছে। সেটি ভাড়া দিতে পারি না। এটিও তারা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। ফতুল্লায় আনোয়ার ডাইং প্রিন্টিং নামে একটি ওয়াশিং প্লান্ট ছিল। সেখানে দরবার শরীফের পাশে মোহাম্মাদীয় জামিয়াহ শরীফ মাদরাসা আছে। ওই মাদরাসার সভাপতি শাকেরুল কবির। ওই মাদরাসার নামে যত মামলা আছে সবগুলো দায়ের করেছেন শাকেরুল কবির।

বাংলা ট্রিবিউন: বারবার আপনার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পেছনে কি পরিবার বা পরিচিত কারও যোগসূত্র রয়েছে বলে আপনি মনে করেন?

আহসান কাঞ্চন: আমার মা খুব সাধারণ মানুষ ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর আমার মা, বড় ভাই ও বোনকে দরবার শরীফের কিছু লোক আকৃষ্ট করে নিয়ে যান। এরপর দরবারের পীর দিল্লুর রহমান ও তার স্ত্রী ওয়াজিফাতুল্লাহ মিলে আমার মা, ভাই, বোনকে আখেরাত পাওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন ফতোয়া দিয়ে নিয়ে যান। একসময় ২০০৯ সালে পীর দিল্লুর তার বড় মেয়ের বিয়ের জন্য আমার মায়ের কাছ দেড় কেজি ওজনের স্বর্ণের মুকুট হাতিয়ে নেয়। পরে আমরা জানতে পেরে মাকে বুঝাতে চেষ্টা করলে পীর দিল্লুর ও তার স্ত্রী আমার মা, ভাই, বোনকে দরবারে নিয়ে যায় এবং প্রায় ৩০০ শতাংশ সম্পত্তি পৈত্রিক সম্পত্তি দরবার শরীফের নামে হেবা করে আর কিছু বিক্রি করে টাকা নিয়ে যায়। এরপর বাকি সম্পত্তি নিতে তারা আমি ও আমার ছোট ভাইকে চাপ দিতে থাকে। যার কারণে পীর সিন্ডিকেট আমার ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে ১১টি জেলায় ২২টি মামলা এবং আমার বিরুদ্ধে ১৩ জেলায় ৪৯টি মামলা করে। এসব মামলায় আমাকে প্রায় ২ হাজার ৭০০ দিন জেলে থাকতে হয়েছে।    

বাংলা ট্রিবিউন: হাইকোর্টের মামলাটি স্থগিত অবস্থায় রয়েছে। মামলাটি পুনরায় শুনানিতে উঠলে নতুন করে আদালতের কাছে আপনার কোনও আবেদন থাকবে কিনা?

আহসান কাঞ্চন: আমি এসব হয়রানিমূলক মামলা থেকে আদালতের কাছে মুক্তি চাইবো। আমার জীবনের নিরাপত্তা চাইবো। আর বিনা অপরাধে যে দীর্ঘদিন জেল খেটেছি এজন্য আদালতের কাছে ক্ষতিপূরণ প্রার্থনা করবো।

আরও পড়ুন:
রাজারবাগ দরবার শরিফে পীরের ‘মামলা সিন্ডিকেট’

/ইউএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা