X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১
৩ দিনব্যাপী বৈঠক অনুষ্ঠিত

নেতাদের ‘চিন্তা বিনিময়’ থেকে কতটা ‘শিক্ষা’ নেবে বিএনপি?

সালমান তারেক শাকিল
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২৩:৫৯আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

প্রথম দুই বৈঠকে সিনিয়ররা ‘কৌশল নির্ধারণে ভুল’ থাকার ক্ষোভ প্রকাশের পর ‘নেতৃত্বে জনসম্পৃক্তদের যুক্ত করার’ পরামর্শ দেন বিএনপির মধ্যম সারির নেতারা। আর বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) তৃতীয় বৈঠকে এসে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা জানালেন—দলের জন্য নিজেরা কতটা সক্রিয় রয়েছেন। আর আগামী দিনেও তারা প্রস্তুত রয়েছেন যেকোনও দায়িত্বপালনের জন্য। শীর্ষ নেতারা বলছেন, দলের বিভিন্ন সারির নেতাদের সঙ্গে ‘চিন্তা বিনিময়ের’ ফলে বিএনপিতে নতুন উদ্যোম সৃষ্টি হয়েছে। যা আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলকে সুসংগঠিত করতে শক্তি জোগাবে, উপকৃত হবে বিএনপি।

বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার মতবিনিময়ের তৃতীয় দিনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির কয়েকজন নেতা নেতাকর্মীদের ‘শিক্ষা অর্জনের’ জন্য পরামর্শ দিয়েছেন।

বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এখান থেকে শিক্ষা অর্জন করতে হবে। দলের ভেতরে ও বাইরে ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে। ঐক্য লাগবেই। শেখ হাসিনার সরকার হঠাতে না পারলে দেশে গণতন্ত্র আসবে না। নিজেদের ঐক্য, দলের ঐক্য লাগবে’। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বক্তব্য রাখেন।

বৈঠক থেকে বেরোনোর পর কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। বৈঠকে তারা কী বলেছেন, এ নিয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছা পোষণ করেন তারা। প্রত্যেকেই জানান, বৈঠকে দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে গণমাধ্যমে কথা বলতে না করে দেওয়া হয়েছে। পরপর ছাত্রদল, যুবদল, মহিলা দলের ডজনখানেক নেতাকে প্রশ্ন করলে তারা কোনও বক্তব্য প্রদানে অস্বীকৃতি জানান।

মঞ্চে শীর্ষনেতাদের

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার বক্তব্যে আমি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, আন্দোলনের জন্য করণীয়, জোট সম্পর্কে মতামত দিয়েছি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয় কিন্তু নেতৃত্ব দেয় অন্যরা। বলেছি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে।’

আরেক নেতা জানান, বৈঠকে তিনি তার সংগঠনের কতগুলো কমিটি রয়েছে, কতগুলোর কাজ বাকি রয়েছে সেসবের হিসাব দিয়েছেন বৈঠকে। বিকাল সোয়া চারটা থেকে শুরু হয়ে রাত সাড়ে আটটার দিকে শেষ হওয়া বৈঠকে শ্রমিক দলের এক নেতা বলেন, ২০১৪ সালে নেতৃত্বে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বিএনপির সকল কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছি। আমরা মে দিবসসহ শ্রমজীবী মানুষের সকল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে থাকি। শ্রমিকদের বিরুদ্ধে সরকারের গৃহীত সকল পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সক্রিয়।’ এসময় তিনি খুলনার পাটকল ও নারায়ণগঞ্জের সেজান জুস কারখানার অগ্নিকাণ্ডে শ্রমিক নিহতের বিষয়টিও উল্লেখ করেন।

বৈঠকে অংশ নেওয়া প্রায় প্রত্যেকের বক্তব্যেই বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি উঠে আসে। তবে, এক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কে তারা কোনও মতামত জানাতে পারেননি। দায়িত্বশীল একজন জানান, আজকের বৈঠকে মূলত অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা কে কী করেছেন, সে বিষয়টিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। তারা আগামী দিনে কমিটিতে পদ নিশ্চিতের জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। নেতাদের কেউ-কেউ প্রয়োজনে ‘রক্ত’ দেওয়ার কথা বললেও শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে তা নিরুৎসাহিত করে ‘কমিটমেন্ট নিয়ে কাজ’ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

গুলশানে চেয়ারপারসনের অফিস চত্বরে বিএনপির তিনদিন ব্যাপী বৈঠক নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের দুই যুগ্ম আহ্বায়কের সঙ্গে কথা হয় বাংলা ট্রিবিউনের। শাজাহান শাওন বলেন, ‘আগামী নির্বাচনের আগে দাবি আদায়ের জন্য কৌশল নির্ধারণে এই বৈঠক খুব প্রয়োজনীয়। দলের কর্মকাণ্ড এতে গতিশীল হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য সরকারকে দাবি মানাতে মাঠে কর্মসূচি দিতে হবে। তবে প্রোগ্রাম দিয়ে ঘরে বসে থাকলে চলবে না। ছাত্রদল, যুবদল প্রস্তুত আছে, সবাই একসঙ্গে রাজপথে নামতে পারলে দাবি আদায় সম্ভব।’ আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক রিয়াদ রহমান মনে করেন, মানুষ চায় বিএনপি রাজপথে নামুক। তাহলে তারাও বিএনপির সঙ্গে যুক্ত হবে।

বৈঠক থেকে কী মতামত পেয়েছেন—বৃহস্পতিবার রাত পৌনে নয়টার দিকে যখন মির্জা ফখরুল বেরিয়ে যাচ্ছিলেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তার জবাব ছিল, ‘এটা সময়মতো জানতে পারবেন। আমরাই আমাদের প্রয়োজনেই তখন আপনাদের জানাব।’

গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা ও দায়িত্বশীল বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, আজকের বৈঠক মূলত অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর ‘রিভিউ’ করা হয়েছে। এতে নেতারা পরস্পরের সঙ্গে ‘ইন্টারেকশন’ করেছেন। নেতাদের এই চিন্তার বিনিময়ের মধ্য দিয়ে বিদ্যমান ‘গ্যাপ’ দূর হবে বলেও মনে করেন তারা।

গুলশানের অফিস থেকে বেরোনোর সময় জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সাংগঠনিক তৎপরতার অংশ হিসেবে তিনদিনের বৈঠক হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। একেবারে কেন্দ্রীয় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কথা বলেছেন। এই বৈঠক থেকে বিএনপি উপকৃত হয়েছে।

প্রসঙ্গত, আগামী শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির নিয়মিত বৈঠক রয়েছে। তিনদিনের এই বৈঠকের পর্যালোচনা ও আরও কয়েকটি বৈঠকের বিষয়ে সেদিন সিদ্ধান্ত হতে পারে। আর সেসব জানাতে সংবাদ সম্মেলনে আসতে পারেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

/এমআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দিলেন এক ব্যক্তি
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দিলেন এক ব্যক্তি
দুই জনপ্রতিনিধির নাম বলে সাভারে সাংবাদিকের ওপর কেমিক্যাল নিক্ষেপ
দুই জনপ্রতিনিধির নাম বলে সাভারে সাংবাদিকের ওপর কেমিক্যাল নিক্ষেপ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
গরমে পুড়ছে খুলনা বিভাগ
গরমে পুড়ছে খুলনা বিভাগ
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি