জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষয়ক্ষতির জন্য সহায়তা দিতে নতুন কোনও ‘রোড ম্যাপ‘ দেয়নি উন্নত দেশগুলো। কার্বণ নিঃসরণ ১ দশমিক ৫ সেলসিয়াস কীভাবে রাখা যাবে— তারও কোনও সুরাহা হয়নি। ক্ষতি কমাতে বাংলাদেশ ১০০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূণসহ ছয়টি দাবি বিশ্বদরবারে তুলে ধরা হয়েছে। তবে সেই দাবি পূরণে এখনও কোনও সুরাহ হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দাবি আদায়ে রাজনৈতিকভাবে দেশগুলোকে আরও চাপ প্রয়োগ করতে হবে।
জলবায়ু সম্মেলনে ১০০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তিতে যে প্রত্যাশা নিয়ে গিয়েছিল তা কতটা অগ্রগতি হলো এ বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ। সোমবার (৮ নভেম্বর) স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোর স্কটিশ ইভেন্ট সেন্টারের বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
তাতে জানানো হয়, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় ১০০ বিলিয়ন আদায়ে বাংলাদেশকে উন্নত দেশগুলো কোনও রোডম্যাপ দেয়নি। ফলে এই অর্থ প্রাপ্তিতে সন্দেহ রয়েছে। এছাড়া কপ২৬ সম্মেলনে ছয়টি প্রস্তাব বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছে বাংলাদেশ।
সংবাদ সম্মেলনে বন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, ১০০ বিলিয়ন আদায়ে কোনও রোড ম্যাপ দেওয়া হয়নি। তবে ছয়টি বিষয় বিশ্বদরবারে তুলে ধরা হয়েছে।
বন পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক সংসদী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, তাপমাত্রা ১ দশসিক ১ সেলসিয়াস বাড়ার কারণে ক্ষতি বেড়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ১ দশমিক ৫ সেলসিয়াল পর্যন্ত রাখার বিষয়ে আর আলোচনার সুযোগ নেই। ২০২৫ সালের পর ১০০ বিলিয়নের সহায়তা আরও বাড়াতে হবে।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ডা. আতিক রহমান বলেন, জলবায়ু মোকাবিলার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়টি আরও বাড়াতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনে দায়ী উন্নত দেশ, অথচ ক্ষতির সম্মুখীন বাংলাদেশসহ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কপ-২৬ সম্মেলনে জলবায়ুর ক্ষতি পূরণসহ বাস্তবসম্মত কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেছে বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ দায়ী না হলেও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মূলত বায়ুমণ্ডলে তাপ কমানোর জন্য বাংলাদেশ এসব পদক্ষেপ নিয়েছে, যা কপ২৬ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগে ১২ বিলিয়ন ডলারের ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বাতিল করেছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি জলবায়ুর ক্ষতি মোকাবিলায় বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণে উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলো কী ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছে তা মোকাবেলায় টানা আট দিন চলেছে দেনদরবার। তারপরও জলবায়ু মোকাবিলায় স্পষ্ট কোনও প্রতিশ্রুতি দেয়নি উন্নত দেশগুলো। ফলে কোনও অগ্রগতি আসছে না। এতে জলবায়ুর বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো হতাশায় রয়েছে।
পরিবেশবিদরা বলছেন, ২৬তম জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আসতে হবে। যাতে বাংলাদেশসহ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো লাভবান হয়। তা না হলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো আরও ক্ষতির মুখে পড়বে।