X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান পুনরুদ্ধার জরুরি

স্বদেশ রায়
২৬ নভেম্বর ২০২১, ১০:০০আপডেট : ২৬ নভেম্বর ২০২১, ১১:৪০

স্বদেশ রায়

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর পশ্চিমা রাষ্ট্রচিন্তকদের অনেকেই মনে করেছিলেন পৃথিবী এখন গণতন্ত্রের। গণতন্ত্র বিকাশের চূড়ান্তই হবে আধুনিক সভ্যতা বিকাশের পথ। গণতন্ত্রকে এই শেষ কথা মনে করাতে আমেরিকাও দেশে দেশে কিছুটা হলেও তাদের নীতি বদলায়। দেখা যেতে থাকে– সামরিক সরকারের বদলে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তারা সমর্থন দেয়। আমেরিকার বন্ধু অনেক সামরিক সরকারের বিচারও তাদের নিজ নিজ দেশে হয়। আমেরিকা কোনও বাধা দেয় না। পশ্চিমা বিশ্বের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতেও অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক, রাষ্ট্রচিন্তকও মনে করেছিলেন তৃতীয় বিশ্বও গণতান্ত্রিক বিশ্ব হবে। এমনকি অনেকে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে এমনও ভেবেছিলেন, চীনের উদারনীতি ও পুঁজিবাদ গ্রহণ শেষ অবধি উদার গণতন্ত্রে গিয়ে পৌঁছাবে। কিন্তু একবিংশ শতকের প্রথম দশকের শেষের দিকে এসে দেখা গেলো– চীনের উদারনীতি ও পুঁজিবাদ গ্রহণের নীতি গণতন্ত্রে না গিয়ে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত পুঁজিবাদের সাফল্যের দিকে গেলো, যা এই পৃথিবীতে সম্পূর্ণ নতুন। কারণ, এর আগে কখনোই রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত পুঁজিবাদের সাফল্য পৃথিবী দেখেনি। চীনের এই সাফল্যের সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের কূটনীতি, সমরনীতি সবই বদলে গেলো আবারও। ত্রিশ বছর আগে তারা যেমন ভেবেছিল, সেসব ভাবনার অনেক কিছু নিয়ে তারা এখন নতুনভাবে লিখতে ব্যস্ত। অর্থাৎ পৃথিবী আবারও একটি পরিবর্তনে ঢুকে গেছে।

