X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

জাহাঙ্গীরের মেয়র পদ নিয়ে কী হবে?

এমরান হোসেন শেখ
২১ নভেম্বর ২০২১, ০৯:০০আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২১, ১৫:১৬

দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও জাহাঙ্গীর হোসেনের দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীকে নির্বাচিত মেয়র পদ চলে যাওয়ার আশঙ্কা কম। দল থেকে বহিষ্কার হলে পদের ক্ষেত্রে কী হবে তার স্পষ্ট ব্যাখ্যাও নেই। মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত করতে হলে তা স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইনের বিধানেই করতে হবে। এক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনে নৈতিক স্খলনজনিত কারণ বা অসদাচরণের দায়ে তাকে অপসারণের সুযোগ রয়েছে।

তবে, যে অপরাধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে জাহাঙ্গীর দল থেকে বহিষ্কার রয়েছেন সেটা সিটি করপোরেশন আইনে নৈতিক স্খলন বিবেচিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। আইনে নৈতিক স্খলনের বিষয়টি আদালতে প্রমাণ হতে হবে।

অপরদিকে অসদাচরণের বিষয়ে আইনে ব্যাখ্যা রয়েছে। ফলে যে কারণে দল থেকে বরখাস্ত হয়েছেন সেটা মেয়র পদের ক্ষেত্রে অসাধাচরণের মধ্যে না-ও পড়তে পারে। দেশের আইনজ্ঞসহ সরকার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে এসব জানা গেছে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে দলের প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিলসহ আওয়ামী লীগ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। শুক্রবার রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার বিভাগকে চিঠি দেওয়ার কথাও জানান।

জাহাঙ্গীরকে মেয়র পদ থেকে কীভাবে অব্যাহতি দেওয়া যায় সে ব্যাপারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কথা বলবেন বলেও দলের কার্যনির্বাহী বৈঠক সূত্রে জানা যায়।

দল থেকে বহিষ্কার করা হলে নির্বাচিত পদে থাকতে পারবেন কি পারবেন না এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশন বা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আইনে স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিতে ২০১৫ সালে সিটি করপোরেশর আইন সংশোধন করা হয়। তখন শুধু প্রতীক ও প্রার্থিতার বিষয়টি যুক্ত হয়। অপসারণের নিয়মে পরিবর্তন আনা হয়নি।

এমনকি দলীয় প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর দল থেকে বহিষ্কার হলে সংসদ সদস্য পদ থাকবে কী না সেটা নিয়েও অস্পষ্টতা আছে। যে কারণে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদ বাতিলের বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। পরে অবশ্য লতিফ সিদ্দিকী নিজেই পদত্যাগ করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যে কারণে জাহাঙ্গীর দল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন সেটা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত বলা যেতে পারে। বিষয়টির জন্য দল থেকে বহিষ্কার পুরোপুরি যৌক্তিক। তবে, এই কারণে তার মেয়র পদ যাবে কিনা সেটা বলা মুশকিল। দেশের প্রচলিতে আইনে তার নৈতিক স্থলন হওয়ার আশঙ্কা কম।

ওই সময় লতিফ সিদ্দিকীর পক্ষে আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী জ্যোতির্ময় বলেন, দল থেকে বহিষ্কার হলে দলের মনোনয়নে নির্বাচিত পদ চলে যাবে, বিষয়টি সিটি করপোরেশন আইনে নেই। সংসদ সদস্যদের ক্ষেত্রেও স্পষ্ট নয়। যে প্রক্রিয়ায় লতিফ সিদ্দিকীর পদ বাতিলের দিকে সরকার যাচ্ছিল সেটা বাস্তবায়ন হলে আদালতে চ্যাঞ্জেলের সুযোগ ছিল। লতিফ সিদ্দিকী নিজে পদত্যাগ করায় সেটার প্রয়োজন পড়েনি।

নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহম্মদ খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দল থেকে বহিষ্কার হলে মেয়র পদ যাবে কিনা এটা স্থানীয় সরকারের বিষয়। এখানে নির্বাচন কমিশনের কিছু করার নেই। অবশ্য সংসদ সদস্যদের ক্ষেত্রে সংবিধান ও আরপিওতে যেভাবে বিষয়টি আছে, স্থানীয় সরকার আইনে সেটা নেই। ফলে কিছুটা জটিলতা থাকতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রিয়াজুল কবীর কাওছার বলেন, ‘জাতির পিতাকে নিয়ে কটূক্তি করা অপরাধের মধ্যে পড়ে। আওয়ামী লীগ বিষয়টি উল্লেখ করে দলীয় সিদ্ধান্ত জানিয়ে স্থানীয় সরকারকে চিঠি দেবে। মেয়র ও কাউন্সিলরসহ স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ অনেকগুলো কারণে হতে পারে। সেখান থেকে কোনও একটি বিবেচনায় নিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ চাইলে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। জাহাঙ্গীরের জন্য ভালো হয়, যদি তিনি নিজেই পদত্যাগ করেন।’

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। আইনগত দিক আলাপ-আলোচনা করে কাজ করতে হবে।’

মেয়দ পদ থেকে অপসারণ হয় যেসব কারণে

স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইনের ১৩ ধারায় মেয়র ও কাউন্সিলর পদ থেকে অপসারণের কারণগুলো উল্লেখ করা হয়েছে—

(ক) যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া সিটি করপোরেশনের পর পর তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকেন; (খ) নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে আদালতে দণ্ডিত হন; (গ) দায়িত্ব পালন করতে অস্বীকার করেন অথবা শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যের কারণে দায়িত্ব পালনে অক্ষম হন; (ঘ) অসদাচরণ বা ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন;  (ঙ) নির্বাচনের অযোগ্য ছিলেন মর্মে নির্বাচন অনুষ্ঠানের তিন মাসের মধ্যে প্রমাণিত হলে; (চ) বার্ষিক ১২টি মাসিক সভার পরিবর্তে ন্যূনতম ৯টি সভা গ্রহণযোগ্য কারণ ছাড়া অনুষ্ঠান করতে, বা ক্ষেত্রমত, সভায় উপস্থিত থাকতে ব্যর্থ হন।

এখানে অসদাচরণ বলতে ক্ষমতার অপব্যবহার, আইন অনুযায়ী বিধি-নিষেধ পরিপন্থী কার্যকলাপ, দুর্নীতি, অসদুপায়ে ব্যক্তিগত সুবিধা গ্রহণ, পক্ষপাতিত্ব, স্বজনপ্রীতি, ইচ্ছাকৃত অপশাসন, নির্বাচনি ব্যয়ের হিসাব দাখিল না করা বা অসত্য দেওয়াকে বোঝাবে।

আইনে আরও বলা আছে—অপসারণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার আগে বিধি অনুযায়ী তদন্ত ও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থাকবে। সিটি করপোরেশনের কোনও মেয়র বা কাউন্সিলরকে পদ থেকে অপসারণ করা হলে, ওই আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করার বিধান রয়েছে। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অপসারণের আদেশ স্থগিত থাকবে বলে আইনে বলা আছে।

সব পক্ষকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দিতে রাষ্ট্রপতি ওই অপসারণের আদেশ পরিবর্তন, বাতিল বা বহাল রাখতে পারবেন। আপিলের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির আদেশই চূড়ান্ত গণ্য হবে। অপসারিত কোনও ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশনের কার্যকালের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য হবেন না।

 

 
 
/এফএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রাণ জুড়াবে কাঁচা আমের শরবত
প্রাণ জুড়াবে কাঁচা আমের শরবত
কামালের ২৯ বছরের রেকর্ড ভাঙতে পারলেন না সবুজ!
কামালের ২৯ বছরের রেকর্ড ভাঙতে পারলেন না সবুজ!
সার্বিক অগ্রগতির পথে প্রধান বাধা বিএনপি: ওবায়দুল কাদের
সার্বিক অগ্রগতির পথে প্রধান বাধা বিএনপি: ওবায়দুল কাদের
ইউক্রেনে রুশ বিমান হামলায় দুই শিশুসহ নিহত ৮
ইউক্রেনে রুশ বিমান হামলায় দুই শিশুসহ নিহত ৮
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!