X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফিল্ডিং ব্যর্থতার দায় রায়ান কুক নাকি ক্রিকেটারদের?

রবিউল ইসলাম
৩০ অক্টোবর ২০২১, ২২:০৪আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২১, ২২:৫৪

বড় মঞ্চে খেলতে গেলেই যেন খেই হারিয়ে ফেলেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাজে ফলের পেছনে বোলিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ডারদের ব্যর্থতা ছিল স্পষ্ট। দুই বছর পর কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপে সেই একই চিত্র। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ক্যাচ মিসে ম্যাচ হাতছাড়া হওয়ায় বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন শেষ হয়ে গেছে। সুপার টুয়েলভে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বড় স্কোর করেও দুটি ক্যাচ ফেলার কারণে হেরে মাঠ ছাড়তে হয়েছে টাইগারদের। টানা ক্যাচ মিসের মহড়ায় ক্রিকেটারদের দায়বদ্ধতার পাশাপাশি ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুকের দায়িত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

গত ছয় ম্যাচে ১২টি ক্যাচ মিস করেছেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। তাদের গ্রাউন্ড ফিল্ডিং বলা চলে ছন্নছাড়া। দলের সেরা ফিল্ডাররাও সহজ ক্যাচ ফেলেছেন। টাইগারদের শরীরী ভাষাতেই যেন ফুটে উঠছে আত্মসমর্পণের ছবি। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর চোখেমুখে লড়াইয়ের ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি। হারের আগে হেরে যাওয়ার মানসিকতার কারণে উজ্জীবিত হতে পারছে না দল। সুপার টুয়েলভে টানা হারে অধিনায়কত্ব, ব্যাটিং, ফিল্ডিং, কোচিংসহ সবকিছুকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। তবে ফিল্ডিং নিয়েই সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছে।

বিশ্লেষণ বলছে, চলতি বিশ্বকাপে মিস হওয়া ক্যাচগুলো ধরতে পারলে বাংলাদেশের নামের পাশে অন্তত তিনটি জয় থাকতো। কিন্তু ফিল্ডারদের ব্যর্থতায় তা আর হয়নি। ক্যাচ মিস খেলার অংশ ধরে নিয়ে পরের পরিস্থিতি ভালোভাবে সামলে নেওয়ার মানসিকতা ফিল্ডারদের মধ্যে চোখে পড়েনি। তাদের এমন ব্যর্থতার পর ফিল্ডিং কোচকে নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয় মোটেই।

বিশ্বের অন্যতম সেরা ফিল্ডার জন্টি রোডস। ফিল্ডিং নিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘ফিল্ডিং উপভোগ করলে কাজটা সহজ হয়ে যায়, আর উপভোগ না করলে কাজটা ভীষণ কঠিন।’

টাইগারদের অনুশীলনে রায়ান কুক

বাংলাদেশ কাজটা উপভোগ করতে পারছে না বলেই বাজে ফিল্ডিং হচ্ছে- এমনটাই মনে করেন বিসিবির সাবেক গেম ডেভেলপমেন্টের ম্যানেজার নাজমুল আবেদিন ফাহিম। বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের দলের যে মানসিক অবস্থা তাতে করে ক্রিকেটারদের মধ্যে এনার্জির বেশ অভাব। আমাদের মতো একটা দল এনার্জির ওপর খুব বেশি নির্ভর করে। মানসিক স্বস্তিতে থাকলে বাংলাদেশ দলের ফিল্ডাররা সেরাটা দিতে পারে। কিন্তু বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল মানসিকভাবে অস্বস্তিতে থাকায় কোনও কিছুই উপভোগ করতে পারছে না। ফিল্ডিং যদি উপভোগ না করতে পারে ক্রিকেটাররা তাহলে ভালো ফল পাওয়া সম্ভব নয়।’

