দেশে নারীর ক্ষমতায়ন হলেও সম-অবস্থান হয়নি। ভিন্নতা গ্রহণ না করার প্রবণতার ফলে বৈষম্য ও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। সামাজিক পরিবর্তন না এলে আইনশৃঙ্খলা দিয়ে কিছু বদলাবে না। শনিবার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে ‘আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ’ জোটের ‘জাতীয় সম্মেলন ২০২১’-এ বক্তারা এসব কথা বলেন। শনিবার (২৭ নভেম্বর) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত নারী-পুরুষ সমতা প্রতিষ্ঠা, নারী-শিশুদের জন্য নিরাপদ ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা হয় সম্মেলনে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
মন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতা নির্মূলের মতো আমরা নির্যাতন নির্মূল করতে পারিনি। সমাজের সব নির্যাতন ও অন্যায় দূর করতে সামাজিকভাবে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এসব বিষয়ে অনেক কাজ করতে চান। কিন্তু নানা বাধা ও প্রতিকূলতার জন্য সব কাজ বাস্তবায়ন করতে পারেন না।
নারীদের ‘চ্যালেঞ্জ টেকার’ আখ্যায়িত করে সংসদ সদস্য অ্যারোমা দত্ত বলেন, প্রতিটি মেয়ের জীবনে সংগ্রামের গল্প আছে। নারী শিক্ষায় জোর দিতে হবে। আশির দশকে রংপুরের প্রান্তিক নারীদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তাদের দাবি ছিল গ্রামের স্কুলগুলো ঠিক করতে হবে। মেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
সিনিয়র জেলা জজ ও বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট পরিচালক (প্রশিক্ষণ) গোলাম কিবরিয়া বলেন, আমাদের সামাজিক কাঠামোর কারণে ধর্ষণের কথা লুকাতে চায় অনেকে। ফলে অভিযোগ আসতে দেরি হয়ে যায়। এ দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের জন্য সামাজিক কাঠামোতে কাজ করতে হবে। মামলায় তদন্ত কর্মকর্তাদের জেন্ডার সংবেদনশীল হওয়ার প্রয়োজন আছে। পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে।
কোনও মামলার ক্ষতিপূরণ রায় দেওয়া হলে, সেটা আদায় সম্ভব না হলে রাষ্ট্র থেকে সেই নারীর দায়িত্ব নেওয়ার উদ্যোগের বিষয়েও মত দেন গোলাম কিবরিয়া।
সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে ‘আমরাই পারি’ জোটের চেয়ারপারসন মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে, কিন্তু সম-অবস্থান তৈরি হয়নি। অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমাদের জাতীয় সংগীতের পার্থক্য হচ্ছে আমরা আমাদের দেশকে ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। তাই একটি অসাম্প্রদায়িক, নির্যাতনমুক্ত, সহিংসতাহীন, সভ্য ও সব মানুষের জন্য সমমর্যাদার দেশ গড়ার কাজ আমাদের করতে হবে।’
নারীর প্রতি সহিংসতা: আইনের প্রয়োগ, শিখন ও প্রতিবন্ধকতা এবং বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ: আর্থ-সামাজিক চালিকাশক্তি ও আইনের সীমাবদ্ধতা এই দুটি বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয় সম্মেলনে। জোটের প্রধান নির্বাহী জিনাত আরা হক মূল পর্বে সঞ্চালনা করেন। উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন অক্সফামের হেড অফ জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড সোশ্যাল ইনক্লুশন মাহমুদা সুলতানা।
সম্মেলনে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কাজ করার জন্য সারা দেশ থেকে নির্বাচিত ৫ জন ‘আমরাই পারি চেঞ্জমেকারকে’ পুরস্কৃত করা হয়।