তবে পৃথিবীর এই পরিবর্তনের সময়ে আরেকটি বড় পরিবর্তন হয়েছে গণতন্ত্রের। গণতন্ত্রে যে চারটি বিষয় প্রথমত দেখা যায় সে চারটি বিষয়ই এখন পশ্চিমা বিশ্ব থেকে শুরু করে, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বে প্রশ্নের মুখোমুখি শুধু নয়, চরম সংকটে। গণতন্ত্রে প্রথমত আসে জনগণ কোনও বাধা ছাড়া তার ভোটের ব্যালটে সিল দিতে পারবে। জনগণের এই ভোটে স্বাধীন ও যোগ্য জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবে। এই স্বাধীন ও যোগ্য জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে পার্লামেন্ট বা কংগ্রেস গঠিত হবে। কিন্তু এ মুহূর্তের পৃথিবীর দুর্ভাগ্য হলো, গণতন্ত্রে পৃথিবীর সেরা দুই প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ও আমেরিকার কংগ্রেস এ দুটোতেও জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে গণতন্ত্রে যা নিষিদ্ধ বা গণতন্ত্রের সঙ্গে যায় না, এমন বিষয়ও চলে আসছে। অর্থাৎ বর্ণ, ধর্ম, ইমিগ্র্যান্ট এমনি সংকীর্ণতা ও পশ্চাৎপদ চিন্তা অনেকেই প্রকাশ্যে ভোটের রাজনীতিতে অর্থাৎ গণতন্ত্রে ব্যবহার করছেন। তাদের অনেকেই কংগ্রেসে বা পার্লামেন্টে ঢুকে যাচ্ছেন অর্থাৎ নির্বাচিত হচ্ছেন। অন্যদিকে গণতন্ত্রের জন্যে একটি সঠিক নির্বাচন অনুষ্ঠানে যাদের ওপর নির্ভর করতে হয়, যেমন- নির্বাচন পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান, সরকারি কর্মকর্তা অর্থাৎ সব ধরনের ব্যুরোক্রেসি (মিলিটারি এবং সিভিল ), বিচারক এবং যদি কোনও দেশে অম্বুডসম্যান থাকে তাহলে অম্বুডসম্যানও। তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশ দেশে গত দুই দশক ধরে ধীরে ধীরে প্রকৃত জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবার নির্বাচন পরিচালনাকারী এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে। এর ফলে যে শুধু একটা খারাপ নির্বাচন হচ্ছে বা প্রকৃত জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হচ্ছেন না তা নয়, রাজনৈতিক দলগুলোতেও এর কু-প্রভাব পড়ছে। অর্থাৎ রাজনৈতিক দলগুলোর আর চিন্তা করতে হচ্ছে না, কে পার্লামেন্টের জন্যে বা কংগ্রেসের জন্যে ভালো প্রতিনিধি হবেন, জনগণ কাকে পছন্দ করবেন, তাকে মনোনয়ন দেওয়ার। এর পরিবর্তে রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ ধরনের অনুগত ও স্বাধীনসত্তাবিহীন লোকদের মনোনয়ন দিয়ে নির্বাচিত করে আনার সুযোগ পাচ্ছে। অথচ গণতন্ত্রের একটা বড় শর্ত হলো, পার্লামেন্ট বা কংগ্রেসে যতটা বেশি স্বাধীনসত্তার মানুষকে নির্বাচিত করে আনা যায়। এমনকি সাংবিধানিকভাবে তারা যাতে সম্পূর্ণ স্বাধীন থাকতে পারে তাও নিশ্চিত জরুরি। সাংবিধানিকভাবে জনপ্রতিনিধির ব্যক্তিমত প্রকাশ ও তার সপক্ষে অবস্থান নেবার স্বাধীনতা নষ্ট করাও কিন্তু গণতন্ত্রের সঙ্গে যায় না। এই স্বাধীনতা নষ্ট হলে গণতন্ত্রের অনেক বড় ক্ষতি হয়। অর্থাৎ তখন পার্লামেন্ট বা কংগ্রেসকে বাহন হিসেবে ব্যবহার করে এক ধরনের অটোক্র্যাসি অর্থাৎ স্বৈরতন্ত্র বা ব্যক্তিতন্ত্র সৃষ্টি হয়ে যায়। আবার এই নির্বাচন পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নষ্ট করা বা কোনও পক্ষে ব্যবহার করার ফলে রাজনৈতিক দল যে সহজে নির্বাচন পার হবার সুযোগ পায়, এর সুদূরপ্রসারী ফলও রাজনৈতিক দলে পড়ে। অর্থাৎ রাজনৈতিক দলে তখন যোগ্য লোকের বদলে সুবিধাবাদী ও সংকীর্ণ চিন্তার লোকের ভিড় বাড়তে থাকে। রাজনৈতিক দলের এই চরিত্র নষ্ট গণতন্ত্রের ভিত্তিভূমিতে আঘাত করে। গণতন্ত্রের আঁতুড়ঘরই নষ্ট হয়ে যায়। গত প্রায় দুই দশকের বেশি সময় ধরে পৃথিবীর দেশে দেশে গণতন্ত্রের অন্যতম দুই প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ রাজনৈতিক দল ও পার্লামেন্ট বা কংগ্রেস এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

গণতন্ত্রে এর পরে আসে অর্থনৈতিক নীতিতে পুঁজিবাদ বা ক্যাপিটালইজম। গণতন্ত্র কখনোই রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি গ্রহণ করবে না। তৃতীয় বিশ্বের দেশ শুধু নয়, উন্নত দেশেও অনেক রাষ্ট্র সামাজিক সুরক্ষা দেবে বা দেয়। কিন্তু গণতন্ত্রে এই সামাজিক সুরক্ষার সঙ্গে অর্থনীতির নীতিকে মেলানো হয় না। সামাজিক সুরক্ষা নীতি সরকার তার নিজস্ব উপায়েই দিয়ে থাকে। অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাবে পড়ে একসময়ে পৃথিবীর অনেক গণতান্ত্রিক দেশ পুঁজিবাদ বা উদার অর্থনীতির পাশাপাশি সরকার নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি গ্রহণ করেছিল। যেসব দেশ এই নীতি গ্রহণ করেছিল তারা কেউই সফল হয়নি। বরং গত শতকের নব্বইয়ের দশকে এসে সেই সব দেশের অর্থনীতিকে রক্ষার জন্যে তাদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল। তারা সকলেই শেষ অবধি উদার ক্যাপিটালইজমই গ্রহণ করে। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর গত দেড় দশকে দেখা যাচ্ছে, তৃতীয় বিশ্বের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো উদার অর্থনীতি গ্রহণ করলেও তারা রাষ্ট্রের অলিখিত ক্ষমতা দিয়ে কতিপয় সুবিধাবাদী ব্যক্তিকেই অর্থনীতির নানান ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পাবার সুযোগ করে দিচ্ছে। এমনকি কোনও কোনও দেশে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রকদের অর্থনীতিতে নিজস্ব অনেক বড় বড় স্টেক আছে। তারা অর্থনীতিকে তাদের ওই সব স্টেকগুলোর স্বার্থেই ব্যবহার করছে। কোনও রাষ্ট্র যখন তার অর্থনীতিতে এভাবে সুবিধাবাদীদের বিশেষ সুবিধা দেয় বা দেওয়ার সুযোগ করে দেয়, তখন স্বাভাবিকই প্রশাসনও এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এবং পুরো অর্থনীতির বিষয়টি তখন নীতির বদলে দুর্নীতির দ্বারাই পরিচালিত হয়। এই অর্থনৈতিক দুর্নীতি এতই সর্বগ্রাসী হয়, তা শুধু গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে না- রাষ্ট্রকেও ব্যর্থতার দিকে নিয়ে যায়। তৃতীয় বিশ্বের অনেক গণতান্ত্রিক দেশে এখন অর্থনীতির এই দুর্নীতি এবং ‘বিশেষ শ্রেণি বা কতিপয় ব্যক্তির জন্যে অর্থনীতি’ হওয়াতে সেই ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকেও চলেছে।

