X
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫
১৭ আষাঢ় ১৪৩২

ভয়ঙ্কর জুলাই-আগস্ট পেরিয়ে স্বস্তির সেপ্টেম্বর

জাকিয়া আহমেদ
০৩ অক্টোবর ২০২১, ০০:০৩আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০২১, ০০:০৩

ভয়ঙ্কর জুলাই ও আগস্টের পর সেপ্টেম্বরে কমেছে করোনায় শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। অতিসংক্রমণশীল ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের তাণ্ডবের পর করোনা সংক্রমণের গতি এখন নিম্নমুখী। কমেছে নতুন শনাক্ত, শনাক্তের হার ও মৃত্যু। স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত জুলাই মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান ছয় হাজার ১৮২ জন। আর আগস্টে করোনায় মারা গেছেন পাঁচ হাজার ৫১০ জন। বিপরীতে কিছুটা স্বস্তি মিলেছে সদ্যবিদায়ী সেপ্টেম্বর মাসে। সেপ্টেম্বরে করোনায় মারা গেছেন এক হাজার ৩১৫ জন। আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে মৃত্যু কমেছে ৭৬ দশমিক ১৩ শতাংশ আর শনাক্তের হার কমেছে ৭৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ। অর্থাৎ আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বর মাসে শনাক্ত ও মৃত্যুর হার কমে আসে প্রায় ৮০ শতাংশে।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনার সংক্রমণ দেখা দেয়। ২০২০ সালের ৮ মার্চে দেশে প্রথম তিনজন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। তার ঠিক ১০ দিন পর প্রথম রোগীর মৃত্যুর কথা জানানো হয়। এরপর থেকে সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী- নিম্নমুখী হলেও বছরের শেষদিকে শীতে করোনার প্রকোপ বাড়বে—এমন ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। চলতি বছরের শুরুতেও নিম্নমুখী করোনার চরিত্র বদলাতে থাকে চলতি বছরের মে মাসে। জুলাই-আগস্টে দেখা দেয় ভয়ঙ্কর রূপে।

শনিবার (২ অক্টোবর) স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাতে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৫৮৯ জন। আর এর মাধ্যমে সাড়ে ৪ মাস পর করোনাতে দৈনিক শনাক্ত ৬০০ এর নিচে নেমে এসেছে। এর আগে গত ১৬ মে একদিনে ৩৬৩ জন আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। এরপর থেকে প্রতিদিনই ছয় শতাধিক মানুষের মধ্যে কোভিড-১৯ ধরা পড়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা রোগী শনাক্তের হার ৩ দশমিক ৪১ শতাংশ। ১ অক্টোবর সকাল ৮টা থেকে ২ অক্টোবর সকাল ৮টা পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া ৫৮৯ জনকে নিয়ে দেশে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫ লাখ ৫৭ হাজার ৩৪৭ জন। মোট শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

কঠিন হতে শুরু করে জুনে

গত বছরের ঊর্ধ্বমুখী-নিম্নমুখী ধারাবাহিকতার মধ্যে শীতের সময়ে করোনার প্রকোপ বাড়বে—এমন ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। চলতি বছরের শুরুতেও নিম্নমুখী করোনার চরিত্র বদলাতে থাকে চলতি বছরের মে মাসে। জুন মাসের চিত্র বলে দেয় কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে করোনা পরিস্থিতি। জুনে শনাক্ত হয় ১ লাখ ১২ হাজার ৭১৮ জন। যেখানে মে মাসে শনাক্ত ছিল ৪১ হাজার ৪০৮ জন। জুনে করোনায় মারা যান সংখ্যা ১ হাজার ৮৮৪ জন।