চারদিকের সমালোচনার কারণে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে অস্বস্তি দেখা গেছে। যার প্রভাব পড়ছে মাঠে। এ কারণে ফিল্ডিং হচ্ছে এলোমেলো। এ প্রসঙ্গে নাজমুল আবেদিন ফাহিমের মন্তব্য, ‘গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জে যাওয়া জরুরি, দ্রুত মুভমেন্ট করতে হয়। আউট অব দ্য বক্স কিছু চিন্তা করতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এই টুর্নামেন্টে এসব জিনিস আমরা দেখতে পারছি না। এসব হচ্ছে শুধু মানসিক অবসাদের কারণে। বাইরের সমালোচনা, ব্যর্থতা, ফর্মহীনতা মিলে ক্রিকেটাররা মানসিকভাবে স্বস্তিতে নেই।’

বাংলাদেশের প্রথম টেস্টের কোচ সারোয়ার ইমরান প্রস্তুতির ঘাটতি দেখছেন। বিশেষ করে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি সিরিজ বাংলাদেশকে পিছিয়ে দিয়েছে বলে মনে করেন তিনি। বাংলা ট্রিবিউনের এক প্রশ্নের জবাবে তার অভিমত, ‘অনেকেই হয়তো কমিটমেন্টের কথা বলছে, কিন্তু আমার কাছে মনে হয় প্রস্তুতির যথেষ্ট ঘাটতি ছিল। কোনও ম্যাচেই শরীরী ভাষা ইতিবাচক ছিল না। আমরা ওমানের বিপক্ষেও ইতিবাচক ইনটেন্ট দেখাতে পারিনি। এমন শরীরী ভাষার কারণে ফিল্ডিং খারাপ হওয়াটা স্বাভাবিক। ঘরের মাঠে দুটি সিরিজে ফেক আত্মবিশ্বাসের কারণেই মূলত বাংলাদেশ দলের ব্যর্থতা। এখানে হোম কন্ডিশন কাজে লাগিয়ে জিতলেও আদতে এই জয় বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে কোনও কাজেই লাগেনি। দলের বোলার-ব্যাটার-ফিল্ডার কাউকেই বাড়তি কষ্ট করতে হয়নি। ফলে অসম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েই আমরা বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে বিপদে পড়েছি।’

অনুশীলনে রায়ান কুক

২০১৮ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশ দলের ফিল্ডিং কোচের দায়িত্ব নেন রায়ান কুক। গত তিন বছরে দুই দফা কোচিং স্টাফ পরিবর্তন হলেও তিনি টিকে আছেন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের বাজে ফিল্ডিংয়ে সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাসহ অনেকেই দায় দেখছেন রায়ান কুকের। মাশরাফির মতে, ‘এখন আপনি ১২ লাখ টাকা দিয়ে ফিল্ডিং কোচ রেখে যদি একটা টি-টোয়েন্টি ম্যাচে পাঁচটি ক্যাচ ড্রপ হয়; আমি আগে খেলোয়াড়ের দোষ কেন দেবো, বলেন তো? বিদেশি ফিল্ডিং কোচকে এত টাকা দিয়ে না রেখে বাংলাদেশের একজন কোচ রেখে দিলে একই কাজ হবে। তার পেছনে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে তো একই ফল পাবো, তাহলে বিদেশি দরকার কী?’

নাজমুল আবেদিন ফাহিম সরাসরি ফিল্ডিং কোচকে দায় না দিয়ে কিছু পরামর্শ তুলে ধরেছেন। তার কথায়, ‘সাধারণত কোনও একটা সিরিজ শুরুর আগে কিংবা টুর্নামেন্ট শুরুর আগে কয়েক সপ্তাহের একটি ক্যাম্প হয়। সেখানেই ফিল্ডারদের নিয়ে কোচ কাজ করেন। কিন্তু ব্যক্তিগত পর্যায়ের কাজও করা প্রয়োজন। প্রত্যেক ফিল্ডার তো আর একরকম নয়। কেউ ভালো, কেউ খারাপ, কেউ মোটামুটি মানের। ফলে আলাদা করে প্রত্যেকের দুর্বলতা নিয়ে কাজ করা দরকার। ফিল্ডিং কোচ এসব কাজ কতখানি করছে, আমি নিশ্চিত নই।’