গণতন্ত্রের আরেকটি বড় বিষয় হলো আইনের শাসন। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইন বিভাগ সবসময়ই স্বাধীন থাকে। কিন্তু তৃতীয় বিশ্ব শুধু নয়, আমেরিকায়ও আইনকে, বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণের একটা চেষ্টা এই শতাব্দীতে যেখানে কমার কথা ছিল, সেখানে বেড়েছে । আইনের শাসনে সব থেকে একটা জরুরি বিষয় থাকে - ‘আইনের শাসন’ না ‘আইন দ্বারা শাসন’। আইনের শাসন সবসময়ই একটি গণতান্ত্রিক রীতি। যার মূলই হচ্ছে, আইনের কাছে সকলে সমান এবং আইনের অধিকার মানুষের মৌলিক অধিকার। আইন কখনোই মানুষের স্বাধীন সত্তা, স্বাধীন চলাফেরা ও মত প্রকাশকে নিয়ন্ত্রণ করে না। আইন যখনই মানুষের স্বাধীন চলাফেরা, স্বাধীন সত্তা ও স্বাধীন মত প্রকাশকে নিয়ন্ত্রণ করে, তখনই ধরে নিতে হয় ওই রাষ্ট্রে আইনের শাসন নেই। সেখানে রাষ্ট্র আইন দ্বারা মানুষকে শাসন করছে। আইন দ্বারা শাসনের এই ধারা এখন ধীরে ধীরে তৃতীয় বিশ্বসহ উন্নত বিশ্বেরও অনেক দেশে গণতন্ত্রের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে। এটা আগে শুধু স্বৈরতন্ত্রী দেশে ছিল। সে রাষ্ট্রগুলোকে একটা সময়ে পুলিশি স্টেট বলা হয়েছে। সেখানে আইন বিভাগের থেকে নির্বাহী বিভাগের অনেক প্রতিষ্ঠান বেআইনিভাবে অতিরিক্ত ক্ষমতাশালী হয়েছে। এবং তারাই আইনের মূল প্রয়োগকারী হয়ে গেছে। যার ফলে ওই দেশগুলো পুলিশি রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।  তৃতীয় বিশ্বের বেশিরভাগ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এই মুহূর্তে পুলিশি রাষ্ট্রের চরিত্র ঢুকে যাচ্ছে।

গণতন্ত্রের অপর বড় প্রতিষ্ঠান হলো সিভিল সোসাইটি। সিভিল সোসাইটির স্বাধীন ও দিকনির্দেশনামূলক মতামত ছাড়া কখনোই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে গণতন্ত্র বিকশিত হয় না এবং সামনের দিকে এগোতে পারে না। যেহেতু গণতন্ত্র সভ্যতার একটি পথ, তাই সিভিল সোসাইটি ছাড়া পৃথিবীর শুরু থেকে আজ অবধি কোনও সভ্যতা যেমন এগোতে পারেনি, গণতন্ত্রও তেমনি পারবে না। গণতন্ত্রের অন্যতম কাজ হলো সিভিল সোসাইটিকে বেড়ে ওঠায় সব ধরনের সুযোগ দেওয়া।  বিংশ শতাব্দীর একেবারে শেষ দশকে বা  সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরে পৃথিবীর দেশে দেশে, বিশেষ করে গণতান্ত্রিক বিশ্বে সিভিল সোসাইটি শক্তিশালী হবে বলেই সবাই মনে করেছিল। কারণ, সিভিল সোসাইটি শক্তিশালী হবার  জন্যে সব থেকে বেশি দরকার হয় ওই সমাজের মানুষ ও মতামত যেন কোন একটি মত বা আদর্শ দ্বারা পরিচালিত না হয়। বহুমতকে পর্যালোচনা করে সবকিছু থেকে ভালোটুকু গ্রহণ করার শক্তি নিয়েই সিভিল সোসাইটি গড়ে ওঠে। যে কারণে সিভিল সোসাইটির সঙ্গে রাজনীতির একটা দ্বন্দ্ব সবসময়ই সব সমাজে থাকে। রাজনীতি সবসময়ই চায় তার মতাদর্শে সিভিল সোসাইটি পরিচালিত হোক; অন্যদিকে সিভিল সোসাইটি  সবসময়ই চায় তাদের বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন চিন্তা বা মতাদর্শ থেকে কিছু না কিছু গ্রহণ করে রাজনীতি নিজেকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার পথ তৈরি করুক। বাস্তবে এই দ্বন্দ্ব কোনও সমাজ বা রাষ্ট্রে  যত বেশি প্রবল হয় ওই রাষ্ট্র ও সমাজ তত বেশি আধুনিকতার পথে এগিয়ে যায়। কিন্তু বর্তমানে শুধু তৃতীয় বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে নয়, পশ্চিমা বিশ্বেও দেখা যাচ্ছে সিভিল সোসাইটিকে রাজনীতির নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার এক জোর প্রচেষ্টা। এমনকি  ইতোমধ্যে তৃতীয় বিশ্বের অনেক গণতান্ত্রিক দেশ রাজনৈতিক দল অনুগত সিভিল সোসাইটি গড়ে তুলতেও সমর্থ হয়েছে।

তৃতীয় বিশ্বের প্রায় সব গণতান্ত্রিক দেশেই গণতন্ত্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান এ মুহূর্তে এমনিভাবে ধ্বংসের দোরগোড়ায়। কেন এসব দেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো এভাবে ভেঙে যাচ্ছে এবং গণতান্ত্রিক নেতারা নিজেদের গণতান্ত্রিক চরিত্র বদলে ফেলছে তা নিয়ে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকে মনে করছেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের অস্তিত্বকালে দ্বিপরাশক্তির বিশ্বে যেমন অনেক গণতান্ত্রিক দেশ নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি গ্রহণ ও সমাজকে রাষ্ট্র দিয়ে নিয়ন্ত্রণের অনেক পথ নিয়েছিল, এখনও তেমনটি ঘটছে। অর্থাৎ গত দেড় দশকে চীনের দ্রুত অর্থনৈতিক ও সামরিক উন্নয়ন পৃথিবীকে এদিকে ঠেলে দিচ্ছে। তৃতীয় বিশ্বের এই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো চীনের রাষ্ট্রীয় সর্বগ্রাসী আধিপত্যের নীতি গ্রহণ করছে। ফলে গণতন্ত্র এভাবে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অনেকে মনে করছেন, এর মূল কারণ– এসব দেশে কতিপয় লোক রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিকে নিজের সম্পদ গোছানোর কাজে ব্যবহার করার জন্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও গণতান্ত্রিক নেতাকে এদিকে ঠেলে দিচ্ছে। বাস্তবে কম-বেশি দুটোই কাজ করছে। হয়তো এর সঙ্গে আরও কিছু ভুল পদক্ষেপ প্রতি মুহূর্তে যোগ হচ্ছে।

কিন্তু সত্য হলো এই যে পথ, এটি দুর্নীতি ও স্বৈরতন্ত্র দিয়ে তৈরি। এ পথে পৃথিবীর সভ্যতা বেশিদূর যায় না। সত্তর বছরে সোভিয়েত ইউনিয়নসহ সহযোগী রাষ্ট্রগুলোর ভেঙে পড়াই তার প্রমাণ। কারণ দুর্নীতি বা অন্যায়ের পথ, কঠোরতার কোনও পথ পৃথিবীতে বেশিদিন স্থায়ী হয় না। বর্তমানের এই আধুনিক সময়ে তো এই আশাই করা যায় না। তাই সত্যিকার অর্থে নিজ নিজ দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য, নিজ নিজ দেশের সভ্যতার স্বার্থে গণতন্ত্রের এই প্রতিষ্ঠানগুলো এখন পুনরুদ্ধার করা দরকার। এদিকে মনোযোগ না দিলে গণতান্ত্রিক দেশগুলোও স্বৈরতান্ত্রিক দেশের সঙ্গে নিজেদের পেছন দিকে ঠেলে দেবে।

লেখক: রাষ্ট্রীয় পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক

/এসএএস/জেএইচ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
সাফের আগে চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে সাবিনাদের ম্যাচ
সাফের আগে চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে সাবিনাদের ম্যাচ
কানের ধ্রুপদি বিভাগে শ্যাম বেনেগালের ‘মন্থন’
কানের ধ্রুপদি বিভাগে শ্যাম বেনেগালের ‘মন্থন’
থাইল্যান্ডের রাজা-রানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ
থাইল্যান্ডের রাজা-রানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