ভয়ঙ্কর জুলাই

অতিসংক্রমণশীল ডেল্টার প্রকোপে গত ছয় জুলাই দেশে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা প্রথম ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এরপর ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের তাণ্ডবে পুরো জুলাই মাস ছিল টালমাটাল। যদিও তার আগের মাস জুন থেকে দৈনিক শনাক্তের হার উঠে যায় ২০ শতাংশের উপরে। তবে জুলাইতে প্রায় প্রতিদিনই শনাক্ত ও মৃত্যুতে তার আগের দিনের রেকর্ড ভাঙতে থাকে।  এরিমধ্যে গত ২৮ জুলাই দেশে করোনাকালে একদিনে সর্বোচ্চ গত রোগী শনাক্ত হয় ১৬ হাজার ২৩০ জন। শনাক্তের হার উঠে যায় ৩২ শতাংশের ওপরে। গত ২৪ জুলাই একদিনে রোগী শনাক্তের হার ছিল ৩২ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

জুলাইয়ে সর্বোচ্চ মারা যান ৬ হাজার ১৮২ জন। শনাক্ত হন ৩ লাখ ৩৬ হাজার ২২৬ জন। দেশের মহামারিকালে সর্বোচ্চ মৃত্যু ও শনাক্ত ওই মাসেই।

ভয়াল আগস্ট

জুলাই শেষ হবার পর তার রেশ চলতে থাকে আগস্ট মাসেও।

গত ১২ আগস্ট পর্যন্ত ৩৮ দিনের মধ্যে ৩০ দিনই শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি ছিল। আর করোনাকালে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয় আগস্ট মাসের দুইদিন। গত ৫ এবং ১০ আগস্ট একদিনে সর্বোচ্চ ২৬৪ জনের মৃত্যুর কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর।

আগস্টে করোনায় মারা যান পাঁচ হাজার ৫১০ জন। আর শনাক্ত হন ২ লাখ ৫১ হাজার ১৩৪ জন।

স্বস্তি মেলে সেপ্টেম্বরে

গত সেপ্টেম্বর মাসে সংক্রমণের হার কমে এসেছে পাঁচ এর নিচে। গত ২১ সেপ্টেম্বর সাড়ে পাঁচ মাস পর দৈনিক সংক্রমণের হার পাঁচ শতাংশের নিচে নেমে আসে। আর চার শতাংশের নিচে নামে গত বৃহস্পতিবার ( ৩০ সেপ্টেম্বর)। এরপর সেটা গত তিনদিন ধরে টানা শনাক্তের হার রয়েছে চার শতাংশের নিচে।

সেপ্টেম্বরে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫৫ হাজার ২৯৩ জন। মারা গেছেন ১ হাজার ৩১৫।

জন। আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে মৃত্যু কমেছে ৭৬ দশমিক ১৩ শতাংশ আর শনাক্তের হার কমেছে ৭৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ, প্রায় ৭৮ শতাংশ। অর্থাৎ আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বর মাসে শনাক্ত ও মৃত্যুর হার কমে আসে প্রায় ৮০ শতাংশে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কোনও দেশে যদি টানা দুই সপ্তাহ দৈনিক শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশের নিচে থাকে তাহলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বলে ধরা হবে।

ডেল্টার তাণ্ডবের পর গত ২৩ সেপ্টেম্বর দেশে প্রথমবারের মতো তিন বিভাগে করোনাতে আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু হয়নি বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। সেদিন ২৪ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়ে অধিদফতর জানিয়েছিল দেশের আট বিভাগের মধ্যে রাজশাহী, বরিশাল এবং ময়মনসিংহ বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় কারও মৃত্যু হয়নি। এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই কোনও না কোনও বিভাগ করোনাতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুহীন থাকছে। তিন বিভাগ থেকে মৃত্যুহীন বিভাগের তালিকা বেড়ে চার সংখ্যায় উন্নীত হয়ে গত ২৯ সেপ্টেম্বর। সেদিন ১৭ জনের মৃত্যুর কথা জানায় অধিদফতর। সেদিনই প্রথম চার মাস পর করোনাতে মৃত্যু ২০ এর নিচে নেমে আসে। সেই সঙ্গে বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ-এ চার বিভাগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু হয়নি।

এভাবে প্রতিদিনই এক বা একাধিক বিভাগে এখন করোনাতে মৃত্যুহীন দিন দেখা যাচ্ছে।

তবুও কাটছে না আশঙ্কা

এখন তো পুরো বিশ্বজুড়েই একটা স্বস্তির মধ্যেই আছি, কিন্তু সংক্রমণটা বেড়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে জানিয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ( আইইডিসিআর) এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বাংলাদেশ টিকা যথেষ্ট পরিমাণ দিতে পারেনি এখনও, সারাবিশ্বেও না, আমাদের আশেপাশের দেশও নয়। ফলে যতদ্রুত টিকা নেওয়া সম্ভব হবে, সংক্রমণ বাড়লেও মৃত্যুর সংখ্যার মাত্রা কম হবে। কিন্তু আশঙ্কা রয়েছে। বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ বাড়ছে।

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ব্রিটেনে সংক্রমণ বাড়লেও মৃত্যু বাড়েনি। কারণ সেখানে বয়োজ্যেষ্ঠদের শতকরা ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিয়ে ফেলেছে।

 ‘দেশের ভেতরে সংক্রমণ একেবারে শূন্য হয়ে যায়নি’ মন্তব্য করে এই মহামারী উপদেষ্টা বলেন, সারাবিশ্বে সংক্রমণ রয়েছে, তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। কিন্তু টিকা যদি যথেষ্ট পরিমাণে না পাই তাহলে উচ্চমৃত্যুহার কমাতে পারবো না। তাই টিকাই এখন সবচেয়ে বড় দরকার এবং অবশ্যই সংক্রমণ কমাতে গেলে শনাক্ত রোগীর ব্যবস্থাপনা. স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, ভিড় হয় এমন জায়গা নিয়ন্ত্রণ করার মতো বিষয়গুলো চালিয়ে যেতে হবে।

‘সংক্রমণ একটা ঢেউয়ের মতো-ঢেউ কমে গিয়ে আবারও বাড়তে পারে। তাই এই মুহূর্তে স্বস্তিতে থাকলেও মনে রাখতে হবে, ঢেউ বাড়তে পারে।’

‘আবার কোনও দেশ যদি যথেষ্ট পরিমাণে টিকা না পায় সেখানে নতুন ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হবে, সেই ভ্যারিয়েন্ট আবার সারাবিশ্বে তাণ্ডব চালাবে। তাই বিশ্বের সবদেশে সমানুপাতিক হারে টিকার ব্যবস্থাপনা করতে হবে। যেটা কিনা কোভ্যাক্সের স্ট্রাটেজি। কিন্তু সেখানে সফলতা এখনও আসছে। তাই সবদেশের সমান টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে’—বলেন ডা. মুশতাক হোসেন।

/এমআর/
সম্পর্কিত
করোনা পরীক্ষায় ভুয়া প্রতিবেদন, চট্টগ্রামে চিকিৎসকসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
আরও ২১ জনের করোনা শনাক্ত
চট্টগ্রামে আরও ১০ জন করোনায় আক্রান্ত
সর্বশেষ খবর
যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেই গাজার একাধিক স্থানে ইসরায়েলি হামলা, নিহত ৯৫
যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেই গাজার একাধিক স্থানে ইসরায়েলি হামলা, নিহত ৯৫
ফেনীতে অস্ত্রসহ ছাত্রদলের সাবেক দুই নেতা আটক
ফেনীতে অস্ত্রসহ ছাত্রদলের সাবেক দুই নেতা আটক
ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই জ্বালানি রূপান্তর জরুরি
ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই জ্বালানি রূপান্তর জরুরি
ফিরে দেখা: ১ জুলাই ২০২৪
ফিরে দেখা: ১ জুলাই ২০২৪
সর্বাধিক পঠিত
তিন বিমানবন্দরে ১৬ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে
তিন বিমানবন্দরে ১৬ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
রূপপুর প্রকল্পের ১৮ প্রকৌশলী অপসারণ: হাইকোর্টের রুল
রূপপুর প্রকল্পের ১৮ প্রকৌশলী অপসারণ: হাইকোর্টের রুল
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি স্ট্যাটাস উপদেষ্টা আসিফ ও সাংবাদিক জুলকারনাইনের
ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি স্ট্যাটাস উপদেষ্টা আসিফ ও সাংবাদিক জুলকারনাইনের