লিটন দাসের ক্যাচ মিস

ফিল্ডিংয়ে ভালো করতে বয়সভিত্তিক ক্রিকেট ও ঘরোয়া ক্রিকেটে থেকেই ফিল্ডিং নিয়ে বাড়তি কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন বিকেএসপির এই ক্রিকেট উপদেষ্টা, ‘ফিল্ডারদের ব্যর্থতার দায়টা শুধু ফিল্ডিং কোচেরই নয়। দায়টা আসলে আমাদের সবারই। আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিল্ডিং নিয়ে সেভাবে কখনোই কাজ করা হয় না। যতটুকু গুরুত্ব থাকে সব জাতীয় দলকেন্দ্রিক। কিন্তু আগে থেকেই তা করা গেলে এত সমস্যায় পড়তে হতো না।’ 

স্থানীয় কোচ সারোয়ার ইমরান বলেছেন, ‘দোষ দিলে তো ফিল্ডিং কোচের দোষ দেওয়াই যায়। এখন তিনি কতটুকু কাজ করেছেন তা আমার জানা নেই। ব্যর্থতার দায় আসলে নিতে হবে ফিল্ডারদেরই। লিটন দলের অন্যতম সেরা ফিল্ডার, ও (লিটন) যে ধরনের ক্যাচ মিস করেছে, এখানে আসলে কোচের দায় দেওয়ার কিছু নেই। আমি মনে করি টিম ম্যানেজমেন্টর দায়টাই বেশি। টিম ম্যানেজমেন্টকে চেষ্টা করতে হবে যতরকম নেতিবাচক বিষয় আছে সেগুলো থেকে ক্রিকেটারদের দূরে রাখা। এখন প্রচুর সমালোচনা হচ্ছে, এগুলো ক্রিকেটারদের মনে প্রভাব ফেলে। এসব থেকে ক্রিকেটারদের দূরে রাখতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে টিম ম্যানেজমেন্টেকেই।

দলের সঙ্গে থাকা নির্বাচক হাবিবুল বাশার অবশ্য ফিল্ডিং প্রস্তুতির কোনও ঘাটতি দেখছেন না। তিনি মনে করেন, বড় মঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে চাপ নেওয়াটা শিখতে হবে বাংলাদেশের ফিল্ডারদের। ‘আমরা কিন্তু যথেষ্ট ফিল্ডিং অনুশীলন করি। আমার মনে হয়, যখন বড় কোনও আসরে আমরা নামি কিংবা ঘরের মাটিতে খেলি, মনস্তাত্ত্বিক চাপ নিতে পারাটা গুরুত্বপূর্ণ। এই চাপ অনেক সময়ই আমরা নিতে পারি না। যারা ক্যাচ মিস করেছে, তারা কিন্তু দলের অন্যতম সেরা ফিল্ডার। গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের ওই চাপ নিতে পারাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয়, এই বিষয়টা নিয়ে আমাদের বেশি কাজ করা উচিত। অনুশীলনে তারা কিন্তু যথেষ্টই কাজ করছে। ব্যাটিং কিংবা বোলিং অনুশীলন আলাদা হলেও ফিল্ডিং অনুশীলনটা কিন্তু সবাইকেই করতে হয়। সুতরাং সেদিকে আমি কোনও ঘাটতি দেখছি না। তবে ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ক্যাচ নেওয়ার চাপ সামলানোর বিষয়টা আমাদের শিখতে হবে।’

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
ফেসবুকে নিজের সমালোচনা দেখে হাসি পায় সাকিবের
জিম্বাবুয়ে সিরিজের প্রস্তুতি ক্যাম্পে ডাক পেলেন সাইফউদ্দিন
সিলেটে পৌঁছেছে ভারতীয় দল
সর্বশেষ খবর
বিক্রির জন্য সবজি কিনে ফেরার পথে দুই ব্যবসায়ী নিহত
বিক্রির জন্য সবজি কিনে ফেরার পথে দুই ব্যবসায়ী নিহত
টিভি ধারাবাহিকে খলনায়িকা রিনা খান
টিভি ধারাবাহিকে খলনায়িকা রিনা খান
রাজধানীতে খেলাফত মজলিসের বিক্ষোভ
রাজধানীতে খেলাফত মজলিসের বিক্ষোভ
প্রচণ্ড গরমে দই-ফলের এই ডেজার্ট বানিয়ে খান
প্রচণ্ড গরমে দই-ফলের এই ডেজার্ট বানিয়ে খান
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি